অন্যান্য

আসমাউল হুসনা সিরিজ – ০১

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার নাম এবং গুণাবলী সম্পর্কে জানার গুরুত্ব। সকল প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার জন্য, যিনি আল মালিক , আল কুদ্দুস , আর রাহমান , আর রহিম । সেই মহিমান্বিত সত্ত্বার আরও প্রশংসা করছি আমাদের প্রতি তার সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ বই আল কুরআন নাজিল করার জন্য। আরও প্রশংসা করছি আমাদের প্রতি সকল নবীর শ্রেষ্ঠ নবী প্রেরণ করার জন্য। যিনি প্রেরিত হয়েছেন জগতের জন্য রহমত স্বরূপ। প্রিয় ভাই ও বোনেরা, প্রতি বছর রামাদানে আলোচনার জন্য আমরা একটা বিষয়বস্তু নির্ধারণ করি। ইনশাআল্লাহ , এই বছর যে বিষয়বস্তুটি ঠিক করা হয়েছে তা এমন একটি মহত এবং গুরুত্ব পূর্ণ টপিক যা জানা এবং মুখস্ত করার জন্য প্রতিটি মুসলমানের সময় ব্যয় করা উচিত। আর সেই বিষয়টি হলো আল্লাহর কিছু সুন্দর নাম ও গুণ নিয়ে আলোচনা। আল্লাহর সুন্দর নাম সমূহের আলোচনা কুরআনের একটি কেন্দ্রীয় আলোচ্য বিষয়। আমি আপনাদের চ্যালেঞ্জ জানাই কুরআনের এমন তিনটি চারটি বা পাঁচটি আয়াত পড়ুন যেখানে আল্লাহর কোনো নাম বা গুণের উল্লেখ নেই । কারী সাহেব যখন নামাজে কুরআন তিলাওয়াত করেন, আপনারা যদি মনোযোগ দিয়ে শুনেন তাহলে দেখবেন কুরআনের প্রায় প্রতিটি আয়াতেই আল্লাহর কোন না কোন নাম বা গুণের উল্লেখ আছে। আর এ কারণেই প্রিয় ভাই ও বোনেরা, আল্লাহর নামসমুহ ও গুণাবলীর জ্ঞান অর্জন করা আমাদের দ্বীনের একটি মৌলিক বিষয়। আর প্রকৃতপক্ষে, আল্লাহ কে ? এটা জানার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু আছে কি? ঈমানের প্রথম স্তম্ভ হলো আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস। তাহলে আল্লাহ কে? আল্লাহকে জানার একমাত্র উৎস হলো তাঁর নাম এবং গুণাবলীসমূহ। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে জানার আমাদের আর কোন উৎস নেই। এজন্য আমাদের আলেমরা বলে গেছেন, আল্লাহ সম্পর্কে জ্ঞানার্জন হলো তৌহিদের অর্ধেক। আর তৌহিদের বাকি অর্ধেক হলো আল্লাহর ইবাদাত করা। তাহলে তৌহিদ বলতে বুঝায় আল্লাহকে জানা এবং তাঁর ইবাদাত করা। তৌহিদ বলতে ঠিক...

তিনি যেমন পৃথিবী দেখতে চেয়েছিলেন – ইসলাম ও বর্ণবাদ

ইসলাম আবির্ভাবের ১০০ বছরের মাঝে মুসলিম সাম্রাজ্য বিস্তার লাভ করলো আফ্রিকা, পারস্য, ভারত এবং স্পেন পর্যন্ত। ইসলামিক সভ্যতার আগমনই ঘটত না, সমৃদ্ধি তো দূরের কথা, বিভিন্ন গোষ্ঠীর এবং সংস্কৃতির অহমিকার কারণে। এটা সম্ভব হয়েছিলো নবী (স) এর শক্তিশালী বাণীর আগমনে, যার কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে মানুষ সম্প্রীতির সাথে বাস করতে পেরেছিলো, ইসলামের ছায়াতলে। ইতিহাসবেত্তা এইচ.আর.গিব লিখেছেন, অন্য কোনো সমাজে এমন সাফল্যের দৃষ্টান্ত নেই যেখানে এত বেশি সংখ্যক সামাজিক অবস্থান, সুযোগ-সুবিধা ও অসংখ্য জাতি ও বর্ণের মানুষদের প্রচেষ্টা একীভূত হয়েছিলো। ইসলামের শক্তির সাহায্যে এখনও নিষ্পত্তি ঘটানো সম্ভব বিভিন্ন জাতি ও সংস্কৃতির আপাতদৃষ্টিতে নিরাময়ের অযোগ্য উপাদানের।তবে এই পরিবর্তন রাতারাতি হয়নি, বরং আজীবন নবী (স) এর সর্বোচ্চ চেষ্টা ছিলো গোষ্ঠী, বর্ণ ও বিভিন্ন শ্রেনীর মাঝে ভেদাভেদ উচ্ছেদ করা। তিনি শুধু দাস মুক্ত করেননি, তিনি তাদের সম্মান দিয়েছিলেন এবং তাদের পক্ষ হয়ে সমাজের সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন পরিবারের কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিলেন। আর ২০ বছরেরও কম সময়ে তিনি সফল হয়েছিলেন নারী ও পুরুষকে তাদের প্রাপ্য মর্যাদা ও ক্ষমতা প্রদানে যারা সারা জীবন অপদস্থ হয়েছিলো পূর্ববর্তী ক্ষমতাশীলদের দ্বারা। এ ঘটনা ঘটেছিলো ১৪০০ বছর আগে, আরবের মরুভূমিতে। আমরা যে সমাজে বাস করি তার থেকে একেবারেই আলাদা। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের চেয়ে উন্নত। আর সত্যিটা স্বীকার করতেই হবে, আমাদের তাদের থেকে অনেক কিছু শিখার আছে। কারণ আমরা যদিও এই কয়েক বছরে অনেক অগ্রসর হয়েছি, বর্ণবাদ আজকের দিনেও প্রায়ই এর কুৎসিত মাথা তুলে দাঁড়ায়। আমাদের দায়িত্ব এটা নিশ্চিত করা যখন এমন ঘটে আমরা এর বিরুদ্ধে দৃঢ় ভাবে রুখে দাঁড়াবো। আব্রাহাম লিংকন বলেছেন, যারা অন্যের স্বাধীনতা হরণ করে তারা নিজেরা স্বাধীন হওয়ার যোগ্য নয়। গৃহযুদ্ধ হয়েছিলো এই দেশে কেবল দেড়’শ বছর আগে কারণ দাস-দাসীরা স্বাধীনতার পিছে ছুটেছিলো। আর তখনও তাদেরকেই যুদ্ধের প্রথম সারিতে মৃত্যুমুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছিলো। যদিও পলিটিকাল...

