সুখী দাম্পত্য জীবনের ৩টি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান

আসসালামুয়ালাইকুম, সাপ্তাহিক কুরআন থেকে আমি হালেহ বানানী। আজকে আমি আপনাদের সাথে ভালোবাসাপূর্ণ বিয়ের জন্যে দরকারি তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান নিয়ে কথা বলব।

বিসমিল্লাহ, আসসালাতু ওয়া আসসালামু আলা রাসুলিল্লাহ।

وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِّتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُم مَّوَدَّةً وَرَحْمَةً ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ وَمِنْ آيَاتِهِ

তাঁর নিদর্শনগুলোর অন্যতম একটি হল أَنْ خَلَقَ لَكُم তিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জন্য مِّنْ أَنفُسِكُمْ তোমাদের নিজেদের মধ্য থেকে أَزْوَاجًا তোমাদের সাথীকে, আপনার স্বামী বা স্ত্রীকে لِّتَسْكُنُوا إِلَيْهَا যাতে আপনি খুঁজে পেতে পারেন প্রশান্তি এবং শান্তি। وَجَعَلَ بَيْنَكُم এবং তিনি তোমাদের পরস্পরের মাঝে সৃষ্টি করেছেন مَّوَدَّةً وَرَحْمَةً ভালবাসা ও দয়াI إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ তাই এ সবের মধ্যে চিন্তাশীলদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।

এটি বিয়েতে ব্যবহৃত সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি আয়াত। এবং এ আয়াতটির অর্থ নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুধু আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকোণ থেকে নয় বরং মানসিক দৃষ্টিকোণ থেকেও। প্রকৃতপক্ষে, আল্লাহ এখানে আমাদের চমৎকার এক বৈবাহিক জীবন পাওয়ার রেসিপি দিয়েছেন। আমরা এখান থেকে বিবাহ সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা নিতে পারি। আল্লাহ তা’আলা বলছেন যে বিয়ের মূল উদ্দেশ্য হল আপনাকে প্রশান্তি দান করা। আল্লাহ বলছেন যে, তাঁর এই নিদর্শন থেকে আপনি প্রশান্তি পাবেন, এটা নিশ্চিত। যদি আপনি তাঁর দেখানো পথে চলেন।

তাই মূলত বিবাহের তিনটি উদ্দেশ্য রয়েছে আর তা হল শান্তি, প্রেম এবং করুণা। আর এই তিনটি বিষয় একটি সফল বিয়েরও প্রধান উপকরণ। যখন আপনি একটি সুখী বিবাহিত জীবন যাপন করেন যেখানে স্বামী এবং স্ত্রী একে অপরের প্রতি প্রেমময় এবং একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকেন তখন এই সুন্দর সম্পর্ক আপনার বাচ্চাদের বেড়ে উঠাকে প্রভাবিত করবে, বাচ্চারা খুশি এবং আত্মবিশ্বাসী হবে। এবং একটি পরিবার হিসাবে তারা কমিউনিটিতে অবদান রাখতে পারবে। যখন আপনার সংসারটি হয় ভঙ্গুর, যেখানে প্রতিনিয়ত ঝগড়া-ঝাটি হয়, যখন সেখানে চিৎকার চেঁচামেচি হয় এবং এমনকি মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনও হয় এটি সত্যিই শিশুদের প্রভাবিত করে এবং এভাবে একটি ভগ্ন ঘর একটি ভগ্ন সমাজের দিকে চালিত করে। আমি এমন অনেক শিশুর কথা জানি, যাদের বয়স হয়তো ১৫ বছরের মত তারা তাদের বাবা-মা এর মাঝখানে দাঁড়িয়ে সারাক্ষণ এসব প্রত্যক্ষ করছে। বাবা মাকে আঘাত করতে যাবেন আর শিশুটি সেখানে দাঁড়িয়ে আছে আর চেষ্টা করছে তার মাকে রক্ষা করার। কল্পনা করুন, এ বিষয়টা ছোট্ট এই শিশুটাকে কতটা মানসিক আঘাত দিচ্ছে। কল্পনা করুন, বাচ্চাটি নিজেকে কতটা অসহায় আর ভঙ্গুর অনুভব করছে। আর তাই শুরুতেই আমাদের বৈবাহিক সম্পর্কের প্রতি দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ভালবাসাময় সম্পর্ক এবং পরস্পরের মাঝে ক্ষমার মানসিকতা উন্নত করা প্রয়োজন। সন্তান নেবার বিষয়ে কথা বলার পূর্বেই, সমাজে কোন অবদান রাখার আগেইI

