আমি আপনাদের শয়তানের একটা চালাকির কথা বলছি শুনুন। মনে করুন আপনার অফিসে যেতে দেরী হয়েছে এবং দেরী করার জন্য আপনার বস রাগ হয়ে আছেন।অফিসে আরও অনেক মানুষ আছে। আপনি এরকম সময় কী করেন? আপনি সকলের নজর এড়িয়ে নিজের কিউবিকলে গিয়ে চুপচাপ বসে পড়েন। আপনি তখন বসের সাথে দেখা করতে চান না।
অথবা মনে করুন একটা বাজে রিপোর্ট কার্ড নিয়ে আপনি বাড়ি ফিরলেন।যখন আপনি ক্লাস ৬ বা ৭ এ আর খারাপ রিপোর্ট কার্ড নিয়ে আসেন তখন আপনি চুপিসারে ঘরে ঢুকবেন। কোন “আসসালামু আলাইকুম” নেই কিছু না। চুপিসারে ঢুকে আপনি ঘুমের ভান করে পড়ে রইলেন। মা যদি জিজ্ঞেস করেন, “আজকে স্কুলে কী হোল?” আপনি বলবেন, “তেমন কিছু না।”
আপনি যখন কাউকে হতাশ করেন তখন তার থেকে দূরে দূরে থাকেন। এটাই স্বাভাবিক। এই ক্ষেত্রে, যখন আমরা অশ্লীল কাজ করি, নিজেদের উপর যুলম করি, তখন আমরা কাকে হতাশ করি? আল্লাহ আযযা ওয়াযালকে! আপনি আল্লাহ্কে অসুন্তষ্টি করেন। শয়তান তখন এর সুযোগ নেয়। আপনার কাছে এসে সে বলে যে তুমি এখন আবার সালাহ পড়তে যাবে? ভন্ড! তুমি এতসব অশ্লীল কাজ করে এখন আবার একটা ক্লাস করতে যাবে?এখন তুমি ইবাদত করতে যাবে? তুমি তো দু’মুখো মানুষ!
তখন সে বলে হ্যাঁ আমি তো দু’মুখো মানুষ; আমার সালাহ পড়া উচিত না। শয়তান আপনার গুনাহের সুযোগ নিয়ে আল্লাহর কাছ থেকে আপনাকে দূরে সরিয়ে রাখে। আপনি তখন আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে বিব্রত বোধ করেন।
কিন্তু একজন সত্যিকারের মুত্তাকী যখন ভুল কিছু করে তৎক্ষণাৎ সে কী করে? সে আল্লাহকে স্মরণ করে! যাকারুল্লাহ। ফা বা সুম্মাও আসেনি এখানে! “ফাসতাগফারু লিযুনুবিহিম।”
তারপর তারা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয়। (৩:১৩৫)
এখানে যুনুব শব্দটা দিয়ে পাপ বোঝান হচ্ছে যা এসেছে যানাব থেকে। যানাব দিয়ে মূলত বোঝান হয় এমন একটা পাপ যার কারণে আপনি অসম্মানিত বোধ করেন। এমন কোন কাজ যার কারণে আপনি লজ্জিত। বিব্রত।
আর তারা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে তাদের কৃত লজ্জাজনক কাজ থেকে। “ওয়া মান ইয়াগফিরুযযুনুবা ইল্লাল্লাহ।”
আল্লাহ ছাড়া আর কে গুনাহ ক্ষমা করতে পারে? (৩:১৩৫)
আপনি আর কার কাছে যাবেন? আর কোথায় যাবেন? আল্লাহ ছাড়া আর কে জানে আপনি আর আমি কী কী ভুল করেছি? আমাদের গুনাহের খাতায় বহু জিনিস আছে যা আল্লাহ প্রকাশ করেননি।শুধু আল্লাহই সেসব জানেন। সেসবের জন্য আল্লাহর কাছে আমাদের ক্ষমা চাইতে হবে।
জান্নাতে যারা যাবে তাদের বর্ণনায় যেসব বৈশিষ্ট্য এসেছে তার মাঝে এটাই তাদের প্রধান বৈশিষ্ট্য।
“উলাইকা জাযাউহুম মাগফিরাতুম মিররাব্বিহিম ওয়া জান্নাতুন তাযরী মিন তাহতিহাল আনহারু খালিদীনা ফীহা ওয়া নি’মাল আযরুল আলামীন।”
তাদেরই জন্য প্রতিদান হলো তাদের পালনকর্তার ক্ষমা ও জান্নাত, যার তলদেশে প্রবাহিত হচ্ছে প্রস্রবণ যেখানে তারা থাকবে অনন্তকাল। যারা কাজ করে তাদের জন্য কতইনা চমৎকার প্রতিদান। (৩:১৩৬)
এখনে যে শেষ কথাটি আপনাদের বলব, আমি আমার ফ্যামিলির সাথে একবার শপিং মলে গিয়েছিলাম।সেখানে এক মা তার ছেলেকে ভীষণ বকা দিচ্ছিল আর ছেলেটা চিৎকার করে কাঁদছিল।মা ছেলেকে কষে একটা চড়ও বসিয়ে দিল। কিন্তু আপনি জানেন বাচ্চাটা তারপরও কার কাছে গেল? এর পরও বাচ্চাটা মাকেই ধরে রইল।তার মাকে ছাড়ছে না চারপাশে সব কিম্ভূতকিমাকার বিশাল বিশাল অচেনা মানুষ। সে তাদের কাছে যেতে চায় না।যদিও তার মা তার উপর রাগ হয়েছে, হতাশ হয়েছে, তাকে বকা দিচ্ছে কিন্তু তার আশ্রয়, সুরক্ষা সে কার কাছে পাবে? তার মায়ের কাছেই!
এই দৃশ্য আমাকে ভাবিয়েছে সুবহানাল্লাহ, যখন আপনি আমি গুনাহ করি যখন আমরা আল্লাহকে হতাশ করি, তাঁর অবাধ্য হই, আমরা কার কাছে যাব? আমাদের আর কোথায় যাওয়ার আছে! তাই আমরা আল্লাহকে অসুন্তষ্টি করলেও, আর আল্লাহ আমাদের যেমন দেখতে চান তেমন আমরা হতে না পারলেও সত্যিকারের মুত্তাকী কখনোই আল্লাহর উপর আশা হারায় না।আল্লাহর উপর আশা হারানোর অনুমতি তিনি আমাদের দেননি। এই আচরণ আমাদের রপ্ত করতে হবে।