পরকালের বন্ধুরা

জানেন, মানুষ যখন খুশিতে থাকে তখন তারা কি চিন্তা করে? তারা বসে বসে ভাবে ইসস.. জীবনটা যদি সব সময় এরকম হত। তারা জানে যে এরকম হবার নয়, জীবনের বাঁকে বাঁকে সমস্যা আছে। কিছু না কিছু সমস্যা হবেই, শারীরিক বা মানসিক, কিছু একটা হবেই। জীবনে আর কোন সমস্যাই আসবে না এটা যদি জানা যেত!! আমার অত্যন্ত অত্যন্ত প্রিয় একটা বর্ণনা জান্নাত সম্পর্কে, এটা সুরা সাফফাত থেকে (আয়াত ৫০-৫৯) এক ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করলো এবং সে দেখলো সেখানে তার বন্ধুরাও আছে। তারা একজন একজনকে দেখে উচ্ছসিত হয়ে বলল ”আরে তুমিও সফল হয়েছও” তারপর তারা একে অপরকে অভিনন্দিত করলো। তারা একজন আরেকজনকে বলতে থাকবে ও আল্লাহ! তুমি, ও তুমিও। তারা আবার একজন আরেকজনের সাথে পরিচিত হতে থাকবে। আমি তোমাকে ওখানে চিনতাম। এরপর সে চিন্তা করবে আচ্ছা আমার সবচেয়ে ভাল বন্ধু যে তার কি হল? তাকে তো দেখছি না। অর্থাৎ সে তার পুরোনো জীবনের কথা স্মরণ করবে আর ভাববে যে তার এক বন্ধু এখানে নেই। তখন সে বাকীদেরকে জিজ্ঞাসা করবে তোমরা কি জান ওর কি হয়েছে? কিন্তু কেউই এই ব্যাপারে জবাব দিতে চাইবে না। কিন্তু সে আসলেই জানতে চায় যে তার পুরাতন বন্ধুর কি হল। ব্যাপারটা এমন হবে যে আল্লাহ জান্নাতে একটা জানালা খুলে দিবেন যাতে সে জাহান্নামে তার বন্ধুকে দেখতে পায়। এই ধরনের একটা চিত্রই ৩৭ নম্বর সুরাটিতে বর্ণিত হয়েছে। সে দেখবে যে তার সবচেয়ে ভাল বন্ধু জাহান্নামে জ্বলছে। হ্যাঁ, আপনি জান্নাত থেকে এটি দেখতে পারবেন, কারণ জান্নাতে আপনি যা চাইবেন তাই পাবেন। আর সে তার বন্ধুকে দেখতে চাইলো আর তার ইচ্ছাও পূরণ হল। তাই সে জাহান্নামের একটি ঝলক দেখতে পেল এবং সেখানে তার বন্ধুকে দেখলো। তখন সে বলবে إِن كِدتَّ لَتُرْدِينِ তুমিও আমাকে প্রায় ওখানেই নিয়ে যাচ্ছিলে। সে তার বন্ধুকে দেখলো...

অর্ধাঙ্গিনী নাকি কষ্টাঙ্গিনী?

একটি সুন্দর সমাজের জন্যে আরেকটি মৌলিক, প্রধান উপাদান হচ্ছে-আমাদের পরিবারে শৃঙ্খলা। আমরা দাওয়াহ এর কথা বলতে পারি না, সামঞ্জস্যপূর্ণ ইসলামিক সমাজ প্রতিষ্ঠার কথা বলতে পারি না যতক্ষণ না আমাদের পরিবারে সামঞ্জস্যতা তৈরি করতে পারি! কিন্তু আমাদের পরিবার হচ্ছে চরম বিশৃঙ্খলার জায়গা। কীভাবে আমরা উচ্চতর দাওয়াহ এর আদর্শের এর কথা বলতে পারি? যেখানে আমাদের পরিবারে অশান্তি, স্বামী-স্ত্রী সারাদিন বাক-বিতন্ডায় জড়িয়ে থাকে আমাদের পরিবার এর ভেতর চলে তিক্ত মন্তব্য। একে অপরের প্রতি জঘন্য টিপ্পনি… স্বামীঃ “তুমি দেখতে একদম সুন্দর না।” স্ত্রীঃ “ও! তুমিও তো ইউসুফ (আঃ) এর মতো না! তোমাকে দেখে তো আর আমি হাত কাটছি না !” অপ্রয়োজনীয় রঙ্গ! একে অপরের সাথে অপ্রয়োজনীয়, তিক্ত মন্তব্য চালিয়ে যাওয়া। আর অনেক সময় আপনি জানেন আপনার স্ত্রী কীসে বিরক্ত হয়, আর আপনি ঠিক সেটাই করেন। আবার অনেক সময় স্ত্রীরাও ওই জিনিসটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জানেন যেটা ওনার স্বামীর চামড়ার নিচে গিয়ে সুচের মত গিয়ে লাগবে। তারপরেও তারা সেটা বলবেন শুধু এইটুকু দেখার জন্যে যে কী ঘটে! ঠিক? আর এই সব কিছু কে দেখছে? আপনারা যা কিছু করছেন এগুলো কে দেখছে? এই ধরনের কটূক্তির খেলা, আপনার পরিবারে যে যুদ্ধ চলছে এগুলো কে দেখছে? কে সত্যিকার অর্থে শিকার হচ্ছে এইসবের? পরিবারের শিশুরা। শিশুরা এই ধরনের ব্যবহার শিখছে। যখন তারা বড় হবে তখন তারা কেমন ধরনের পিতামাতা হবে? তারা শিখবে বিয়ের মধ্যে ক্ষমা করার কোন ব্যাপারই নেই!!! আপনারা জানেন, মুসলিম পুরুষদের চাকরিক্ষেত্রে তাদের নারী সহকর্মীরা যখন অত্যন্ত অসঙ্গত পোশাক পড়ে হেসে জিজ্ঞেস করেন, “কেমন আছেন? আপনার দিন কেমন কাটছে?” তখন ঠিকই হেসে মাখা মাখা কণ্ঠে গদগদ হয়ে বলেন, “হ্যাঅঅ, ভালই। বেশ ভালই।” আপনি এখান থেকে ৫ মিনিট কথাবার্তা চালিয়ে যাচ্ছেন আর বাড়িতে ফিরে আপনার স্ত্রী যখন আপনাকে জিজ্ঞেস করে, “কেমন কাটল তোমার সারাদিন?” আপনি বলেন, “আমি কথা বলতে...

