ইসলাম ও ইগো (আত্ম-অহংকার) – পর্ব : ০৫ (শেষ পর্ব)

এটা বলার বিভিন্ন ধরণ আছে, তাই না? “এই কাজটি করাতে তুমি দোজখে যাবে তুমি জানো তো?” ‒ এটা একভাবে বলা।”নিজের কাজের জন্য তোমার লজ্জিত হওয়া উচিৎ।” ‒ এটা বলার একটা ধরণ।”ভাই আমি সত্যিই তোমার জন্য উদ্বিগ্ন। তুমি জানো ওটা খারাপ আর আমি তোমাকে ভালোবাসি। তুমি এটা কেন করছ? তোমার কোন সাহায্য লাগবে? আসলেই কেন করছ, বন্ধ কর। আসো এটা নিয়ে আলোচনা করি।” আন্তরিক! (অডিয়েন্সে বসা কেউ হাঁচি দিলেন, উস্তাদ নুমান বললেন, “ইয়ার হামু কাল্লাহ”, অর্থাৎ আল্লাহ আপনার প্রতি ক্ষমাশীল হোন)।

আন্তরিকতা, এটা দেখা যায় না, তবে প্রকাশিত হলে হৃদ্যতা বাড়ায়। আপনি কীভাবে মানুষের সাথে কথা বলেন, এতে প্রকাশ পায় আপনি আন্তরিক নাকি শুধু ওদের প্রতি আপনার মন্তব্য প্রকাশ করতে চান।

এখানে পার্থক্য আছে। আপনি মানুষের সাথে কীভাবে কথা বলছেন এতে পার্থক্য আছে।أَذِلَّةٍ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ “আযিল্লাতিন আলাল মু’মিনীন”,(৫: ৫৪ ) বিশ্বাসীদের কাছে যখন নিজেদের উপস্থাপন করে ওরা আন্তরিক, বিনয়ী ‒ কুরআনে এভাবে বলা আছে, কিন্তু আপনি কীভাবে জানবেন আপনি আন্তরিক কিনা।

এই আয়াতে এটা বলা আছে, এরপরই আমরা শেষ করবো। فَاعْفُ عَنْهُمْ وَاسْتَغْفِرْ لَهُمْ وَشَاوِرْهُمْ فِي الْأَمْرِ
“ফা’ফু আনহুম ওয়াস তাঘফির লাহুম ওয়া শাভিরহুম্ ফিল আমার”,(৩: ১৫৯) তাদের ভুলের পর আপনি তাদের প্রতি সহনশীল; যদি তারা ভুল করে ফেলে, প্রথম কাজ, তাদেরকে মমতার সাথে ক্ষমা করে দিন।

“ফাফু আনহুম”, এরপর আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার কাছে তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন।

আল্লাহ্‌র কাছে অন্যের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা মানে এই নয় — ধরুন, কোন ভাই কিছু করলো আর আপনি বললেনঃ “এই, যা হোক আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তোমাকে মাফ করুন।”ওটা “ফাস্তাঘফির লাহুম” নয়। আপনি কখন তাদের জন্য আল্লাহ্‌র কাছে ক্ষমা চাইবেন?

যখন আপনি নিজের জন্য আল্লাহ্‌র কাছে ক্ষমা চাইছেন, নির্জনে ক্ষমা চাইছেন। নির্জনে প্রার্থনার মানে কী? ঐ প্রার্থনা আন্তরিক, ওটা অকৃত্রিম।

সবার সামনে যদি বলেন, “ভাই তুমি অনেক ভুলের মধ্যে আছ কিন্তু আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা যেন তোমাকে মাফ করেন। আমি তোমার জন্য দোয়া করবো।” আয়াতে এটা বলা হয়নি। ওটা আসলে কীসের প্রকাশ? দম্ভ, অহং। তাদের জন্য আন্তরিকভাবে নির্জনে দোয়া করুন, “ফাস্তাঘফির লাহুম”।

আর ওরা যাতে বোঝে যে আপনি ওদেরকে ভদ্র মানুষ মনে করেন, “ওয়া শাভির হুম ফিল আমার”। তাদের সাথে পরামর্শ করুন, তাদের মতামত গ্রহণ করুন। তাদের মতামত জানতে চান। তাদেরকে ভদ্র মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন করুন। রাসুলাল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর কারো পরামর্শের প্রয়োজন ছিলো না। ওনার কাছে যা নাযিল হতো উনি তার উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নিতেন কিন্তু আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা উনাকে সিদ্ধান্ত গ্রহণে অন্যদের সাথে পরামর্শ করার আদেশ দিয়েছেন। কেন? যাতে তারা অনুভব করেন। কী? সংযুক্ত হতে পারার সম্মানবোধ। এটা একজন নেতার চারিত্রিক বৈশিষ্ট, তাই নয় কি?

