পরকালীন বিশ্বাসের যৌক্তিকতা

আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের অত্যাবশ্যকীয় ফলাফল হলো, আপনি অবশ্যই, অবশ্যই, অবশ্যই পরকালে বিশ্বাস করবেন। এটা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের ফলেই হয়। আপনি যদি আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস না করেন, তখন আপনার জন্য এটা মেনে নেওয়া খুবই কঠিন হয়ে যাবে যে, এই জীবনের পরে আরও একটি জীবন আছে। কিন্তু আপনি যদি আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস করেন, তাহলে এই বিশ্বাসেরই যৌক্তিক পরিণতি হলো পরকাল। কিভাবে? আপনি যদি আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস করেন, তাহলে আপনি এবং আমি কি এটা বিশ্বাস করি না যে, তিনি সকল কাজই নিখুঁতভাবে করেন? তিনি একদম নির্ভুল, তাই না? আপনি যদি কোন নাস্তিক, দার্শনিক কিংবা অজ্ঞাবাদীর সাথে কথা বলেন, তারা বলবেন, যদি কোন সৃষ্টিকর্তা থাকতো তাহলে তিনি সকল ক্ষেত্রে নিখুঁত – নির্ভুল হওয়াই যুক্তিসঙ্গত। সুতরাং, তাঁর কোন কাজে যদি এই নির্ভুলতার গুণ বা উৎকর্ষের কিছু কম হয়, তাহলে তিনি আর সৃষ্টিকর্তা নন। তিনি যা করেন তা-ই নির্ভুল হওয়ার কথা। এখন, তিনি এই পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, তাই না? হ্যাঁ, তিনিই সৃষ্টি করেছেন।

তাহলে চারপাশে লক্ষ করলে আপনি কি দেখতে পান? ন্যায়বিচার নাকি অন্যায়। আপনি ন্যায়বিচার দেখতে পান না, আপনি চারপাশে অন্যায় – অবিচার দেখতে পান। আপনি দেখেন যে, নিরপরাধ মানুষদেরকে হত্যা করা হচ্ছে। আপনি দেখতে পান যে, ছোট শিশুরা রোগাক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। আপনি আরও দেখতে পান, খুনীরা হাজার হাজার মানুষ হত্যা করে পার পেয়ে যাচ্ছে। যখন একজন মানুষ অন্য দশজন মানুষকে হত্যা করে, এজন্য আপনি তাকে সর্বোচ্চ কি করতে পারেন ? কোন শাস্তিটি তার জন্য সবচেয়ে ন্যায়সঙ্গত হতে পারে ? আপনি তাকে হত্যা করতে পারেন। হ্যাঁ, কিন্তু কতবার ? মাত্র একবার! যদি সে একজনকে হত্যা করে, তাহলে আপনি তাকে একবার হত্যা করতে পারেন, যদি সে এক হাজার মানুষ হত্যা করে, তাহলেও আপনি তাকে একবারই হত্যা করতে পারবেন। আপনি খুব সহজেই এই সিদ্ধান্তে আসতে পারেন যে, আসলে কোন ন্যায়বিচার নেই। প্রকৃতপক্ষেই, এই পৃথিবীতে পূর্ণাঙ্গ ন্যায়বিচার নেই। আপনি ন্যায়বিচার পাওয়ার চেষ্টা করতে পারেন, কিন্তু এই পৃথিবীতে পূর্ণাঙ্গ ন্যায়বিচার নেই।

এই বিষয়টিকেই নাস্তিকরা তাদের মতামতের পক্ষে যুক্তি হিসেবে দেখান। তারা বলেন, যদি কোন সৃষ্টিকর্তা আসলেই থাকতেন, তাহলে এই অন্যায় – অবিচার থাকতো না। কিন্তু আমরা বলি, না, আপনি একটি বিষয় মিস করছেন। সৃষ্টিকর্তা একজন অবশ্যই আছেন। এ কারনেই, অপরাধীদের খাতায় যা ক্রেডিট হচ্ছে, পরবর্তীতে তার ডেবিটের অংশেও মিলানো হবে। এবং সকল ডেবিটের ক্রেডিট পাশও পরবর্তীতে মিলানো হবে। কোন অপরাধ উপেক্ষা করা হয়নি। কোন কিছুই রেকর্ডের বাইরে নয়। সকল কিছুই নজরদারীর আওতার মধ্যে। আর কোন বিষয়ে আপনি কষ্ট ভোগ করেছেন, যার কোন ক্ষতিপূরণ আপনি এখানে পাননি, তার বিনিময় আপনি পাবেন। এটাকে বলা হয় শেষ বিচারের দিন। অন্যভাবে বলতে গেলে, আপনি যদি শেষ বিচারের দিনে বিশ্বাস না করেন, তাহলে আপনি আর এটাও বিশ্বাস করতে পারবেন না যে, আল্লাহ হলেন ন্যায়বিচারক। আল্লাহর ন্যায় বিচারের গুণাবলী এটা দাবী করে যে আপনি শেষ বিচারের দিনে বিশ্বাস করবেন। এই কারণে এই দুটি বিষয় যৌক্তিকভাবে সম্পর্কিত।