অসৎ সঙ্গ এড়িয়ে চলুন

তরুণ-তরুণীরা দয়া করে মনোযোগ দিয়ে শুনুন। আল্লাহ সুব হানাহু ওয়া তায়ালা সূরা ফুরকানের ৭২ নং আয়াতে বলেন – وَالَّذِينَ لَا يَشْهَدُونَ الزُّورَ ”তারা এমন মানুষ যারা কখনো অর্থহীন বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে থাকে না।” ‘যুর’ শব্দটির অর্থ হলো মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া কিংবা এর আর একটা মানে হলো এমন সঙ্গী যারা অকেজো, যাদের দ্বারা কোনো উপকার আশা করা যায় না, তারা ‘বাতিল’। অন্যভাবে বললে তারা রাতের ২টা পর্যন্ত আড্ডাবাজি করে না। তারা রাত ৩ টা পর্যন্ত অর্থহীন কথাবার্তা বলতে থাকে না। তারা এমনটা করে না। কিন্তু কেন করে না? কারণ তারা তাওবা করেছে। আর যখন কেউ তাওবা করে সে জানে… আপনি যখন কোন বড় পাপ করে ফেলেন, জানেন? সেই বড় পাপ কাজ করতে কিভাবে উদবুদ্ধ হয়েছেন? আপনি শুরু করেন খুব ছোট গুনাহ দিয়ে আর সেটা ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে তারপর আপনি বড় গুনাহ করে ফেলেন। আর একসময় বুঝতে পারেন আপনার গুনাহ গুলো সঙ্গদোষের কারণেই হয়েছে। যাদের সাথে আপনি সময় কাটান তারা আপনার জন্য এসব পাপ করা খুব সহজ করে দিয়েছিলো। তো আল্লাহ বলেছেন যখন তারা তাওবা করে ফেলেছে তারা নিশ্চিত করে যেন কখনোই কোন অশুভ আড্ডায় বসতে না হয়। তারা কখনো কোন মিথ্যার আসরে সময় কাটায় না। কখনো কখনো আপনি পার্টিতে যাওয়ার দাওয়াত পেয়ে যান, আর যারা দাওয়াত করে তারা হয়ত খুব একটা ধার্মিক নয়। তো সেখানে কান ফাটানো বাজনা বাজে, মেয়েরা মেকআপ করে আসে, ছেলে মেয়ে সবাই একসাথে। আর আপনি এই পার্টির মাঝে আটকা পড়েছেন। আপনি নিশ্চয়ই দাঁড়িয়ে বলবেন না, ‘ওয়াল্লাযীনা লা ইয়াশহাদুনা আয্‌যুরা’ আর বলে হন হন করে বেরিয়ে গেলেন! কিন্তু আপনি অযুহাত দেখাতে পারেন। ‘আমার একটু বের হতে হবে’ বলে বেরিয়ে পড়লেন। আপনি মসজিদে মাগরিব পড়লেন আর ইশা পর্যন্ত সেখানেই রইলেন। ইশা পড়ে পার্টিতে ফেরত এসে দেখলেন সবাই...

নষ্ট করার মত অলস সময় আপনার হাতে নেই

“এই বক্তব্যটি বিশেষভাবে তরুণ প্রজন্মের জন্য। তোমাদের হাতে নষ্ট করার মত কোন অলস সময় নেই। তোমরা এই উম্মার সদস্য। এই উম্মার সব সদস্য, বিশেষভাবে যারা তরুণ তারা নিরলসভাবে উন্নততর সমাজ গঠনের জন্য কাজ করে যাচ্ছে, মানুষের জন্য ভালো কিছু করার চেষ্টা করছে। তোমার কোনো অলস সময় নেই। ৮ ঘন্টা ধরে ভিডিও গেইম খেলে নষ্ট করার মত সময় তোমার নেই। তোমার সময় নেই গ্র্যান্ড থেফট অটো কিংবা মডার্ন ওয়ার খেলার। তোমার সময় নেই। এমনকি নতুন যে মুভি আসছে সেটার জন্যও তোমার কিন্তু সময় নেই। সুপারম্যান এর জন্য নষ্ট করার মত সময়ও নেই তোমার। তোমাকে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হবে। তুমি এই প্রজন্মের একজন তরুণ, নিজের জন্য তোমাকে একটা উচ্চতর স্ট্যান্ডার্ড নির্ধারণ করতে হবে। এ জন্য না যে বড়রা, কিংবা ইসলামিক স্কলাররা অথবা অন্য কেউ বলার কারণে তুমি এটা করবে। তোমার নিজের আত্মউপলব্ধি থেকেই এটা তোমাকে করতে হবে। তোমার যে বিশ্বাস – ”লা ইলাহা ইল্লালাহ’, সেটাই তোমাকে এটা করতে বলা উচিত। এই বিশ্বাস তোমাকে কর্মশীল হওয়ার জন্যও তাগিদ দেয়া উচিত ! এই যে তুমি দেখছ সমাজে তোমার চারপাশে দুর্নীতি, যুব সমাজ আল্লাহর পথ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, তুমি কী মনে করো ? কে তাদের দাওয়াত দেবে? আমি? না ! এইসব ছেলে মেয়ে যারা মসজিদে আসে না, কোনো হালাকায়ও আসে না, তাদের কাছে পৌঁছানোর কোনো পথ আমার নেই। তোমাকে তাদের কাছে যেতে হবে, তারা তোমার বন্ধু। তারা আমার সাথে নয়, তোমার সাথে চলাফেরা করে। তোমাকে তাদের কাছে যেতে হবে, দাওয়াত দিতে হবে, তাদের প্রেরণার উৎস হতে হবে। তোমাকে এটা নিশ্চিত করতে হবে যে তোমার আশ পাশের বন্ধুদের নিয়ে তুমি চিন্তা কর। সবসময় শুধু তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করো না যে ‘আমার বন্ধুরা সারাদিন শুধু মুভিই দেখে’! তুমি কি কখনো তাদের উপদেশ দিয়েছ...

রামাদানের চিঠি

বরাবর, সে সব আত্মা, যারা পাপ করে সীমা অতিক্রম করেছে অনেক আশা ছিল এই রামাদান নিয়ে। আপনি চেয়েছিলেন এই রামাদানটি একটু ব্যতিক্রম হবে আগের চেয়ে। চেয়েছিলেন এসব খাত থেকে বের হয়ে আসতে। লক্ষ্যও ঠিক করেছিলেন। কিন্তু এক সপ্তাহ না যেতেই ফিরে গেলেন আগের সেই বদ অভ্যাসে। নিজের উপর খুবই বিরুক্ত আপনি। আপনি শপথ করেছিলেন আপনি সকালে নামাযের জন্য উঠবেন। শপথ করেছিলেন একটু ধৈর্যশীল হবেন অন্যের উপর। প্রতিজ্ঞা করেছিলেন আল্লাহ তাআলার কাছে যে, আপনি প্রশ্নবিদ্ধ কোন সম্পর্কে জড়াবেন না। কিন্তু… এখন? আপনি সকাল ১০টায় উঠলেন ৩ টায় না উঠে। আপনার আম্মুর সাথে ঝগড়া করলেন কারণ তিনি আপনাকে বার বার মানা করছিল ঐ ছেলে/মেয়ে টির সাথে রাত ২টা পর্যন্ত মেসেঞ্জারে কথা না বলতে। মনে হচ্ছে রামাদান আপনাদের মত মানুষের জন্য না, কারণ আপনি দ্বীনের পথে যখনই চলার চেষ্টা করতে যান, ব্যর্থ হন। সর্বদাই। প্রত্যেকবার। সবসময়। শয়তানকে এ মাসে আটকে রাখা হলেও এর যেন কোন প্রভাব আপনার মধ্যে নেই। আপনি হয়ত ভাবছেন ” হবে না আমাকে দিয়ে”। হয়ত ভাবছেন, আপনি এই মাসের করুণা পাওয়ার যোগ্য নন। হয়ত আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা আপনাকে প্রত্যাখ্যান করছেন। এতক্ষণ যা বললাম, যদি তা আপনার সাথে মিলে যায় আর এরকম অনুভূতি যদি আপনার মাঝে তৈরি হয়, তাহলে আপনি ভুল বুঝছেন। কারণ রামাদান আসলে আপনারই জন্যই । আল্লাহ তাআলা আপনার মত মানুষদের ডাকছেন: “বলুন, হে আমার বান্দাগণ যারা নিজেদের উপর জুলুম করেছ (পাপ করে) তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (আল কুরআন ৩৯-৫৩) মাঝে মাঝে আমরা নিজেরা নিজদের উপর আল্লাহ যতটুক না চান, তার চেয়েও বেশি কঠোর হয়ে যায়। আমরা নিজেদের কঠিন শাস্তি দিয়ে বলি, আমি যে পরিমাণ পাপ করেছি, আমি আল্লাহর রহমত পাওয়ার যোগ্যই নয়। এভাবেই আমরা...

