জীবন, স্বাধীনতা আর সুখের সন্ধান – পর্ব ০২

এরপর এর উপরে রয়েছে আর এক ধরনের প্রচেষ্টা সেটা হল “সম্মানের” পেছনে ছুটে চলা। কলেজের ছাত্রদের কাছে এটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ, প্রাথমিক বা হাইস্কুলের ছাত্রদের চেয়ে। কিন্তু কলেজের ছাত্রদের কাছে এর গুরুত্ব অনেক। এইমাত্র আমি কি বললাম? “সম্মান”! আমি ক্রমানুসারে যেতে চাই। সবার নীচে “সুখ”, তারপরে কি?” সামাজিকতা (cool)”। তারপর? “জনপ্রিয়তা”। এখন আমরা কি নিয়ে কথা বলছি? “সম্মান”! “সম্মান” মানে হল আপনি নিজের সাথে এমন কিছু যুক্ত করতে চান যেটা অনেক মূল্যবান। আপনি মানুষকে বলতে চান, “জানো! আমি হার্ভার্ডে গিয়েছিলাম!” আপনি তাদের বলেন না যে আপনি সেখানে সাপ্তাহিক ছুটি কাটাতে গিয়েছিলেন! আপনার বন্ধুর সাথে দেখা করতে! কিন্তু আপনি নিজের নামের সাথে একই বাক্যে হার্ভার্ড শব্দটাকে ব্যবহার করতে ভালোবাসেন। সত্যি কথা হল, আপনি যদি হার্ভার্ডে নবীন ছাত্র হন, আপনি কি অর্জন করেছেন? কিছুই না। আপনি শুধু সেই ভার্সিটিতে পড়েন, এর বেশিতো কিছু না। কিন্তু আপনি নিজের নামের সাথে একটা সম্মানিত প্রতিষ্ঠানের নাম যোগ করতে পছন্দ করেন। নিজের নামের সাথে একটা মর্যাদাপূর্ণ ব্র্যান্ড- এর নাম যুক্ত করতে আপনার ভালো লাগে। আপনার নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের পোশাক করতে ভালো লাগে এবং যদি ব্র্যান্ডের লেবেল দেখা না যায় আপনি অন্য মানুষদের সাথে এমনভাবে কথা বলেন যেন তারা বাধ্য হয় প্রশ্ন করতে যে, “আপনি এটা কোথা থেকে কিনেছেন”? আপনি যেন বলতে পারেন যে এটা আরমানী ব্র্যান্ড বা কিছু একটা। কারণ আপনি চান নিজের নামের সাথে সেই ব্র্যান্ডের নাম যুক্ত করতে। এমনটাই ঘটে নতুন কোন ব্র্যান্ডের গাড়ি বাজারে আসলে। কোন গাড়ি আপনি চালাচ্ছেন, কোন ধরণের পোশাক আপনি পরছেন, কোন ধরণের মানুষের সাথে আপনি মিশছেন। সেলফি এজন্য তোলেন না যেন আপনি তাদের মনে রাখতে পারেন, আপনি এজন্য তোলেন যেন ছবিটা পোস্ট করতে পারেন। যেন অন্য মানুষ আপনাকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভাবে কারণ আপনি সেই বিশেষ ব্যক্তির পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। এটা সম্মানের একটা ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। ছবি তোলা যদি শুধু আপনার জন্য হয় তবে তো দারুন ব্যাপার! কিন্তু এটা আসলে অন্য মানুষদের জানানো যে আপনি কতটা চিত্তাকর্ষক(Awesome), অন্যের সাথে মিলে! কোন কিছু অর্জন করতে পারার জন্য নয় কিন্তু! মুসলিম সমাজে অন্য এক ধরণের মর্যাদা আমাদের বাবামা-রা অনেক সময় পান। আর তা হল তারা তাদের সন্তানকে হাফেজ বানাতে চান এবং ডাক্তারও! এই দুইটাই! আর যদি হয় হাফেজ ডাক্তার! তাহলে তো কথাই নাই! তারা ইতোমধ্যেই