তারপর আল্লাহ বলেন, خَسِرَ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةَ – এ বিষয়ে কথা বলেই আমি শেষ করবো। যখন মানুষ এমন করে তখন তারা এই দুনিয়া এবং পরকাল উভয়টাই হারায়। এর মানে কী? এই লোকটি দুনিয়া এবং পরকাল দুইটাই হারিয়েছে। আপনি যদি নিজেকে ধরে রাখতে পারেন…দেখুন, আল্লাহ বলেছেন- لَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنسَانَ فِي كَبَدٍ – ‘’নিঃসন্দেহে আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি কষ্ট- ক্লেশের মধ্যে।’’
আপনি আল্লাহকে বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, আপনার জীবনে চ্যালেঞ্জ থাকবেই। আপনি আল্লাহকে বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, জীবিকা উপার্জন করতে আপনাকে প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে, অসুস্থতার সাথে লড়াই করা কষ্টকর হবে। এই জীবনটা এমন নয় যে, বিশ্বাসীরা এখানে বিলাসী জীবন যাপন করবে আর অবিশ্বাসীরা কষ্টে থাকবে। আল্লাহ সব মানুষকেই কষ্ট- ক্লেশের মধ্যে সৃষ্টি করেছেন। এটাই তিনি বলেছেন।
এখন, আপনি যদি ঈমানের সাথে এই কষ্ট-ক্লেশ অতিক্রম করতে পারেন, তাহলে এই জীবনে যেমন আপনি সফলতা লাভ করবেন, তেমনি পরকালীন জীবনেও সফল হবেন। আপনি এমন মানসিক প্রশান্তি লাভ করবেন যা অবিশ্বাসী কারো পক্ষে লাভ করা সম্ভব নয়। আপনি এবং অবিশ্বাসী দুজনেই অসুস্থ, কিন্তু আপনি অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও প্রশান্তি লাভ করেন আর সে কোন প্রশান্তি পায় না। আপনি এবং অবিশ্বাসী দুজনে একই ধরনের অর্থনৈতিক সমস্যায় থাকবেন, একই ক্ষুধায় থাকবেন তারপরেও আপনার অন্তর প্রশান্ত। এত কিছুতে অাল্লাহ আপনাকে শান্তি দিচ্ছেন, পুরস্কৃত করছেন। তিনি এখনো আপনাকে রক্ষা করছেন। আর অবিশ্বাসীরা দুর্দশাগ্রস্ত। এখন আপনি যদি এমন মানুষদের অন্তর্ভুক্ত হন, যারা বিপদে পড়লে আল্লাহর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে আপনি এই দুনিয়ার শান্তিও হারাবেন, উপরন্তু আখেরাত তো হারাবেনই। خَسِرَ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةَ – সূরা হাজ, আয়াত ১১।
এ জন্যই আমরা আল্লাহর নিকট এই বলে দোয়া করি, ‘‘হে আমাদের রব, আমাদের দুনিয়ার হাসানাহ দান করুন এবং পরকালের হাসানাহ দান করুন।’’…… এখানে হাসানাহ্ শব্দের উপযুক্ত অর্থ হল, যখন আপনি আল্লাহর কাছে জীবনের জন্য ভালো কিছু চান, এর মানে অন্তর বাহির সবকিছুর জন্যই ভালো চান। ভালো অর্থাৎ বাহির থেকে সুন্দর, সুস্বাদু, উপভোগ্য। এবং আখেরাতের জন্যও কল্যাণ চান। অর্থাৎ ভবিষ্যতের জন্য ভালো চাওয়া, আখিরাতের জন্য চাওয়া একই সময়ে। এটা হলো – ‘‘রাব্বানা আতিনা ফিদ দুনিয়া হাসানাতাও ওয়া ফিল আখিরাতে হাসানাহ’’। এবং এই কারণে ‘ওয়া ফিল আখিরাতে হাসানাহ’। ফলশ্রুতিতে, আখিরাতের কল্যাণ। যেটা ভেতর বাহির উভয় দিক থেকেই সুন্দর।