ধর্মের বিরুদ্ধে ইউরোপবাসীদের অভিযোগ

ধর্মের বিরুদ্ধে ইউরোপবাসীদের অভিযোগ শত শত বছরের পুরনো। এখন সারা দুনিয়াতে এই অভিযোগ শোনা যায়। ধার্মিক মানুষ বদ্ধ মস্তিস্কের, ধার্মিক মানুষ উন্মত্ত , ধার্মিক মানুষ অসহিষ্ণু , ধার্মিক মানুষ সমালোচনা সহ্য করতে পারে না, ধার্মিক মানুষ আলোচনার জন্য উন্মুক্ত নয়। তাই আপনি যদি ধর্ম থেকে মুক্তি পেতে পারেন তবেই আপনি পেতে পারেন মুক্ত বুদ্ধি চর্চার একটি সমাজ যেখানে মানুষ নিজেদের জন্য চিন্তা করতে পারবে। এটা তাদের অভিযোগ। খ্রিস্ট ধর্মের ক্ষেত্রে তাদের এ অভিযোগ সত্য। যা শত শত বছর যাবত ইউরোপে আধিপত্য বিস্তার করে ছিল। কিন্তু ইসলামের ক্ষেত্রে –আল্লাহ তার রাসুল (স) কে ঠিক তার উল্টোটা দিয়েছেন। এটা এমন ধর্ম যা আলোচনাকে স্বাগত জানায়, هَاتُوا بُرْهَانَكُمْ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ তোমরা সত্যবাদী হলে, প্রমাণ উপস্থিত কর।( সুরা বাকারা – ১১১, সুরা আন নামল – ৬৪) কেন তুমি কুরআনের বিরুদ্ধে তোমার সকল অভিযোগ উপস্থাপন কর না ? আমি তোমাকে আহ্বান জানাচ্ছি, নিয়ে আস তোমার সকল অভিযোগ। একটা বই কীভাবে মানুষকে আহ্বান জানাচ্ছে শুধু বিশ্বাস করার জন্য নয় বরং একত্রিত কর তোমার সব অভিযোগ, সব সমালোচনা এবং নিয়ে আস। এটাকেই বলা হয় মনের প্রকৃত উদারতা। আল্লাহর বই উদার, কিন্তু আমরা নিজেরাই বদ্ধ মনের। আমাদের মনের উন্মুক্ত করণের মাধ্যমে এই উম্মাহকে আবার শক্তিশালী করতে হবে। এই বই খুলে দেখার মাধ্যমে এবং সেভাবে চিন্তা করার মাধ্যমে যেভাবে এই বই আশা করে। এটা দেখিয়ে দেয়ার জন্য যে ধর্ম মানুষের দৃষ্টিশক্তি আর মনের জানালা বন্ধ করার জন্য নয়। বরং ধর্ম এসেছে মানুষের মনের জানালা খোলার জন্য , আলোচনায় অংশগ্রহণ করার জন্য এবং মানুষকে সভ্যতা শেখানোর জন্য। তারা মনে করে সমাধান হলো যখন আপনি ধর্ম থেকে মুক্তি পাবেন। কিন্তু আমরা বলি, সমাধান হলো যখন আপনি প্রকৃত ধর্মকে ফিরিয়ে আনবেন। হ্যাঁ , মিথ্যা ধর্ম অন্যায়- অত্যাচার নিয়ে আসবে। কিন্তু যখন...

দোয়া

ইসলামে দোয়া অনেক বিশাল জিনিস। আল্লাহর সাথে নিজেকে যুক্ত করা, আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা, মাতাপিতার জন্য দোয়া করা, সন্তানদের জন্য দোয়া করা, হতাশাগ্রস্থ হলে দোয়া করা, দোয়াতে সমস্ত ধরণের তাওহীদ বিদ্যমান থাকে, দোয়াহীন অন্তর মৃত ইত্যাদি। দোয়ার বিশালতা অনেক বড়। তাই এটি সম্পর্কে সংক্ষিপ্তভাবে কিছু দেওয়া হলো। (১) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “নিশ্চয় আপনাদের সুমহান রব হচ্ছেন লজ্জাশীল ও মহান দাতা। বান্দা যখন তাঁর কাছে দু’হাত তোলে তখন তিনি সে হাতদ্বয় শূন্য ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন।”[সহিহ আবু দাউদ -১৩২০] সুতরাং দোয়া কবুল হবেই, এটাই নিশ্চিত -যদি শর্ত মেনে করা হয় (হারাম না খাওয়া, পাপ থাকলে আগে ক্ষমা চাওয়া, আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন না করা ইত্যাদি)। (২) ফাযালা বিন উবায়দ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপবিষ্ট ছিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে নামায আদায় করল, এরপর দু’আ করল: ‘হে আল্লাহ! তুমি আমাকে মাফ করে দাও, তুমি আমাকে রহম কর’। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: হে নামাযী! তুমি বেশ তাড়াহুড়া করে ফেললে। তুমি নামায আদায় করে যখন বসবে তখন আগে আল্লাহর যথোপযুক্ত প্রশংসা করবে, আমার ওপর দরুদ পড়বে। এরপর আল্লাহর কাছে দু’আ করবে।” (সুনানে তিরমিযিতে – ৩৪৭৬] দোয়ার আদব হলো – আল্লাহর প্রশংসা করে শুরু করা, রাসূলের উপর দরুদ পড়া, এরপর আল্লাহর কাছে চাওয়া। (৩) দোয়া কবুলের ব্যাপারে আরেকটি হাদীসে তিনটি বিষয় এসেছে। ক) দোয়াটি তাৎক্ষণিকভাবে/ অল্প সময়েই কবুল হবে। এক্ষেত্রে যা চেয়েছে তাই দেওয়া হবে। খ) পরে দেওয়া হবে, দুনিয়াতেই। এক্ষেত্রে যেহেতু আল্লাহ পরে দেবে সেজন্য যা চাওয়া হয়েছিলো তার থেকে আরও উত্তম কিছু আল্লাহ দিবেন। গ) অথব উপরিক্ত দুটোর কোনটাই হবে না, মানে দুনিয়াতে ফল আসবে না। আখিরাতে আরো উত্তম জিনিস দেওয়া হবে। প্রতিটি দোয়ার বিনিময়ে একেকটি জান্নাতে...