চলুন আমরা لِّتَسْكُنُوا দিয়ে শুরু করি। তাজবীদে সুকূন হচ্ছে – যার মাঝে কোন নড়াচড়া নেই, সেখানে কোন হারাকা নেই। এর মানে মানসিক শান্তি রক্ষার জন্য আপনার থামতেই হবে আপনার থামা উচিৎ এবং আপনার সাথীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে যান। আপনাকে আপনার সাথীর জন্য সান্ত্বনা, উৎসাহ ও সমর্থনের উৎস হতে হবে। আর আপনি হবেন সেই প্রথম একজন যার কাছে আপনার সাথী সমর্থন এবং স্বস্তির জন্য যাবেন। খাদিজা রাদ্বিয়াল্লাহুআনহা এর অসাধারণ উদাহরণের দিকে লক্ষ্য করুন। তিনি কিভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি সালামকে ভালবাসা এবং সমর্থন দিয়ে গেছেন তাঁর জীবনের সবচেয়ে অন্ধকার এবং বিভ্রান্তিকর সময়গুলোতে। তিনি সেখানে ছিলেন তাঁর হৃদয়ে আশা এবং প্রশান্তি জাগাতে। তার প্রচেষ্টার কথা একবার ভেবে দেখুন, কারণ তিনি মানসিকভাবে এতটাই পরিপক্ক ছিলেন। তিনি নিজের উন্নতির জন্য কাজ করে গেছেন। তাই তিনি এতটা পরিপক্কতা দেখাতে পেরেছিলেন। তিনি তাই তার স্বামী রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর জন্য সেখানে থাকতে পেরেছিলেন। তিনি এত প্রশংসিত হন যে, তিনি আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল এর কাছ থেকে সালামও পেয়েছেন। তার কাজটি এতটা অসাধারণ এবং প্রশংসনীয় ছিল যে আল্লাহ আজ্জাওয়াজাল পর্যন্ত তাঁকে সালাম দিয়েছেন। যখনই আমি এটা মনে করি আমার চক্ষু অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠে, কি যে একজন অসাধারণ স্ত্রী তিনি ছিলেন! নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লামকে সান্ত্বনা প্রদানের জন্যে কি প্রচেষ্টাই না তিনি করেছিলেন! নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম ছিলেন তাঁর পরিবারের সেবায় নিয়োজিত তিনি ছিলেন শান্তির উৎস এবং তিনিই পরিবারে শান্তি স্থাপন করেছিলেন। যদি তার কাছে কিছু এসে যেতো তিনি এটি অত্যন্ত প্রজ্ঞার সাথে কূটনৈতিক পদ্ধতিতে এটার সমাধান করতেন।

