জান্নাতের দরজা

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। আমি আপনাদের সাথে এই সংক্ষিপ্ত ভিডিওতে সুরা সোয়াদ এর কিছু ভাবনা নিয়ে আলোচনা করব। এটি কুরআনের ৩৮ তম সুরা। আর এর পরের সুরা হচ্ছে সুরা জুমার। এই দুই সুরার শেষেই আল্লাহ বেহেশত সম্পর্কে খুব সুন্দর কিছু উল্লেখ করেছেন, যা এখন আমি আলোচনা করব। আল্লাহ আজ ওয়াজাল সুরা সোয়াদে বলেছেন, “জান্নাতের বাগান সমূহ ( যা আল্লাহ তাআলা আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন) এর দরজাগুলো তাদের জন্যে খোলা রাখা হয়েছে, (আরবিতে মুফাত্তাহা মানে এমন কিছু যা খোলে ধরে রাখা হয়েছে এবং কেউ একজন এর ধরে রাখার দায়িত্বে আছে)। এবং যেভাবে আল্লাহ এটি বর্ণনা করেছেন যে, জান্নাতের দরজা ইতিমধ্যে খোলে ধরে রাখা হয়েছে। এটি কিয়ামতের দিন খোলা হবে না। এটি ইতিমধ্যে খোলে ধরে রাখা হয়েছে। মুফাত্তাহা আর মাফতুহা এ দুটি আলাদা শব্দ। আরবিতে মাফতুহা মানে দরজা খোলা। আর মুফাত্তাহা মানে, দরজা প্রশস্তভাবে খোলে ধরে রাখা।
এখন চিন্তা করুন, আপনার অনুমান শক্তিকে কাজে লাগান। যখন দরজা বন্ধ থাকে, তাদেরকে দরজার বাইরে দাড়াতে হবে, ঘণ্টা বাজাতে হবে, দরজায় কড়া নাড়তে হবে, অপেক্ষা করতে হবে দরজা খোলার জন্যে এবং তারপরেই তারা ঢুকতে পারে। যখন আপনি আপনার অতিথির সুবিধার জন্যে খুব বেশি উদ্বিগ্ন থাকবেন, তখন আপনি কি করবেন? আপনি দরজা খোলে রাখবেন। এরপরেও আপনার অতিথি দরজা অর্ধেক খোলা দেখে হয়তো ভাবতে পারে যে, আমি জানি না আমাকে হয়তো ঘণ্টা বাজাতে হবে, ঘরে ঢোকার জন্যে অনুমতি নিতে হবে যেরকম আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা যারা বিশ্বাস কর, তারা অন্যের ঘরে ঢুকো না যতক্ষণ না অনুমতি পাও”। (সুরা আন-নুর:২৭)। এখন, তৃতীয় আরেকটি অবস্থার কথা চিন্তা করুন। ধরুন, আপনি কাউকে দায়িত্ব দিলেন যেমন কোন বাচ্চা অথবা যে কেউ। আপনি দায়িত্ব দিলেন আপনার বাসার দরজা খোলে ধরে থাকার জন্যে এবং আপনার অতিথিদেরকে স্বাগতম জানানোর জন্যে যখন তারা আপনার বাসায় ঢোকে। যাতে আপনার অতিথিরা অপেক্ষা করার মত অসুবিধায় পরতে না হয়। আর এটাই হচ্ছে আল্লাহ আজ ওয়াজাল এর দয়া। সুরা সোয়াদ এ তিনি বলেছেন, “তিনি জান্নাতের দরজা খোলে ধরে রেখেছেন।” এখন, এটা একটা জিনিস যেটি আমি আপনাদের সাথে ভাগ করতে চাই এত সুন্দর ভাষার সুরা সোয়াদ সম্পর্কে।

