নামাজে মনোযোগ ধরে রাখার কিছু পন্থা

আপনি যেই ব্যবসা, চাকরী বা কাজই করুন না কেন, আল্লাহ একটি সয়ংক্রিয় প্রক্রিয়া আমদের মাঝে চালু রেখেছেন, একটি স্বর্গীয় প্রক্রিয়া যার মধ্য দিয়ে কোন ব্যক্তি মরুভুমিতে থাকুক, কিংবা নিউইয়র্কে থাকুক, বা কোন বনের মাঝে থাকুক, যেখানেই থাকুক না কেন সে সবসময় আল্লাহর সাথে সম্পর্কযুক্ত থাকবে। কিসের মাধ্যমে? সালাত বা নামাজের মাধ্যমে। আপনি নামাজ পড়েই এটা ভাবতে পারেন না যে আল্লাহর সাথে আপনার যোগাযোগ স্থাপিত হয়ে গেল। আপনার নামাজের মাঝে একটি বিশেষ গোপন উপাদান থাকতে হবে, যা আপনাকে আল্লাহর সাথে যুক্ত রাখবে। যদি সেই জিনিস অনুপস্থিত থাকে তাহলে আপনার নামাজ হয়ে পড়বে অন্তঃসারশূন্য একটি ব্যাপার। হ্যাঁ, আপনি অন্তত নামাজের জন্য হয়তো দাঁড়াচ্ছেন কিন্তু সেখানে একটা ফাঁক রয়ে যাচ্ছে। এখন সেই গোপন জিনিসটি কি? আল্লাহ বলছেন قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ ”মুমিনগণ সফলকাম হয়ে গেছে”, ’الَّذِينَ هُمْ فِي صَلَاتِهِمْ خَاشِعُونَ ‘ এখানে গোপন জিনিসটি হলো خَاشِعُونَ সত্যিকারের মু’মিনরাই সফল হয়েছে, যাদের সালাতে রয়েছে খুশু। বিনম্রতা, আনুগত্য, অখন্ড মনোযোগ, এই সবকিছুই হচ্ছে খুশু। প্রকৃত অর্থে যেটা আমাদেরকে করতে বলা হয়েছে তা হল, যেই মাত্র আমি বলবো আল্লাহু আকবার, আমরা অন্য আরেকটি জগতে চলে যাব, এই দুনিয়া তখন আপনার কাছে অস্তিত্বহীন হয়ে যাবে, আপনার সন্তানের কথা মনে থাকবে না, স্ত্রীর কথা মনে থাকবে না, আপনার কাজের কথা মনে থাকবে না, কোন কিছুরি অস্তিত্ব থাকবে না, শুধু মাত্র আপনি এবং আল্লাহ, ব্যাস। যখন আমরা নামাজে দাঁড়াবো তখন আমাদেরকে এই রকম মনোজগতে প্রবেশ করতে হবে। তাই সাধারণভাবে বলা হয় যে নামাজের জন্য একটি নিরিবিলি জায়গায় দাঁড়াতে। আর আমার ব্যক্তিগত উপদেশ হচ্ছে নামাজ শুরু করার আগে সেই জায়গায় আগে চুপচাপ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকুন এবং মনের সব চিন্তাভাবনা আগে সরিয়ে ফেলুন, মাথা থেকে সব চিন্তা ঝেড়ে ফেলুন, এবং নিজেকে শুধুমাত্র সালাতের সাথে যুক্ত করুন। এবং যখন নামাজ পড়বেন, জানুন...