বেশীরভাগ মানুষই সংসারে সমস্যায় পড়েন কারণ তারা বিরোধের সমাধান জানেন না। আসলে আমি বলতে চাই বিরোধের সমাধান তারা একেবারেই করেন না। এটা বিবাহিত জীবনে দ্বন্দ্বের অনুপস্থিতি নয় বরং কিভাবে দ্বন্দ্ব মীমাংসা করা হয় সেটাই একটা চমৎকার বিবাহিত জীবন গড়ে তুলেI তাই মূলত বিরোধের সমাধানের জন্য তিনটি পদক্ষেপ আছে। আমরা বিরোধের সমাধান করব শান্তি অর্জনের উদ্দেশ্যে। আমরা শান্তি অর্জন করতে চাই। কারণ অধিকাংশ মানুষ যখন বিরোধের সমাধান করেন না যখন তারা কার্যকরভাবে ভাব বিনিময় করেন না, যখন তারা অন্যজন সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা করেন না যা ঘটে একসময় তাদের বিস্ফোরণ ঘটে। (প্রচণ্ড রাগে ফেটে পড়েন)। তারা শুধুই ঝগড়াই করতে থাকবেন এবং কিছুই সমাধান করা হবে না। তাই সঠিক পদ্ধতিতে এটা সমাধান করতে চাওয়ার মাধ্যমে এবং বিরোধের সমাধানই আপনার প্রধান উদ্দেশ্য ঠিক করার মাধ্যমে আপনি শান্তি অর্জন করার চেষ্টা করছেন। যে নির্মল শান্তির কথা আল্লাহ এই আয়াতে বলছেন। আর এটাই হলো বিয়ের একটি উদ্দেশ্য। তাই প্রথম জিনিস আমরাদেরকে যা করতে হবে তা হল সময়জ্ঞান সচেতন হতে হবেI আপনি যখন কোন কিছু বলতে চান আপনার নিশ্চিত করা প্রয়োজন যে আপনার জীবনসাথী অতিরিক্ত ক্লান্ত নন, অবসাদগ্রস্ত ননI তিনি অন্য কিছু নিয়ে ব্যস্ত নন। এর কারণ আপনি যদি এটা মনে না রাখেন এবং ভুল সময়ে তার সাথে কথা বলতে যান, আপনি দেখবেন সেখানে একটি রাগান্বিত পরিবেশের সৃষ্টি হতে পারে। এর কারণ হলো আপনি তাদের অনুভূতি বিবেচনা করছেন না, আপনি বিবেচনায় আনছেন না যে, তাদের অফিসের কোন কাজের নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকতে পারে, কাজের চাপ থাকতে পারে, তারা ক্ষুধার্ত, তারা অবসাদগ্রস্ত হতে পারেন যাই হোক। এটা হতে পারে হয়তো তারা তাদের কাছের কাউকে হারাচ্ছেন। হতে পারে তারা অসুস্থI এমন কিছু বিষয় ঘটতে পারে এবং আপনি যদি আপনার জীবনসাথীর মানসিক অবস্থা সম্বন্ধে অজ্ঞাত থাকেন। এবং আপনি শুধু বিরোধের সমাধান করতে চান। তখন তারা খোলা মনের হবেন না এবং তারা তা গ্রহণ করতে চাইবেন না । তাই আমরাদেরকে নিশ্চিত হতে হবে যে সঠিক সময়ে আপনি আপনার জীবনসাথীর কাছে এটা তুলছেন।

