এটি একটি আত্মিক এবং হৃদয়জনিত সমস্যা। কেবল আপনি নিজে এই ব্যাপারটা বুঝতে পারবেন। ইনশাআল্লাহ্ শেষের দিকে যেয়ে এ সমস্যাগুলো দূর করার জন্য কিছু টিপস নিয়ে আলোচনা করবো। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, أَلَمْ يَأْنِ لِلَّذِينَ “যারা ইমান এনেছে তাদের কি এখনো সময় আসেনি…” أَن تَخْشَعَ قُلُوبُهُمْ لِذِكْرِ اللَّهِ“…..যে তাদের হৃদয় আল্লাহর স্মরণে বিগলিত হয়ে যাবে, তাদের হৃদয় সশ্রদ্ধ ভয়ে পূর্ণ হয়ে যাবে?”
যখন আপনার পেশী নরম আর দুর্বল হয়ে পড়ে, সেটাকে বলা হয় খুশু’। আর তখন পেশীগুলোকে শক্তিহীন মনে হয়। আপনার মনে হয় যে কেউ আপনাকে বশীভূত করে ফেলছে। আল্লাহ বলছেন তাদের হৃদয় আল্লাহর ভয়ে, তাঁর কথা স্মরণ করে বশীভূত হয়ে পড়বে।“যারা বিশ্বাসী, তাদের জন্যে কি আল্লাহর স্মরণে তার কারণে হৃদয় গলে যাওয়ার সময় আসেনি?…” وَمَا نَزَلَ مِنَ الْحَقِّ“…এবং যে সত্য অবর্তীর্ণ হয়েছে তার কারণে?”আর সেই সত্যটা কী? আল কুর’আন। তারপর আল্লাহ একই আয়াতে একটি সতর্ক বাণীও উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন : وَلَا يَكُونُوا كَالَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِن قَبْل فَطَالَ عَلَيْهِمُ الْأَمَدُ তারা (মুমিনরা) যাতে তাদের মত না হয়, যাদেরকে তাদের পূর্বে কিতাব দেয়া হয়েছিল। তাদের উপর একটি বড় সময় অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। তার মানে তারা এই কিতাব ধারণ করেছিল দীর্ঘ সময়ের জন্য।
যখন আপনি প্রথম ধর্মীয় অনুশাসন মানা শুরু করেন, আপনি এ ব্যাপারে খুবই উত্তেজিত থাকেন। এই উত্তেজনা একসময় চলে যায়, যা থাকে তা হলো বহিরাবরণ। সুতরাং ঐসব লোকদের ক্ষেত্রে কী ঘটল? فَقَسَتْ قُلُوبُهُمْ তাদের অন্তর কঠিন হয়ে গেল। একটি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর, ধর্মীয় কর্ম সম্পাদন একটি রুটিনে পরিনত হয়ে গেল। এমন কিছু যা তারা শুধু করে, যা করতে হয়, তারা এটা করছে কারণ এটাতে তারা অভ্যস্ত। কিন্তু এটা আর এমন কিছু নয়, যা তাদের হৃদয়কে আলোড়িত করে। তাদের হৃদয় হয়ে গেছে কঠিন। আর যখন আপনার অন্তর কঠিন হয়ে যায়, তখন কলুষিত হওয়া আপনার জন্য খুবই সহজ। এজন্য আয়াতের পরবর্তী অংশে বলা হয়েছে- وَكَثِيرٌ مِّنْهُمْ فَاسِقُونَ তাদের অধিকাংশই পাপাচারী। তাদের বড় একটা সংখ্যা আসলে খারাপ। আয়াতটি শেষ হয়েছে আহলে কিতাবদের দিয়ে, আর এটা কি দিয়ে শুরু হয়েছিল? আলোচনাটি আসলে তাদের নিয়ে যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে। আর কিভাবে তাদের অন্তর কঠিন হয়ে গেছে।