এখন, যদি আপনি শেষ বিচারের দিনে বিশ্বাস করেন, তাহলে আপনি কি সেই দিন সফল হতে চান না? এবং আপনি এটাও স্বীকার করে নিয়েছেন যে, আপনি আল্লাহর বিচারের সম্মুখীন হবেন, তাহলে আপনি কি জীবন যাপনে সততা অবলম্বন করতে চান না? তাই, প্রথমে আসলো আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস, এই বিশ্বাসের যৌক্তিক ফলাফল হলো পরকালের প্রতি বিশ্বাস, আর আপনি যদি এই সিদ্ধান্তে আসেন যে শেষ বিচারের দিন সত্য, তাহলে আপনাকে কোন বিষয়টি শুধরাতে হবে ? আপনার আমল। অত্যন্ত শক্তিশালী বাস্তব সত্য উপস্থাপন করা হয়েছে মাত্র তিনটি বাক্যাংশে। যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি, ও কিয়ামত দিবসের প্রতি, এবং সৎকাজ করেছে । এবং এটাই মুমিনের মানসিকতা। আর এই সবগুলো বিষয়ই পরস্পর সম্পর্কিত।

বিপরীত দিক থেকেও এটা সত্য। আপনি যদি দেখেন যে, আপনি বেশি বেশি ভালো কাজ করছেন না, তাহলে কোন বিষয়টি দুর্বল ? এটা আখিরাতে বিশ্বাসের দুর্বলতা। আমি নিশ্চিত নই যে আমি যা করছি তার বিনিময় কি আসলেই পাবো? এজন্য এই উদ্দেশ্য সময় ব্যয় করা লাভজনক নয়। অন্য আরও বিষয় আছে যেগুলোতে আমি সময় ব্যয় করছি। কারণ, আমার কাছে মনে হচ্ছে, এটাই আমার সময়ের উত্তম ব্যবহার। অন্য কথায় আপনি যখন আপনার ভাল কাজে দৃঢ় প্রত্যয় না দেখেন, এটা আসলে ভালো কাজ করার ক্ষেত্রে দুর্বলতা নয়, আসলে এটা পরকালে বিশ্বাসে দুর্বলতা। আপনার পরকালের স্মরণ যথেষ্ট হচ্ছে না। কিন্তু পরকালে বিশ্বাসে যদি দুর্বলতা থাকে, তা কি ইঙ্গিত করে? আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসে দুর্বলতা। আল্লাহর প্রতি স্মরণে ঘাটতি আছে। লক্ষ করেছেন, বিপরীতভাবেও এটা সত্য? সুতরাং, ভাল কাজ – যত বেশি আপনি ভাল কাজ করেন, তত বেশি তা আপনার আখিরাতে বিশ্বাসকে সুরক্ষিত করে। আপনার আখিরাতে বিশ্বাস যত বেশি সুরক্ষিত হয়, আল্লাহর প্রতি আপনার প্রত্যাশাও তত বৃদ্ধি পায়। আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস বৃদ্ধি পায়। আবার বিপরীতভাবেও এটা সত্য। চমৎকার এই চিরন্তন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে আমাদের জন্য!

’’যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি ও কিয়ামত দিবসের প্রতি এবং সৎকাজ করেছে, তাদের জন্য রয়েছে তার সওয়াব তাদের পালনকর্তার কাছে। আর তাদের কোনই ভয়-ভীতি নেই, তারা দুঃখিতও হবে না।’’ (২:৬২)