এবং দ্বিতীয় কাজটা হলো পর্যবেক্ষণ করুন সমালোচনা করবেন না। পর্যবেক্ষণ করুন সমালোচনা করবেন না এর অর্থ হলো যদি আপনি এমন কিছু বিষয় দেখতে পান যা আপনার অপছন্দ। আপনি শুধু তা পর্যবেক্ষণ করুনI আপনি বলুন যে, আমি লক্ষ্য করছি যে ঘর ঠিকমত গোছানো হচ্ছে নাI তুমি কি ঠিক আছো? তোমার জন্য কি বেশী হচ্ছে? আমি কি সাহায্য করতে পারবো? এভাবে তাদের সমালোচনা এর পরিবর্তে “তুমি কখনো পরিষ্কার করো না ! “এই দেখ কত ময়লা! তোমার সমস্যা কি? তোমার সারাটা দিন ছিল! কেন তুমি তোমার কাজ গুছিয়ে উঠতে পারো না। আপনি দেখতে পাচ্ছেন কিভাবে আপনার সমালোচনা গুলো সত্যিই আক্রমনের মত মনে হচ্ছে। এবং এতে অবশ্যই উনি ভেঙ্গে পড়বেনI তো, আপনি পর্যবেক্ষণ করুন। এবং এভাবে বলুন ” আমি লক্ষ্য করছি যে বিল পরিশোধ করা হয় নি এবং বিলম্ব করার জন্য আমাদের জরিমানা আসছে আমি কি এই ব্যাপারে তোমাকে কোন সাহায্য করতে পারবো? তুমি কি বিল পরিশোধ নিয়ে কোন চাপের মাঝে আছো? আমি কি কোনো ভাবে সাহায্য করতে পারবো? এটাই একটি পর্যবেক্ষণ। আপনি সমালোচনা করছেন নাI সমালোচনা হচ্ছে, “আমি বিশ্বাস করতে পারছি না কিভাবে তুমি এতো অসতর্ক হলে? তুমি বিল দাওনি, তাই আমাদেরকে এই সব লেট ফি দিতে হচ্ছে। “তুমি কিভাবে এত উদাসীন হতে পারলে?” ঠিক এটিই তখন একটি ব্যক্তিগত আক্রমণে পরিণত হয়। আপনার সঙ্গীর মানসিক অবস্থা সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠুন। সময়ের বিষয়ে সচেতন হওয়ার মাধ্যমে, সমালোচনা না করে পর্যবেক্ষণ করার মাধ্যমে আপনি দেখাচ্ছেন যে আপনি আপনার সাথীর সুখ দুঃখের ভাগীদার। আপনি তাদের অনুভূতিতে আঘাত করতে চান না। আপনি তাদের কাজের ভারে নিমজ্জিত করতে চান না। তাই এটি এক ধরনের করুণা(রাহমা)I তাই আমরা বলছি বিরোধের সমাধানের লক্ষ্য হল সংসারে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। আপনি শুধু রাগ ঝাড়বেন নাI সমস্যার সমাধান করার জন্য আপনি একটি উপায় চান। সময়জ্ঞান সম্পর্কে সচেতন হতে হবে এবং পর্যবেক্ষণ করবেন সমালোচনা করবেন না। এর সবই সম্পর্কের মাঝে ‘রাহমা’ দয়া প্রতিষ্ঠা করবে।

তৃতীয় উপায় হচ্ছে চাপা উত্তেজনা নিরসন করা। অনেক সময় যখন আপনি আপনার সাথীর সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন সেখানে প্রচুর উত্তেজনা দেখা দেয়, সবাই অতি সংবেদনশীল হয়ে উঠে তাই খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন – কোন বিষয়টা আপনার সাথীর রাগ দমনে সহায়তা করবে। কিছু বোনেরা আছেন যাদের কেবল একটি গাঢ় আলিঙ্গন প্রয়োজন। যদি তারা তর্কের সময় একটি গাঢ় আলিঙ্গন পান সব কিছুই শান্ত হয়ে পড়েI তাই তারা শুধু অল্প একটু ভালবাসা চান। কখনও কখনও হাস্যরস ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সাবধান থাকুন যে, আপনার সাথীর ব্যাপারে ব্যঙ্গাত্মক হবেন না আপনার সাথীকে হাসায় এমন কৌতুক করুন। আপনি তাকে নিয়ে হাসছেন না, বরং আপনারা কোন বিষয় নিয়ে একসাথে হাসছেন। কিছু সময় বের করুন, তারপর ব্যস্ততা ছেড়ে একটু রিলাক্স করুন। হাঁটতে বের হতে পারেন। এসব করার মাধ্যমে আপনি আর সমস্যা বাড়তে দিচ্ছেন না। কিভাবে একটি সমাধানে আসা যায়, সেটা নিয়ে অনেক কিছু বলার আছে। কিন্তু আমাদের হাতে এখন এত সময় নেই। কিন্তু এই সমস্ত বিষয় হল দ্বন্দ্ব মীমাংসার প্রাথমিক ধাপI আল্লাহর একটি নাম হলো ওয়াদুদ, যার অর্থ প্রেমময়। আমাদেরকে এই গুনটি আয়ত্ত করার চেষ্টা করতে হবে।

