যখন কোন কম বয়সী কেউ আমাকে এসে প্রশ্ন করে, এমনকি পূর্ণ বয়ষ্ক কেউ, আমি আমার সহকর্মীদের কীভাবে ব্যাখ্যা করে বোঝাবো যে আমি রোযা রেখেছি? কীভাবে ওদের বোঝাবো? যেহেতু ওরা মুসলিম নয়, ওরা ভাবে এটা অদ্ভূত। আপনি কি আমাকে এর একটা সুন্দর উত্তর দিতে পারেন যাতে আমি আমার সহকর্মীদের বোঝাতে পারি? অথবা আমি কীভাবে ওদেরকে বোঝাবো যে, আমি অযু করছি? আমি বাথরুমে ঢুকে অযু করছি, আমি অফিসে ছিলাম বা আমি ক্যাম্পাসে ছিলাম, আমি ওদের কে কীভাবে বোঝাবো? ওরা আমাকে অযু করতে দেখেছে এবং ওদের মনে হয়েছে ব্যাপারটা অদ্ভুত- আপনি কি আমাকে এর একটা ভালো জবাব দিতে পারেন যাতে আমি ওদের বলতে পারি, আর বিব্রত না হই? অথবা ওরা যখন দেখে যে আমি নামায পড়ছি, ওরা জিজ্ঞেস করে এটা আবার কী ধরণের শারীরিক ব্যায়াম? এটা কী ধরণের যোগব্যায়াম আমাকে একটু বুঝিয়ে বলবে? ওদেরকে আমি কী বলবো? আমরা ওদের কী উত্তর দিতে পারি?
এ ধরণের প্রচুর প্রশ্ন আছে, আপনি হয়তো এর উত্তর খুঁজছেন,
যাতে অন্যদের বোঝাতে সাহায্য করতে পারেন, এবং এই প্রশ্ন আপনি করছেন ভালো উদ্দেশ্যে। আমাদের দ্বীন আসলে এমন যে…ও… এই তালিকায় আমার আরেকটু যোগ করার আছে, আমার সব বন্ধুরা যাচ্ছে হ্যালোইন পার্টিতে, অথবা আমার সব সহকর্মীরা যাচ্ছে খ্রিস্টমাস পার্টিতে – আমি কীভাবে ওদের বলবো আমি যেতে পারছি না? কীভাবে আমি ব্যাখ্যা করবো যে আমি এসব কিছুতে যোগ দেই না? আপনি এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজছেন, কিন্তু এই প্রশ্নগুলো আমাকে কী বলছে জানেন? এ প্রশ্নগুলো বলছে যে আমরা কীভাবে ভাবতে হয়,
কীভাবে চিন্তা করতে হয় তা শিখিনি, এই বই (কুরআন)-এর আলোকে তো নয়ই।
দেখুন, আপনি যদি জানতেন কীভাবে চিন্তা করতে হয়, যখন কেউ আপনাকে বলে যে চলো হেলোইন পার্টিতে যাই, আপনি উল্টো ঘুরে তাঁকে প্রশ্ন করতেন, হ্যালোইন কী? তুমি এটা কেন উদযাপন করছো? আমি কেন যাচ্ছি না এই প্রশ্নের আগে তুমি আমাকে বলো তুমি কেনো ক্লিওপেট্রার মতো সেজে, বা বার্নি হয়ে অপরিচিতদের দরজায় দরজায় খাবার চাইতে যাচ্ছ? আমরা এই অতি যৌক্তিক(!) কাজটা করতে যাবার আগে তুমি আমাকে বলো তুমি কেন এটা কর? এরপর আমি বলছি আমি কেন এটা করি না।
অন্যভাবে বলতে গেলে, যেসব মানুষ এসব আজগুবি কান্ড করছে তারা আমাদের জিজ্ঞেস করছে কেন আমরা ওসব অদ্ভুত কাজ করছি না, কেন ওসবে অংশ নিচ্ছি না, আর আমরা মনে করছি আমাদেরকে ব্যাখ্যা করে বোঝাতে হবে আমরা কেনো ওসব করছি না! এর কারণ হচ্ছে, আমাদের চিন্তা-ভাবনাটা আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়, আমাদের বুঝতে হবে, আমাদের দেখতে হবে কোনটা মিথ্যা, কোনটা আজগুবি এবং আমাদের আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে এবং ভাবনার স্পষ্টতা থাকতে হবে যাতে আমরা বলতে পারি, শোন, এখানে সমস্যাটা আমার নয়, আমি আসলে আমার জীবনকে যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর দিকে ফিরিয়ে নিচ্ছি, আল্লাহ্র অশেষ অনুগ্রহে আমি অন্তত এটা জানি আলহামদুলিল্লাহ্ যে আমার জীবনের একটা উদ্দেশ্য আছে যা বানর কিংবা অন্যকিছু সেজে ক্যান্ডি সংগ্রহ করার চেয়ে অথবা যীশুর জন্য উৎসব করতে গিয়ে মাতাল হবার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যীশুকে স্মরণ করার কী এক মহৎ(!) উপায়! পার্টিতে গিয়ে মাতাল হও! পরিবারের লোকজনদের গালাগালি কর! আর দোষ করছি আমরা?! আমাদেরকে ব্যাখ্যা করে বোঝাতে হবে আমাদের নিজেদের!? আপনার মনে হচ্ছে আপনাকে ব্যাখ্যা করতে হবে নিজেকে?! আপনার সহকর্মীদের প্রতি আপনাকে অসৌজন্যমুলক আচরণ করতে হবে না কিন্তু আপনার অন্তত চিন্তা ভাবনাটা স্পষ্ট হতে হবে। এবং এটা অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে এখন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
কারণ, যদিও সুবহানআল্লাহ সুবহানআল্লাহ যেহেতু আমি বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করি এটা আমার কাছে অনেক বেশি প্রকট হয়ে দেখা দেয় আপনি মুসলিম প্রধান দেশেই যদি যান যেখানে স্কুলে ইসলাম শিক্ষা দেয়া হয়, ছেলেমেয়েরা কুরআন তেলাওয়াত করতে শিখছে, যেখানে মসজিদগুলো ভরপুর এমন সব জায়গাতেও কম বয়সীরা প্রশ্ন করে, আমরা কীভাবে এতো নিশ্চিতভাবে বলতে পারি ইসলামই হচ্ছে প্রকৃত ধর্ম? আমি এই ভিডিও দেখছিলাম এবং আমার কিছু প্রশ্ন আছে আমি ঠিক জানি না কীভাবে জবাব দেবো। কেউ কেউ বলছে যে কুরআনে মতদ্বৈততা আছে, কেউ কেউ বলছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালাম আসলে নবী ছিলেন না এবং ওরা এই এই বলছে। আমি ঠিক জানি না ওদের প্রশ্নের কী উত্তর দেবো…তবে আমি দোয়া করতে জানি, আমি মুখস্ত করেছি। আমি নামাজ কীভাবে পড়তে হয় জানি, আমি খুব সুন্দরভাবে অযু করতে জানি কিন্তু আমি আমার ধর্মকে কীভাবে Defend (প্রতিরক্ষা) করতে হয় জানি না। এখন যখন কিছু ইউটিউব ভিডিও-র প্রসঙ্গ আসে- এটা একটা সমস্যা। আমরা জ্ঞান-কে গুরুত্ব দিচ্ছি কিন্তু আমরা চিন্তা করাটাকে গুরুত্ব দিচ্ছি না। যে কেউ যে কোন ধরণের সমালোচনা করতে পারে, একটা ইউটিউব ভিডিও পোস্ট করতে পারে, ব্লগে লিখতে পারে, অথবা অনলাইন-এ লিখতে পারে আর আমাদের তরুণরা এমনকি পুর্ণবয়ষ্করা ওসব পড়ে এবং এতো অল্পতেই ওনারা ধরাশায়ী হয়ে যান, এইটুকুতেই। তারা কিছু শোনে অথবা পড়ে, আর বাস্তবতা হচ্ছে ওনারা এসব শুনবেনই, ওনারা এসব দেখবেনই- আপনি এটা বন্ধ করতে পারবেন না।
