আমরা প্রথমে যা নিয়ে কথা বলব সেটা হল আমেরিকান ড্রিম। ”জীবন, স্বাধীনতা আর সুখের সন্ধান।” ভাল কথা। আমি শুরু করব সুখের সন্ধান দিয়ে। আমি যেটা বলতে চাচ্ছি তা হল এটা যদিও চমৎকার একটি উপমা, আর এই জাতির প্রতিষ্ঠাতাদের মনে আসলেই ভাল উদ্দেশ্য ছিল, কিন্তু আমি আসলে খুবই অবাক হয়েছি কারণ কুরআনে সুখের সন্ধান নিয়ে কিছু বলা নেই। খুবই তাজ্জব ব্যাপার। আমি ১৫ বছর ধরে এটা বুঝতে চেষ্টা করছি যে, কুরআনে কোথায় এই সুখের সন্ধানের কথা বলা আছে। আল্লাহ এই ব্যাপারে কথা বলেননি, কিছুই বলেননি। আর এটা আমাকে ভাবায় যে, আধুনিক সভ্যতার জন্য এত গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার, মানুষ সুখী হতে চায়, কিন্তু আল্লাহ এই ব্যাপারে কিছুই বলেননি। (অপ্রয়োজনীয় অংশ) কুরআনে এটা বলা নেই কিভাবে সুখের সন্ধান পেতে হবে। আর এটা খুবই আকর্ষণীয় ব্যাপার যে, কুরআনে সবচেয়ে বড় যে অনুভূতির কথা বলা হয়েছে তা হল সন্তুষ্টি। সন্তুষ্টি, সন্তুষ্ট থাকা। এটাই সব থেকে বড় লক্ষ্য। সুখ নয়। এই দুটি কিন্তু আলাদা জিনিস। সুখে থাকা আর শান্তিতে থাকা দুটো আলাদা বিষয়। এখন আমি আপানাদেরকে সাইকোলজি এর ব্যাপারে কিছু বলব। খুবই আকর্ষণীয় কিছু বিষয়। আর এই তথ্যগুলো আমাদেরকে কুরআনের বাণী বুঝতে আরও বেশি সহায়তা করবে। আর আমার আলোচনার পুরোটা এই নিয়ে। আর এই বাণীটি আছে সূরা নাজম এর মধ্যে وَأَن لَّيْسَ لِلْإِنسَانِ إِلَّا مَا سَعَىٰ এবং মানুষ তাই পায়, যা সে করে, এখন আপনারা আমার সাথে থাকার চেষ্টা করুন। সর্বপ্রথম আর সবচেয়ে ছোট যা মানুষ সন্ধান করে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম যা চায়, আমি জানি শ্রোতাদের মধ্যে মনে মনে তরুণ লোক আছেন, কিন্তু আমি এখানে যারা বয়সে তরুণ তাদের বলছি, আমি চাই আপনারা এটা বুঝতে পারুন যে, সবচেয়ে তুচ্ছ কিছু যখন জীবনে সন্ধান করা হয়, তখনি আসলে সুখের সন্ধান করা হয়। এটা আসলেই সব থেকে তুচ্ছ। আমি বলছি কেন আমার এই ধারণা। যেমন শনিবারে ঘুম থেকে উঠে বাড়ির কাজ করতে ইচ্ছা করে না, তাই ১২টা পর্যন্ত ঘুম দিয়ে আপনি যখন উঠেন আপনার তখন কি অনুভূতি হয়? আপনি তখন সুখী। সুখী হওয়া আসলে কষ্টের কিছু না। কোন কোন ছেলে সারা রাত ভিডিও গেমস খেলে, তার মাথা ব্যাথা করে, কিন্তু যেহেতু সে গেমস শেষ করতে পেরেছে, তাই সে সুখী। কেউ কাজে যাওয়ার আগে ফোন পায় যে, আজকে আবহাওয়া খারাপ তাই কাজে যেতে হবে না। তারা এতেই সুখ বোধ করে। সুখ পাওয়া খুবই সহজ। বিশেষ করে ছোট জিনিষের ক্ষেত্রে। অবশ্য সম্পর্ক থেকে সুখী হওয়া এরচেয়ে কঠিন। বাবা মাকে সুখী করা, অথবা