জান্নাত লাভ করে ফেলেছে! তারা দ্বীন ও দুনিয়া…দুটাই পেয়ে গেছে! “রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনইয়া হাসানা, ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানা”। কাজ এখানেই হয়ে গেছে! কিন্তু তারা মানুষকে বলতে পছন্দ করে যে ” জানো! আমার সন্তান! সে একজন হাফেজ”। এবং তারা তাদের সন্তানকে এক শিরোপায় (trophy)পরিণত করে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এর জন্য আপনি আপনার সন্তানকে কুরআনে হাফেজ বানান নাই। কিন্তু এমনটাই ঘটে থাকে। আমরা এখন কোন লেভেলে আছি? “সম্মান”! এটা অনেক বড় ব্যাপার হবে যখন আপনি আপনার প্রথম চাকুরীটা পাবেন। হয়তো মাইক্রসফট বা তেমন কোথাও, কে জানে! ধরেন আপনি বড় কোথাও চাকুরী পেলেন। হয়তো গুগলে! তারা আপনাকে আপনার ব্যাজ দিবে। যেটা আপনি মসজিদে পরে আসেন! যেন কেউ প্রশ্ন করে যে, “তুমি কি অনেক বেশি গুগোল ব্যবহার কর যে তারা তোমাকে বিশেষ ব্যাজ দিয়েছে”? আর আপনি বলার সুযোগ পান যে, “আমার সেখানে চাকুরী হয়েছে”। আপনি মানুষকে জানাতে চান যে আপনি কি অর্জন করেছেন। “তাফাখুরুম বাইনাকুম” (৫৭;২০) কুরআনে এটাকে এভাবেই বলা হয়েছে। অন্যদের দেখানোর ইচ্ছা যে আপনার কি মর্যাদা আছে! যাই হোক আমি আবার একদম নীচ থেকে শুরু করতে চাই।

প্রথমে কি ছিল? “সুখ”। দ্বিতীয়? “সামাজিকতা(cool)”। তৃতীয়? “জনপ্রিয়তা। চতুর্থ? “সম্মান”। তারও উপরে, টাকার পিছনে ছুটে চলা! কিছু মানুষ আছে যারা সুখকে পাত্তা দেয় না। তারা সামাজিকতার কথা ভাবে না। তারা জনপ্রিয়তা চায় না। এমনকি সম্মানও নয়। একটা জিনিসকেই তারা গুরুত্ব দেয়, আর সেটা হল “টাকা”। তারা জানে কিভাবে অনেক টাকা উপার্জন করতে হয়। এই মানুষগুলো ময়লা জামা, পুরনো ছেঁড়া জিন্স পরে থাকে, ৮৮ মাজদা মিয়াটা গাড়ী চালায়। কিন্তু এই সব নিয়ে তাদের কোন ভ্রুক্ষেপ নাই। কারণ তারা মাসে মিলিয়ন, ১০ মিলিয়ন ডলার উপার্জন করে। আমার এমন মানুষের সাথে দেখা হয়েছে যারা বছরে শত শত মিলিয়ন ডলার উপার্জন করে এবং আপনি বুঝবেনই না সেটা। কারণ তার চুল উস্কখুস্ক, তার মধ্যে এক অন্য রকম ভাব আছে যে সে ব্যস্ত! বা ব্যস্ততার জন্য নাও হতে পারে কারণ সে এগুলোকে পাত্তাই দেয় না। সে শুধু জানে কিভাবে ব্যবসা করতে হয়। ব্যবসায় সে একটা বিস্ময়। আর সেটা নিয়েই সে শুধু চিন্তা করে। সে খালি এটাই চিন্তা করে যে বিক্রয় কিভাবে বাড়ানো যায়, কিভাবে ব্যবসার আরো প্রসারণ হবে, কিভাবে আমি নতুন ওয়্যারহাউস খুলবো, আমি এটা করতে চাই, আমি ওটা করতে চাই। সুবহানাল্লাহ! তারা অবিশ্বাস্য ধরণের মানুষ।