ওনারা এই দ্বীনের প্রতি অনেক আক্রমণ দেখেবন, এটা হবেই- এটা আগের যেকোন সময় থেকে বেশি হবে। এটা প্রতিনিয়তই ঘটতে থাকবে, এবং ইসলামের শিক্ষা প্রচার করার চেষ্টার চাইতে ইসলামের প্রতি আক্রমণ অনেক বেশি, অনেক অনেক বেশি। তাই আমরা নিজেরা যদি না বুঝি কীভাবে চিন্তা করতে হয় আর জবাব দিতে হয়, তাহলে বাহ্যিক ভাবে, বহিরাঙ্গে আমাদেরকে দেখে মনে হবে আমরা মুসলিম, আমরা প্রার্থনা করছি এবং আমাদের মসজিদগুলো ভরা কিন্তু ভেতরে ভেতরে আমাদের অন্তর ও মনন ক্রমাগত শূন্য হয়ে যাচ্ছে, দ্বীন নিয়ে আমাদের স্পষ্টতা কমে যাচ্ছে। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটা ভীষণরকম প্রয়োজনীয় ব্যাপার।
অনেক মুসলিম সমাজে যা হয় ইন শা আল্লাহু তায়া’লা এই রীতি বদলে যাচ্ছে। কিন্তু এটা প্রায় দশক ধরে হয়ে আসছে যে এখানে আসলে দুই ধরনের মুসলিম আছে অনেক মুসলিম সমাজে- একটা গ্রুপ মুসলিম হচ্ছে পুরো পাড়া, গ্রাম, পরিবারের সবাই একমত হয় যে আমরা আমাদের দ্বীনকে গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করবো, আমাদের সন্তানদের কুরআন শিখতে পাঠাবো, এরপর ওদেরকে ঊলামা বানাবো, তারা ফিরে আসবে তারা তারাবীহ পড়বে, মসজিদে দারস দিবে, আমরা ধর্মীয় শিক্ষাটা ধরে রাখবো এবং যতটা সম্ভব এই শিক্ষার আলোকে জীবন যাপন করবো। মুসলিম দেশে, মুসলিম সমাজে এরকম মানুষ আছে।
অন্যদিকে, আরেকটা গ্রুপ যারা এদের দেখে বলে- এরা ধর্ম নিয়ে এতো বেশি ব্যস্ত যে পৃথিবীর বাস্তবতায় কী হচ্ছে তাই জানে না, তাদের কোন স্নাতক ডিগ্রিও নেই, তারা দর্শনশাস্ত্রের ১, ২ও জানে না; তারা কিছুই জানে না। তারা জানে না রিচার্ড ডকিংস কী বলতে চাইছেন, অথবা আধুনিক সমালোচনা কী, বা সন্দেহবাদ কী, তারা জানে না বৈজ্ঞানিক মতবাদ কী- তারা কিছুই জানে না। কিন্তু আমরা একটু ধর্মীয় জ্ঞান রাখবো কারণ আমার বাবা-মা চান আমি এসব শিখি, এবং তারা চান আমি এসব প্রার্থনা-টার্থনা করি কিন্তু আমি কলেজে যাবো, সত্যিকার শিক্ষা অর্জন করবো এবং ঐসব গোঁড়া ধার্মিক থেকে একদম দূরে থাকবো। এবং এটাও মুসলিম বিশ্বেই ঘটছে। এরকম পুরো জনগোষ্ঠীই আছে যারা দাঁড়িসহ কাউকে দেখলে অথবা হিজাব পরিহিত কাউকে দেখলে অন্যদিক দিকে হাঁটে আর ভাবে ওসব মানুষ উম্মাদ।
ওরা …আমি জানি না, ওরা কী চিন্তা করে, ওরা ভিন্ন এক সময়ে বাস করছে, ওরা অন্য শতাব্দীতে বাস করছে। যদি কাউকে দেখে সামান্যতম ধার্মিকও মনে হয়, যারা তাদের ধর্ম মেনে চলার চেষ্টা করছে পুরোদমে। সবশেষে ওরা যা ভাবে তা হল, এ মানুষগুলো ক্ষ্যাত, এরা নিজেদের নিয়ে ভাবতেই জানে না, ওরা কী প্রাচীনপন্থী! আর এ জনগোষ্ঠী বাড়ছে। এ ধরণের চিন্তা-ভাবনার মানুষের সংখ্যা বাড়ছে এবং এরাও মুসলমান! সুবহানআল্লাহ!