সত্তর বছর বয়স্ক এক দাদীর কুরআন মুখস্ত করার গল্প

এক মহিলা জর্ডানে বাস করতেন। তাঁর বয়স ছিল সত্তর বছর। আর তিনি নিরক্ষর ছিলেন। পড়তে বা লিখতে পারতেন না। কিন্তু তাঁর সন্তানদের শ্রেষ্ঠতম উপায়ে গড়ে তুলতে সক্ষম হন। স্পষ্টতই এতো বছর বয়সে সংসারের প্রতি তাঁর আর কোন দায়দায়িত্ব ছিল না। তিনি প্রায় সময় কুরআন তিলাওয়াত শুনতেন। তিনি কুরআনকে ভালবাসতেন। আর তাই প্রায় সময় কুরআন শুনতেন। তারপর তিনি ভাবলেন, কেন আমি আরেকটু অগ্রসর হই না? তিনি ভাবলেন, আমি কুরআনের দিকে তাকিয়ে যেন শুধু ‘আল্লাহ’ শব্দটি দেখতে পারি। আমি এই শব্দটি চিনতে চাই। তারপর তিনি তাঁর এক নাতিকে ডেকে বললেন, ” আমাকে একটু শিখাওতো কীভাবে তুমি ‘আল্লাহ’ শব্দটি লেখ। তাঁর নাতি তাঁকে এটা শিখিয়ে দিলেন। এরপর থেকে তিনি ক্যাসেটে কুরআন শুনতেন আর কুরআন শরীফ খুলে ক্বারির তিলাওয়াতের সাথে সাথে ‘আল্লাহ’ শব্দটা খুঁজে বের করতেন। এইতো এখানে, এইতো এখানে ……। তিনি কুরআনের সাথে এতো বেশী যুক্ত ছিলেন। আপনাদের কি মনে হয় এই মহিলা আল্লাহকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন? হ্যাঁ, স্পষ্টতই। আমরা এখনি জানতে পারবো। তো, তাঁর কাছে এটা খুবই ভালো লাগলো যে তিনি আল্লাহ শব্দটি শনাক্ত করতে পারছেন। তিনি আরও শিখতে চাইলেন। আর তাই তিনি তাঁর নাতিকে ধরলেন তাঁকে আরবি বর্ণমালা শিখিয়ে দেয়ার জন্য। তিনি শুরু করলেন…মনে আছে তো তাঁর বয়স কত ছিল? সত্তর। তিনি শিখলেন আলিফ, বা, তা, ছা … তারপর শিখলেন কীভাবে একটা আরেকটার সাথে যুক্ত হয়। তারপর ধীরে ধীরে তিনি ক্বারির তিলাওয়াত শুনে আরবি লেখা বুঝতে শুরু করলেন। এভাবে ক্বারির তিলাওয়াত অনুসরণ করতে করতে একসময় নিজে নিজে পড়া শিখে গেলেন। পঁচাত্তর বছর বয়সে তিনি সম্পূর্ণ কুরআন মুখস্ত করে ফেললেন। সুবহানাল্লাহ! আমাদের অনেক যুবক ভাইয়েরা বলেন, আমার বয়স হয়ে গেছে, আমার এখন পঁচিশ বছর। কীভাবে আমি কুরআন মুখস্ত করবো? যদি আমি ছয়-সাত বছর বয়সের হতাম, আমার ফ্রেশ মেমোরি থাকতো, তাহলে মুখস্ত করে...

নিজেকে ভালোবাসুন এবং ক্ষমা করে দিন

আমরা আমাদের অতীত জীবনের দিকে তাকালে এতো বেশি ভুল এতো বেশী পাপ দেখতে পাই যে, নিজেকে ভালোবাসা অসম্ভব হয়ে পড়ে। নিজেকে ভালোবাসতে পারা যে কত গুরুত্বপূর্ণ তা আমরা হয়তো অনুভব করতে পারছি না। এটি আপনার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলোর একটি। যে সিদ্ধান্তটি আপনার জীবনের অন্য সব সিদ্ধান্তকে কোন না কোন ভাবে প্রভাবিত করবে তা হলো সর্বান্তকরণে নিজেকে গ্রহণ করে নেয়ার সিদ্ধান্ত। এটি সরাসরি আপনার সম্পর্কগুলোকে প্রভাবিত করে, আপনার চাকরি, আপনার অবসর সময়, আপনার ভবিষ্যৎ তথা সমগ্র জীবনকে। আপনি যদি নিজেকে ভালোবাসতে না পারেন তাহলে অন্যদের কাছ থেকে ভালোবাসা পাওয়া কষ্টকর হয়ে পড়বে। নিজের মূল্য বুঝতে হলে এবং আত্মবিশ্বাস গড়তে হলে সচেতনতা এবং ভালোবাসার সাথে নিজের দিকে লক্ষ্য করতে হবে। গ্রহণযোগ্যতা এবং ভালোবাসা নিজের ভেতর থেকেই আসতে হবে। আরেকটা বিষয় মনে রাখুন, নিজেকে গ্রহণ করে নেয়া এবং ভালোবাসা এটা একবারেই করে ফেলার মত বিষয় না, এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। তাই নিচে বর্ণিত এই কয়েকটি কাজ দিয়ে আজ থেকেই শুরু করতে পারেন, ইনশাআল্লাহ। ১। এই মুহূর্তে জীবনের যে পর্যায়ে আছেন তাকে গ্রহণ করে নিন। এটা আপনার ভাগ্যের অংশ, পেছনে ফিরে গিয়ে এটার পরিবর্তন করতে পারবেন না। এই জীবনের একটা সৌন্দর্যমণ্ডিত ব্যাপার হলো, কোনো কিছুই স্থায়ী নয়, সবকিছুর পরিবর্তন ঘটে।…… অভিযোগ করা, ঘ্যানঘ্যান করা বন্ধ করুন। মনে মনে এই প্রশান্তি রাখুন যে বর্তমানে আপনি যে চ্যালেঞ্জ এবং পরীক্ষায় পতিত আছেন একসময় তার সমাপ্তি ঘটবে। ২। নিজেকে ভালবাসুন এবং ক্ষমা করুন। সকল সম্ভাব্য উপায়ে নিজের উত্তরোত্তর উন্নতির চেষ্টা করুন। আপনার নিজের জীবনের যে ভালো দিকগুলো আছে তার দিকে লক্ষ্য করুন এবং আপনি যে নিখুঁত নয় তা মেনে নিন। এটার মানে এই নয় যে, আপনি ত্রুটিগুলো দূর করার চেষ্টা করবেন না। বরং এর মানে হলো আপনি অবশ্যই চেষ্টা করবেন, কিন্তু নিজের প্রতি একটু সদয়...

