আয়েশা (রা) আমাদের কে রাসূল (স) এর এক রাতের নামাজ সম্পর্কে বলেছেন। তিনি বলেন – রাসূল (স) তাঁর পাশে শুয়ে ছিলেন, তারপর মাঝ রাতে তিনি উঠে গেলেন। হজরত আয়েশা জিজ্ঞেস করেন, আপনি কোথায় যাচ্ছেন? রাসূল (স) বলেন – আমি আমার মালিকের ইবাদাত করতে যাচ্ছি। আয়েশা (রা) বলেন, আল্লাহর শপথ! হে আল্লাহর রাসূল (স), আপনি আমার পাশে শুয়ে থাকেন এটা আমি খুবই পছন্দ করি, কিন্তু আপনার রবের ইবাদাত করতে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমি আপনাকে আটকে রাখবো না।
তারপর আয়েশা (রা) বলেন, রাসূল (স) উঠলেন, অতঃপর ওযু করলেন। তারপর তিনি নামাজে দাঁড়ালেন। যখন সেজদায় যেতেন তিনি আয়েশা (রা) এর পায়ে মৃদু আঘাত করতেন, আর আয়েশা তার পা গুটিয়ে নিতেন।
জানেন, কেন তিনি আয়েশা (রা) এর পায়ে মৃদু আঘাত করতেন? আর কেনই বা আয়েশাকে তার পা গুটিয়ে নিতে হতো? কারণ আয়েশা (রা) এর ঘরটা এমনি ছোট ছিল। কোনো কোনো স্কলার বলেন এটা ছিল ৪ ফিট বাই ৫ ফিট। এটাই ছিল আয়েশা (রা) এর ঘর। এমনি ছিল রাসূল (স) এর আধ্যাত্মিক প্রকৃতি।
রাসূল (স) এতো বেশি সময় ধরে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তেন যে তাঁর পা ফুলে যেত। যখন রাসূল (স) কে জিজ্ঞেস করা হলো যে কেন আপনি এতো কঠোর পরিশ্রম করেন? কারণ আপনার সব পাপ তো ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। আল্লাহ আজ্জা ওয়া জ্বাল রাসূল (স) এর সকল পাপ ক্ষমা করে দিয়েছেন। জবাবে রাসূল (স) বলেন, “আমি কি আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হবো না? ”
এই শিক্ষাটাই রাসূল (স) তার সাহাবীদেরকেও দিয়েছিলেন। রাসূল (স) মদিনার রাস্তায় রাত্রি বেলা ভ্রমণ করতেন এবং বর্ণিত আছে যে, তিনি আবু বকর (রা) এর ঘরে যেতেন আর শুনতে পেতেন যে আবু বকর (রা) তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ছেন। কিন্তু আবু বকর (রা) খুব নিচু আওয়াজে কুরআন তিলাওয়াত করতেন। তারপর রাসূলুল্লাহ (স) উমর (রা) এর ঘরে যেতেন। সেখানেও শুনতে পেতেন যে উমর (রা) তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ছেন। তিনি আবু বকর (রা) কে বলতেন – হে আবু বকর, তোমার আওয়াজ উঁচু করো। আর উমর (রা) কে বলতেন – হে উমর, তোমার আওয়াজ নিচু করো।
তো আমরা এই ঘটনা থেকে কি শিক্ষা পাই। এক নাম্বার, রাসূলুল্লাহ (স) এর সাহাবীরা রাতের সময়টা কিভাবে কাটাতেন? তাঁরা ইবাদাতে মগ্ন থেকে রাত কাটাতেন। আমরা এখান থেকে দ্বিতীয় যে বিষয়টা বুঝতে পারি তা হলো – রাসূলুল্লাহ (স) সাহাবীদের শিখিয়েছিলেন যে কিভাবে ভালো মুসলিম হতে হয়। শুধু ফরজ কাজসমূহ পালনের মাঝেই তাদের সীমাবদ্ধ রাখেন নি, তিনি তাদের উণ্ণত মানের মুসলিম হওয়ার শিক্ষাও দিয়েছিলেন। আর সেই শিক্ষার একটি দিক হলো – তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার শিক্ষা।
আমরা জানি, উসমান (রা) সম্পর্কে বলা হয় যে তিনি সারা রাত তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে কাটিয়ে দিতেন। আমাদের অনেকেই এই কথা শুনে অবাক হয়ে যায়। আমাদের এই কথা বোধগম্য হতে কষ্টকর হয়ে পড়ে যে কিভাবে একজন মানুষ সারা রাত নামাজ পড়ে কাটিয়ে দেন। হজরত উসমান (রা) এটা করতে পেরেছিলেন কারণ তিনি ক্বিয়ামুল লাইল বা তাহাজ্জুদের নামাজে সর্বাধিক আনন্দ পেতেন, দুনিয়ার অন্য যে কোনো আরাম আয়েশের তুলনায়। আমরা যেখানে ঘুমিয়ে থেকে আনন্দ পাই সেখানে হজরত উসমান নামাজ পড়ে আনন্দ পেতেন।