তো, আল্লাহ বলেন, ذَٰلِكَ هُوَ الْخُسْرَانُ الْمُبِينُ – এটি হল সুস্পষ্ট ক্ষতি। কোরআনে ক্ষতির জন্য তিনটি শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। আল্লাহ ব্যবহার করেছেন – ‘খুসর’, – إِنَّ الْإِنسَانَ لَفِي خُسْرٍ – তিনি ব্যবহার করেছেন, ‘খাসারান’ এবং ‘খুসরান’। ‘খুসরান’ হলো মাসদার, সিগাতুল মুবালাগা; চরম পর্যায়ের ক্ষতি, কল্পনাতীত ক্ষতি। আল্লাহ তাআলা যত ক্ষতির কথা বলেন, তার মধ্যে সবচেয়ে খারাপ হলো এইটা। এমন একজন যে সত্যিকারের ঈমানদার ছিল, কিন্তু যখন সময় খারাপ হয়ে পড়ে তখন ঈমান হারিয়ে ফেলে। যার ফলে সে এই জীবন এবং পরকাল উভয়টাই হারায়। তার কিন্তু সব ছিল, আল্লাহ তার জন্য সব সাজিয়ে রেখেছিলেন, তার জন্য সব সাজিয়ে রাখা হয়েছিল।
সুতরাং, আমি এই কথা বলে শেষ করছি। আল্লাহ আজ্জা ওয়া জ্বাল বর্ণনা করেন, الَّذِينَ يَرِثُونَ الْفِرْدَوْسَ – আল্লাহ বিশ্বাসীদের সম্পর্কে বলেন, তারা ফিরদাউসের উত্তরাধিকার লাভ করবে। অবাক করা শব্দ! আল্লাহ অনেক জায়গায় বলেন, তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। কিন্তু সূরাতুল মু’মিনুনে আল্লাহ বলেন, তারা জান্নাতের উত্তরাধিকার লাভ করবে। আপনারা জানেন, উত্তরাধিকার হলো তা যা আপনি আপনার পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে পেয়ে থাকেন। আপনার পরিবার এটার মালিক ছিল। রাসূল (স) আসলে এটাকে এভাবেই বর্ণনা করেছেন। এর দুটি ব্যাখ্যা রয়েছে। জান্নাত আমাদের পিতা আদম (আঃ) কে দেয়া হয়েছিল। আর তাই আমরা এর জন্য ইতিমধ্যেই যোগ্যতাসম্পন্ন, ইতিমধ্যেই। সুতরাং আমরা মিরাস হিসেবে সেখানে দাখিল হব। আমরা উত্তরাধিকার সূত্রে এটা লাভ করবো।
কিন্তু আরেকটি সুন্দর হাদিস আমি পেয়েছি, যখন আমি এটা নিয়ে অধ্যয়ন করছিলাম, ফিরদাউস নিয়ে পড়ছিলাম। রাসূল (স) এর এক বিস্ময়কর হাদিস। রাসূল (স) বলেন – আল্লাহ জান্নাতুল ফিরদাউসে সকল মানুষের জন্য ঘর তৈরি করে রেখেছেন। সকল মানুষের জন্য, শুধুমাত্র বিশ্বাসীদের জন্য না।
কিন্তু কিছু মানুষ ওখানে যেতে চায় না। বিশ্বাসীরা যখন যাবে তখন তারা অনেক খালি ঘর দেখতে পাবে। সুতরাং তারা সে ঘরগুলো উত্তরাধিকারসূত্রে পাবে। আল্লাহ আমাদেরকে তাঁদের অন্তর্ভুক্ত করুন, যারা উত্তরাধিকারসূত্রে জান্নাতের ঘর পাবে। তাদের নয়, যাদের ঘর খালি থাকবে। যে ঘর আল্লাহ আমাদের জন্য বানিয়েছেন সেগুলো এখন ই সেখানে আছে। আপনার প্রতি আল্লাহর প্রত্যাশা রয়েছে যে আপনি সর্বশ্রেষ্ঠ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেন। সুতরাং এটা নষ্ট করবেন না। দুর্বল ঈমান নিয়ে থাকবেন না। আল্লাহর প্রতি নিজের বিশ্বাস হারাবেন না। জীবনের কঠিন সময় গুলোকে এভাবে দেখুন… আল্লাহ দেখতে চান আপনি সেই ঘরগুলোর জন্য কতটুকু মূল্য দিতে চান। আল্লাহ আমাদের কঠিন সময়গুলো তাঁর সহায়তায় পার করার তৌফিক দিন এবং যাতে আমরা কখনোই, কোন পরিস্থিতিতেই তাঁর উপর থেকে বিশ্বাস না হারাই।