রাসূলুল্লাহ ﷺ এর প্রতি জিব্রাইল (আঃ) এর ৫টি উপদেশ

কিন্তু তখন ব্যাপারটা কেমন ছিল যখন জিব্রিল (আঃ) রাসূল ﷺ কে জীবন সম্পর্কে কোন উপদেশ দিতেন! এখন আমি আপনাদেরকে যে বিষয়টি বলবো সেটি রাসূল ﷺ এর জীবনের শেষ দিককার। জিব্রীল (আলাইহিস সালাম) রাসূল ﷺ এর নিকট এসে বললেনঃ হে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)……, আচ্ছা, আল্লাহ কি কুরআনে কখনও এভাবে বলেছেন ‘হে মুহাম্মাদ’? না। ইয়া নাবিয়াল্লাহ, ইয়া রাসূলাল্লাহ – ও আল্লাহর নবী, ও আল্লাহর রাসূল (এভাবে বলেছেন)। তাহলে জিব্রীল (আলাইহিস সালাম) কি করে ‘ইয়া মুহাম্মাদ’ বলার সাহস করলেন? আলেমরা বলেন যে, যখন জিব্রীল (আলাইহিস সালাম) বলেন, ‘ইয়া মুহাম্মাদ’, এর মানে হলোঃ তিনি নবীﷺ কে এটা বুঝাতে চাচ্ছেন যে, এখনকার বিষয়টি ওহীর বাইরের বিষয়। যখন আমি আপনাকে ‘ইয়া মুহাম্মাদ’ বলি, তার মানে বিষয়টি আপনি মুহাম্মাদ আর আমার মধ্যকার। সুতরাং এটা হলো কেবল এমন একক সময় যখন জিব্রাইল ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ’ বলে সম্বোধন করলেন না। কারণ এখন আমি এমন কথা বলবো যা কেবল আপনার আর আমার মাঝে। বিষয়টি বুঝতে পারছেন আশা করি। সুতরাং তিনি বলেনঃ হে মুহাম্মাদ ﷺ , ৫টি উপদেশ দিচ্ছি আপনাকে। ১. আপনি যেভাবে খুশি জীবন যাপন করুন। কিন্তু একথা মনে রাখবেন যে আপনি একদিন মৃত্যুবরণ করতে যাচ্ছেন। একদিন আপনি মরবেনই। ২. তিনি আরো বলেন, আপনি যাকে খুশি ভালোবাসেন। কিন্তু মনে রাখবেন যে একদিন আপনি তার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবেন। ৩. আপনি যা খুশি তাই করতে পারেন। কিন্তু একথা স্মরণে রাখবেন যে, আপনার কর্ম অনুযায়ী আপনাকে প্রতিফল দেয়া হবে। প্রতিদান আখিরাতেই পাবেন। এর মানে কি? মানে হলো, প্রত্যেকটি বিষয় আখিরাতে আসবে, প্রত্যেকটি পুরষ্কারই আখিরাতে দেওয়া হবে। আপনি যা করেন তা করতে থাকুন আর মনে রাখবেন যে এর বদলা আখিরাতে পাবেন। ৪. জেনে রাখুন, একজন বিশ্বাসীর জন্য সত্যিকারের আভিজাত্য রাত্রি বেলা নামাজে দাঁড়ানোর মাঝে। ৫. আর তার প্রকৃত মর্যাদা আত্মনির্ভরশীলতার মাঝে।...

সালাতে খুশু – একটি সহজ ও কার্যকরী নসীহা

আপনি যদি কোন ভিআইপি কারো সাথে দেখা করতে যান, তখন সর্বাপেক্ষা উত্তম পোশাক পরিধান করেন, কোন গুরুত্বপূর্ণ মিটিং এ গেলে উত্তম পোশাক পরেন, কোন অনুষ্ঠানে গেলেও উত্তম পোশাক পরেন। সালাতে কার সাথে দেখা করতে যান আপনি ভাবতে পারেন? আপনার রবের সাথে দেখা করতে যান, তাঁর সাথে কথা বলতে যান, তাঁর সাথে আপনার কথোপকথন হয়। তাহলে সালাতে কেন ভালো ও উত্তম পোশাক পরিধান করেন না? এটা কি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় না? আপনিই তো বলেন যে সালাতে মন ধরে রাখতে পারি না, সালাতে ও সালাতের বাইরে খুশু (একাগ্রতা, নিমগ্নতা, ভয়) আসে না। দেখুন আল্লাহ কীভাবে বলেছেন সালাতের ব্যাপারেঃ “হে আদম সন্তান, প্রত্যেক মাসজিদে (সালাত ও সালাতের সময়) সুন্দর পোশাক-পরিচ্ছদ গ্রহন করো।” (সূরা আরাফঃ ৩১) খুশুর মাধ্যমে আপনার মধ্যে প্রশান্তি ও একাগ্রতার একটা বীজ এই পোশাকেই নিহিত রয়েছে। কীভাবে? আপনি যখন একটি বিশেষ পোশাক পরিধান করবেন একজন বিশেষ কারো জন্য, তখন নিশ্চয়ই আপনার মন এই পোশাকের সাথে সেই বিশেষ কারো জন্যই নিমগ্ন থাকবে। তাহলে আপনি যখন পৃথিবীর কারো জন্য নয়, একমাত্র আল্লাহর জন্য একটি বিশেষ পোশাক পরিধান করবেন তখন কি অন্যদিকে আপনার মন চলে যেতে পারে? না, পারে না। কারণ এই পোশাক পরিধানের একটাই লক্ষ্য, সেই লক্ষ্যের দিকেই আপনার মন একাগ্রভাবে নিমগ্ন। এভাবে সালাতের ভেতরে একাগ্রতা ও নিমগ্নতা আনতে পারেন। তাহলে চিন্তা করে দেখুন আল্লাহ কেন সালাতে উত্তম পোশাক পরিধান করতে বলেছেন, তাঁর সাথে প্রশান্তির অনুভূতি জাগানোর জন্য, তাঁর সাথে উত্তম কথোপকথনের মাধ্যমে প্রশান্তি অর্জনের জন্য। আরেকটি বিষয় হল আমরা সালাতের বাইরেও এই খুশু পাই না, আল্লাহর ভয় কাজ করে না; কারণ এই সালাতের ভেতরেই রয়েছে। সালাত যেহেতু যাবতীয় মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে, আর যদি না রাখে তবে নিশ্চয়ই আমার সালাতে সমস্যা আছে। তাহলে সমস্যা কোথায়? কেন আমি আমার চক্ষুকে খুশুর...

নামাজে মনোযোগ ধরে রাখার কিছু পন্থা

আপনি যেই ব্যবসা, চাকরী বা কাজই করুন না কেন, আল্লাহ একটি সয়ংক্রিয় প্রক্রিয়া আমদের মাঝে চালু রেখেছেন, একটি স্বর্গীয় প্রক্রিয়া যার মধ্য দিয়ে কোন ব্যক্তি মরুভুমিতে থাকুক, কিংবা নিউইয়র্কে থাকুক, বা কোন বনের মাঝে থাকুক, যেখানেই থাকুক না কেন সে সবসময় আল্লাহর সাথে সম্পর্কযুক্ত থাকবে। কিসের মাধ্যমে? সালাত বা নামাজের মাধ্যমে। আপনি নামাজ পড়েই এটা ভাবতে পারেন না যে আল্লাহর সাথে আপনার যোগাযোগ স্থাপিত হয়ে গেল। আপনার নামাজের মাঝে একটি বিশেষ গোপন উপাদান থাকতে হবে, যা আপনাকে আল্লাহর সাথে যুক্ত রাখবে। যদি সেই জিনিস অনুপস্থিত থাকে তাহলে আপনার নামাজ হয়ে পড়বে অন্তঃসারশূন্য একটি ব্যাপার। হ্যাঁ, আপনি অন্তত নামাজের জন্য হয়তো দাঁড়াচ্ছেন কিন্তু সেখানে একটা ফাঁক রয়ে যাচ্ছে। এখন সেই গোপন জিনিসটি কি? আল্লাহ বলছেন قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ ”মুমিনগণ সফলকাম হয়ে গেছে”, ’الَّذِينَ هُمْ فِي صَلَاتِهِمْ خَاشِعُونَ ‘ এখানে গোপন জিনিসটি হলো خَاشِعُونَ সত্যিকারের মু’মিনরাই সফল হয়েছে, যাদের সালাতে রয়েছে খুশু। বিনম্রতা, আনুগত্য, অখন্ড মনোযোগ, এই সবকিছুই হচ্ছে খুশু। প্রকৃত অর্থে যেটা আমাদেরকে করতে বলা হয়েছে তা হল, যেই মাত্র আমি বলবো আল্লাহু আকবার, আমরা অন্য আরেকটি জগতে চলে যাব, এই দুনিয়া তখন আপনার কাছে অস্তিত্বহীন হয়ে যাবে, আপনার সন্তানের কথা মনে থাকবে না, স্ত্রীর কথা মনে থাকবে না, আপনার কাজের কথা মনে থাকবে না, কোন কিছুরি অস্তিত্ব থাকবে না, শুধু মাত্র আপনি এবং আল্লাহ, ব্যাস। যখন আমরা নামাজে দাঁড়াবো তখন আমাদেরকে এই রকম মনোজগতে প্রবেশ করতে হবে। তাই সাধারণভাবে বলা হয় যে নামাজের জন্য একটি নিরিবিলি জায়গায় দাঁড়াতে। আর আমার ব্যক্তিগত উপদেশ হচ্ছে নামাজ শুরু করার আগে সেই জায়গায় আগে চুপচাপ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকুন এবং মনের সব চিন্তাভাবনা আগে সরিয়ে ফেলুন, মাথা থেকে সব চিন্তা ঝেড়ে ফেলুন, এবং নিজেকে শুধুমাত্র সালাতের সাথে যুক্ত করুন। এবং যখন নামাজ পড়বেন, জানুন...

