আল-কুর’আন কি সহজ?

– উস্তাদ নুমান আলী খান

আমরা মুসলিম জাতি কোনো বিষয়কে জটিল করতে ভালবাসি। কুর’আন ভালবাসে সহজ করতে। ইবরাহিম (আলাইহিসালাম) কোনো বিষয় সহজ করতে ভালবাসতেন। তিনি কোনো বিষয়কে জটিল করতেন না। তাঁকে যে পরীক্ষা দেওয়া হয়েছিল আমাদের সেই পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। তিনি সোজাসুজি কথা বলতেন। আমরা হচ্ছি তাঁর জাতি। আমাদের উচিৎ কোনো বিষয়কে সহজ করে দেখা। এটা আমাদের শিখতে হবে। এই শিক্ষা নিতে হবে কুর’আন থেকে। কুর’আন সমস্ত বড় দার্শনিক ইস্যু, সন্দেহজনক ও ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলো সমাধান দেয় নবীগণ যেভাবে দিয়েছেন সেইভাবে। আমরা আল্লাহ প্রদত্ত পাঠ্যসূচি বদলিয়ে নিজেদের খেয়ালখুশি মত করে নিই।

আপনি যদি ইসলাম এর আকিদা বিষয়ের উপর PHD করতে চান, করুন। খুব ভালো কথা। কিন্তু তার আগে আপনার উচিৎ হবে ইব্রাহীম আলাইহিসালাম এর আকিদার (বিশ্বাস) উপর শিক্ষা নিন। মহান আল্লাহ্‌ সুবহানআল্লাহ সূরা ফাতিহায় ঈমান কি তা আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন। আল্লাহ্‌ তাআলা তাঁর নিজের সম্পর্কে মানবজাতিকে শিক্ষা দিয়েছেন। এটা কি যথেষ্ট নয়? আপনি হয়তো বলবেন আমি সূরা ফাতিহা পড়েছি কিন্তু আকিদা সম্পর্কে আরও বিশুদ্ধ ধারণা দরকার। মানুষজন হয়তো আপনাকে বলবে, আকিদা সম্পর্কে জটিল বিষয়গুলো নিয়ে অভিজ্ঞ কোনো শাইখের সাথে অলোচনা না করলে আপনার ঈমান মজবুত হবে না।

আপনারা অনেকেই হয়তো জানেন রাসূল সালাল্লাহু আলাইহিসালাম একদা কুর’আন পাঠরত অবস্থায় একদল জ্বিন তাঁর পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। তারা কূর’আন এর আয়াত শুনে মুগ্ধ হয়ে অতীব সুন্দর কিছু কথা বল্লো। যা আল্লাহ্‌ তাআলা পবিত্র কুর’আনে লিপিবদ্ধ করে রাখলেন।

জ্বিনরা কি অনেক বড় কোনো আলেম, দাঈ ছিল? বা নবীজির (রা:) সাথে সাথে থাকতো? না। এরা এসবের কিছুই ছিল না। এরা ছিল ঈমানের অযোগ্য সাধারণ ছাত্র। মাত্র কয়েক মূহুর্ত কুর’আন শুনে এরা এতটাই মুগ্ধ ও আশ্চর্যান্বিত হলো যে তারা কুর’আন সম্পর্কে অত্যন্ত সুন্দর কিছু কথা বললো আর এ কথাগুলো এতটাই মূল্যবান যে আল্লাহ তায়ালা সেগুলো কুর’আনে সংরক্ষণ করলেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো তারা যেসব সহজ কথা বলেছেন, আল্লাহ সেগুলোর মর্যাদা দিয়ে কুর’আনে স্থান দিয়েছেন, সেগুলোকেই আমরা আজ জটিল তাফসির আকারে পড়ছি! সহজ কথামালা হয়ে গেল জটিল। আল্লাহ্‌ সহজতা সরলতা চান, মানুষ তাকে কঠিন করে।

