“হে ঈমানদারগণ, তোমাদের কি হল, যখন আল্লাহর পথে বের হবার জন্যে তোমাদের বলা হয়, তখন মাটি জড়িয়ে ধর, তোমরা কি আখেরাতের পরিবর্তে দুনিয়ার জীবনে পরিতুষ্ট হয়ে গেলে? অথচ আখেরাতের তুলনায় দুনিয়ার জীবনের উপকরণ অতি অল্প।”
আসসালামু আলাইকুম কুরআন উইকলি
আল্লাহ্ সুরা তওবা-র ৩৮ নং আয়াতে বলেছেন “ইয়া আইয়ুহাল্লাজ্বীনা আমানূ” – যারা নিজেদের বিশ্বাসী বলে দাবী কর, “মা লাকুম” -তোমাদের কী সমস্যা? “ই’জা ক্বীলা লাকুমুনফিরূ ফী সাবীলিল্লাহ” তোমাদেরকে বলা হয়েছে আল্লাহ্র পথে এগিয়ে যাও “সাকালতুম ই’লাল আ’রদ্ব” তোমাদের পা হিঁচড়ে যায়। তোমরা মাটিতে গেঁড়ে যাও। ভাবুন এমন যে কারো পা বালিতে গেঁড়ে গিয়েছে। এবং সে তার পা টেনে হিঁচড়ে চলার চেষ্টা করছে এবং সে এগুতে পারছে না- আল্লাহ্ এই দৃশ্যের কথা বলছেন। “ইস সাকালতুম ই’লাল আ’রদ্ব” আল্লাহ্ কেন এই দৃশের কথা বলছেন?
আমি এই আয়াতটি বেছে নিয়েছি বিশেষত আমাদের তরুণদের জন্য। রমজান মাসে তোমরা দেখিয়েছ তোমরা রোযা রাখতে সক্ষম, তোমরা অনেক বদ-অভ্যাস থেকে বিরত থাকতে পারো যেসব থেকে তোমরা ভেবেছিলে তোমরা বিরত থাকতে পারবে না, তোমরা সময়মত উঠে নামায পড়তে পারো, তোমরা অ-নে-ক কিছু করতে সক্ষম; এইজন্য নয় যে এটা রমজান মাস এবং এমাসে তোমরা সুপার হিউম্যান হয়ে যাও বরং আল্লাহ্ তোমাদের সেই সামর্থ্য দিয়েছেন। এরপর আল্লাহ্ খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করলেন, যখন তোমাদেরকে সামনে আসতে বলা হয় এবং তোমরা তা করতে সক্ষম তখন তোমাদের পা টান দাও, এটা কেন?” “সাকালতুম ই’লাল আ’রদ্ব” এবং এই প্রশ্নটি করা হয়েছে বিশ্বাসীদের, বিশ্বাসীদের প্রশ্ন করা হয়েছে, “আ’রাদ্বীতুম বিল হায়াতিদ দুনিয়া মিনাল আখিরাহ” তোমরা কী আখিরাতের পরিবর্তে এই পার্থিব জীবন নিয়ে পরিতুষ্ট? আল্লাহ্ এই প্রশ্ন করেছেন বিশ্বাসীদের।
আল্লাহ্ যেন বলছেন, যারা বিশ্বাসী নয় তারা তো অবশ্যই এই পার্থিব জীবন নিয়ে সন্তুষ্ট কারণ তাদের কাছে এর পরবর্তী জীবনের কোন ধারণা নেই। তোমরা বিশ্বাসী, আমি তোমাদের জান্নাতের বর্ণনা দিয়েছি, তোমরা বিশ্বাস কর যে পরবর্তি জীবন আছে, তোমরা জানো তোমরা আমার সাথে সাক্ষাত করবে, তোমরা জানো তোমাদের বিচার হবে, তোমরা জানো তোমরা যা করেছ তা সব সামনে আনা হবে, তোমরা জানো তোমাদেরকে আল্লাহ্র দয়া আর অনুগ্রহ ভিক্ষা করতে হবে, তোমরা জানো তোমাদের জন্য রয়েছে মহা পুরষ্কার, যা এই পৃথিবীর চেয়ে অনেক অনেক বেশি, তারপর ও তোমরা কীভাবে এই পার্থিব জীবনে পা টানতে পারো যখন আমি তোমাদেরকে বলি আল্লাহ্র রাস্তায় পা বাড়াতে? এটাকে কেন বলা হচ্ছে আল্লাহ্র রাস্তা? এটাকে আল্লাহ্র রাস্তা বলা হচ্ছে কারণ এই পথ আল্লাহ্র দিকে নিয়ে যায়।