আর এটিই একমাত্র দ্বীন যা মার্ক্সের বক্তব্যের একমাত্র ব্যতিক্রম, জার্মান বক্তব্য যা অনুবাদ করলে মানে দাঁড়ায় – “ধর্ম হছে মানুষের জন্য আফিম,। ধর্ম হছে একটা মাদকের মতো যা মানুষকে নিজের জন্য স্পষ্টভাবে চিন্তা করতে বাধা দেয়”। এটা মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য চার্চের একটা মাধ্যম মাত্র। এটা চার্চের ক্ষেত্রে সত্যি। তারা বাইবেল পাঠ করা সব খ্রিষ্টানদের জন্য নিষিদ্ধ করেছিল। যখন রোমান সাম্রাজ্য খ্রিস্টানিটি বা বহু ঈশ্বরবাদকে তাদের সরকারী ধর্ম হিসেবে ঘোষণা করলো, তখন তারা সাধারণ খ্রিষ্টানদের জন্য বাইবেল পাঠ নিষিদ্ধ ঘোষণা করলো। তখন কেউ এর একটা কপিও পেতে পারতো না। পোপ অন্যের জন্য অনুবাদ করে দিতো। তুমি চিন্তা করতে পারবে না, প্রশ্ন করতে পারবে না। সংক্ষেপে শেষ করছি, এই যে ধারণাটা যে ‘ধর্ম মানুষকে পরিষ্কার ভাবে ভাবতে বাধা দেয়’, কোন বই, কোন পবিত্র কালাম নেই যা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়লে দেখবেন যে এতে বারবার অনুযোগ করা হয়েছে এই নিয়ে যে, মানুষ চিন্তা করে না। আফালা তা’ক্বীলুন(তোমরা কি চিন্তা করবে না?)
লা’আল্লাকুম তা’ক্বীলুন(যেন তোমরা চিন্তা-গবেষণা কর), ফাহুম লা ইয়াক্বীলুন (তারা চিন্তা-গবেষণা করে না) – এটা শুধু জ্ঞান অর্জনের উপরই গুরুত্ব আরোপ করেনি, এটা বারবার গুরুত্ব দিয়েছে চিন্তা করার ব্যাপারে, বলেছে চিন্তা করতে।
ۗ أَوَلَوْ كَانَ آبَاؤُهُمْ لَا يَعْقِلُونَ شَيْئًا وَلَا يَهْتَدُونَ-
”আচ্ছা, তাদের বাপ-দাদারা যদি একটুও বুদ্ধি খাটিয়ে কাজ না করে থেকে থাকে এবং সত্য-সঠিক পথের সন্ধান না পেয়ে থাকে তাহলেও কি তারা তাদের অনুসরণ করে যেতে থাকবে?” (সুরা বাকারাঃ ১৭০)
তাদের পূর্বপুরুষ তারা নিজেরা চিন্তা করে না, তারা কোন সাহায্যও পায় না। এটাই একমাত্র ধর্ম যা মানুষকে ভাবতে বলেছে আর দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে আমরা ধরে নেই যে আমরা যদি ধর্ম সম্পর্কে একটু জানি, এটুকু জানি যে কীভাবে প্রার্থনা করতে হয়, যদি জানি কীভাবে যিকির-আজকার করতে হয়, এই দ্বীন নিয়ে আর বেশি কিছু জানতে হবে না, কিন্তু শধু এতোটুকু আপনাকে চিন্তা করতে দেবে না। ওয়াল্লাহি, এই দ্বীন, কুরআন যদি আপনার জন্য কিছু করে তা হলো এটা