এখন চলুন দেখি সুরা আয-জুমার এ আল্লাহ কি বলেছেন। সুবহানাল্লাহ, এটা অত্যন্ত সুন্দর। আল্লাহ দোজখের আগুনে জ্বলিত মানুষের কথা বলেছেন। আমি এখন আপনাদের দেখাব। “অকৃতজ্ঞ মানুষদেরকে হাঁকিয়ে নিয়ে জাওয়া হবে, সাকা মানে কাউকে তাড়াতাড়ি সামনের দিকে ঠেলা। তাড়াতাড়ি জাহান্নামের দিকে, জাহান্নামের আগুনের দিকে। এখন, আমরা কুরআনের অন্যান্য জায়গায় দেখেছি যে, জাহান্নামের আগুনের গর্জন অনেক তীব্র। মানুষ এর গর্জন জাহান্নামের বাইরে থেকেও শুনতে পাবে। তাই, মানুষদেরকে যখন জাহান্নামের দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে, তখন তারা যত কাছে যাবে, তত তীব্রভাবে তারা আগুনের গর্জন শুনতে পাবে, ঠিক? তারা যত বেশি অগ্রসর হবে, তত বেশি অনিচ্ছুক হবে, ঠিক? কিন্তু দা’আউনা দা’আদ নামের ফেরেশতারা শুধুই সামনের দিকে ঠেলতে থাকবে, সামনের দিকে ঠেলতেই থাকবে, তাড়াতাড়ি ঠেলতেই থাকবে। জাহান্নামে না নেয়া পর্যন্ত তারা ঠেলতেই থাকবে। এরপর আল্লাহ বলেছেন, জুমরান, এই সমস্ত মানুষদেরকে দলে দলে বিভক্ত করা হবে। জুমরান এসেছে জামায়াত থেকে, বড় দল কিন্তু শ্রেণীতে বিভক্ত দল। এটি হচ্ছে লজ্জাহীন মানুষের দল, এটি হচ্ছে রিবা মানে সুদখোর মানুষের দল, এটি হচ্ছে হারাম খাওয়া মানুষের দল, এটি হচ্ছে প্রশ্নবিদ্ধ পেশার, প্রশ্নবিদ্ধ ব্যবসায়ী মানুষের দল, এটি হচ্ছে ওইসব মানুষ যারা এলকোহল উপসেবক, এটি ওইসব মানুষ যারা ড্রাগ এবং অন্যান্য উপসেবক। আপনারা জানেন, এটি ওইসব মানুষের দল যারা মিথ্যা বলেছে, ধোঁকা দিয়েছে । এটি হচ্ছে ওইসব মানুষের দলা যারা কারও খ্যাতি নষ্ট করেছে, পীড়াদায়ক কথা বলেছে তারা হুমাজাহ আর লুমাজাহ তে যাবে। এখানে ওইসব লোক যারা পিতামাতাকে সম্মান করেনি। এখানে ওইসব লোক যারা অনেক অহংকার করেছে, রাগী আর তাদের এই রাগের কারণে কখনো কোন উপদেশ গ্রহণ করেনি। লোকদেরকে বিভক্ত করা হবে তাদের পাপের ভিত্তিতে। প্রত্যেক বিভক্ত দলকে, শ্রেণীকে জাহান্নামের আগুনের দিকে ঠেলা হবে। “হাত্তা ইজাজা উহা”, ঠিক সময়ে তারা জাহান্নামে, জাহান্নামের আগুনে প্রবিষ্ট হবে। এখন তারা জাহান্নামের দরজায়। এরপর আল্লাহ বলেছেন, “ফুতিহাত আবওয়াবুহা “- দরজা খোলা। আরবিতে তারা বলে, আপনারা জানেন একটা যুক্তি আছে, যদি এবং তারপর উক্তি থাকলে অথবা যখন এবং তারপর উক্তি থাকলে, আমি আপনাদের জন্যে সহজ করে বলি। যখন তারা জাহান্নামের দরজায় উপস্থিত হবে তখন ওর প্রবেশদ্বার গুলো খোলে দেয়া হবে। এটাই হচ্ছে উক্তির “তখন” অংশ। আপনারা জানেন? এটি আপনাদের কি বলছে? দরজাগুলো আগেই খোলা ছিলনা। ওইগুলো তখনই খুলবে যখন তারা উপস্থিত হবে। চিন্তা করে দেখুন এটা নিয়ে। আল্লাহ বলেছেন, জান্নাতের দরজাগুলো ইতিমধ্যে খোলে রাখা হয়েছে। কিন্তু তিনি বলছেন না যে, জাহান্নামের দরজাগুলোও খোলে রাখা হয়েছে। এটা কি সুন্দর না? আল্লাহ এটা চান না, যদি এটা খোলা থাকত তার মানে আল্লাহ মানুষদেরকে জাহান্নামে ঢোকানোর জন্যে অপেক্ষা করছেন। প্রতীক্ষিত অতিথিদের জন্যে জান্নাতের দরজা খোলে রাখা হয়েছে।