বাবা মা যেন আমার উপর খুশি হয়, এটা করা কঠিন। আর স্ত্রীকে খুশী করা…… এটা নিয়ে কথা না বলাই ভাল, আসুন এটা নিয়ে কথা না বলি। কিন্তু শুধু নিজের জন্য, যেমন আপনি একটি সিনেমা দেখলেন, আপনি এতেই খুশী। অথবা আপানার বন্ধুর সাথে দেখা হল আপনি খুশী, আপনি আপনার পছন্দের রেস্টুরেন্টে খেতে গেলেন আপনি এতেই অনেক সুখী। এটা খুব কঠিন কিছু না। কিন্তু এটা যেমন দ্রুত আসে তেমনি দ্রুত চলেও যায়। চলে যায় এবং আপনার আবার ভাল না লাগা শুরু হয়। আপনি হতাশ হয়ে যান এবং আবার সুখী হওয়ার চেষ্টা করেন। তাই না? এটা অনেকটাই মাদকে আসক্তির মত। কারণ এটা আপনার সাথে সর্বদা থাকে না, আর এটাই হল সর্ব নিম্নস্তরের সন্ধান। তাই মানুষ যখন বলে আমি শুধু সুখী হতে চাই, আমি আসলে জানি না সে কি বুঝাতে চাচ্ছে, কারণ কোন মানুষই সবসময় সুখী না। আল্লাহ আমাদের অনেক অনেক অনুভূতি দিয়েছেন এই জীবনে অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য। এবং এর সবগুলোই সুস্থ জীবনের অংশ। সুখ হল এদের একটি। যদি আপনার আকাঙ্খা শুধু সুখী হওয়া হয়, তাহলে আমাকে বলতেই হচ্ছে যে আপনি হতাশ হবেন। এটা কখনই ঘটতে যাচ্ছে না। আপনি কখনই চিরসুখী হতে পারবেন না। এটা আসলে এভাবে কাজ করে না। আমি বলছি না যে আপনাকে হতাশ হতে হবে। আমি যা বলতে চাচ্ছি তা হল, সংগ্রামও জীবনের একটি অংশ। যখন আপনি বার্ষিক পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন তখন আপনি কিন্তু সুখী নন। বা ৩ ঘণ্টার পরীক্ষার মাঝে আপনি সুখী নন। যারা ব্যায়াম করেন তারা তাতে সুখ পান না। হ্যাঁ, ফলাফল দেখে তারা অবশ্যই সুখী হন। কিন্তু ঘাম ঝরানো পরিশ্রম করার সময় নিশ্চয় তারা সুখী নন। সে সময় আপনি নিজের চেহারা দেখলেই তা বুঝতে পারবেন। ঠিক যেন সিলভেস্টার স্ট্যালোন এর মত। যাই হোক, তাহলে সবচেয়ে নিম্নস্তরের আকাঙ্ক্ষা কি? সুখ। আসুন এবার এর পরের ধাপ দেখি। পরের ধাপ মানে হল এটা অর্জন করতে আরও চেষ্টা করতে হয়। আর আমার বর্ণনায় আমি যতই উপরের ধাপে যাবো, সেটা অর্জনের জন্য ততই কষ্ট করতে হবে। তো এর পরের ধাপ হল cool দেখানোর আকাঙ্ক্ষা। এটা সুখের আকাঙ্ক্ষা নয়, আকাঙ্ক্ষা হল cool হওয়ার। cool হওয়া মানে হল কেউ আমাকে নিয়ে ঠাট্টা করবে না। আমি বাকি সবার মতই হব, কেউ আমাকে নির্দেশ করে বলবে না যে, তুমি এমন কাপড় কেন পরেছ? এমনভাবে কেন কথা বল, তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন? তুমি এভাবে চল কেন? ওদের সাথে কেন মেশো? এটা কেন কিনেছ? এই গাড়ি চালাও কেন? আপনাকে আলাদা করে ভাববে, আপনি এটা চান না। আপনি যে কোন ভাবে সবার সাথে মিশে যেতে