আপনাকে ভাবাবে, এই একটি কাজ অন্তত কুরআন আপনার জন্য করবে। এই প্রতিনিয়ত ভাবনার স্বচ্ছতা, আপনার জীবনের উদ্দেশ্য, এ নিয়ে চিন্তার স্পষ্টতা, আল্লাহ্কে স্মরণ করা, ন্যায়পরায়ণতা, উচিত-অনুচিত, কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল এসব নিয়ে চিন্তা আপনি এড়াতে পারবেন না। আল্লাহ্ আজ্জা ওয়াজ্বাল মানব অভিজ্ঞতার এমন কিছু নেই যা চিন্তা ভাবনা ছাড়া যেতে দিয়েছেন।
“নিশ্চয়ই আসমান ও যমীনের সৃষ্টিতে, রাত ও দিনের বিবর্তনে এবং নদীতে নৌকাসমূহের চলাচলে মানুষের জন্য কল্যাণ রয়েছে। আর আল্লাহ তাআলা আকাশ থেকে যে পানি নাযিল করেছেন, তদ্দ্বারা মৃত যমীনকে সজীব করে তুলেছেন এবং তাতে ছড়িয়ে দিয়েছেন সবরকম জীব-জন্তু। আর আবহাওয়া পরিবর্তনে এবং মেঘমালার যা তাঁরই হুকুমের অধীনে আসমান ও যমীনের মাঝে বিচরণ করে, নিশ্চয়ই সে সমস্ত বিষয়ের মাঝে নিদর্শন রয়েছে বুদ্ধিমান সম্প্রদায়ের জন্যে।” (সুরা বাকারাঃ ১৬৪)
আকাশ-মাটি, দিন-রাত্রি, মেঘমালা, যে জাহাজগুলো ভাসছে- যা কিছু তুমি দেখো, সবকিছু ‘আয়াত্বীন লিকাওমিই ঈয়াক্বীলুন’-এগুলো সব হলো নিদর্শন তাদের জন্য যারা চিন্তা করে। এগুলো সব আল্লাহ্র নিদর্শন। এমন কোন অভিজ্ঞতা নেই যার জন্য কোন আয়াত বা নিদর্শন নেই এবং এই নিদর্শনের উদ্দেশ্য কী? যাতে তোমরা চিন্তা করতে পারো। যাতে আমি চিন্তা করতে পারি। আমরা জাতিগত ভাবে খুবই চিন্তাশীল জাতি হবার কথা। আমরা বুদ্ধিমত্তার জায়গা থেকে খুব ব্যস্ত থাকার কথা আর তা আমাদের অন্তরে আল্লাহ্র স্মরণকে আরো গভীর করার কথা। এটা আমাদের অন্তরে আল্লাহ্র স্মরণকে আরো গভীর করার কথা।
আমরা যতক্ষণ আল্লাহ্র কথাকে পুরো গুরুত্ব না দিচ্ছি, আমরা এমন মানুষ হতে পারবো না যারা ভাবনার স্পষ্টতাকে গুরুত্ব দেয়। আমরা হয়তো সেই একই ধোঁকায় পড়ে যাবো যার কথা বলা হয়েছে বনী ইসরাঈলদেরকে, এবং আহলে কিতাবীদের(ইহুদি-খৃষ্টান) সম্পর্কে।
وَلَا يَكُونُوا كَالَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِن قَبْلُ فَطَالَعَلَيْهِمُ الْأَمَدُ فَقَسَتْ قُلُوبُهُمْ ۖ وَكَثِيرٌ مِّنْهُمْ فَاسِقُونَ”তারা তাদের মত যেন না হয়, যাদেরকে পূর্বে কিতাব দেয়া হয়েছিল। তাদের উপর সুদীর্ঘকাল অতিক্রান্ত হয়েছে, অতঃপর তাদের অন্তঃকরণ কঠিন হয়ে গেছে। তাদের অধিকাংশই পাপাচারী।” (সুরা হাদীদ:১৬)