যাই হোক, মই এর উপরে উঠলে কি আরো কঠোর পরিশ্রম করতে হয়? করতে হয়, তাই নয় কি? “সুখী” হতে কোন পরিশ্রম করতে হয় না। “সবার মত হতে” কিছু পরিশ্রম করতে হয়। জনপ্রিয় হতে আরো কিছু কাজ করতে হয়। সম্মান পাওয়া বা সম্মানিত কিছুর সাথে জড়িত হওয়া আরো শ্রমের। অনেক টাকা কামাতে হলে অনেক শ্রম দিতে হয়। এক অবিশ্বাস্য রকমের কর্মস্পৃহা লাগে, তারা কোন বিরতি নেয় না। এর উপরেও উঁচু লেভেল আছে। যাই হোক আমি যখন বলেছি কিছু একটা করতে বেশি শ্রম দিতে হয়, এটা সম্পর্কে আপনাদের আরেকটা বিষয় জানাতে চাই। যখনই আমি কোন উঁচু লেভেলের কথা বলি, আপনাকে সেখানে যেতে বেশি কষ্ট সহ্য করতে হবে। আপনাকে যন্ত্রণা সহ্য করতে হবে সেখান পৌঁছাতে।

সুতরাং, আমরা এখন টাকার উপরের লেভেল যাচ্ছি। আর টাকার উপরে সেই মানুষটা যে শুধু “১ নম্বর হতে চায়”। তারা যে কোন কাজে চরম উৎকর্ষতা অর্জন করতে চায়। তারা অন্যদের ছাড়িয়ে যেতে চায়। আমি শুধু আমার কোম্পানির প্রোগ্রামার হতে চাই না, আমি এই কোম্পানির শীর্ষস্থানীয় প্রোগ্রামার হতে চাই। আমি শুধু এই ক্লাশের ছাত্র হতে চাই না, আমি এক নম্বর হতে চাই। আমি শুধু SAT পরীক্ষায় বেশি নম্বর পেতে চাই না, আমি সর্বোচ্চ নম্বর পেতে চাই। একদম নিখুঁত নম্বর। আমি শুধু বাস্কেটবল খেলোয়াড় হতে চাই না। আমি এনবিএ- তে যেতে চাই আর আমি এনবিপি হতে চাই। তারা নিজেদের নিয়ে কখনই খুশী হতে পারে না। তারা শুধু নিজেদেরকে আরো কঠোর পরিশ্রমে নিয়োজিত করে, তাদের জোর প্রচেষ্টা চলতেই থাকে, চলতেই থাকে। তারপরেও তারা নিজেদের নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারে না। এই ধরণের মানুষরা তাদের কাজে চরম উৎকর্ষ অর্জন করতে সক্ষম হয়। সেটা পড়াশুনাই হোক, বা শরীরচর্চা হোক বা এথলেটিক্স, তাদের কর্ম ক্ষেত্রে, তাদের গবেষণা- যাই হোক না কেন তাদের শীর্ষস্থান অর্জন করা চাই। তাদের এক নম্বর হতে হবে। তারা নিজেদেরকে কার সাথে তুলনা করে? এটা জানা খুব গুরুত্বপূর্ণ। জানেন তারা নিজেদেরকে কার সাথে তুলনা করে? নিজেকে গতকালের সাথে। তারা কাউকেই পাত্তা দেয় না, কারো দিকে তাকায় না। তারা জানে তারা আরো ভালো করতে পারে। তাই তারা কখনই, কখনই সন্তুষ্ট হতে পারে না। তারা কখনো কাজ না করে বসে থাকে না। তারা সব সময় বলতে থাকে আমাকে আরো কাজ করতে হবে, আমি জানি আমি আরো ভালো করতে পারি। অন্য সবাই হয়তো বলবে, “আপনি সত্যি বিস্ময়কর । কি চমৎকার কাজ করেছেন আপনি”। কিন্তু তারা ভাবে “তো তাতে কি। আমি জানি এর চেয়েও ভালো করার ক্ষমতা আমার আছে”! তাই তারা মানুষের প্রশংসা, সুনাম কিছুকেই গুরুত্ব দেয় না, যারা ভাবে যে সে আসলে দারুন কাজ করেছে। তারা চেষ্টা করেই যায়, করেই যায়, করেই যায়। আর এমনই একটা উদাহরণ হল মাইকেল ফেল্পস, ঠিক কি না? কত মানুষ তার প্রশংসা করছে সব রেকর্ড ভেঙ্গে ফেলার জন্য। কিন্তু আপনার কি ধারণা যে সে বসে ভাবছে যে, ” কি দারুন! আমি তো রেকর্ড ভেঙ্গেছি। এখন আমার সম্মান আছে তাই