উনি তাঁর অধীনে যারা থাকেন তাদেরকে বুঝতে দেন যে তারাও সম্মানিত। وَشَاوِرْهُمْ فِي الْأَمْرِ فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ এবং কাজে কর্মে তাদের পরামর্শ করুন। যখন আপনি কোন সিদ্ধান্ত নেন, আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার ওপর বিশ্বাস রাখুন । (৩:১৫৯) কারণ আপনার সিদ্ধান্তই সাফল্যের চাবিকাঠি নয়, সব সাফল্যের মূলে আছেন আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা। “ইন্নাল্লাহা ইউহিব্বুল মুতাওয়াক্কিলীন। আল্লাহ তায়ালা তাঁর উপর নির্ভরকারীদের ভালবাসেন।

আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আমাদের তৌফিক দিন যেন আমরা তাঁর উপর আস্থা স্থাপন করি এবং যেন আমাদের অন্তরসমূহকে কঠিন না করে ফেলি। আমরা যেন পূর্ণ আন্তরিকতার সাথে আল্লাহ্‌র যিকর করতে পারি, আল্লাহ্‌ আমাদের সবাইকে সেই তৌফিক দান করুন। আমিন।

আল্লাহ্‌ আমাদেরকে আমাদের চেয়েও ভালো মানুষের সঙ্গ দান করুন যেন আমরা আমাদের অহংবোধ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আমাদের এই তৌফিক দিন যেন আমরা আমাদের আশেপাশের মানুষদের সদুপদেশ দিতে পারি।

যারা বলে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”, যারা আমাদের সাথে এই চমৎকার কালেমায় বিশ্বাস করে তারা আমাদের রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় থেকেও অনেক বেশি ভালোবাসার দাবি রাখেন। “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” আমাদেরকে রক্তের বন্ধন থেকেও বেশি কাছের করে দেয়। আমরা যেন অন্য সব মুসলিমদের জন্য সেই রকম ভালোবাসা, সহমর্মিতা এবং মানবিকতা অনুভব করি এবং অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে সেই আন্তরিকতা তাদের প্রতি প্রকাশ করতে পারি, আল্লাহ্‌ আমাদের সেই তৌফিক দিন। আমিন।

ভালো উপদেশ যাদের প্রয়োজন তাদের অন্তরে যেন তা প্রবেশ করে আল্লাহ সেই তৌফিক দান করুন। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আমাদের উপদেশ গ্রহণ করার ক্ষমতা দিন, আমরা যেন এর সবচেয়ে ভালোটুকু গ্রহণ করতে সমর্থ হই এবং উপদেশ যেন আমাদের অহংবোধ বাড়িয়ে তোলার কোন মাধ্যম হয়ে না ওঠে। আল্লাহ্‌ আমাদের বিনম্র রাখুন, আমাদের অতীতের ভুল-ভ্রান্তিগুলো ক্ষমা করে দিন। আমরা যেন প্রতিনিয়ত আমাদের অন্ত:করণ পরিশুদ্ধ করি আল্লাহ্‌ আমাদের সেই তৌফিক দিন। আমিন।

এবং পরিশেষে আমি প্রার্থনা করি আল্লাহ্‌ যেন আমাদের অন্যান্য সব সম্মেলনের মতো এই সম্মেলনেও আমাদের সমস্ত ভালো কাজ, আমাদের সব ভুলভ্রান্তি ক্ষমা করে তাঁর কাছে করা সকল প্রার্থনা, এমনকি আমাদের ওজু, আমাদের নামায, আমাদের দোয়া আমাদের ভুলটুকু ছাড়া সব কবুল করে নেন। আল্লাহ্‌ যেন আমাদের সব কিছু কবুল করে নেন। আল্লাহ্‌ আমাদের সবার ভুলভ্রান্তি মাফ করে দিয়ে আমাদের সবার ইবাদত কবুল করে নিন। আমিন।

“রাব্বানা তাক্বাব্বাল মিন্না ইন্নাকা আন্তাস সামি উল আলীম; ওয়া তুব আলাইনা ইয়া মা’উলানা ইন্নাকা আন্তা তাউওয়াবু রাহীম; ওয়া সাল্লালাহু তা’আলা আলা খাইরী খালক্বিহি ওয়া আলিহী ওয়া আসহাবিহী আসমাঈন”। আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। শোনার জন্য যাযাকুমুল্লাহু খাইরান (ধন্যবাদ)।