আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণের পুরস্কার (৫ম পর্ব)

তারপর আল্লাহ বলেন, خَسِرَ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةَ – এ বিষয়ে কথা বলেই আমি শেষ করবো। যখন মানুষ এমন করে তখন তারা এই দুনিয়া এবং পরকাল উভয়টাই হারায়। এর মানে কী? এই লোকটি দুনিয়া এবং পরকাল দুইটাই হারিয়েছে। আপনি যদি নিজেকে ধরে রাখতে পারেন…দেখুন, আল্লাহ বলেছেন- لَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنسَانَ فِي كَبَدٍ – ‘’নিঃসন্দেহে আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি কষ্ট- ক্লেশের মধ্যে।’’ আপনি আল্লাহকে বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, আপনার জীবনে চ্যালেঞ্জ থাকবেই। আপনি আল্লাহকে বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, জীবিকা উপার্জন করতে আপনাকে প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে, অসুস্থতার সাথে লড়াই করা কষ্টকর হবে। এই জীবনটা এমন নয় যে, বিশ্বাসীরা এখানে বিলাসী জীবন যাপন করবে আর অবিশ্বাসীরা কষ্টে থাকবে। আল্লাহ সব মানুষকেই কষ্ট- ক্লেশের মধ্যে সৃষ্টি করেছেন। এটাই তিনি বলেছেন। এখন, আপনি যদি ঈমানের সাথে এই কষ্ট-ক্লেশ অতিক্রম করতে পারেন, তাহলে এই জীবনে যেমন আপনি সফলতা লাভ করবেন, তেমনি পরকালীন জীবনেও সফল হবেন। আপনি এমন মানসিক প্রশান্তি লাভ করবেন যা অবিশ্বাসী কারো পক্ষে লাভ করা সম্ভব নয়। আপনি এবং অবিশ্বাসী দুজনেই অসুস্থ, কিন্তু আপনি অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও প্রশান্তি লাভ করেন আর সে কোন প্রশান্তি পায় না। আপনি এবং অবিশ্বাসী দুজনে একই ধরনের অর্থনৈতিক সমস্যায় থাকবেন, একই ক্ষুধায় থাকবেন তারপরেও আপনার অন্তর প্রশান্ত। এত কিছুতে অাল্লাহ আপনাকে শান্তি দিচ্ছেন, পুরস্কৃত করছেন। তিনি এখনো আপনাকে রক্ষা করছেন। আর অবিশ্বাসীরা দুর্দশাগ্রস্ত। এখন আপনি যদি এমন মানুষদের অন্তর্ভুক্ত হন, যারা বিপদে পড়লে আল্লাহর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে আপনি এই দুনিয়ার শান্তিও হারাবেন, উপরন্তু আখেরাত তো হারাবেনই। خَسِرَ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةَ – সূরা হাজ, আয়াত ১১। এ জন্যই আমরা আল্লাহর নিকট এই বলে দোয়া করি, ‘‘হে আমাদের রব, আমাদের দুনিয়ার হাসানাহ দান করুন এবং পরকালের হাসানাহ দান করুন।’’…… এখানে হাসানাহ্ শব্দের উপযুক্ত অর্থ হল, যখন আপনি আল্লাহর...

যখন আরশ কুরসির প্রভু আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা হাসবেন

