আল্লাহ সূরা বনি ইসরাইলে বলেছেন,”
বলুন, ‘প্রত্যেকেই নিজ প্রকৃতি অনুযায়ী কাজ করে থাকে এবং আপনার রব সম্যক অবগত আছেন চলার পথে কে সবচেয়ে নির্ভুল।‘”-(১৭:৮৪) এটি সূরা বনী-ইসরাইলের একটি খুব সুন্দর আয়াত। আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা আমাদের প্রত্যেককে কঠিন পরিশ্রম করার নির্দেশ দিয়েছেন আমাদের নিজ প্রকৃতি,প্রবণতা,আকৃতি,গঠনের উপর ভিত্তি করে। এর মানে হচ্ছে আমাকে আল্লাহ বিভিন্ন রকমের দক্ষতা দিয়েছেন, বিভিন্ন রকমের জেনেটিক্স,বিভিন্ন রকমের প্রতিভা, শক্তির বিভিন্নতা আপনাদের থেকে।
আপনাকে আমার চেয়ে ভিন্ন প্রকৃতি আপনাকে দেওয়া হয়েছে,বিভিন্ন সুযোগ,ভিন্নরকম জেনেটিক অবকাঠামো। আপনাকে কিছু প্রতিভা দেয়া হয়েছে,আমাকে অন্যরকম প্রতিভা দেয়া হয়েছে, অন্যজনকে অন্যরকম প্রতিভা দেয়া হয়েছে। প্রথম কথা হল আল্লাহ বলেছেন নিজের সক্ষমতা অনুযায়ী কাজ করতে। আমরা যখন আল্লাহর এই নির্দেশনা সঠিকভাবে পালন করিনা তখন কি হয়? সবাই চিন্তা করতে শুরু করে,আমার লক্ষ্য ওই মানুষটির সাথে তুলনা করে সাজানো উচিত। এই মানুষটি এই লক্ষ্যে,ওই লক্ষ্যে পৌঁছেছেন, আমি কেন পৌঁছাতে পারিনি। আমার ভাই মেডিকেল কলেজে খুব ভাল করেছে কিন্তু আমি বায়োলজি পছন্দ করিনা তাই আমি একজন ব্যার্থ।
আপনি কিছু বুঝতে পারছেন না মানে হল আপনার বোঝার সক্ষমতা আপনার ভাইয়ের সক্ষমতার মাঝে পার্থক্য রয়েছে। আমি জানিনা, আপনি হয়ত একজন ভাল অলিম্পিক ক্রীড়াবিদ হতে পারেন। আমি জানিনা,আপনি হয়তো একজন খুব ভাল লেখক হতে পারেন। আপনাকে আপনার ভাইয়ের মত প্রতিভা না দিয়ে হয়ত অন্য প্রতিভা দেয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেছেন,”আর যা দ্বারা আল্লাহ তোমাদের কাউকে কারো উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন তোমরা তার লালসা করো না।”(সূরা: নিসা- ৪:৩২) আল্লাহ কাউকে একটা বিষয়ে খুব ভাল দক্ষতা দিয়েছেন,হয়ত সে বিষয়ে আপনার দক্ষতা একদম কম,আবার আপনাকে যে বিষয়ে দক্ষতা দিয়েছেন অন্যজনের সে বিষয়ে হয়ত দক্ষতা নেই। তাই প্রথম কথা হল, এই আয়াতগুলোর মাদ্ধমে বলতে চাচ্ছি- আল্লাহ আমাদের একটি সুন্দর নির্দেশনা দিয়েছেন,নির্দেশনা মানে হল আমাদেরকে একটি লক্ষ্যে পৌঁছান।
আজকাল অনেক মানুষের মনে প্রশ্ন আছে,তারা জিজ্ঞেস করে, তাহলে আমাদের লক্ষ্য কি হতে পারে? আমাদের সকলের আসল লক্ষ্য সমান,আমরা আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালাকে খুশি করতে চাই,তাঁর অবাধ্য হতে চাই না, রোজ হাশরের মাঠে তাঁর সামনে ভাল আমল নিয়ে দাঁড়াতে চাই। হা এটা বুঝতে পেরেছি। কিন্তু একটা কথা জানেন কি,শুধু হারাম কাজ থেকে দূরে থাকা,হালাল কাজ করা,সালাত কায়েম করা,সিয়াম পালন করা এর বাইরেও আল্লাহ আপনাকে কিছু দক্ষতা দিয়েছেন তাই না? আল্লাহ আপনাকে বিভিন্ন রকমের প্রতিভা দিয়েছেন,তাই না? আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা চান সেই প্রতিভাগুলিকে সুন্দর নির্দেশনার মাধ্যমে প্রসারিত করা যেন এই দুনিয়ায় যা আপনি অর্জন করেছেন যেমন যে ডিগ্রি পেয়েছেন,যে চাকরি পেয়েছেন,যে ব্যাবসা শুরু করেছেন, সেই ডিগ্রি,চাকরি,ক্যারিয়ার যা আপনি অর্জন করেছেন সেগুলি অন্যদের জন্য সুন্দর নিদর্শনের মাদ্ধমে প্রচার প্রসার করা। এই কাজটি দুনিয়ায় একটি ভাল কাজ হিসেব প্রচার করতে পারেন।
এটি আপনার নিজের জন্য একটি বড় লক্ষ্য হতে পারে। আপানি কোন কিছু অর্জন করেছেন কিন্তু শুধুমাত্র আপনারা পিতামাতাকে গর্বিত করার জন্য না। এখন তাঁরা আপনাকে নিয়ে অনেক গর্বিত,তাহলে এখন আপনার কাজ কি?আপনাকে এখন কোন বিষয়টি অর্জন করতে হবে? আমি এটি অর্জন করার জন্য এত সংগ্রাম করেছি,তা তো অর্জন করতে পেরেছি এখন আমি অনেক হতাশ। আমার এখন কোন লক্ষ্য নেই তাই আমি অনেক রাগান্বিত। একটি বৃহত্তর উদ্দেশ্য থাকা উচিত এবং সেটা আপনাকে সাজিয়ে নিতে হবে এবং সেটা হবে আল্লাহ আপনাকে যতটুক করার সামর্থ্য দিয়েছে তার উপর ভিত্তি করে। মানুষ আমার কাছে এসে জিজ্ঞেশ করে,”উস্তাদ! আমাকে বলে দিন আমি কোন বিষয়ে ভাল?” না, আমি বলতে পারবনা আপনি কোন বিষয়ে ভাল। আল্লাহ বলেছেন,”বরং মানুষ নিজের সম্পর্কে সম্যক অবগত”( সূরা:কিয়ামাহ- ৭৫:১৪) নিজেকে দেখুন,আল্লাহ আপনাকে যে প্রতিভা দিয়েছেন তার খোঁজ করুন,জানুন।