“মুআদদাহ” প্রেম – এটা একটি বন্ধুত্ব সৃষ্টি করে এই ”ভালবাসাকে” একটি ক্রিয়া হিসেবে দেখুন। আপনাকে আপনার ভালবাসা প্রদর্শন করতে হবে, আপনাকে প্রেমময় আচরণ করতে হবে। এটা শুধু একটা অনুভূতি নয়। অনেক সময় আমরা মনোযোগ দেই ভালোবাসার আবেগগত দিকেI আমরা শুধু প্রিয়জনের ভালবাসা অনুভব করার অপেক্ষায় থাকিI ভালবাসা একটি ক্রিয়া। তাই প্রেমময় আচরণ করার মাধ্যমে ভালবাসা প্রকাশ করতে হবে। দয়াময় এবং প্রেমময় কর্মকান্ড করুন যেন আপনার সাথী ভালবাসা অনুভব করেন। অনেক সময় আমরা ভালবাসাকে দেখি শুধু একটি অনুভূতি হিসেবে। হয় আমরা এটা অনুভব করছি বা করছি না। কিছু মানুষ বলে- ওহ আমি আর এটি অনুভব করছি না, আমার এবং তার মাঝে আর ভালবাসা নেই। আপনি সেই ভালবাসার জন্য অপেক্ষা করতে পারেন না, আপনাকেই আগে থেকে প্রেমে সক্রিয় হতে হবে, আপনাকে ভালবাসা তৈরি করতে হবে এবং এই ভালবাসাই বন্ধুত্ত্বের দিকে নিয়ে যাবে। যা আসলে বিয়ের কর্মসূচির পাঁচটি স্তম্ভের দ্বিতীয় স্তম্ভ। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা দীর্ঘ সময় ধরে বিবাহিত এবং সে সব যুগলের মাঝে তারাই সবচেয়ে সুখী যাদের সম্পর্কটা বন্ধুত্বের সম্পর্কের মত। কারণ আপনার স্বামী/স্ত্রীর সাথে যদি আপনার বন্ধুত্বের সম্পর্ক থাকে, আপনি তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল প্রেমময় থাকেন। আপনি তার সঙ্গে খুব ভাল সময় কাটান এবং এটিই গড়ে তোলে দীর্ঘ টেকসই সম্পর্ক। তো, এর সবই হল “মুআদাহ” তথা ভালবাসা।

এখন রাহমা নিয়ে বলব। পরস্পরের প্রতি দয়া প্রদর্শন ভালবাসার অত্যন্ত শক্তিশালী একটি রূপ। কারণ এটিই আপনাকে আপনার সঙ্গীর শারীরিক ও মানসিক প্রয়োজন পূরণ করার জন্য তাগিদ দিবে। আপনি তাদেরকে নিরাপদ রাখতে চাইবেন আপনি তাদের প্রয়োজন পুরন করতে চাইবেন এবং নিঃসন্দেহে যদি সেখানে রহমত থাকে তবে আপনি তাদেরকে কোন ভাবেই আঘাত করতে চাইবেন না। আপনি তাদেরকে মানসিকভাবে বা শারীরিকভাবে আঘাত করতে চাইবেন না। সেখানে মৌখিক, মানসিক এবং শারীরিক ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য একটি নিরাপত্তা দেয়ার অনুভুতি কাজ করে। এক হাদিসে নবী করিম (সঃ) বলেন- মুসলিম হল সে যার জিহবা থেকে অন্য মুসলমানরা নিরাপদ থাকবে.. যা হলো ব্যঙ্গ করা ও সমালোচনা করা। এবং হাত থেকে নিরাপদ থাকবে যা হলো শারীরিক নির্যাতন করা। অতএব দুঃখজনকভাবে অনেক বিয়েই অন্যায় আচরণে জর্জরিত। রহমত কোথায়? আপনাকে যদি আপনার সাথীর উপরই রাগ মেটাতে হয় এমন ব্যক্তির উপর.. যে কিনা শান্তির জন্য, সান্ত্বনার জন্য, সুরক্ষার জন্য আপনাকেই খুঁজছে। তবে দয়া কোথায়? একজন ‘কগনিটিভ বিহেভিওরাল থেরাপিস্ট’ হিসেবে আমি মানুষের চিন্তা পদ্ধতির উপর কাজ করি তাদের আচরণ পরিবর্তন করার উদেশ্যে।