চান এবং কারও সমালোচনার বস্তু হতে চান না। আপনি অদৃশ্য হয়ে যেতে চান বাকি সবার মাঝে, যেন আপনাকে বাকি সবার মত cool ভাবা হয়। আর এর জন্য পরিশ্রম করতে হয়। উদাহরন হিসেবে বলা যায় আপনারা যারা হাইস্কুল এ পড়ছেন, আপনি স্কুলে কি পোশাক পরে যাচ্ছেন সেটা আসলেই একটি বড় ব্যাপার। আপনি যখন আলমারি থেকে একটা কাপড় বের করেন, বা জুতা হাতে নেন পরার জন্য তখন আপনার মনে এই প্রশ্ন আসে যে কে আপনার পোশাক নিয়ে মজা করতে পারে। সত্যি সত্যি আপনার মনে এ ভাবনাটি আসে। অথবা আপনি যখন কাপড় কিনতে দোকানে যান, আপনার বাবা হয়ত আপনাকে টাকা দিয়েছেন কিছু কেনার জন্য, আপনি যাই কেনেন না কেন অনেক কিছু কেনার পিছনে একমাত্র কারণ হল যখন আপনি এইসব পরবেন তখন লোকে কি বলবে। এইটাই হল cool হওয়ার আকাঙ্ক্ষা। বাদবাকি ১০ জনের মাঝে মিশে যেতে হলে আপনাকে পরিশ্রম করতে হবে। এমন কিছু করাই সহজ যাতে মানুষ আপনাকে আজব ভাববে। বাকি সবার মত চলতে গেলে কিছু কাজ করতেই হবে। অনেক তরুণকে এই জন্য নিজের পছন্দ বাদ দিতে হয়। তাদের এমন অভিনয় করতে হয় যা আসলে তারা না। আমি কিছু তরুণকে চিনি, ধরুন ১৪-১৫ বছর বয়স, একজনের কথা মনে আছে, সে বেসবল টুপি পড়ত কারণ এটা তখন ফ্যাশন ছিল। তার প্যান্ট ঝুলে থাকতো। সে আমার কাছে এসে কান্না শুরু করলো। আমি তাকে কাছে বসালাম। আর সে আমাকে বলল “আমি এমন কাপড় পরতে পছন্দ করি না, আমি এটা ঘৃণা করি, কিন্তু আমি যদি এমন না করি তাহলে বাকিরা আমাকে নিয়ে মজা করে, আমাকে মারধর করে। তাই আমি বাধ্য হয়ে এমন করি। আমি গালি দিতে পছন্দ করি না, কিন্তু প্রায়ই গালি দেই যখন স্কুলে থাকি। কারণ আমাকে বাকিদের মত হতে হবে”। তাহলে সবচেয়ে তুচ্ছ আকাঙ্ক্ষা হল সুখের আকাঙ্ক্ষা। এরপরের ধাপ হল cool হওয়ার আকাঙ্ক্ষা। এরপরের পর্যায় কি? জনপ্রিয় হওয়ার আকাঙ্ক্ষা। আমি শুধু সবার মাঝে মিশে যেতে চাই না, আমি সবচেয়ে জনপ্রিয় হতে চাই। আমি এমন হতে চাই যেন সবাই আমার বন্ধু হতে চায়। আমি এমন হতে চাই যেন সবাই লাঞ্চের সময় আমার কথা শোনে। আমি এমন হতে চাই যেন কেউ আমাকে নিয়ে মজা করার আগেই যেন আমি তাদেরকে নিয়ে মজা করতে পারি। আর প্রায় সময়ই আপনারা দেখবেন স্কুলে যেসব বাচ্চারা জনপ্রিয়, তাদের জনপ্রিয়তার কারণ হল তারা অন্যদের নিয়ে মজা করে। আর সবাই তাদের ভয় পেয়ে তাদের কথা মত চলে। যেন তারা পরবর্তী শিকারে পরিণত না হয়। যদিও আমি এখানে অল্পবয়স্কদের কথা বলছি, কিন্তু এমনটা প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রেও হয়ে থাকে। অবশ্যই হয়ে থাকে। আমাদের আঙ্কেল আনটিদের ক্ষেত্রেও হয়ে থাকে। কোন