Articles |
সুরা আল কালাম, কুর’আনের ৬৮ নাম্বার সুরাতে একটা গল্প আছে। কয়েকজন কৃষক, পরবর্তি দিন সকালে তারা ফসল কাটতে যাবে। এবং এটা বেশ লাভজনক হতে যাচ্ছে। আর, তারা চাচ্ছে খুব, খুব সকালে যেতে। গরীব লোকেরা জেগে উঠার আগেই। কারণ ঐ গ্রামের গরীব লোকেরাও জানতো যে এটা ছিল ফসল তোলার দিন। তাই তারা উপস্থিত হবে ক্ষেত আর বাগানের বাইরে এই আশায় যে তারা কিছু ফল-ফসল পথে ফেলে যাবে, কিছু তাদেরকে দেবে আর, ফলে তারা কিছু দান গ্রহন করবে। তাই তারা পরিকল্পনা করল, তারা ক্ষেতে চলে যাবে কোন গরীব লোক উপস্থিত হওয়ার আগেই ভাষাটা হচ্ছে- নিশ্চিত করা যে কোন একজন গরীব কিংবা দেওলিয়া লোকও যেন তোমার কাছে ভিড়তে না পারে, চেষ্টা কর আস্তে কথা বলতে যেন কাউকে না জাগিয়ে ফেল এবং নিঃশব্দে যাবে আর ফিরে আসবে। দেখুন, তারা কিন্তু (তাদেরকে) ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় নি। যেভাবে কুরআনের অন্যত্র পাবেন। সে ইয়াতিমকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় এবং মিসকীনকে খাবার দিতে উৎসাহ দেয় না। অন্য জায়গায় দেখবেন মানুষ মন্দ কথা বা কর্কশ স্বরে কথা বলছে গরীবদের সাথে। তাই না? অথবা তাদের(গরীবদের) মনে করিয়ে দিচ্ছে সে তাদেরকে দয়া করছে। এই আয়াতে সেরকম কোন কথাবার্তাই গরীবদের সাথে বলা হয় নি। বলা হয় নি। তারা কাউকে অপমান করেনি, কারো প্রতি উঁচু গলায় কথা বলেনি। তারা শুধু নিজেরা নিজেরা কথা বলেছে, তাদেরকে এড়িয়ে যাও। নিয়ত রাখ যে তাদেরকে সাহায্য করব না, এটুকুই, অর্থাৎ তাদের কথা এরচেয়ে বেশি কিছুই না। শুধুমাত্র তাদেরকে সাহায্য না করার মানসিকতা এটাই, এটাই তাদের অপরাধ এবং যখন তারা বাগানে গেলেন, দেখলেন সেখানে কিছুই নেই। আল্লাহ তাদের বাগানের উপর আকাশ থেকে আযাব পাঠালেন আর যখন তারা সেখানে পৌছালো তারা বলে ফেললো জায়গাটা চিনতেই পারছি না। আমরা কি ঠিক জায়গায় এসেছি? এটা সেই জায়গা হতে পারে...