আর এটা আপনি আপনার ভেতরে অনুভব করতে পারেন, কেউ আপনাকে এটা বলে দিতে পারবে না। আমি আবার বলছি, আপনার জন্য কেউ এটা অনুমান করতে পারবে না। একমাত্র যে এটা ধরতে পারবে সে ব্যক্তি হলো আপনি নিজে, অন্য কেউ নয়। আপনি আল্লাহর সামনে কতটুকু বিনয়ী, আপনি অন্যদের সামনে কতটুকু বিনয়ী এ বিষয়টা আমরা আপনাকে বলে দিতে পারব না, একমাত্র আপনি আপনার এই বিষয়টা ভালো বলতে পারবেন।
যদি আমাদের অবস্থা এই পর্যায়ে এসে পৌছে, তাহলে আমাদের প্রতিষেধক প্রয়োজন। সর্বপ্রথম প্রতিষেধক হলো আশা (hope)। আশা হারিয়ে যায়নি। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা পরবর্তী আয়াতে অত্যন্ত সুন্দরভাবে বলেছেন- সুবহানাল্লাহ- اعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ يُحْيِي الْأَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا তোমরা জেনে রাখ, আল্লাহই ভূ-ভাগকে তার মৃত্যুর পর পুনরুজ্জীবিত করেন। পূর্ববর্তী আয়াতে আল্লাহ অন্তরসমূহ সম্পর্কে কথা বলছিলেন। আর এখন তিনি কি বিষয়ে কথা বলছেন? ভূপৃষ্ঠকে জীবন দেয়া সম্পর্কে। আল্লাহ আপনাদের বলছেন যে, যেভাবে আল্লাহ পৃথিবী পৃষ্ঠকে মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত করতে পারেন ঠিক সেভাবে আল্লাহ আপনার মৃত অন্তরকেও পুনরায় জীবিত করতে পারেন। আপনার অন্তর পুনরায় কোমল হতে পারে। এটা প্রত্যাশার বাইরে নয়। ”আমরা অলৌকিক নিদর্শনাবলী প্রকাশ করছি যাতে তোমরা বুঝতে পর।” বুঝতে পেরেছেন? আপনাদের জন্য আশা রয়েছে। আপনি আপনার অন্তরকে পরিষ্কার করে নিতে পারেন। এটা সম্ভব। আল্লাহ যদি শুষ্ক জমিনে প্রানের সঞ্চার করতে পারেন তিনি আপনার অন্তরকেও পুনরায় জীবিত করতে পারেন।
প্রথম প্রতিকার হচ্ছে-আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা কে স্মরণ করা। দ্বিতীয় প্রতিকার হচ্ছে- উত্তম সঙ্গী-সাথী খোঁজা। এমন সহচর খোঁজা যারা আপনার চেয়ে উত্তম। তৃতীয় প্রতিকার, গুরুত্বপূর্ণ প্রতিকার-নিজের মুখ বন্ধ রাখতে শেখা। নিজের মুখ বন্ধ রাখতে শেখা। যদি আপনি খুব খারাপ কিছু দেখেন তাহলে একজন মুসলিমকে উপদেশ দেওয়ার নমনীয় পন্থা খুঁজে বের করুন। এভাবে ভাবুন- “আমি তাদের যে কথা গুলো বলতে যাচ্ছি, সেগুলো কি তাদেরকে ধর্মের প্রতি আরো বিমুখ করে দিবে?” অথবা আমার সৌহার্দপূর্ণ,নমনীয় পন্থা খুঁজে বের করা উচিৎ যা তাদের ইসলামের মুল বিষয় গুলোর সাথে আপস না করে দ্বীনের আরো নিকটে নিয়ে আসবে। হয়ত তাদের সহচরদের পরিবর্তনের মাধ্যমে, দৃশ্যপটের পরিবর্তনের মাধ্যমে, হয়ত যদি তারা সামান্য একটু উপদেশ শুনতে পায়…
আপনি প্রথমেই তাদের আচরণ পরিবর্তন করতে চান না, আপনি প্রথমে কী পরিবর্তন করতে চান? তাদের অন্তর। যখন তাদের অন্তর পরিবর্তন হবে তখন ব্যবহার আপনাআপনি পরিবর্তন হবে। বেশির ভাগ সময় আমরা মানুষের কিসের পিছে ছুটি? আমরা তাদের ব্যবহার এর পেছনে ছুটি। আপনি মানুষের ব্যবহার পরিবর্তন করতে পারবেন না। আপনি শুধু তাদের স্মরণ করিয়ে দিতে পারেন এবং আশা করতে পারেন আল্লাহ্ তাদের অন্তরকে পরিবর্তন করে দিবেন।