ঈমান হারানোর প্রক্রিয়া

আমাদের আশেপাশে বিভ্রান্ত অবস্থায় অনেক আব্দুল্লাহ, জায়নাব, আলী, ফাতিমা, আব্দুর কারিম, আহমেদ, রুকাইয়া, হামজাহ, আই’শা, মুহাম্মদ — এইসব চমৎকার আরবি নামধারী তরুন-তরুণীদের আমরা দেখতে পাই। তারা খুব নির্ভীকভাবে বলে, “ইসলাম নিয়ে আমার মনে অনেক সন্দেহ আছে। আর এ মানুষগুলো এমন নয় যে তাদের দর্শন শাস্ত্রে পি এইচ ডি রয়েছে বা ইসলামের ইতিহাসে ব্যাপক জ্ঞান রয়েছে এবং এসব বিষয় বহু দিন অধ্যয়নের ফলে তাদের মনে ধীরে ধীরে সংশয়ের জন্ম নিয়েছে। না, না, না, আসল ব্যাপার তা নয়। বরং আসল ব্যাপার হলো এরা নিজেদের জন্য জেনে-বুঝে খারাপ সঙ্গ এবং অসৎ পরিবেশ বেছে নিয়েছিল। তারা নিজেদের পরিবর্তন করেনি। এটাই ঈমান হারানোর প্রক্রিয়া। আমি এমন শত শত মানুষের সাথে কথা বলেছি। তারা আক্ষরিক অর্থে এই আয়াতের ভেতর জীবনযাপন করছে!! (তোমরা নিজেরাই নিজেদেরকে বিপদগ্রস্ত করেছ। প্রতীক্ষা করেছ, সন্দেহ পোষণ করেছ এবং অলীক আশার পেছনে বিভ্রান্ত হয়েছ, অবশেষে আল্লাহর আদেশ পৌঁছেছে। ৫৭ঃ ১৪)

তারপর এক সময় তারা ধর্ম নিয়ে সন্দেহ পোষণ করতে থাকে। কিন্তু তাদের এই সন্দেহের সাথে যুক্তি বা বুদ্ধির কোন সম্পর্ক নেই। আপনি একটা প্রশ্নের উত্তর দিয়ে শেষ হতে না হতেই আরেকটা প্রশ্ন করবে। কোন উত্তরেই তারা সন্তুষ্ট হবে না, কোন উত্তরেই তাদের সন্দেহ কাটবে না। কারণ তাদের কোন স্বদিচ্ছাই নাই যেন তাদের বিভ্রান্তি কেটে যায়। আপনি উত্তর দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে একসময় ভাববেন আসলে এদের সমস্যাটা কি? তখন যদি আপনি তাদেরকে প্রশ্ন করেন, “কতদিন থেকে তোমরা এই অসৎ পরিমণ্ডল জেনেশুনে বেছে নিয়েছ?” তখন আপনি বুঝতে পারবেন এদের আসল সমস্যা কোথায়। ‘wartabtum’ অর্থাৎ (নানা রকমের) সন্দেহ পোষণ করেছ। জানেন? সন্দেহ কী করে? সন্দেহ প্রথমে তাদের ইসলামের গণ্ডি থেকে বের করে দিবে। তারা এভাবে নিজেকে সান্ত্বনা দিবে- “এটা তো আসলে পুরোপুরি সত্য না। সুতরাং এটা না মানার কারণে আমার খারাপ অনুভব করার দরকার নেই।” যখন তাদের মনে সন্দেহ দানা বাঁধতে থাকে। এবং সময়ের পরিক্রমায় এই ‘দানা’ দেয়ালে পরিণত হয়। তখন তারা এই দেয়ালের আড়ালে নিজেকে লুকাবে এবং নানাপ্রকারের অনৈতিক কাজের বৈধতা দিবে। একবার যখন তারা এই পর্যায়ে এসে উপনীত হবে, তখন দুটো জিনিস তাদের কাছ থেকে তুলে নেয়া হবে।

১) জান্নাত লাভের আকাঙ্ক্ষা কেড়ে নেয়া হবে, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আকাঙ্ক্ষা কেড়ে নেয়া হবে। অন্তরে সেই বিশেষ নূর ধারণের স্পৃহা (যা শেষ বিচারের দিনে পথ চলতে সাহায্য করবে) — এইসব কিছু পাওয়ার বাসনা হারাবে।

২) জাহান্নামের ভয় হারাবে।

এই দুইটা জিনিস তারা হারাবে। আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি লাভের প্রত্যাশা এবং জাহান্নামের আতংক — এইদুটো মুল্যবান বোধ তাদের কাছ থেকে তুলে নেয়া হবে। এই ব্যক্তির কাছে এখন আখিরাত বা বিচারদিবসের কোন মুল্য নাই। কেউ তার সামনে জান্নাত-জাহান্নাম-শেষ বিচার এর কথা বলতে এটা তার কাছে তামাশা মনে হবে, এমনকি এইসব নিয়ে হাসি ঠাট্টা করবে।

যখন কারো অন্তর থেকে আখিরাতের প্রাপ্তির আশা হারিয়ে যায় এবং জাহান্নামের শাস্তির ভয় মন থেকে দূর হয়ে যায়, তখন কি হয় জানেন ? তখন তার কাছে শুধু একটা জিনিসই গুরুত্ব পায়, দুনিয়া! সে তখন মনেপ্রাণে পুরোপুরি দুনিয়ামুখী হয়ে যায়। যেহেতু পরকাল বলে কিছু নাই, তাই এই দুনিয়াতেই যা কিছু করার/পাবার জন্য মরিয়া হয়ে যেতে হবে। অর্থ, বিত্ত, সাফল্য, সম্পদ, জনপ্রিয়তা, বিনোদন, মৌজ-মাস্তি, সব ধরনের ম্যাটেরিয়াল থিং — যে কোন ভাবে, যে কোন পথে অর্জন করাটাই মুখ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। সে ভাববে দুনিয়াদি এইসব প্রাপ্তির ভেতরেই রয়েছে সব আনন্দ ও চূড়ান্ত মানসিক তৃপ্তি। তাই, পরবর্তী ধাপটি হচ্ছে وَغَرَّتْكُمُ الْأَمَانِيُّ ’ অর্থাৎ “অলীক আশার (দুনিয়ার মোহ) পেছনে বিভ্রান্ত হয়েছ”। সে মিথ্যা আশার পেছনে ছুটেছে এবং মনে করেছে পার্থিব অর্জন তাকে সুখী করবে। সে তার সম্পূর্ণ জীবন শুধু এই লক্ষ্যেই ব্যয় করেছে।

— উস্তাদ নোমান আলী খান (How We Lose Our Iman আলোচনার অংশবিশেষ)