Articles |
সূরা গাফিরে আল্লাহ বিচার দিবসের একটি চিত্র তুলে ধরেন। এটা সাধারণ কোন চিত্র নয়। মনোযোগ দিয়ে শুনুন। وَإِذْ يَتَحَاجُّونَ فِي النَّارِ فَيَقُولُ الضُّعَفَاءُ لِلَّذِينَ اسْتَكْبَرُوا إِنَّا كُنَّا لَكُمْ تَبَعًا فَهَلْ أَنتُم مُّغْنُونَ عَنَّا نَصِيبًا مِّنَ النَّارِ – قَالَ الَّذِينَ اسْتَكْبَرُوا إِنَّا كُلٌّ فِيهَا إِنَّ اللَّهَ قَدْ حَكَمَ بَيْنَ الْعِبَادِ – মনোযোগ দিয়ে এটা শুনুন, আপনাদের যা আমি বোঝাতে চাচ্ছি। জাহান্নামে যখন তারা একে অপরের সাথে বিতর্কে লিপ্ত হবে… জাহান্নামে এমনসব মানুষ থাকবে (আল্লাহ আমাদের তাদের অন্তর্ভুক্ত না করুন) যারা একে অপরের সাথে বিতর্কে লিপ্ত হবে। কে কার সাথে বিতর্ক করবে? আল্লাহ বলেন – দুর্বলরা পৃথিবীতে যাদের ক্ষমতা ছিল তাদের সাথে বিতর্কে লিপ্ত হবে। দুর্বল, নির্যাতিত, যারা মুখ খুলতে ভয় পেত, যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারতো, কিন্তু তারা যদি মুখ খুলতো তাহলে তাদেরকে বিপদে পড়তে হতো, যারা মুখ বুঝে সব মেনে নিয়েছিল…। তারাই এখন ক্ষমতাশালীদের সাথে বিতর্কে লিপ্ত হলো। খেয়াল করে দেখুন, উভয় দলই কিন্তু আগুনে। তো, দুর্বলরা বলবে, আমরা তোমাদের অনুসরণ করতাম। إِنَّا كُنَّا لَكُمْ تَبَعًا আমরা তোমাদের অনুসারী ছিলাম। অতএব তোমরা কি আমাদের থেকে আগুনের কিয়দংশ বহন করবে’? তখন অহংকারীরা বলবে, আমরা সবাই তো জাহান্নামে আছি। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ফয়সালা করে দিয়েছেন। এমনকি সেই কুফফাররাই এখন বলবে – প্রভু ইতিমধ্যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। إِنَّ اللَّهَ قَدْ حَكَمَ بَيْنَ الْعِبَادِ কোন সন্দেহ নেই আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মাঝে ফয়সালা করে দিয়েছেন। এ কথা বলার মাধ্যমে এই লোকগুলো আসলে কী বলতে চাইছে? আপনারা হয়তো মনে মনে ভাবছেন, দুর্বলরা কেন জাহান্নামে যাবে? তারাতো পরিস্থিতির শিকার। হ্যাঁ, তারা পরিস্থিতির শিকার। কিন্তু জানেন? তাদের অপরাধ কী? সত্য না বলা। আপনার হাতে কোন অস্ত্র নেই, আপনি দুর্বল। আপনার কোন অস্ত্র নেই, সামরিক শক্তি নেই, সামাজিক সম্পদ নেই। কিন্তু একটা সম্পদ আপনার ছিল আর তাহলো আপনার...
Tafsir |
যখন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা পথনির্দেশনা আসার কথা বললেন, তিনি বলেন, فَمَن تَبِعَ هُدَايَ “যে ব্যক্তি আমার সে হেদায়েত অনুসারে চলবে,” এখানে একবচন ব্যবহার করা হয়েছে। (২ঃ৩৮) যে ব্যক্তিই আমার পাঠানো পথনির্দেশ অনুসরণ করবে… তিনি এটা বলেন নি যে – লোকেরা যারা আমার পথনির্দেশ মেনে চলবে। তিনি গাইডেন্স অনুসরণ করাকে ব্যক্তিগত বিষয় হিসেবে উল্লেখ করেছেন। জানেন? কেন এভাবে বলা হয়েছে? কারণ, কখনো কখনো আল্লাহর আদেশ নিষেধ মেনে চলার ক্ষেত্রে আপনি একা হয়ে পড়বেন। আল্লাহর অবাধ্য হওয়া…এটা সবাই করতে পারে এবং তারা দল বেঁধেই এটা করে। আর আপনি যখন আল্লাহর বিধান মানতে চাইবেন আপনাকে এই গোষ্ঠীর বাইরে থাকতে হবে … ঠিক স্রোতের প্রতিকূলে সাঁতার কাটার মত। মাঝে মাঝে এমন হবে যে আপনিই একমাত্র আল্লাহর আদেশ নিষেধকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। এমনও হতে পারে, পরিবারে একমাত্র আপনিই আল্লাহর দ্বীন মেনে চলছেন। আর অন্য সবাই