তোমরা ঐসকল আহলে কিতাবীদের মতো হয়ো না, যারা তোমাদের পূর্বে এসেছিল, অনেক দীর্ঘ সময় পর- এই কথাটা অনুগ্রহ করে একটু খেয়াল করে শুনুন, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কথা বলা হয়েছে সুরা হাদীদ-এ উনি (আল্লাহ্) বলেছেন, যখন একটা জাতি একত্রিত হয়, আল্লাহ্ পয়গম্বর পাঠান, তাঁর কাছে বার্তা পাঠান এবং বার্তাটি থাকে শুদ্ধ এবং প্রথম প্রজন্মের যারা ঐ বার্তা গ্রহণ করে তারা তা পুরোপুরি বুঝে সে অনুযায়ী জীবন-যাপন করে কিন্তু কয়েক প্রজন্মের পর শুধু আনুষ্ঠানিকতাগুলো বাকী থেকে যায়। শুধু এর বহিরাঙ্গটুকু বাকি থেকে যায়, কিন্তু ঐ দ্বীনের ভেতরটা, এবং ভাবনার উদ্রেক করার মতো বার্তাটি যা মানুষের ভেতর এবং বাহির পরিশুদ্ধ করার কথা এবং যা সমাজকে বাইরের দিক থেকে এবং মানুষের মনন ও অন্তরকে ভেতর থেকে সুন্দর করার কথা – এই ভেতরটা অদৃশ্য হয়ে যায়। ফাত্বালা আ’লাইহিমুল আ’মাদ- এবং একটি বিষয়ই বাকি থেকে যায় সেটা হল- আমরা ঠিক এখন যেখানটায় আছি। আমরা এখন যে অবস্থানে আছি তা খুবই দুঃখজনক।
আমি মনে করতে পারি প্রতি বছরই প্রায়ই কেউ আমাকে উর্দুতে ই-মেইল পাঠায় বা ভয়েস মেসেজ পাঠায়, জানতে চায়, ইবাদত করার রাত কোনটি? কোন রাতে আমাদের কিছু প্রার্থনা করা উচিত। এই প্রশ্নটুকু আমাকে অনেক কিছু বলে, এইটুকুতেই ধর্ম সীমিত হয়ে গিয়েছে অনেকের জন্য, এইটুকুই বাকী আছে। আপনার কী মনে হয়, ঈদের নামাযে আমরা কেনো এত মানুষ দেখি অন্য যেকোন সময়ের চেয়ে? আপনি অবাক হয়ে আবিষ্কার করেন, এরা সবাই এখানে! সবাই টেক্সাসের! এরা কোত্থেকে এলো? আপনি জানেন ওরা কোথা থেকে এসেছে? ওরা এসছে কারণ ধর্মের প্রতি আগ্রহটা সবার কমে যাচ্ছে।
ধর্মের এই সব ছোট-খাটো বিষয়ই বাকী আছে। এবং এটুকুই বাকী আছে, আর কিছু নয়। আল্লাহ্ আজ্জা ওয়াজ্বাল আমাদেরকে স্পষ্টভাবে চিন্তা করার মত তৌফিক দিন, আল্লাহ আজ্জা ওয়াজ্বাল যাতে আমাদের এই তৌফিক দান করেন যেন আমরা চিন্তাশীল এক প্রজন্ম গড়ে তুলতে পারি, যারা দ্বীন নিয়ে স্পষ্টভাবে চিন্তা করতে পারে এবং এর শিক্ষাগুলো ধারণ করতে পারে এবং এর বক্তব্যটুকু খুব পরিষ্কারভাবে সমাজের সবার কাছে পৌঁছে দিতে পারে।
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।