আমি এখন কিছুটা অবসর নিতে পারি”! সে তো সম্মানের পিছনে ছুটেনি। সে কি অর্জনের চেষ্টা করছে? উৎকর্ষতা! তাই সে কখনই সন্তুষ্ট হতে পারবে না। সে চেষ্টা করতেই থাকবে। মেশিনের মত! সামনে যেতেই থাকবে, যেতেই থাকবে, যেতেই থাকবে, আরো দ্রুত গতিতে! এমন মানুষ দুনিয়ায় খুব কমই আছে। খুবই কম। অনেকেই এখানে বসে আছেন যারা স্কুলে পাস করার গ্রেড পেলেই খুশী। তখনই তারা সুখের খোঁজে প্লে স্টেশন নিয়ে খেলতে বসে যায়। আবার এমন মানুষও আছে যে ৯৯ পেলেও নিজের উপর অসন্তুষ্ট হয়, ” কিভাবে আমি এই একটা ভুল করে ফেললাম!” এমনটা সাধারণত ছেলেরা করে না, মেয়েরা করে। উৎকর্ষতা অর্জনের ব্যাপারে কথা বলতে বলতে আরো একটা কথা বলতে চাই যে আমি জীবিকা অর্জনের জন্য কি করি। আমার সত্যিকার অর্থে কোন চাকুরী নাই, কিন্তু আমার ক্যারিয়ারের একটা অংশ হল যে আমি কম বয়স্ক ছেলে মেয়েদের আরবী শেখাই। এটা একটা বেশ ইন্টেন্সিভ প্রোগ্রাম, তাদের আরবীর কিছুটা শেখাতে ৯ মাস লেগে যায়। ক্লাসের অর্ধেকে থাকে ছেলে, আর অর্ধেকে মেয়ে। ৩০ টা ছেলে, ৩০ টা মেয়ে। মেয়েরা গত ৫ বছর ধরেই পরীক্ষায় ছেলেদের চেয়ে অনেক ভাল নাম্বার পেয়েছে। খুবই ভালো করেছে তারা। কিন্তু ছেলেরা ক্রমাগত ভাবেই খুব খুশী। একটা কথা বলি! মেয়েরা সবসময়ই মন খারাপ করে থাকে! আমাকে বলে, ” ওস্তাদ! আমি জানি আমি ১০০ পেয়েছি কিন্তু আমি নিশ্চিত নই যে আমি সব ঠিকমত বুঝেছি!” এদিকে এক ছেলে, সে ২৫ পেয়েছে আর সে বলছে, ” আমি বুঝতে পেরেছি ওস্তাদ, আমি বুঝতে পেরেছি, আমি বুঝতে পেরেছি, আমি বুঝতে পেরেছি!” আমি পুরোপুরি ভিন্ন দুই প্রজাতির মানুষের সাথে কাজ করছি একই ক্লাশ রুমের মধ্যে। তাদের পুরোপুরি ভিন্ন মন মানসিকতা। তাই আমার ছেলেদের বলতে হয় যে, “মন দাও! অপদার্থ! তুমি বোঝনি। কিছু কাজ কর!” আর এদিকে এই মেয়েকে আমার বলতে হয়, ” শান্ত হও! তুমি ঠিকই বুঝতে পেরেছো। হালকা ভাবে নাও!” আমি তো ছেলেদেরকে বলতে পারি না হালকা ভাবে নিতে কারণ এরচেয়ে হালকাভাবে আর নেওয়া যায় না! এটা সম্ভব নয়। সুতরাং, আমরা কোথায় পৌঁছিয়েছি? কি নিয়ে কথা বলছিলাম? ঠিক আছে, আমাকে সাহায্য করুন একদম নীচ থেকে আবার শুরু করতে। “সুখ”। “সামাজিকতা(cool)”। “জনপ্রিয়তা”। “সম্মান” “টাকা”। “উৎকর্ষ”।

উৎকর্ষের উপরে কি থাকতে পারে? উৎকর্ষের উপরেও একটা কিছু আছে , আর সেটা হল “প্রভাব”। “প্রভাব”। আমি কি পেলাম সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমি গুরুত্ব দেই না যদি আমি অন্যদের চেয়ে বেশি টাকা উপার্জন করি। আমি পাত্তা দেই না যদিও আমি এক নম্বর। আমার কাছে সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমি অন্যদের জন্য কিছু করতে চাই। আমি একটা উত্তরাধিকার রেখে যেতে চাই। আমি জানি এই দুনিয়ায় আমার সময় খুব