বিপরীত দিকে ছুটে চলছে। নবীদের (আলাইহিমুস সালাতু ওয়াস সালাম) দিকে তাকিয়ে দেখুন, যখন তাঁরা মিশন শুরু করেন, সম্পূর্ণ একা। আর যেসব মানুষ তাঁদের অনুসরণ করা আরম্ভ করেন তাঁরা ছিলেন বিভিন্ন পরিবারের নিঃসঙ্গ কেউ। গোটা পরিবার তাঁদের বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লাগে। সুতরাং এই দ্বীনের অনুসরণ করা বা এই হেদায়াতের উপর চলার সিদ্ধান্তটি হতে হবে একেবারেই একটি ব্যক্তিগত সাহসী সিদ্ধান্ত। আর এই সিদ্ধান্ত নেয়ার ফলে আল্লাহ আপনাকে যে পুরস্কার দিবেন… فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ যখন আপনি আসলেই আল্লাহর হেদায়াত মেনে চলা শুরু করবেন, তিনি আপনাকে নতুন ধরণের সঙ্গী দিবেন, তিনি আপনাকে বিশ্বাসীদের সাথী বানিয়ে দিবেন। তাই আয়াতের বাকি অংশে বহুবচন ব্যবহার করা হয়েছে। এই দুনিয়াতে আপনি যেমন মুমিনদের সাথী হিসেবে পাবেন, আর পরকালেও لَنُدْخِلَنَّهُمْ فِي الصَّالِحِينَ “আমি অবশ্যই তাদেরকে সৎকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করব।” মহান আল্লাহ আমাদের দুনিয়া ও আখিরাতে সেই সঙ্গীদের অন্তর্ভুক্ত করুন। [আরও মজার ব্যপার হলো দুনিয়া এবং...
Articles, Tafsir |
বেশ পরিচিত একটি সুরা। হাদীসে এসেছে এই যে ব্যক্তি এই সুরার প্রথম ১০ আয়াত আত্মস্ত করবে সে দাজ্জালের ফিতনা থেকে নিরাপদ। আবার অন্য এক হাদীসে এসেছে যে ব্যক্তি শুক্রবার দিন এই সুরা তিলাওয়াত করবে তার উপর একটি আলোক রশ্মি পরবর্তী শুক্রবার পর্যন্ত ছায়া হয়ে থাকবে। কী আছে এই সুরাতে এমন যে এটি নিয়ে এত এত হাদীস এসেছে? বলা হচ্ছে এটি দাজ্জালের ফিতনার বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী অস্ত্র? সাধারণভাবে এই সুরাকে সবাই ৪টি গল্পের সমষ্টি হিসাবেই বলে থাকে। হ্যাঁ, বেশ উল্লেখ্যযোগ্য ৪টি কাহিনী এখানে আছে কিন্তু আসলে তার সাথে সাথে আরো ৪টি অংশ রয়েছে যাতে রয়েছে আমাদের জন্য আল্লাহর কিছু উপদেশ বা দিক নির্দেশনা। তাই সুরাটাকে আসলে মোটামুটি ৮ টি ভাগে ভাগ করা যায়। আল্লাহর উপদেশ/ দিক নির্দেশনা আয়াত ১-৯ এই পার্থিব দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ীত্ব বিষয়ে, আমরা যেন এই দুনিয়ার সৌন্দর্যে আসল সত্যটা ভুলে না যাই যে আল্লাহ্ তায়ালা একসময় এই দুনিয়াকে ধু ধু প্রান্তরে পরিণত করবেন, তিনি দুনিয়া বানিয়েছেন যাতে আমাদেরকে পরীক্ষা করতে পারেন, কে আমাদের মাঝে কর্মে শ্রেষ্ঠ। কাহিনী আয়াত ১০-২৬ গুহাবাসী যুবকদের গল্প, যাদের আল্লাহ্ ছাড়া কোন সহায় ছিল না, শুধু ছিল আল্লাহর প্রতি ঈমান, আর সেটার উপর ভরসা করে তারা অত্যাচারী শাসকের জায়গা থেকে পালিয়ে গেল, আর আল্লাহ্ তাদেরকে নিদর্শন হিসাবে ঘুম পাড়িয়ে দিলেন তিনশ নয় বছরের জন্য। আল্লাহর উপদেশ/ দিক নির্দেশনা আয়াত ২৭-৩১ এই জায়গায় প্রথমেই আবার সেই দুনিয়াবি মোহে যেন বিশ্বাসীরা আসক্ত না হয়ে পড়ে সেই কথা এসেছে। তারপর বলা হচ্ছে এই ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার পরীক্ষায় যারা সফল হবে তাদের জন্য কি থাকবে আর যারা ব্যর্থ হবে তাদের জন্য কি শাস্তি রয়েছে। কাহিনী আয়াত ৩২-৪৩ এরপর আসছে দুইটি সমৃদ্ধ বাগানের মালিকের কথা যে কিনা তার প্রতিবেশী, তুলনামূলক ভাবে দুর্বল্ এর সাথে বড়াই করছিল তার সম্পদ নিয়ে। কিন্তু...
