“আর যারা বলে, ‘হে আমাদের রব, আপনি আমাদেরকে এমন স্ত্রী ও সন্তানাদি দান করুন যারা আমাদের চক্ষু শীতল করবে।” (২৫ঃ৭৪)
এর মানে কী জানেন? এর মানে হলো – আপনি আপনার স্ত্রী ও সন্তানদের দেখে এতো খুশি হয়ে যান যে খুশিতে কান্না চলে আসে। যখন দেখেন যে আপনার সন্তান কুরআন তিলাওয়াত করছে এবং সে কুরআন তিলাওয়াত করতে ভালোবাসে, এটা দেখে আপনি এতো খুশি হোন যে চোখ দিয়ে আনন্দ অশ্রু নেমে আসে। যখন দেখেন যে, আপনার স্ত্রী কত কঠোর পরিশ্রম করে আপনার সন্তানদের যত্ন নিচ্ছে – এটা দেখে আপনি এতো খুশি হোন যে আনন্দে চোখ ভিজে উঠে। আবার স্ত্রী যখন দেখে যে, তার স্বামী সন্তানদের নিয়ে মসজিদে যাচ্ছে, তখন স্ত্রীরও চোখ দিয়ে খুশিতে আনন্দ অশ্রু নেমে আসে।
আমাদের স্বামী-স্ত্রীরাও কান্না করেন, কিন্তু তারা আসলে খুশিতে কান্না করেন না। তারা ভিন্ন কারণে কাঁদেন। আমরা আল্লাহর নিকট আনন্দ অশ্রু কামনা করছি। আমরা আমাদের পরিবারের উপর খুশি থাকতে চাই। কিভাবে আমরা এটা করবো ? এখন তো বাসায় এসেই স্ত্রীর সাথে ঝগড়া বাধিয়ে দেন। প্রতিদিন। বাসায় প্রবেশ করলেই কথোপকথনের চিত্রটা এমন হয় –
স্ত্রী: তোমার দেরি হলো কেন?
স্বামী: কেন জিজ্ঞেস করছো? জানোনা যে রাস্তায় ট্রাফিক। জানালা দিয়ে একটু তাকিয়ে দেখো।
প্রতিদিন, প্রতিদিন এরূপ ঝগড়া বাধিয়ে দেন। তারপর আপনার মেজাজ এতো খারাপ হয়ে যায় যে, বাচ্চাদের সাথেও রাগ দেখাতে শুরু করেন।
-“তোমার হাতে খেলনা কেন?” “তোমাকে এতো খুশি খুশি লাগছে কেন?” “এই বাসায় কেউ খুশি থাকতে পারবে না। ” “তোমার বাড়ির কাজ করেছো?”
বাচ্চা তখন ভয়ে ভয়ে বলে –
“আ -আ -জ আমাদের কোনো হোম ওয়ার্ক ছিল না।”
– “কেন ছিল না। দাঁড়াও, আমি তোমার স্কুলে অভিযোগ করবো।”
ইয়া আল্লাহ! এটা “কুররাতা আইনুন” (চক্ষু শীতলকারী আচরণ নয়) নয়।
এমন অনেকেই আছেন যারা নামাজ পড়তে মসজিদে আসেন। নামাজ আদায় করার পর তো আপনার অন্তর প্রশান্তিতে ভরে উঠার কথা। এই নামাজ আপনাকে শান্ত করার কথা, স্থির করার কথা। কিন্তু নামাজ শেষ করার পর যখন বাসায় ফিরলেন মনে হয় যেন একটা টর্নেডো বাসায় প্রবেশ করলো। বাচ্চারা ভয়ে খাটের নিচে লুকায়। স্ত্রী তাড়াতাড়ি ফোন রেখে দেয়। আপনি আপনার পরিবারের ভয়ের কারণ হতে পারেন না। আপনাকে দেখে তো পরিবারের সবার উৎসবে মেতে উঠার কথা। বাসায় প্রবেশ করার সাথে সাথে বাচ্চাদের তো দৌড় দিয়ে এসে আপনাকে জড়িয়ে ধরার কথা। সন্তানদের সাথে আপনার এমন মধুর সম্পর্ক গড়ে তোলা উচিত।