কিয়ামতের দিন সবার বিচার শেষ করার পর একজন লোক বাকি থাকবে। তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয়া হবে কিন্তু তার চেহারা জাহান্নামের দিকে ফেরানো থাকবে। তখন সে লোকটি কেঁদে বলবে- হে আমার রব! জাহান্নামের উত্তাপ আমাকে অস্থির করে তুলছে এবং এর শিখা আমাকে জ্বালাচ্ছে। আপনি আমার চেহারা জাহান্নাম থেকে অন্য দিকে ফিরিয়ে দিন। সে এভাবে আল্লাহর কাছে ক্রমাগত প্রার্থনা করতে থাকবে। তারপর আল্লাহ তাকে বলবেন- তোমার এ প্রার্থনা মঞ্জুর করা হলে তুমি কি আর কিছু চাইবে? সে বলবেঃ না, আপনার ইজ্জতের কসম! আমি আর কিছু চাইবো না। তো, তার চেহারা জাহান্নমের দিক থেকে সরিয়ে দেয়া হবে। তারপর সে আবার বলতে শুরু করবে, হে আমার প্রভূ! আমাকে একটু জান্নাতের দরজার নিকটবর্তী করে দেন। আল্লাহ বলবেন, তুমি কি বলোনি এরপর আর কিছু চাইবে না? ধিক হে মানব সন্তান! তুমি কোন কথা রাখো না। কিন্তু এ ব্যক্তি প্রার্থনা করতেই থাকবে। তখন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলবেন – তোমার এ ইচ্ছা পূরণ করা হলে আর কিছু চাইতে পারবে না। সে বলবে- না, আমি আপনার মর্যাদার কসম করে বলছি আমি আর চাইবো না। এভাবে সে অঙ্গীকার আর প্রতিজ্ঞা করতে থাকবে যে সে আর কিছু চাইবে না। অবশেষে তাকে জান্নাতের দরজার নিকটবর্তী করে দেয়া হবে। অতঃপর যখন সে জান্নাতে গেটের দিকে তাকিয়ে জান্নাতের সূখ শান্তি দেখবে, নিজের ওয়াদার কথা স্মরণ করে কিছুক্ষণ চুপ থাকবে। কিন্তু পরিশেষে সে বলবে, হে আমার প্রভু আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দিন। তখন আল্লাহ বলবেন- তুমি না এতক্ষণ ধরে সব ওয়াদা আর অঙ্গীকার করলে যে আর কিছু চাইবে না? ধিক তোমার! হে বানী আদাম! কতই না ও‘য়াদা ভঙ্গকারী তুমি। সে বলবে, হে আমার প্রভূ আমাকে আপনার সৃষ্টির মধ্যে সবচেয়ে দুর্ভাগা করে রাখবেন না। সে এভাবে প্রার্থনা করতেই থাকবে, অবশেষে আল্লাহ সুব হানাহু...

কঠিন হৃদয় জনিত সমস্যা

এটি একটি আত্মিক এবং হৃদয়জনিত সমস্যা। কেবল আপনি নিজে এই ব্যাপারটা বুঝতে পারবেন। ইনশাআল্লাহ্‌ শেষের দিকে যেয়ে এ সমস্যাগুলো দূর করার জন্য কিছু টিপস নিয়ে আলোচনা করবো। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, أَلَمْ يَأْنِ لِلَّذِينَ “যারা ইমান এনেছে তাদের কি এখনো সময় আসেনি…” أَن تَخْشَعَ قُلُوبُهُمْ لِذِكْرِ اللَّهِ“…..যে তাদের হৃদয় আল্লাহর স্মরণে বিগলিত হয়ে যাবে, তাদের হৃদয় সশ্রদ্ধ ভয়ে পূর্ণ হয়ে যাবে?” যখন আপনার পেশী নরম আর দুর্বল হয়ে পড়ে, সেটাকে বলা হয় খুশু’। আর তখন পেশীগুলোকে শক্তিহীন মনে হয়। আপনার মনে হয় যে কেউ আপনাকে বশীভূত করে ফেলছে। আল্লাহ বলছেন তাদের হৃদয় আল্লাহর ভয়ে, তাঁর কথা স্মরণ করে বশীভূত হয়ে পড়বে।“যারা বিশ্বাসী, তাদের জন্যে কি আল্লাহর স্মরণে তার কারণে হৃদয় গলে যাওয়ার সময় আসেনি?…” وَمَا نَزَلَ مِنَ الْحَقِّ“…এবং যে সত্য অবর্তীর্ণ হয়েছে তার কারণে?”আর সেই সত্যটা কী? আল কুর’আন। তারপর আল্লাহ একই আয়াতে একটি সতর্ক বাণীও উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন : وَلَا يَكُونُوا كَالَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِن قَبْل فَطَالَ عَلَيْهِمُ الْأَمَدُ তারা (মুমিনরা) যাতে তাদের মত না হয়, যাদেরকে তাদের পূর্বে কিতাব দেয়া হয়েছিল। তাদের উপর একটি বড় সময় অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। তার মানে তারা এই কিতাব ধারণ করেছিল দীর্ঘ সময়ের জন্য। যখন আপনি প্রথম ধর্মীয় অনুশাসন মানা শুরু করেন, আপনি এ ব্যাপারে খুবই উত্তেজিত থাকেন। এই উত্তেজনা একসময় চলে যায়, যা থাকে তা হলো বহিরাবরণ। সুতরাং ঐসব লোকদের ক্ষেত্রে কী ঘটল? فَقَسَتْ قُلُوبُهُمْ তাদের অন্তর কঠিন হয়ে গেল। একটি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর, ধর্মীয় কর্ম সম্পাদন একটি রুটিনে পরিনত হয়ে গেল। এমন কিছু যা তারা শুধু করে, যা করতে হয়, তারা এটা করছে কারণ এটাতে তারা অভ্যস্ত। কিন্তু এটা আর এমন কিছু নয়, যা তাদের হৃদয়কে আলোড়িত করে। তাদের হৃদয় হয়ে গেছে কঠিন। আর যখন আপনার অন্তর কঠিন...

আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণের পুরস্কার (৪র্থ পর্ব)

কিন্তু কিছু মানুষের জন্য যাদের ঈমানের অবস্থা একেবারে নড়বড়ে, যখন সময় কঠিন হয়ে যায়…وَإِنْ أَصَابَتْهُ فِتْنَةٌ انقَلَبَ عَلَىٰ وَجْهِهِ এবং যদি কোন পরীক্ষায় পড়ে, তখন মুখ ঘুরিয়ে নেয়।’’ তার মানে কী? তার মানে, আমি আল্লাহর কাছে কিছু চাই না, কিভাবে তিনি আমাকে ছেড়ে গেলেন? কেন তিনি আমাকে বিপদে ফেললেন? কেন তিনি আমার সাথে এমন করলেন? আমাদের সময়ে এটা উপলব্ধি করা খুবই সহজ। আমরা অস্বাভাবিক এক ভোগবাদী সমাজে বসবাস করি যেখানে সব কিছু, সহজলভ্য এবং দ্রুত লাভ করা যায়। বিনোদিত হতে চান? ফোনে একটা app খুললেই হবে। কিছু কিনতে চান? জাস্ট Amazon থেকে অর্ডার করুন, এটা আপনার ঘরে পৌঁছে যাবে। সবকিছুই কষ্ট ছাড়া পাওয়া যায় এবং সবকিছুই সাথে সাথেই পাওয়া যায়। আপনি কিছু চাইছেন? আপনাকে তার কাছে যেতে হবে না, সেটাই আপনার কাছে আসবে। সবকিছুই দ্রুত হয়। আমাদের এখন আপ্যায়িত হওয়ার অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। আপনার একটা অর্ডার যদি দুই থেকে তিনদিন দিনের জন্য দেরি হয় তবে আপনি তাকে 1 star, 2 Star, thumbs down, খারাপ রেটিং দিচ্ছেন। আমরা এতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। এমতাবস্থায়, আপনি যখন আল্লাহ কাছে দোয়া করছেন এবং আপনার সমস্যাগুলোর সমাধান চাইছেন। আপনার সবকিছু দ্রুত এবং তড়িৎ করা দরকার। যখন এটা হয় না তখন আপনি বলেন, বাজে সার্ভিস এবং আমার আরো ভালো ভোক্তা অধিকার চাই। আপনার ভাবখানা তখন এমন হয়ে যায় যে, আমি আল্লাহর কাছে আর কিছু চাইবো না, কোন অর্ডার দিব না। আপনি এখন ক্রেতার মত সুবিধা পেতে চান, মনে করেন যে এগুলো পাওয়ার আপনার অধিকার রয়েছে। আর আপনি আল্লাহর কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। এবং বলেন, তিনি আমার কথা শুনছেন না, আমার সমস্যার সমাধান করছেন না। বুঝতে চেষ্টা করুন যে, সবার জন্য আল্লাহর পরিকল্পনা রয়েছে। তুলনা করার জন্য আপনাদের দুটি উদাহরণ দিচ্ছি। ইয়াকুব (আঃ) এর ক্ষেত্রে...