কেন আমরা ঈদ উদযাপন করছি?

আজ আমরা কী উদযাপন করছি? প্রতি বছর আল্লাহ আজ্জা ওয়া জ্বাল আমাদেরকে এভাবে একত্রিত করেন, দুই ঈদে- একটি হলো ঈদুল ফিতর আর এটি হলো ঈদুল আযহা। আর এই উভয় অনুষ্ঠানেই প্রতি বছর আমাদের একই বিষয় মনে করার কথা এবং একই বিষয়ের উপর চিন্তা-ভাবনা করার কথা। এটা নিশ্চয় এতো গুরুত্বপূর্ণ যে, আমাদের গোটা উম্মাহ তথা পৃথিবীর জনসংখ্যার এক পঞ্চমাংশের প্রতি বছর এই ঐতিহ্য – আমাদের পিতা ইব্রাহিম (আ) এর ঐটিহ্য – নিয়ে পর্যালোচনা করা দরকার। আর এটি আসলেই একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই পৃথিবীর সকল সভ্যতারই কোন না কোন উৎসব রয়েছে। যেমন, বিভিন্ন জাতির স্বাধীনতা দিবস, সাংস্কৃতিক দিবস বা অন্য কোন উৎসবের দিবস। বাস্তবিকপক্ষে, যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের অতিরিক্ত বেশী উৎসবের দিন রয়েছে। এক সপ্তাহ পর পরই কোন না কোন ছুটির দিন এসে উপস্থিত হয়, যেমন শ্রমিক দিবস, মেমোরিয়াল দিবস, স্বাধীনতা দিবস বা অন্য কোন ধরণের দিবস। এমনকি প্রাচীন সভ্যতাগুলোতেও আমরা বিভিন্ন উৎসব বা ধর্মানুষ্ঠানের সন্ধান পাই। যেখানে পুরো জাতি একত্রিত হয়ে বিভিন্ন উৎসব উদযাপন করে। সকল সভ্যতাতেই এই ধর্মানুষ্ঠানগুলোতে মানুষ একত্রিত হয়, সুখী সময় কাটায়। সাধারণত এই অনুষ্ঠানগুলোর প্রত্যেকটিই কোন ঐতিহাসিক ঘটনার সাথে সম্পর্কযুক্ত। ইতিহাস জুড়ে এটাই জাতিগুলোর প্রকৃতি। মানুষের উদযাপিত এই উৎসবগুলো বড় কোন ঐতিহাসিক ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট যা সেই জাতির আত্মপরিচয়ের অংশ। আর সেই হিসেবে আমাদের দীনের ক্ষেত্রে আল্লাহ আজ্জা ওয়া জ্বাল আমাদেরকে বিক্ষিপ্ত কোন দিবস দেয়ার পরিবর্তে এই দুইটি ঈদ দান করেছেন। আর এই দুই দিন মুহাম্মাদ (স) এর গোটা উম্মাহ একসাথে উদযাপন করে। সারা পৃথিবীজুড়ে, সকল ভাষাভাষী মানুষ, সকল সংস্কৃতির মানুষ…আমরা একত্রিত হই এবং একসাথে উদযাপন করি। আর অবশ্যই এই সময়ে আমরা উত্তম পোশাক পরিধান করি, ভালো খাবার খাই, আত্মীয়-স্বজনের বাসায় যাই এবং এই ধরণের আরও সুন্দর সুন্দর কাজ করি। কিন্তু ঠিক একই সময়ে আমাদের এটা স্মরণ...

আল্লাহর রাসূল (সঃ) এর প্রতি ভালোবাসার প্রমাণ

আল্লাহ আপনার অন্তরে ঈমানকে সুন্দর করেছেন। আল্লাহ ঈমানকে আপনার কাছে প্রিয় করেছেন এবং তিনি একে আপনার হৃদয়ে সৌন্দর্যমন্ডিত করেছেন। তবে এটা দ্বারা কী বোঝায়? এটা দ্বারা বোঝায়, রাসূল (সাঃ)-এর জন্য আমাদের যে ভালোবাসা রয়েছে, যা আমরা আমাদের হৃদয়ে বহন করি তা সুন্দর। যখন আপনার হৃদয়ে সুন্দর কিছু থাকে, এক সময় এই সৌন্দর্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। ধারক তাই প্রকাশ করে যা এটা ধারণ করে। সুতরাং যখন কারো অন্তরে রাসূল (সাঃ)-এর জন্য ভালোবাসা থাকে তখন তার বহিঃপ্রকাশ কীভাবে ঘটে? একটা ব্যাপার যা ঘটে তা হচ্ছে, যার অন্তরে রাসূলুল্লাহ মুহাম্মদ (সাঃ) আছেন আমার হৃদয়ও তাদের প্রতি কোমল হয়ে যায়। এটার একমাত্র কারণ হচ্ছে, আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ) কে এতো ভালোবাসি যে, যার আল্লাহর রাসূল (সঃ) এর প্রতি ভালোবাসা রয়েছে, তার জন্য আমারও ভালোবাসা রয়েছে। এটাই মূলত রাসূল (সাঃ)-এর প্রতি আমার ভালবাসার প্রমাণ। তাই যখন একজন মুসলিম অন্য একজন মুসলিমকে নিয়ে ঠাট্টা করার সময় দ্বিতীয়বার চিন্তা করে না, তখন বুঝতে হবে আল্লাহর রাসূল (সঃ) এর প্রতি ভালোবাসায় তার কিছু একটা ঘাটতি রয়েছে। সর্বোপরি রাসূলুল্লাহ (সঃ) সকলকে একইভাবে ভালবাসতেন। আপনাদের এ ব্যাপারটি সহজে বোঝাবার জন্য একটি ভিন্ন উদাহরণ দেওয়া যাক। অনেকেই এমন আছেন যাদের পিতামাতা মারা গেছেন এবং যখন বাবা-মা মারা যান, এটা একটা কষ্টকর ব্যাপার। আপনি তার সঙ্গ চান, আপনি আপনার পিতার অভাব বোধ করেন, তাকে স্মরণ করতে চান, আপনি জানেন কী করতে হবে? আপনি তার কিছু বন্ধুকে দেখতে যান। আপনার পিতার স্মরণে তার বন্ধুদের দেখতে যাওয়া, তাদেরকে সম্মান দেখানো…এ কাজগুলোই এখন আপনার নিকট একান্ত প্রিয় কাজ। আমার বাবা এই লোকগুলোকে ভালবাসতেন, তাই আমি তাদের ভালোবাসি। এই লোকগুলোর সঙ্গ আমাকে এমন ব্যক্তির কথা স্মরণ করিয়ে দেয় যাকে আমি ভালোবাসি কিন্তু যাকে আমি এখন আর দেখতে পাই না। আপনার এবং আমার মধ্যেকার পারস্পারিক সম্পর্কটাও ঠিক এমনই।...