আপনি যদি সারা দিন আপনার স্বামী বা স্ত্রী সম্পর্কে নেতিবাচক চিন্তা করেন তবে আপনার হৃদয় বিরক্তি এবং ক্রোধে ভরে উঠবে। তখন দয়া দেখানো অসম্ভব হয়ে উঠবে। এটি আপনার অন্তরের শান্তি ধ্বংস করবে। তাই যদি আপনি চিন্তা করেন “আমি বিশ্বাস করতে পারছি না সে এত স্বার্থপর সে এত লোভী, আমি বিশ্বাস করতে পারছি না সে এটা করেছে ..সেটা করেছে এভাবে সারাদিন ধরে যদি আপনার সাথীর নেতিবাচক কাজগুলো নিয়ে ভাবতে থাকেন অথবা আপনি ভাবছেন “কিভাবে সে এতটা অমনোযোগী কীভাবে সে এতটা স্বার্থপর, কিভাবে সে এতটা অসম্ভব হতে পারলো। “আপনি যদি সারা দিনই তা চিন্তা করেন.. এর ফলে কি হবে? আপনি রাগ এবং ক্রোধে পূর্ণ হয়ে উঠবেন। আপনি প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে উঠবেন। এর ফলে আপনি বিবাহের বাহ্যিক সম্পর্কে তালগোল পাকিয়ে ফেলবেন। ঠিক আছে? আপনি সারাদিন যা নিয়ে চিন্তা করেন তা আপনার অনুভুতিতে প্রভাব ফেলবে। আর সে অনুভূতিগুলো আপনার কর্মের উপর প্রভাব ফেলবে। অতএব আপনার সঙ্গীকে নিয়ে নেতিবাচক চিন্তা সম্পর্কে সতর্ক হতে হবে। করুণা এবং আধ্যাত্মিকতার (ধার্মিকতার) মাঝে একটি সংযোগ আছে। এই আধ্যাত্মিক সংযোগটি বৃদ্ধি পায় যখন আপনি বিয়ে করেন। এটা আপনাকে সহানুভূতিশীল, স্নেহপরায়ণ এবং প্রেমময় হতে উদ্বুদ্ধ করে।

আমরা ভাবি, বিয়ে করার কারণে আমাদের অর্ধেক দ্বীন পূরণ হয়, আসলে এটা কি করে, এটা আপনাকে আপনার মানসিক অবস্থার উপর কাজ করতে বাধ্য করবে এটা আপনাকে সহানুভূতিশীল করে তোলে, আপনাকে ধৈর্যশীল এবং বিশ্বাসী করে তোলে। এভাবে বিবাহ আমাদের দ্বীনের অর্ধেক পূর্ণ করে। অনেক সময় বিয়েকে আমাদের দ্বীনের অর্ধেক পূর্ণ করার উপায় হিসেবে দেখি। এটা আমাদের বহু প্রলোভন থেকে রক্ষা করে। এভাবে এটা আমাদের দ্বীনের অর্ধেক পূর্ণ করতে সহায়তা করে নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রন করতে শেখার মাধ্যমে। কারণ এটা আমাদের আরও বেশি দরদী, ধৈর্যশীল এবং সহানুভূতিশীল হতে বাধ্য করে। আমি মনে করি যদি আমরা এই তিনটি উপাদান গ্রহণ করি যা কিনা শান্তি, প্রেম ও দয়া এবং সেগুলো আমাদের বিয়ের মধ্যে প্রয়োগ করি, এবং যেভাবে আল্লাহ আমাদের বিয়েকে সংজ্ঞায়িত করেছেন সেভাবে সংজ্ঞায়িত করি তবেই ইন শা আল্লাহ আমরা সবাই আরো ভালো রিলেশনশিপ স্থাপন করতে পারবো।