রাসূলুল্লাহ ﷺ এর প্রতি জিব্রাইল (আঃ) এর ৫টি উপদেশ

কিন্তু তখন ব্যাপারটা কেমন ছিল যখন জিব্রিল (আঃ) রাসূল ﷺ কে জীবন সম্পর্কে কোন উপদেশ দিতেন! এখন আমি আপনাদেরকে যে বিষয়টি বলবো সেটি রাসূল ﷺ এর জীবনের শেষ দিককার। জিব্রীল (আলাইহিস সালাম) রাসূল ﷺ এর নিকট এসে বললেনঃ হে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)……, আচ্ছা, আল্লাহ কি কুরআনে কখনও এভাবে বলেছেন ‘হে মুহাম্মাদ’? না। ইয়া নাবিয়াল্লাহ, ইয়া রাসূলাল্লাহ – ও আল্লাহর নবী, ও আল্লাহর রাসূল (এভাবে বলেছেন)। তাহলে জিব্রীল (আলাইহিস সালাম) কি করে ‘ইয়া মুহাম্মাদ’ বলার সাহস করলেন? আলেমরা বলেন যে, যখন জিব্রীল (আলাইহিস সালাম) বলেন, ‘ইয়া মুহাম্মাদ’, এর মানে হলোঃ তিনি নবীﷺ কে এটা বুঝাতে চাচ্ছেন যে, এখনকার বিষয়টি ওহীর বাইরের বিষয়। যখন আমি আপনাকে ‘ইয়া মুহাম্মাদ’ বলি, তার মানে বিষয়টি আপনি মুহাম্মাদ আর আমার মধ্যকার। সুতরাং এটা হলো কেবল এমন একক সময় যখন জিব্রাইল ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ’ বলে সম্বোধন করলেন না। কারণ এখন আমি এমন কথা বলবো যা কেবল আপনার আর আমার মাঝে। বিষয়টি বুঝতে পারছেন আশা করি। সুতরাং তিনি বলেনঃ হে মুহাম্মাদ ﷺ , ৫টি উপদেশ দিচ্ছি আপনাকে। ১. আপনি যেভাবে খুশি জীবন যাপন করুন। কিন্তু একথা মনে রাখবেন যে আপনি একদিন মৃত্যুবরণ করতে যাচ্ছেন। একদিন আপনি মরবেনই। ২. তিনি আরো বলেন, আপনি যাকে খুশি ভালোবাসেন। কিন্তু মনে রাখবেন যে একদিন আপনি তার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবেন। ৩. আপনি যা খুশি তাই করতে পারেন। কিন্তু একথা স্মরণে রাখবেন যে, আপনার কর্ম অনুযায়ী আপনাকে প্রতিফল দেয়া হবে। প্রতিদান আখিরাতেই পাবেন। এর মানে কি? মানে হলো, প্রত্যেকটি বিষয় আখিরাতে আসবে, প্রত্যেকটি পুরষ্কারই আখিরাতে দেওয়া হবে। আপনি যা করেন তা করতে থাকুন আর মনে রাখবেন যে এর বদলা আখিরাতে পাবেন। ৪. জেনে রাখুন, একজন বিশ্বাসীর জন্য সত্যিকারের আভিজাত্য রাত্রি বেলা নামাজে দাঁড়ানোর মাঝে। ৫. আর তার প্রকৃত মর্যাদা আত্মনির্ভরশীলতার মাঝে।...