আয়াতুল কুরসির মু’জিজা

আয়াতুল কুরসি মোট ৯ টি বাক্য মিলে একটি আয়াত। ইমেজটিতে দেখতে পারেন। এখানে মাঝে আছে একটি যা ৫ নাম্বারে। মেলানোর সময় ইমেজে একই রকমের দুটি কালার করে বক্স দেখুন ।

১। প্রথম বাক্যটিতে আল্লাহর দুটি নাম রয়েছে – আল হাইউ (চিরঞ্জীব), আল কাইউম (চিরস্থায়ী) আর শেষের বাক্যেও আল্লাহর দুটি গুনবাচক নাম রয়েছে আল আলিউ (সর্বোচ্চ), আল-আজিম (সুমহান)। অর্থাৎ ১+৯ মিলে গেলো। প্রথমদিকে শুরু এবং শেষের দিকের শুরুটি এভাবে মিল হলো।

২। দিত্বীয় বাক্যে রয়েছে – তন্দ্রা (ঘুম ঘুম ভাব, ঘুমের ঝিমুনি) এবং ঘুম তাকে স্পর্শ করে না। তন্দ্রা কাদের আসে? দুর্বল হয়ে পড়লেই না তন্দ্রা আসে – অর্থাৎ তন্দ্রা এবং ঘুম আলস্য এবং দুর্বলতার চিহ্ন। এটি থাকলে আপনি কখনও ক্রমাগত দায়িত্ব ও কোনো কিছু রক্ষনাবেক্ষণের কাজ করতে পারবেন না। এবার উলটো দিক থেকে দ্বিতীয় বাক্য দেখুন – আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সেগুলোর সংরক্ষণে আল্লাহ কখনও ক্লান্ত হন না! অর্থাৎ ২য় বাক্যে দুর্বলতার চিহ্ন তন্দ্রা এবং ঘুম তাকে ধরে না আরে শেষের দিক থেকে দ্বিতীয় বাক্য (৮) এটাই সাক্ষ্য দিচ্ছে যে যাকে দুর্বলতা পেয়ে বসতে পারে না তিনি আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সেগুলোর সংরক্ষণে ক্লান্ত হন না – কারণ ক্লান্তির চিহ্ন ঘুম ঘুম ভাব (তন্দ্রা) এবং ঘুম তাকে স্পর্শ করে না। অর্থাৎ (২+৮) বাক্য মিলে গেলো।

৩। ৩ নং বাক্য হলো – আসমান এবং জমিনে যা কিছু আছে তিনিই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন। এখানে লক্ষ্য করুন যে তিনি পুরো আসমান এবং জমিনের মালিক – মানে সবকিছুর মালিক, এখানে কিছু বাদ থাকছে না। এখানে মালিক অনেকটা রাজার অর্থে – রাজা হলো বিশালতার নিদর্শন। রাজা কেবল এক খন্ড জমির মালিকের নাম নয় – বিশাল একটা এলাকার মালিকের নাম যিনি এই এলাকা নিয়ন্ত্রণ করেন। তাহলে আল্লাহ হলো আসমান ও জমিন এবং এর মাঝে যা আছে সবকিছুর মালিক ও রাজা। আর শেষের দিক থেকে ৭ নং বাক্য কি? তাঁর (আল্লাহর) রাজত্ব আসমান ও জমিনের সব জায়গায়। প্রথম দিক থেকে ৩ নং বাক্যে বলা হচ্চে তিনি আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সব কিছুর নিয়ন্ত্রণ করে এবং শেষের দিক থেকে ৩ নং (৭) এ বলছেন আসমান ও জমিনে তাঁর রাজত্ব বিরাজমান – অর্থাৎ যিনি সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন (৩নং) অবশ্যই তাঁর রাজত্বও (শেষের দিক থেকে ৩নং) হবে সবকিছু নিয়ন্ত্রণের উপর। এভাবে চমৎকার মিলটি পেলাম ৩+৭ নং দিয়ে।