সন্দেহ নেই। জনপ্রিয়তার মানে হল আমি চাই সবাই আমাকে নিয়ে কথা বলুক। আমি সবার মনোযোগের কেন্দ্রে থাকতে চাই। আমি চাই সবাই আমাকে নিয়ে মন্তব্য করুক। আমি কোন ছবি পোস্ট করব, টুইট করব, ভিডিও বানাবো, যা কিছুই করি, মানুষ যেন আমাকে নিয়ে কথা বলে। যখন আমাকে নিয়ে কথা বলা কমে যাবে, তখন আমাকে নতুন কিছু করতে হবে যেন মানুষ আমাকে নিয়ে মেতে থাকে। জনপ্রিয়তার আকাঙ্ক্ষা খুবই আজব একটি জিনিষ, কারণ এর কারণে মানুষ নিজেই নিজের অপমান করে। যেমন মিউসিক ইন্ডাস্ট্রিতে যখন এমন হয় কোন শিল্পির গান খুব হিট করলো, সবাই সেই গান ডাউনলোড করলো। তারপর যখন তার জনপ্রিয়তা কমে গেল তখন তাকে নিজেকে অপমানিত করতে হবে, নোংরা ভিডিও বানানো, বা কোন কাহিনী তৈরি করা, যেন পত্রিকাওয়ালারা তাদের নিয়ে মেতে থাকে, অন্তত সেখানে জনপ্রিয়তা থাকবে। কারণ তারা নিজেদের গুণের কারণে আর জনপ্রিয়তা পাচ্ছে না, তাদের পরের গানগুলো বা ভিডিওগুলো আগের মত বিক্রি হচ্ছে না। এটাই হল জনপ্রিয়তার আকাঙ্ক্ষা। জনপ্রিয় হওয়ার জন্য পরিশ্রম করতে হয়। টাকাপয়সা খরচ করতে হয়। সময় দিতে হয়। নিজের ভাবমূর্তির জন্য কাজ করতে হয়। আর ভাবমূর্তি রক্ষা করাই তখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যায়। সমাজে অবস্থান ধরে রাখাই তখন মূখ্য হয়ে দাঁড়ায়। এটা হল পরের পর্যায়। কিন্তু এর উপরে আরও ধাপ আছে। ( ইনশা আল্লাহ চলবে … )
কি খুঁজতে চান ?
সাম্প্রতিক পোস্ট
আর্কাইভ
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- February 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- June 2020
- March 2019
- August 2018
- July 2018
- June 2018
- May 2018
- April 2018
- March 2018
- February 2018
- January 2018
- December 2017
- November 2017
- October 2017
- September 2017
- August 2017
- July 2017
- June 2017
- April 2017
- February 2017
- January 2017
- December 2015
- October 2015
- September 2015
- July 2015
- June 2015
- May 2015
- April 2015
- March 2015
- January 2015
বিষয় সমূহ
ego
islam
আখিরাত
আধ্যাত্মিক
আল্লাহ
আয়াত
ইবাদাহ
ইসলাম
ঈমান
উপদেশ
উপাসনা
উস্তাদ নুমান আলী খান
কুরআন
কৃতজ্ঞতা
ক্ষমা
চরিত্র
চিন্তা করা
চ্যালেঞ্জ
জান্নাত
জিব্রাইল (আঃ)
জীবন
দাসত্ব
দুনিয়া
দুনিয়া আসক্তি
নামাজ
নামাজে মনোযোগ
নুমান আলী খান
পথভ্রষ্টতা
বিশ্বাস
বিয়ে
ব্যক্তিগত উন্নয়ন
ভিন্নমত
মতাদর্শ
মানসিক শান্তি
মু'জিযা
মুসলিম
রমজান
রামাদান
শান্তি
শাস্তি
শায়েখ ডঃ ইয়াসির কাদি
শয়তান
সম্মান
সালাত
সূরা ফাতিহা