Articles |
আজকের খুতবাহ প্রধানত সূরা হাজ্জ-এর একটি আয়াতকে কেন্দ্র করে। এই আয়াত নিয়ে আমি বেশ কয়েক দিন থেকেই চিন্তা করছিলাম, কিন্তু এটা নিয়ে খুতবাহ দেওয়ার বা এটাকে নিয়ে আমার চিন্তা ভাবনা প্রকাশ করার সুযোগ হয় নাই। বেশ কিছু দিন ধরেই আমি এই আয়াত নিয়ে চিন্তা করছিলাম কারণ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মানুষ জনের সাথে সরাসরি দেখা সাক্ষাতের মাধ্যমে আমার অনেক মানুষের সাথে আলাপ হয়েছে। মানুষজন তাদের চ্যালেঞ্জ, প্রশ্ন নিয়ে আসে। আপনাদেরকে আমি প্রথমে কি ধরণের আলাপচারিতার কথা বলছি সে সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দিয়ে তারপরে কেন আমি এই আয়াতটা আমাদের সকলের মনে রাখা উচিত সেটা জানাতে চাই। আমরা এখন এমন এক সময়ে বাস করছি যখন আমরা অনেক বিভ্রান্তির ধাঁধায় পড়ে আছি। আমাদের সকল প্রকারের অনেক প্রশ্ন আছে। উদাহরণস্বরূপ মানুষ অনেক কঠিন পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে তাদের ব্যক্তিগত জীবনে। যখন একজন বিশ্বাসী তার দ্বীন সম্বন্ধে খুব ভালোভাবে জানে এবং তারা আল্লাহর কিতাব সম্বন্ধে জানে, এবং তারা অনুধাবন করে সেই প্রশান্তি, মওই’যা- আন্তরিক পরামর্শ এবং আল্লাহর কিতার যে উপশম প্রদান করে, তাঁর প্রেরিত নবী সাঃ এর সুন্নত থাকে যা পাওয়া যায়। তখন তারা আল্লাহর দ্বীনে প্রশান্তি পায়। কিন্তু এখন আমরা এক অদ্ভুত সময়ে বাস করছি। আমরা এটাকে তথ্যের যুগ বলি কিন্তু আমাদের বেশির ভাগই আমাদের নিজের ধর্ম সম্বন্ধে বেশি কিছু জানি না। আমরা সত্যিই জানিনা কিভাবে আমাদের কিতাব এবং আমাদের বিশ্বাস এবং আমাদের ধর্মগ্রন্থ আমাদের উপশম দিতে পারে। এটা কিভাবে আমাদের কঠিন সময়ে সাহায্য করতে পারে। যখন এমনটা ঘটে তখন আমরা শয়তানের সহজ শিকারে পরিণত হয়ে যাই। যখন মানুষ কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যায় তখন শয়তান তাদের কাছে সকল প্রকারের চিন্তা নিয়ে আসে। ধরুন কেউ অসুস্থ, সে হাসপাতালে এবং সে সব ধরণের ওয়াসওয়াসা পাচ্ছে- বিশ্বাসের ব্যাপারে, আল্লাহকে প্রশ্ন করছে, কদর...