কিন্তু জাহান্নাম এমন এক জায়গা, যেখানে আল্লাহ মানুষদেরকে স্বাগতম করতে চান না। তিনি চান না মানুষ জাহান্নামে যাক। দেখুন, তাই তিনি দরজা বন্ধ করে রেখেছেন। আর এর একটি সুন্দর ভাল দিকও আছে। আর সেটি হচ্ছে, কেন জেলখানার দরজা খোলা রাখা হবে? জেলখানার দরজা অবশ্যই বন্ধ থাকা উচিত। জেলখানার দরজা শুধুমাত্র দুইবার খোলা হয়, যখন কয়েদীকে ভেতরে ঢোকানো হয় অথবা যখন কয়েদীকে বাইরে বের করা হয়। এটাই শুধু খোলার সময়। তাই এটাই আল্লাহর দয়া যেটাকে আমাদের ভয় করা উচিত, জাহান্নামের দরজা তখনই খোলা হবে যখন জাহান্নামী ব্যক্তি জাহান্নামের দরজায় উপস্থিত হবে। এখন এই আয়াতে আরও অনেক কিছু আছে, কিন্তু এই ছোট ভিডিওতে আমি সেইগুলোতে যাব না।

আমি আপনাদেরকে আরেকটি আয়াতে নিয়ে যাচ্ছি। এটি একই সুরা, সুরা আজ-জুমার এর একই উপসংহারে। আল্লাহ আজ ওয়াজাল বলেছেন,(সুরা আজ-জুমার এর ৭৩ নম্বর আয়াত) সেইসব মানুষ যারা আল্লাহকে ভয় করেছে, সাবধান থেকেছে, সতর্ক থেকেছে, তাদের জীবন পরিবর্তন করেছে এবং আত্মরক্ষা করেছে তাদেরকেও তাড়াতাড়ি জান্নাতের দিকে দলে দলে নিয়ে যাওয়া হবে। “সিকা” আপনাদেরকে বলেছি, তাড়াতাড়ি নিয়ে যাওয়া হবে। তাদেরকে কেন তাড়াতাড়ি নিয়ে যাওয়া হবে? কারণ, আল্লাহ চান না তাদের জন্যে বিচার দিন দীর্ঘ হোক। যখনই বিচার শেষ হয়ে যাবে, ফেরেশতাদের নিরাপত্তা বলয়ের ভেতর থেকে তাদেরকে জান্নাতে নিয়ে যাওয়া হবে। এবং তাদেরকে জান্নাতের বাইরে অপেক্ষাও করতে হবে না প্রবেশ করার জন্য। কারণ, বিচার দিনে যখন সবার বিচার চলবে তার আশেপাশে যদি আপনি থাকেন তাহলে আপনি ভীত হয়ে পরবেন। আল্লাহ আপনাকে ভীত করতে চান না। তাদেরকে জান্নাতে পাঠিয়ে দেয়া হবে যার দরজা ইতিমধ্যেই খোলে রাখা হয়েছে, যেটা আমরা আগেই জেনে এসেছি। তুমি ঢোকে পর, জান্নাতে লাফ দিয়ে প্রবেশ কর। সুবহানাল্লাহ! যখন তারা জাহান্নামে উপস্থিত হবে, আল্লাহ এটা বলেননি যে যখন তারা উপস্থিত হবে, জাহান্নামের দরজা আগে থেকেই খোলা থাকবে। তিনি জাহান্নামের ক্ষেত্রে বলেছেন, যখন তারা সেখানে উপস্থিত হবে, তারপর দরজা খোলা হবে। কিন্তু এখানে আরবি শব্দ “ওয়া”, অতি ক্ষুদ্র আরবি শব্দ “ওয়া”, হাত্তা ইজাজা উহা ওয়া ফুতিহাত আবওয়াবুহা(সুরা আজ-জুমারঃ ৭৩)। আপনারা জানেন এটা আমাদের কি বলছে? এটাই হচ্ছে ঘটনা। যখন তারা জান্নাতে উপস্থিত হবে এবং সেখানের দরজা ইতিমধ্যেই খোলা রাখা হয়েছে। এই ছোট শব্দ “ওয়া” মানুষ এই আয়াত মুখস্ত করে আর বলে, এই “ওয়া” এর মানে কি? এই ছোট “ওয়া”, মহান আল্লাহর দয়া সম্পর্কে সুরা সোয়াদে বলা হয়েছে। যখন তারা সেখানে উপস্থিত হবে এবং আসল ব্যাপার হচ্ছে, এর দরজাগুলো আগে থেকেই খোলে ধরে রাখা হয়েছে।

