কুরআনের অন্যতম একটি প্রধান থিম, আক্ষরিকভাবে কুরআনের প্রতিটি পৃষ্ঠায় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা মৃত্যুর পরের জীবনের কথা উল্লেখ করেছেন। এটি আমাদের ধর্মের অন্যতম একটি মৌলিক স্তম্ভ। এটি অন্যতম একটি প্রধান বিষয় যা রাসূল (স) কুরাইশদের শিক্ষা দিয়েছিলেন। কারণ কুরাইশরা বিশ্বাস করতো না যে, মৃত্যুর পর আরেকটি জীবন রয়েছে।
আর আল্লাহ এই বিষয়টি বিভিন্নভাবে মানুষকে বুঝিয়েছেন। যৌক্তিক প্রমানের মাধ্যমে – আল্লাহ বলেন – মৃত জমিনের দিকে তাকাও যাকে আমি পুনরায় জীবন দান করি। মৃত গাছের দিকে তাকাও, মরার পর সেগুলো আবার জীবন ফিরে পায়। শক্তিশালী সব সৃষ্টির দিকে তাকাও, তোমার নিজের জীবনের দিকে তাকাও। নিশ্চয়ই যিনি তোমাকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন; তিনি তোমাকে পুনরায়ও সৃষ্টি করতে পারবেন।
আল্লাহ যে প্রমাণগুলো ব্যবহার করেছেন সেগুলো নৈতিক প্রমান। আল্লাহ বলেন – তোমরা কি মনে করো আমি ধর্মভীরু এবং ধর্মহীনকে অথবা সৎ এবং অসৎ ব্যক্তিকে একই রকম প্রতিদান দিবো?
এই পৃথিবীতে কখনো কখনো হাজার হাজার মানুষকে খুন করা ব্যক্তিও পার পেয়ে যায়। এই পৃথিবীতে চরম কোনো পাপিষ্ঠ ব্যক্তিকেও মাঝে মাঝে দেখা যায় উন্নত জীবন যাপন করতে। তারা নিরপরাধ মানুষকে নির্যাতন করে, হত্যা করে। এখন যদি মৃত্যুর পর কোনো জীবন না থাকে, জান্নাত-জাহান্নাম না থাকে, তাহলে জীবনটা তো খুবই অন্যায্য হয়ে পড়ে। ন্যায়ের আশ্রয় গ্রহণ করার তো আর কোনো সুযোগ থাকে না। কিন্তু আল্লাহ বলেছেন – তিনি ন্যায় বিচারক। তিনি সীমাহীন ন্যায়বিচারক। আর তাই বিচার দিবস অবশ্যই সত্য। সেই বিচার দিবসে মানুষকে তার ভালো কাজের জন্য পুরস্কৃত করা হবে; আর হ্যাঁ, তাদের অন্যায় কাজের শাস্তি দেয়া হবে।
আবারো বলছি কুরআনে পরকাল বিষয়ে অসংখ্য আয়াত রয়েছে। কিন্তু দিনশেষে আপনাকে এটা বিশ্বাস করতে হবে। আমি আপনাদের কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমান দিতে পারবো না। এমন কোনো ইকুয়েশন দিতে পারবো না যা প্রমান করবে যে মৃত্যুর পর আরেকটি জীবন রয়েছে। কিন্তু আল্লাহ যথেষ্ট পরিমান এনালজি ব্যবহার করেছেন, বহু উপায়ে আমাদের বুঝিয়েছেন পরকালীন জীবনের কথা। এবং পরিশেষে, এটা একটা অদৃশ্য জগতের জ্ঞান। আমাদেরকে আল্লাহ সুব হানাহু ওয়া তায়ালার কথায় বিশ্বাস করতে হবে।
সত্যি কথা বলতে, যদি এই জীবনের পর আর কোনো জীবন না থাকে, তাহলে এই জীবনের তো কোনো মানে হয় না। তাহলে এই জীবনের অর্থ কী, এতো সব দুঃখ কষ্টের মানে কী? আমাদের এই অস্তিত্বের কি বা অর্থ আছে? প্রকৃতপক্ষে, এই জীবনের পর আরকেটি জীবন আছে বলেই তো আমাদের আশা আছে, জীবনটা অর্থপূর্ণ মনে হয়, চিন্তার প্রতিটি খাপে খাপে এটা মিলে যায়; কুরআন যেভাবে প্রমান করতে চায়। আমি যেমন বলেছি, এই বিশ্বাস আমাদের ধর্মের অন্যতম একটি মৌলিক স্তম্ভ – তাওহীদ, রিসালাত এবং আখিরাত; আল্লাহকে বিশ্বাস করা, রাসূলদের বিশ্বাস করা এবং পরকালে বিশ্বাস করা।