৪। ৪র্থ বাক্যের অর্থ – আর কে আছে যে তাঁর কাছে #তাঁর_অনুমতি_ছাড়া_সুপারিশ_করবে? অর্থাৎ আল্লাহ অনুমতি না দিলে আমাদের ক্ষমতা নেই আমরা কারো পক্ষে সুপারিশ করে তার জন্য একটা বিষয় সহজ করে দেবো – যেরকম আমরা দুনিয়াতে কারো জন্য সুপারিশ করে দিলে কারো জন্য হয়তো একটা জিনিস সহজ হয়ে যায় – চাকরি ক্ষেত্রে হোক, বিয়ের ক্ষেত্রে হোক বা সাক্ষ্যদানের ক্ষেত্রে হোক। এখানে মূল বিষয় হলো তাঁর অনুমতি ছাড়া কেউ কিছু করতে পারবে না আখিরাতে। আবার শেষের দিক থেকে ৪র্থ (৬) বাক্য কি বলে? তারা তাঁর জ্ঞানের কিছুই আয়ত্ত করতে পারে না #যদি_না_তিনি_চান। প্রথম ৪র্থ বাক্যে আছে কেউ সুপারিশ করতে পারবে না কিন্তু #ব্যতিক্রম হলো আল্লাহ যাকে অনুমতি দেবেন। আর শেষের দিক থেকে ৪র্থ বাক্যে হচ্ছে – তাঁর জ্ঞানের কিছুই কেউ আয়ত্ত করতে পার না কিন্তু #ব্যতিক্রম হচ্ছে কাউকে যদি তিনি জ্ঞান দিতে চান সে। এভাবে ব্যতিক্রম ও ক্ষমতার মিল হলো ৪+৬ দুটি ব্যতিক্রম বিষয় – তাঁর অনুমতি ছাড়া কেউ সুপারিশ করতে পারবে না, তাঁর ইচ্ছা ছাড়া কেউ তাঁর কিছু জানতে পারবে না।

এবার মিলে গেলো ১+৯, ২+৮, ৩+৭। ৪+৬ আর বাকী থাকলো কি? মাঝের অর্থাৎ ৫ম বাক্য। সেখানে কি আছে?

৫। “তিনি মানুষের সামনে এবং পেছনের সব জানেন”। তিনি ভালো করেই জানেন আয়াতের ৯টি বাক্যের মধ্যে সামনে কি আছে আর পেছনে কি আছে!! তিনি আয়াতের #ঠিক_মাঝে বাক্যটা দিলেন আর বললেন আমি সামনে এবং পেছনে যা আছে সব জানি!!

এভাবেই আল্লাহ তাঁর বাক্যগুলোকে, শব্দগুলোকে, আয়াতগুলোকে, সূরাগুলোকে তুলে ধরেন আমাদের কাছে।

(১) কুরআন তো বক্তৃতা আকারে এসেছে,

(২) আবার নবী ছিলেন অক্ষরের দিক থেকে পড়ালেখাহীন,

(৩) আবার এটা এসেছে বক্তৃতা আকারে – সুতরাং এডিটিং এর কোনো সুযোগ ছিলো না এবং নাযিলের সাথে সাথেই অন্যান্য সাহাবাদের কাছে চলে যেতো, তাঁরাও মুখস্ত করতো, নামাজে তিলাওয়াত করতো – এডিট করলে অবশ্যই যেকোনো মুখস্তকারী সাহাবী সেটা ধরে ফেলতো।

(৫) সাহাবাদের সময়ে এরকম করে কেউ বলেও নি যে এভাবে মিলিয়ে পড়ুন! তাদের কাছে এই ধারণাও ছিলো না। কারণ এটি বক্তব্য আকারে ছিলো, লিখিত আকারে দেয়নি যে তখন চিন্তা করবে দেখে দেখ। আর পরে তো এডিট করার সুযোগও নেই সংকলন আকারে আনার পর।

(৬) আবার এই সূরা নাযিল হয়েছে দীর্ঘ ১০ বছরে, আবার এই দীর্ঘ দশ বছরে অন্যান্য অনেক সূরা নাযিল হয়েছে…অথচ এই আয়াতের বক্তৃতার অংশ কিন্তু ঠিকই রয়ে গেছে মু’জিজা আকারে – এটা আল্লাহর বাণী, এজন্যই এভাবে দিতে পেরেছেন একজন অক্ষরজ্ঞানহীন নবীর মাধ্যমে – আমাদের কাছে, আমাদের বিশুদ্ধ পথে পরিচালনা জন্য।

আমরা বেশি ভুল করি বক্তব্য দিলে, কারণ একবার বলে ফেললে সেটা ফেরানোর উপায় নেই। কিন্তু লিখিত জিনিস বারবারও এডিট করা যায়। কিন্তু এই কুরআন বক্তব্য হওয়া সত্ত্বেও কেবল নির্ভুলই নয়, এর মাঝে রয়েছে শত শত বিভিন্ন ধরণের মু’জিজা (অন্যকে অক্ষমকারী), যার সাথে কোনো কিছুর তুলনা হয় না – এটাই আল্লাহর প্রজ্ঞা, এই প্রজ্ঞাই আল্লাহর পথনির্দেশনার জন পবিত্র কুরআন এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর দেখানো পথ।