সুবহানাল্লাহ! আমরা যেন জান্নাতের ওই দরজা দিয়ে ঢুকতে পারি যেগুলো ইতিমধ্যে খোলে রাখা হয়েছে। এবং এই শব্দগুলোর দিকে আরেকবার দেখুন। এই দরজার প্রহরী, ফেরেশতা, জান্নাতের রক্ষকগণ তাদেরকে বলবে, “সালামুন আলাইকুম, আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক”। আপনি যখনই জান্নাতে প্রবেশ করবেন আপনার জন্যে তারা শুভেচ্ছা বার্তা শুনাবে। মাঝে মাঝে যখন আপনি কোন পার্টিতে যান আর ওই পার্টির আয়োজক অন্য কোথাও ব্যস্ত থাকে, আপনাকে উনি সালাম দেন না। এরপর যখন দেখা হয় তখন বলে, ও! আপনি কখন এলেন? জান্নাতে আপনি যখনই প্রবেশ করবেন, তখনই আপনাকে সালাম দেয়া হবে। আপনার সম্পর্কে ভালো মন্তব্য করা হবে, কি ভাল আপনারা! সাধারণত আপনারা যেসব মন্তব্য শুনেন, যেমন- হে! সুন্দর শার্ট, সুন্দর টাই, সুন্দর এটা, সুন্দর ওটা! ফেরেশতারা বলবে, “কি ভাল আপনারা! ও আল্লাহ! কিছু ভালো মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করছে।” আপনি ফেরেশতাদের কাছ থেকে ভালো ভালো মন্তব্য পেতে থাকবেন। তারা বলবে, “এখানে বাস কর, তোমরা একখানে চিরস্থায়ী”। সুবহানাল্লাহ! আর শেষ কথা, আমি জানি এটা দীর্ঘ হয়ে যাচ্ছে, শেষ কথা। “ওয়া ক্কলু আলহামদুলিল্লাহ” (সুরা আজ-জুমারঃ ৭৪)। এখন আপনি জান্নাতের দরজা দিয়ে ঢুকে পড়েছেন। আপনি এখন জান্নাতে। প্রথম জিনিসটি আপনি বলবেন, আলহামদুলিল্লাহ। আমরা প্রতিদিন আলহামদুলিল্লাহ বলি, তাই না? প্রতিদিন আমি নামাজে বলি, আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন। যখন আমাকে কেউ জিজ্ঞেস করে, আপনি কেমন আছেন? আমি বলি, আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু ওই আলহামদুলিল্লাহ হচ্ছে এমন একটি শব্দ যেটি আপনি কোনদিন উচ্চারণ করেন নি। যখন বিচার দিনে সব বিচার শেষ এবং আপনি তাড়াতাড়ি জান্নাতে প্রবেশ করবেন এবং যখন সত্যি সত্যি আপনি জান্নাতে পা রাখবেন যখন আর কোন প্রশ্ন করা হবেনা, যখন আর কোন ত্যাগ থাকবে না, আর কোন কঠিন অবস্থার সম্মুখীন হতে হবে না, আর কোন ভয় নেই, “আলহামদুলিল্লাহ”। এটাই হবে আপনার সেরা “আলহামদুলিল্লাহ” বলা, যার জন্যে আমরা এত অপেক্ষা করে এসেছি দেখার জন্যে। যেটা বলার জন্যে আমরা অপেক্ষা করেছি। এবং আমি চাই, আপনারা এবং আমিও মনে রাখি এই আলহামদুলিল্লাহর কথা, যেটা আমরা বিচার দিন বলব, যেটা আমরা আজকে বলছি, “আলহামদুলিল্লাহ”।

আল্লাহ আজ ওয়াজাল আমাদেরকে কুরআনের অনুসরণকারী মানুষ হিসেবে পরিণত করুন, যারা আল্লাহর নিশ্চিত উপহার জান্নাত পাবে, যাদেরকে আল্লাহর জান্নাতে তাড়াতাড়ি নিয়ে যাওয়া হবে বিচার দিনে কোন রকম প্রশ্ন ছাড়াই। আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।