কিন্তু কিছু মানুষের জন্য যাদের ঈমানের অবস্থা একেবারে নড়বড়ে, যখন সময় কঠিন হয়ে যায়…وَإِنْ أَصَابَتْهُ فِتْنَةٌ انقَلَبَ عَلَىٰ وَجْهِهِ এবং যদি কোন পরীক্ষায় পড়ে, তখন মুখ ঘুরিয়ে নেয়।’’ তার মানে কী? তার মানে, আমি আল্লাহর কাছে কিছু চাই না, কিভাবে তিনি আমাকে ছেড়ে গেলেন? কেন তিনি আমাকে বিপদে ফেললেন? কেন তিনি আমার সাথে এমন করলেন? আমাদের সময়ে এটা উপলব্ধি করা খুবই সহজ। আমরা অস্বাভাবিক এক ভোগবাদী সমাজে বসবাস করি যেখানে সব কিছু, সহজলভ্য এবং দ্রুত লাভ করা যায়। বিনোদিত হতে চান? ফোনে একটা app খুললেই হবে। কিছু কিনতে চান? জাস্ট Amazon থেকে অর্ডার করুন, এটা আপনার ঘরে পৌঁছে যাবে। সবকিছুই কষ্ট ছাড়া পাওয়া যায় এবং সবকিছুই সাথে সাথেই পাওয়া যায়। আপনি কিছু চাইছেন? আপনাকে তার কাছে যেতে হবে না, সেটাই আপনার কাছে আসবে। সবকিছুই দ্রুত হয়। আমাদের এখন আপ্যায়িত হওয়ার অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। আপনার একটা অর্ডার যদি দুই থেকে তিনদিন দিনের জন্য দেরি হয় তবে আপনি তাকে 1 star, 2 Star, thumbs down, খারাপ রেটিং দিচ্ছেন। আমরা এতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি।
এমতাবস্থায়, আপনি যখন আল্লাহ কাছে দোয়া করছেন এবং আপনার সমস্যাগুলোর সমাধান চাইছেন। আপনার সবকিছু দ্রুত এবং তড়িৎ করা দরকার। যখন এটা হয় না তখন আপনি বলেন, বাজে সার্ভিস এবং আমার আরো ভালো ভোক্তা অধিকার চাই। আপনার ভাবখানা তখন এমন হয়ে যায় যে, আমি আল্লাহর কাছে আর কিছু চাইবো না, কোন অর্ডার দিব না। আপনি এখন ক্রেতার মত সুবিধা পেতে চান, মনে করেন যে এগুলো পাওয়ার আপনার অধিকার রয়েছে। আর আপনি আল্লাহর কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। এবং বলেন, তিনি আমার কথা শুনছেন না, আমার সমস্যার সমাধান করছেন না।
বুঝতে চেষ্টা করুন যে, সবার জন্য আল্লাহর পরিকল্পনা রয়েছে। তুলনা করার জন্য আপনাদের দুটি উদাহরণ দিচ্ছি। ইয়াকুব (আঃ) এর ক্ষেত্রে দেখুন, তিনি তাঁর ছেলে ইউসুফ (আ) কে হারিয়ে ফেলেন। আল্লাহ বহু বছর পর সে সন্তানকে তাঁর কাছে ফিরিয়ে দেন। আবার মূসা (আঃ) এর ক্ষেত্রে, মূসা (আ) এর মা ও তাঁর সন্তান হারিয়েছিলেন, তিনি তাঁকে পানিতে ভাসিয়ে দেন। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে আল্লাহ সে বাচ্চাটাকে ফেরত দেন। কেননা কয়েক ঘণ্টার মধ্যে যখন বাচ্চাটা ক্ষুধার্থ হয় পরবর্তী খাবার সেই একই মায়ের কাছ থেকেই পায়। কারণ সে অন্য কারো কাছ থেকে খাবে না। আমি কী বলতে চাচ্ছি? এই জগতে আল্লাহ কখনো কখনো নিমেষেই আমাদের বিপদ মুক্ত করবেন, আবার কখনো বা বহু বছর পরে বিপদ মুক্ত করবেন। কিন্তু প্রতি ক্ষেত্রেই আল্লাহ ভালোর জন্যই করবেন।