আল্লাহ্র রাস্তায় আপনি যেই কষ্ট স্বীকার করেন, আল্লাহর রাস্তায় যে কয়ধাপ আপনি পা বাড়ান, যা কিছু কষ্টের মধ্য দিয়ে যান তা আপনাকে আল্লাহ্র প্রতি সে কয়ধাপ এগিয়ে নিয়ে যায়। তাই বলা হচ্ছে আল্লাহ্র রাস্তা। তুমি যখন আল্লাহ্র দিকে যাচ্ছ কেন তুমি পা টান দাও? “ফামা মাতা’উল হায়াতিদ দুনিয়া ফীল আখিরাতি ইল্লা ক্বালীল”- আখিরাতের জীবনের তুলনায় এই পার্থিব জীবনের আনন্দ কী, খুবই তুচ্ছ। তোমরা এইসব তুচ্ছ জিনিষে এতো মুগ্ধ হয়ে যাও! আমার কাছে তোমাদের জন্য এর চেয়ে অনেক অনেক বেশি ভালো কিছু আছে। আল্লাহ্ কুরআনে আমাদেরকে বলছেন না এই পার্থিব জীবন উপভোগ না করতে, উনি সুরা আ’রাফ এ বলেছেন, আল্লাহ্ এই পৃথিবীতে এমনসব জিনিষ দিয়েছেন যাতে তোমরা ভালোভাবে জীবন যাপন করতে পারো। ভালোভাবে জীবন যাপনের উপকরণ এই পৃথিবীতে দেয়া হয়েছে তোমাদের জন্য। তো এমন নয় যে আল্লাহ্ চান না আমরা পার্থিব জীবনে ভালো ভাবে বাঁচি কিন্তু যেই মুহুর্তে একজন বিশ্বাসী মনে মনে ভাবতে থাকে এই পার্থিব জীবন কিছু একটা, কথায় নয়, তাদের মনে এবং অন্তরে তারা আখিরাত সম্পর্কে কম ভাবতে থাকে। এটা খুব সচেতন বাস্তবতা নয়। তারা সবসময় এটা ভাবছে না, তারা সবসময় তুলনা করছে না, এই তুলনা করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ন। কারণ আল্লাহ্ তুলনা করেছেন। “ওয়ামা ইন্দাল্লাহি খাইরুন ওয়াআবক্বা” আল্লাহর কাছে যা আছে তা এরচেয়ে ভালো এবং এর চেয়ে বেশি স্থায়ী।
তো আমি যখন গাড়ীতে বসি আমি বলি, আল্লাহ্র কাছে আমার জন্য আরো ভালো বাহন আছে, যা আছে তা এর চেয়ে ভালো এবং এর চেয়ে বেশি স্থায়ী। আমি যখন খেতে নিচ্ছি তখন মনে হয় আল্লাহ্র কাছে যা আছে তা এরচেয়ে ভালো এবং এর চেয়ে স্থায়ী। এই দুইটি বিষয় বারবার মনে করবে। তোমার একটা সম্পর্ক আছে, আল্লাহ্ আখিরাতে এই সম্পর্ককে আরো ভালো করে দেবেন এবং সেটা হবে আরো বেশি স্থায়ী। আমার একটি বাড়ী আছে, আল্লাহর কাছে আছে এর চেয়ে ও ভালো এবং দীর্ঘস্থায়ী আবাস। প্রত্যকেটি জিনিষ যা তুমি উপভোগ কর, দুইটি তুলনা, “ওয়ামা ইন্দাল্লাহি খাইরুন ওয়াআবক্বা” আল্লাহ্র কাছে যা আছে তা এর চেয়ে উত্তম এবং এর চেয়ে দীর্ঘস্থায়ী। তো এই আয়াতে আল্লাহ্ বলছেন, তোমরা কীভাবে পরবর্তী জীবনের বদলে এই জীবন নিয়ে পরিতুষ্ট থাকতে পারো যখন তোমরা জানো আমি তোমাদেরকে এই পৃথিবীতে যা দিয়েছি আখিরাতের তুলনায় তা খুবই সামান্য! আরো ভালো কিছুর জন্য প্রত্যাশা কর।
মানুষের স্বভাবতই আরো ভালো কিছু লক্ষ্য হওয়ার কথা। এদের উৎসাহী হওয়ার কথা। তাদের অনেক মহান কিছু অর্জন করার কথা। আল্লাহ্ বলছেন যাও, বড় কিছু অর্জন কর, বেহেশত অর্জন কর। যখন আপনি এইরকম একটা মানসিকতা তৈরী করবেন আমি বলছি, পার্থিব জিনিষগুলো ঠিকঠাক ঘটতে থাকবে। আপনাকে এই পার্থিব জীবনের দিকে ছুটতে হবে না, এই পার্থিব জীবন আপনার দিকে ছুটে আসবে। আপনাকে ওসব চাইতে হবে না, ওসব আপনাকে চাইবে কারণ আপনি আল্লাহ্কে চাইছেন, আপনি আখিরাতের পথে চলছেন।
কুরআনের খুব গুরুত্বপূর্ন এক শিক্ষা যা আমি শিখেছি এ পর্যন্ত। কীভাবে আল্লাহ্ আসমান এবং জমিনের সমস্ত কিছু একজন বিশ্বাসীর কাজে লাগিয়ে দেন। এটা খুবই শক্তিশালী ধারণা। আরেকটা রিমাইন্ডার আমি দিচ্ছি আপনাদের জন্য, কিভাবে আল্লাহ্ প্রাকৃতিক সব নিয়ম ও ওলটপালট করে দেন যাতে বিশ্বাসীর জন্য কাজে লাগতে পারে শুধুমাত্র এইকারণে যে তারা আখিরাতের রাস্তায় চলেছে, আল্লাহ্র রাস্তায় চলেছে। তরুণদের এইধরণের আচরণ তৈরী করা উচিৎ। এই পৃথিবীর তুচ্ছ বিষয়ে আটকা পড়ে যাবে না, আরো মহৎ কিছুর জন্য তৈরী হও কারণ, আল্লাহ্ তোমাদের থেকে অনেক বড় বড় কিছু প্রত্যাশা করেন। এবং সমস্ত উম্মাহ ও। শেষ যে কথা আমি বলতে চাই, কিছু পরিসংখ্যান বলছে মুসলিম বিশ্বের ৬৫% হচ্ছে ৩৫ বছরের কম বয়সীরা। এই উম্মাহর বেশিরভাগ অংশ তরুণ। এর মানে কী বুঝতে পারছো? এর মানে হল এই উম্মাহর ভার তোমাদের উপর, আগের যেকোন সময়ের চেয়ে বর্তমানে অনেক বেশি। তো আমাদের নিজেদের কে আরো উঁচু মানদন্ডে রাখতে হবে। আল্লাহ্ আজ্ব ওয়া জাল যাতে আমাদের পা টেনে নেওয়াদের মত না করেন এবং তাদের দলভুক্ত করেন যারা আখিরাতের জন্য কাজ করছে আমরা শুধু এই পৃথিবীতে আছি মধ্যবর্তী সময়ে। আল্লাহ্ আমাদের এই পৃথিবী এবং আখিরাতের সবচেয়ে উত্তম কিছু দিন ।
বারাকআল্লাহু লি ওয়ালা কুম, ওয়াস সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ।
অনুবাদ করে দিয়েছেনঃ সানজিদা হাসন