আমরা জানি প্রতি শুক্রবার সূরা কাহফ পড়া সুন্নাহ। ‘আসহাফুল কাহফ’ তারা কি অনেক জ্ঞানী কোনো জাতি ছিল? না। তাদের কোনো নবী/রাসুল ছিল না। না ছিল তাদের কোনো বড় আলেমসমাজ। ৬/৭ জন তরুণ বুঝতে পারলো যে মূর্তিপূজা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। তারা মূর্তি পূজা করতে অস্বীকার করলো। ব্যস, এই ঈমানের সরলতাকেই আল্লাহ এতটাই মূল্য দিলেন যে তাঁদের সেই সহজ সরল কথাগুলোকেই তিনি শিক্ষা আকারে আমাদের জন্যে কুর’আনে স্থাপিত করে দিলেন।

আজ আমরা তাঁদের পড়ি, বিশেষ করে ফিৎনার কালে সূরা কাহফ পড়া উচিৎ। তরুণেরা ছিল সাধারণ ঈমানের অধিকারী কিন্তু মহান আল্লাহ তায়ালা তাদের হিরো করে রাখলেন। পবিত্র কুর’আনে আল্লাহ তায়ালা সম্মান দিয়ে তাদের কথা মানুষকে জানালেন। কত সাধারণ মানুষ! অথচ হয়ে গেল মহানায়ক! কাউকে কোনো বইতে উল্লেখ করা সম্মানের, আর আল-কুর’আনে উল্লেখ করাটা তো বিরাট সম্মানের ব্যাপার। আল্লাহ তাঁদের উল্লেখ করেছেন, তাঁদের ঈমানের কারণে। আল্লাহ সহজতা ভালোবাসেন, আমরাই কঠিন করে ফেলি।

আপনি কি কুর’আন পড়েছেন? এর তাফসির? তাফসিরের তাফসির?!! ঐ তাফসিরের আবার টীকা-ভাষ্য?! আপনি যদি ইসলামি বিষয়ে পিএইচডি করতে চান, ওকে, যান, কিন্তু এটা সাধারণ জনগণের জন্যে নয়; তাঁদের জন্যে আল্লাহর কালাম রাখুন। উলামারা গভীরে যাবেন, সেটা অবশ্যই ঠিক আছে, কিন্তু সাধারণদের জন্যে আল্লাহর কালাম। আল্লাহ বলেন, কালিমাতুল্লাহি হিয়াল উলইয়া – আল্লাহর কালাম সর্বোচ্চে। এটাই ঠিক, আল্লাহর কালাম প্রথমে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত, অন্যসব কিছু পরে আসবে। আপনি আল্লাহর কালাম দিয়েই শুরু করুন।

‘ফাবি যালিকা ইয়াফরাহু’ – এর অর্থের প্রতি লক্ষ্য করুন, ‘এই কুর’আনের জন্যে তাঁদের আনন্দিত হওয়া উচিৎ’। এর মানে আরো কিছু। আপনি যখন আল্লাহর কিতাব ছেড়ে অন্যকিছু দিয়ে দ্বীন শেখা শুরু করবেন, আপনি অন্যকিছু দিয়ে এর শেষ করবেন। আপনি এমন কিছু শিখবেন যা আপনাকে রাগান্বিত করবে পাশের মানুষের সাথে, অথবা অন্যরা আপনার সাথে এসব বিষয় নিয়ে রাগান্বিত হবে। আপনি ইসলামের রাগান্বিত বিষয় শেখা শুরু করবেন যদি আল্লাহর কিতাব দিয়ে শুরু না করেন।

আপনি যখন আল্লাহর কিতাব দিয়ে দ্বীন বোঝা শুরু করবেন, এটা আপনার মাঝে আনন্দ নিয়ে আসবে, আপনার আশপাশের মানুষের মাঝেও এই সুখিতা নিয়ে আসবে। এটা আপনাকে সুখী করবে, পাশের মানুষদেরও সুখী করবে। সবকিছুর চাইতে আল্লাহর কালামই উত্তম।