আমি বিশেষত ইয়াকুব (আঃ) এর গল্প টা পছন্দ করি, কেননা এই ঘটনার কল্যাণকর দিকগুলো চিন্তা করে দেখুন একবার। এত বছর ধরে বাবা কাঁদলেন এবং প্রায় নিজের দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেছিলেন। তাই না? কুরআনের ভাষায়, وَابْيَضَّتْ عَيْنَاهُ – ‘’তাঁর চক্ষুদ্বয় সাদা হয়ে গেল।’’ কোন কোন আলেম যেমন, আলুসি (র) মন্তব্য করেন, তিনি কাঁদতে কাঁদতে অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। এখন এই পুরো সময়টা জুড়ে ইউসুফ (আঃ) কোথায় ছিলেন? তিনি ছিলেন জেলে, প্রথমত তিনি ছিলেন শিশু শ্রমিক এবং বড় হওয়ার পর জেলে যান, বহু বছর জেলে কাটান। হয় তিনি ছিলেন শিশু শ্রমিক’ নতুবা তিনি জেলের কয়েদি হিসেবে জীবনযাপন করেন। সুন্দর জীবন ছিল না। এটা সুন্দর জীবন নয়।
কিন্তু এর পরেও যখন তিনি রাজার স্বপ্নের অর্থ বলেন এবং সেই স্বপ্নের অর্থ হয় যে পুরো অর্থনীতিতে ৭ বছরের মধ্যে ধ্বস নামবে এবং মানুষজন দুর্ভিক্ষে মারা যাবে। আর একজন ই তখন সে সমস্যার সমাধান জানতেন, তিনি হলেন ইউসুফ (আঃ)। যদি তিনি জেলে না থাকতেন, তাহলে রাজাকে সাহায্য করতে পারতেন না। বুঝতে পারছেন? যদি ইউসুফ (আঃ) পুরোটা সময় নিজের বাবার সাথে থাকতেন তাহলে এমনটা ঘটতো না। তাই এখন যেহেতু তিনি সেখানে রয়েছেন আর স্বপ্নের ব্যাখ্যা দেন এবং বলেন আমি পারবোই সমস্যার সমাধান করতে আমাকে সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব দিন। এবং তিনি যখন এই কাজগুলো সম্পাদন করে তখন কী হয়? লাখ লাখ বাবা মাকে আর কাঁদতে হয়নি কারণ তাদের সন্তানরা ক্ষুধার যন্ত্রণায় মৃত্যু বরণ করেনি। একজন বাবা তাঁর সন্তানের জন্য বহু বছর কাঁদেন। কিন্তু তাঁর একক কান্নায় আল্লাহ হাজার হাজার পরিবারকে কান্না করা থেকে বাঁচিয়ে দেন। কারণ তিনি যদি অর্থনীতি এবং ফসল না বাঁচাতেন, পুরো দেশটাতে খরা হতো, মানুষ দুর্ভিক্ষে মারা যেতো এবং যুদ্ধসহ বিভিন্ন সমস্যার সূত্রপাত হতো।
কখনো কখনো আপনি যে সমস্যার মধ্যে দিয়ে যান সেটা শুধু আপনার নিজের জন্যই কল্যাণকর নয়, সেটা অনেকের জন্য সাদাকা জারিয়ায় পরিণত হতে পারে। আপনি সেটা জানেন না। কিন্তু আপনার ঈমানের অবস্থা যদি নড়বড়ে হয়, আল্লাহর উপর আপনার এমন বিশ্বাস থাকবে না। আর তাই এই নড়বড়ে ঈমানের কারণে আপনি আল্লাহর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। انقَلَبَ عَلَىٰ وَجْهِهِ –