হযরত হুসাইন ইবনে আলী (রা) এর তোতলামি

মহানবী (সঃ) …খুবই স্পর্শকাতর ঘটনা। তাঁর নাতি, আলী এবং ফাতিমা (রা) এর সন্তান ছিলেন হুসাইন (রা)। দুই ভাইয়ের মাঝে তিনি ছিলেন ছোটজন, হাসান এবং হুসাইন, আল্লাহ তাঁদের উভয়ের উপর সন্তুষ্ট হোন। ছোট ভাই তোতলাতেন। তাঁর এত বেশি তোতলামি ছিল যে তিনি একটি বাক্যও শেষ করতে পারতেন না। একটি বাক্য শেষ করতে তাঁর অনেক সময় লাগতো। তাঁর উপর একজন ছোট শিশু হিসেবে … একে তো একটা শিশুর বেড়ে উঠার ক্ষেত্রে এটা খুবই কষ্টদায়ক এবং বেদনাদায়ক ছিল, তার উপর তাঁর বড় ভাই হাসান (রা) ছিলেন অসাধারণ বাগ্মী, সুভাষী এবং আল্লাহ প্রদত্ত বিশেষ গুণের অধিকারী বক্তা। তো, চিন্তা করুন ছোট ভাই কেমন চাপ অনুভব করতেন যিনি এতো বেশি তোতলাতেন! যাইহোক তিনি অনেক বেশি তোতলাতেন। আমরা জানি, বাচ্চারা যখন একটু বড় হতে শুরু করে, ৪ বা ৫ বছর বয়সের সময় তারা যখন কিছুটা সাহস অর্জন করে এবং সে সময় তারা অনেক কথা বলতে পছন্দ করে। একদিন মহানবী (স) কিছু সাহাবীর সাথে বসে ছিলেন, আর তাঁর দুই নাতিও তাঁর সাথে বসে আছেন। তখন ছোটজন যে তোতলাতো সে কিছু একটা বলার চেষ্টা করছিল। কারণ তারা তাঁদের নানাকে ভালোবাসতো। তারা তাঁর সাথে অনেক কথা বলতো। তো, সে কিছু বলার চেষ্টা করছিল… আর রাসূলুল্লাহ (স) সবাইকে এতো বেশি সম্মান করতেন যে কেউ যদি কিছু বলা শুরু করতো তিনি চুপ করে থাকতেন, তিনি সেই ব্যক্তির দিকে শুধু তাঁর চেহারাই ফেরাতেন না, তিনি তাঁর বক্ষ সমেত তার দিকে ফিরতেন, এবং বক্তার কথা বলার সময় বক্তার দিকে তাকিয়ে থাকতেন। আচ্ছা তারপর, হুসাইন (রা) কথা বলা শুরু করলেন, আর রাসূলুল্লাহ (স) থেমে গেলেন এবং তার দিকে ফিরলেন। ফলে সেখানকার অন্য সবাইও তার কথা শুনতে লাগলেন। কিন্তু শিশুটি এতো বেশি তোতলানো শুরু করলেন যে পরিস্থিতি কিছুটা বেমানান হয়ে উঠলো। তাই কিছু মানুষ...

সমালোচনামূলক চিন্তা-ভাবনার গুরুত্ব

আপনি যদি ইব্রাহিম (আ) এর প্রতি বিশ্বাস করেন তাহলে আপনি কখনোই সব কিছু চোখ বন্ধ করে মেনে নিতে পারেন না। কারণ তাঁর গোটা জিন্দেগী ধরে তিনি শুধু প্রশ্ন করার কারণেই ঝামেলায় পড়েছেন। তিনি কখনোই প্রশ্ন করা বন্ধ করেন নি। তিনি কি তাঁর পিতাকে প্রশ্ন করেছিলেন? হ্যাঁ। তিনি কি রাজাকে প্রশ্ন করেছিলেন? দেখুন কুরআন কী বলে– “ইব্রাহীম যখন (নমরুদকে) বললেন, আমার পালনকর্তা হলেন তিনি, যিনি জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান। সে বলল, আমি জীবন দান করি এবং মৃত্যু ঘটিয়ে থাকি। ইব্রাহীম বললেন, নিশ্চয়ই তিনি সুর্যকে উদিত করেন পূর্ব দিক থেকে এবার তুমি তাকে পশ্চিম দিক থেকে উদিত কর।” (২:৫৮) তিনি রাজাকে প্রশ্ন করেছিলেন, তিনি তাঁর পিতাকে প্রশ্ন করেছিলেন, তিনি তাঁর সমাজকে প্রশ্ন করেছিলেন। তিনি এমনসব প্রশ্ন করাতে বার বার বিপদে জড়িয়ে পড়েন। ইব্রাহিম (আ) কোন জবাব গ্রহণ করেননি যতক্ষণ পর্যন্ত না জবাবের স্বপক্ষে প্রমাণ পেশ করা হয়েছে, যতক্ষণ না কারণ জানানো হয়েছে, যতক্ষণ না এটা যুক্তিযুক্ত মনে হয়েছে। ইব্রাহিম (আ) ছিলেন একজন বিশুদ্ধ চিন্তাশীল, চিন্তানায়ক। তিনি একনজর দেখেই কোন কিছু গ্রহণ করতেন না। আমি আপনি যদি ইব্রাহিম (আ) এর বংশধর হয়ে থাকি, আমরা কখনোই এর মর্যাদা রক্ষা করতে সমর্থ হবো না যে পর্যন্ত না আমরা চিন্তাশীল হতে পারি। আমাদের এমন চিন্তাশীল হতে হবে যারা প্রশ্ন করে, যারা এক নজর দেখেই কোন কিছু গ্রহণ করে না, যারা শুধু অনুসন্ধানের পর অনুসন্ধান করেই যায়, যারা কখনো এমন বলে না যে আমাদের পিতামাতা করেছেন বলে আমরা এটা করি; তারা মুসলিম হোন বা না হোন। আপনি আমি যা-ই করি না কেন, আমাদের ভাল মন্দের সংজ্ঞা, আমাদের অবশ্যই যা করা উচিত এবং যা উচিত নয়, যা আমরা গ্রহণ করি এবং যা গ্রহণ করি না সবকিছুই বুঝে শুনে হতে হবে। أَدْعُو إِلَى اللَّهِ ۚ عَلَىٰ...