ঈমান হারানোর প্রক্রিয়া

আমাদের আশেপাশে বিভ্রান্ত অবস্থায় অনেক আব্দুল্লাহ, জায়নাব, আলী, ফাতিমা, আব্দুর কারিম, আহমেদ, রুকাইয়া, হামজাহ, আই’শা, মুহাম্মদ — এইসব চমৎকার আরবি নামধারী তরুন-তরুণীদের আমরা দেখতে পাই। তারা খুব নির্ভীকভাবে বলে, “ইসলাম নিয়ে আমার মনে অনেক সন্দেহ আছে। আর এ মানুষগুলো এমন নয় যে তাদের দর্শন শাস্ত্রে পি এইচ ডি রয়েছে বা ইসলামের ইতিহাসে ব্যাপক জ্ঞান রয়েছে এবং এসব বিষয় বহু দিন অধ্যয়নের ফলে তাদের মনে ধীরে ধীরে সংশয়ের জন্ম নিয়েছে। না, না, না, আসল ব্যাপার তা নয়। বরং আসল ব্যাপার হলো এরা নিজেদের জন্য জেনে-বুঝে খারাপ সঙ্গ এবং অসৎ পরিবেশ বেছে নিয়েছিল। তারা নিজেদের পরিবর্তন করেনি। এটাই ঈমান হারানোর প্রক্রিয়া। আমি এমন শত শত মানুষের সাথে কথা বলেছি। তারা আক্ষরিক অর্থে এই আয়াতের ভেতর জীবনযাপন করছে!! (তোমরা নিজেরাই নিজেদেরকে বিপদগ্রস্ত করেছ। প্রতীক্ষা করেছ, সন্দেহ পোষণ করেছ এবং অলীক আশার পেছনে বিভ্রান্ত হয়েছ, অবশেষে আল্লাহর আদেশ পৌঁছেছে। ৫৭ঃ ১৪) তারপর এক সময় তারা ধর্ম নিয়ে সন্দেহ পোষণ করতে থাকে। কিন্তু তাদের এই সন্দেহের সাথে যুক্তি বা বুদ্ধির কোন সম্পর্ক নেই। আপনি একটা প্রশ্নের উত্তর দিয়ে শেষ হতে না হতেই আরেকটা প্রশ্ন করবে। কোন উত্তরেই তারা সন্তুষ্ট হবে না, কোন উত্তরেই তাদের সন্দেহ কাটবে না। কারণ তাদের কোন স্বদিচ্ছাই নাই যেন তাদের বিভ্রান্তি কেটে যায়। আপনি উত্তর দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে একসময় ভাববেন আসলে এদের সমস্যাটা কি? তখন যদি আপনি তাদেরকে প্রশ্ন করেন, “কতদিন থেকে তোমরা এই অসৎ পরিমণ্ডল জেনেশুনে বেছে নিয়েছ?” তখন আপনি বুঝতে পারবেন এদের আসল সমস্যা কোথায়। ‘wartabtum’ অর্থাৎ (নানা রকমের) সন্দেহ পোষণ করেছ। জানেন? সন্দেহ কী করে? সন্দেহ প্রথমে তাদের ইসলামের গণ্ডি থেকে বের করে দিবে। তারা এভাবে নিজেকে সান্ত্বনা দিবে- “এটা তো আসলে পুরোপুরি সত্য না। সুতরাং এটা না মানার কারণে আমার খারাপ অনুভব করার দরকার নেই।”...

আপনার মাতা পিতা আপনার জান্নাত জাহান্নাম

আমাদের রাসূল (সঃ) বলেনঃ আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়া যায় মাতা-পিতার সন্তুষ্টিতে। আর আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন মাতা-পিতার অসন্তুষ্টিতে। সুতরাং যে কেউ চায় যে আল্লাহ তার উপর সন্তুষ্ট হউক, তার উচিত তার মাতা পিতাকে সন্তুষ্ট করা। আর যে আল্লাহর শাস্তিকে ভয় করে, তার উচিত স্বীয় মাতা পিতার অসন্তুষ্টিতে উদ্বিগ্ন হওয়া। মুসনাদে ইমাম আহমাদ ও সুনান আবু দাউদে বর্ণিত আছে… এক সাহাবী ইয়েমেন থেকে আসলেন এবং রাসূল (সঃ) কে বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ), আমি ইয়েমেন থেকে আপনার নিকট এসেছি, যাতে আমি আপনাকে আমার বাইয়াত দিতে পারি, যেন আমি একজন সাহাবী হতে পারি, আপনার সহযোগী হয়ে যুদ্ধ করতে পারি। আমি আমার পিতা মাতাকে ছেড়ে এসেছি আর তাঁরা কান্না করছিলেন। আমি পিতা মাতাকে ছেড়ে আপনার নিকট এসেছি। আমাদের রাসূল (সঃ) বললেনঃ যদি তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টি চাও, তাদের কাছে ফেরত যাও। যাও তাদের মুখে হাসি ফোটাও, যেহেতু তুমি তাদের কাঁদিয়েছ। এটাই বলেছেন আমাদের রাসূল (সঃ)। তুমি মনে করেছ তোমার মাতা পিতাকে কাঁদিয়ে আমার কাছে এসে তুমি জান্নাত পাবে? এ অবস্থায় কিভাবে তুমি জান্নাত পেতে পার? তিনি এসেছিলেন একজন সাহাবী হতে। তিনি এসেছিলেন আল্লাহর রাসূলের পেছনে যুদ্ধ করতে। কিন্তু তিনি তার পিতামাতাকে কাঁদিয়ে এসেছিলেন। আর রাসূল (সঃ) বলেন তুমি মনে করেছ এটা করে তুমি জান্নাত পাবে? তাদের নিকট ফেরত যাও। এবং যাও তাদের মুখে হাসি ফোটাও, যেহেতু তুমি তাদের কাঁদিয়েছ। এটাই জান্নাতে যাওয়ার পথ। পিতা মাতাকে সন্তুষ্ট করার মাধ্যমে। যাও তাদের মুখে হাসি ফোটাও, যেহেতু তুমি তাদের কাঁদিয়েছ। আমাদের রাসূল (সঃ) আমাদের বলেছেনঃ জান্নাতে যাওয়ার সবচেয়ে সহজ রাস্তা হলো পিতা মাতার সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে। আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রাঃ এর ছেলে যখন তার পিতা শহীদ হয়ে গেলেন, বলেনঃ আমার পিতা মারা গেছেন বলে আমি কাঁদছি না। আমি এজন্য কাঁদছি যে, আমার জান্নাতে যাওয়ার সবচেয়ে সহজ দরজাটি বন্ধ...