স্বল্প। যখন আমি চলে যাব দুনিয়ার বুকে আমি আমার চিহ্ন রেখে যেতে চাই। আমি এমন বলতে পারতে চাই যে, ” আমি কিছু করেছি যেটা এই জায়গাটাকে অন্যদের জন্য আরো ভালো জায়গায় পরিণত করেছে। আমি প্রভাববিস্তারকারী ব্যক্তি হতে চাই…অন্য জিনিসের উপরে এবং অন্য মানুষের উপরে, আমার চারপাশের পরিবেশের উপরে।” আমরা এখন অমুসলিমদের কথা বলছি, আমরা এখনো বিশ্বাসীদের কথা বলছি না। আমরা জানি এমন মানুষ আছে যারা এমবিএ শেষ করেছে সব চেয়ে ভাল ভার্সিটি থেকে। যারা হয়তো ৬ সংখ্যার বেতন পেতে পারতো ভার্সিটি থেকে বের হয়েই। তারা সেই বেতন ত্যাগ করে এমন প্রতিষ্ঠানে যোগ দিচ্ছে যারা সামাজিক দায়বদ্ধ কাজ করে। তারা অনেক কম বেতন নিচ্ছে কারণ তারা টাকায় বিশ্বাস না করে তারা অনেক বেশি “প্রভাবের” উপর বিশ্বাস করে। তাই তারা বরঞ্চ এমন প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করছে যারা শিক্ষা পদ্ধতিকে পুনর্গঠন করতে সাহায্য করছে। বা কোন ডাক্তার যে হয়তো অনেক টাকা উপার্জন করতে পারতো, যে রেসিডেন্সি শেষ করে, কাজে যোগ দান করতে প্রস্তুত সেই সময় সিদ্ধান্ত নিল যে সে ৩ বছর doctors without boarders এনজিও তে কাটাবে। আপনি এমনটা কখনো শুনেছেন? ডক্টরস উইদআউট বর্ডার এর সাথে কাজ করলে আপনি অনেক টাকা উপার্জন করতে পারেন না। আপনার জীবনের ঝুঁকি থাকে এদের সাথে কাজ করতে। (যুদ্ধ বিধ্বস্ত অঞ্চলে এরা মানবিক কাজ করে)। কিন্তু কেন এই ছেলেটা যাচ্ছে? কেন এই মেয়েটা যাচ্ছে? কারণ পয়সা আসা শুরু করলে আমি কোন ধরণের গাড়ি কিনব সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে সে বেশি চিন্তিত পৃথিবীতে সে কি প্রভাব রেখে যেতে পারবে সেটা নিয়ে। তারা সাহায্য করতে চায়। তারা ভাল কিছু করতে চায়। আর এই ধরনের নিঃস্বার্থপরতা খুবই খুবই কম মানুষের থাকে। এই মই এর যত উপরে আমরা যাই, ততই কম মানুষ আপনি পাবেন। আর তারা বিস্ময়কর মানুষ। ইনারাই হচ্ছেন সেই মানুষ যারা দুনিয়ায় পরিবর্তন এনেছেন । চিন্তা করুন নেলসন মেন্ডেলা বা তাঁর মত কেউ। এমন মানুষ যাদের জেলে যেতে হয়েছে কারণ তারা কোন কিছুতে বিশ্বাস করতেন। কারণ তারা প্রভাবে বিশ্বাস করেন। তারা নিজের চেয়েও বেশি কিছু করতে চান। তারা বৃহৎ স্বার্থে নিজেদের বলি দিয়েছেন। তারা নিজেদের কথা চিন্তাই করেননি। তারা কোন এক উদ্দেশ্যের দাস। আর তাই এই মানুষগুলো হল সেই মানুষ যারা প্রভাবের জন্য কাজ করে। তাঁরা উৎকর্ষ সাধনকারীদের চেয়ে অনেক উপরে। উৎকর্ষ এই মানুষগুলোর জন্য স্বয়ংক্রিয়ভাবেই চলে আসে। উৎকর্ষ সাধন করা তাদের লক্ষ্য নয়, এটা উপজাত হিসেবে আসে। কেন জানেন ? কারণ যদি আপনি সেরকম প্রভাব রাখতে চান, আপনার মধ্যে কি থাকতে হবে? উৎকর্ষ। আপনাকে অনবরত চেষ্টা করে যেতেই হবে, যেতেই হবে।

(ইনশা আল্লাহ চলবে…।)