কেন আমি এসব বিষয় নিয়ে কথা বলছি? ২০ বছর আগে, ৩০ বছর আগে, ৪০ বছর আগে সন্তান প্রতি পালনের পদ্ধতিটা অন্যরকম ছিল। কিন্তু এখন আর সেভাবে করলে হবে না। আমি পিতাদের উদ্দেশ্য বলছি – এখন বাচ্চাদের উপর শুধু কর্তৃত্ব খাটালে হবে না। এখন আপনাকে তাদের ‘বন্ধু এবং শাসক’ হতে হবে। আমাদের বাবারা আমাদের বন্ধু ছিলেন না। তারা শুধু শাসন করতেন। আমরা আমাদের পিতার পিঠ চাপড়িয়ে বলিনি যে, “চলো বাবা, ক্রিকেট খেলি। চলো ফুটবল খেলি।” না, আমরা এমন টা করিনি। আপনি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলতেন, আব্বাজান। তারপর তাড়াতাড়ি তাঁর জুতো এনে দিতেন। এরকম ঘটতো বিশ বছর, ত্রিশ বছর আগে। এখন আপনার বাচ্চা এমনটা করে না। আর তারা করবেও না।
আমরা এখন ভিন্ন এক শতাব্দীতে বাস করছি। আমাদের বাচ্চাদের সামনে এখন বহু কিছু উন্মুক্ত। আপনি মুসলিম বিশ্বে থাকেন বা যেখানেই থাকেন না কেন, পিতা-মাতাদের সম্মান করার বিষয়টা অবশ্যই থাকবে… কিন্তু আমাদের বাচ্চাদের নিকট একমাত্র যে ব্যক্তি ইসলামকে তুলে ধরবে সে হলো আপনি নিজে। যদি শুধু কর্তৃত্ব খাটান তাহলে তাদের নিকট সেটা উপস্থাপন করতে সক্ষম হবেন না। যদি শুধু চিৎকার চেঁচামেচি করেন আর আদেশ করেন, কিন্তু বন্ধু বৎসল আচরণ না করেন। (তাহলে তাদের নিকট ইসলামকে তুলে ধরতে সমর্থ হবেন না)
আপনার বাচ্চারা যে সব ভিডিও গেইম খেলে আপনারও সেগুলো শেখা উচিত। যদি তাদের খেলতে দেন … প্রথমত এটা খারাপ অভ্যাস। কিন্তু যদি তাদের খেলতে দেন, তাহলে ভালো হয় আপনিও তাদের সাথে খেলেন। বাসায় ফিরেই খবর দেখতে বসবেন না। আপনি তো পৃথিবীকে পরিবর্তন করতে যাচ্ছেন না।সারাজীবন ধরে তো যথেষ্ট খবর দেখেছেন। কিন্তু কিছুই পরিবর্তন করতে পারেন নি।
স্টক মার্কেটের খবর জেনে আপনার কী? আপনার তো স্টক নেই, তাহলে এই খবর দেখছেন কেন? এর সাথে আপনার কোনো সম্পর্ক নেই। যখন গাড়িতে থাকেন তখন খবর শুনেন। বাসায় এসেই টিভি দেখতে বসবেন না, খবর দেখতে বসবেন না। বাসায় ফিরে আপনার বাচ্চাদের সাথে খেলা করুন। তাদের হোম ওয়ার্ক তৈরিতে সাহায্য করুন। তাদের সাথে কথা বলুন। তাদেরকে সাথে করে মসজিদে নিয়ে যান। এসব করুন। এমন আচরণ করুন যেন তারা আপনাকে ভালোবাসে।
আমি বলছি, যদি পিতারা এমনটা না করেন তাহলে আমরা এই উম্মাহকে হারাতে যাচ্ছি। আমরা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে হারিয়ে ফেলবো। আমি আপনাদের বলছি, গ্যারান্টি দিচ্ছি।