সৎ উপার্জনের সম্মান (দ্বিতীয় পর্ব)

আমি শুরু করেছিলাম, لَا يَسْخَرْ قَوْمٌ مِّن قَوْمٍ দিয়ে। আপনার আচরণ দ্বারা কাউকে ছোট করবেন না। এক গ্রুপকে অন্য গ্রুপের তুলনায় ছোট করবেন না। ধরুন, আপনারা কয়েকজন বন্ধু একত্রে থাকেন, সবাই কলেজ পাশ করেছেন, কিন্তু একজন পাশ করতে পারেন নি। তার অর্থনৈতিক সমস্যা আছে, তার বাবা ব্যবসায় লস করেছে বা যাইহোক, তাই তাকে স্কুল ত্যাগ করে একটি গ্যাস স্টেশনে চাকরি নিতে হয়েছে। আপনারা সবাই পাশ করেছেন কিন্তু সে পাশ করতে পারেনি। এখন আপনারা সবাই চাকরি করেন, একত্রে ঘুরেন, আর সে বন্ধুর দিকে নিচু দৃষ্টিতে তাকান, তাকে মনে করিয়ে দেন যে সে কীভাবে স্কুল পরিত্যাগ করলো। এটাই لَا يَسْخَرْ قَوْمٌ مِّن قَوْمٍ (কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে।) তার গ্যাস স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা, গ্যাস পাম্প করা আল্লাহর নিকট মর্যাদাবান এবং সম্মানিত। এর মাধ্যমে আল্লাহ তাঁকে সম্মানিত করেছেন। আল্লাহর এই আয়াতটি মনে রেখে উপার্জন বিষয়ে আমরা একে অন্যকে যেন ছোট চোখে না দেখি। জানেন, আল্লাহ কীভাবে অর্থ উপার্জনের বিষয়টা কুরআনে উল্লেখ করেছেন? যে কাজই আপনি করেন না কেন, সেটা ব্যবসা হউক, অফিসে কাজ করেন, হাসপাতালে চাকরি করেন বা শারীরিক পরিশ্রমের কাজ যেটাই হউক – সব ধরণের হালাল কাজের একটাই নাম আছে। বিশেষত, শুক্রবারে জুমুয়ার পর তিনি কী করতে বলেন- فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلَاةُ فَانتَشِرُوا فِي الْأَرْضِ وَابْتَغُوا مِن فَضْلِ اللَّهِ – নামাজ সমাপ্ত হওয়ার পর জমিনে ছড়িয়ে পড়, যেখানে যাওয়ার সেখানে যাও এবং ‘আল্লাহর অনুগ্রহ’ অনুসন্ধান কর। সেই উপার্জন, সেটা যে কাজই হউক না কেন আল্লাহ সেটাকে আপনার প্রতি ‘আল্লাহর অনুগ্রহ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। সেটা আপনার উপর আল্লাহর অনুগ্রহ। আর যখন আল্লাহ কারো প্রতি অনুগ্রহ করেন, তার মানে তাকে আল্লাহ সম্মানিত করেছেন। কারো উপর আল্লাহর অনুগ্রহ থাকলে সেখানে অসম্মানের কোন বিষয় নেই। এই দুইটা একত্রিত হওয়া সম্ভব নয়। চলুন এই ধারনাটি...