নতুন বছরটা শুরু হউক খারাপ অভ্যাসগুলো বর্জন আর ভাল কিছু অভ্যাস আত্মস্ত করার মধ্য দিয়ে

আমাদের সবারই চরিত্রের বিভিন্ন দিক রয়েছে যার উন্নতি সাধন প্রয়োজন। এর জন্য প্রয়োজন ঠান্ডা মাথায়, গভীরভাবে নিজেকে পর্যবেক্ষণ করা যে, আমি আসলে চরিত্রের কোন ক্ষেত্রে উন্নতি সাধন করতে চাই ? আরো বেশি জ্ঞান অর্জন করার পূর্বে আপনি কি নিজের প্রতি সৎ থেকে একটা লিস্ট বানাতে পারবেন ? ইস ! এই বিষয়গুলো যদি আমি জীবনে না করতাম। ইস ! এই বিষয়গুলো যদি আমি আমার জীবনে বাস্তবায়ন করতে পারতাম ! এটা হলো এক নাম্বার কাজ। তখন এই লিস্ট এ থাকবে এমন কিছু বিষয় যা আপনি আপনার জীবন থেকে বাদ দিতে পারতেন। আর কিছু বিষয় থাকবে এমন যা আপনি আপনার জীবনে যুক্ত করতে পারতেন। এখন যে বিষয়গুলো আপনি জীবন থেকে বাদ দিতে পারতেন সেগুলোর ব্যাপারে নিজেকে প্রশ্ন করুন যে কিভাবে আমি এগুলো থেকে মুক্তি পেতে পারি ? উদাহরণ সরূপ কারো কারো হয়ত বিভিন্ন ধরনের আসক্তি থাকতে পারে। যেমন ..ড্রাগ , মদ্যপান বা পর্নোগ্রাফি যাই হোক কোনো এক ধরনের আসক্তি। এই আসক্তিগুলো সাধারণত ঘটে বিশেষ পরিস্থিতিতে। ধরুন, কোনো এক যুবক বাসায় একা, সে স্কুল থেকে কিছুটা আগেই বাসায় আসে, বাবা -মা এখনো কর্মস্হল থেকে ফেরত আসেনি, তার ঘন্টা দেড়েক বাসায় একা একা থাকার সুযোগ হয়। ঠিক তখনি সমস্যায় আক্রান্ত হয়। সুতরাং আপনি নিজেই বুঝতে পারেন যে , হ্যাঁ আমি এই খারাপ কাজটা করি। কিন্তু আমি এটা করি একটি নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে। তাই আমি যদি এই নির্দিষ্ট সময় এবং নির্দিষ্ট পরিস্থিতির মাঝে কিছুটা পরিবর্তন আনতে পারি তাহলে এটা আমাকে সাহায্য করতে পারে। আমি জানি আমি একা একা বাসায় থাকলে আমার সমস্যা হয়। আমি হয়ত এই বিষয়টা আগে চিন্তা করে দেখিনি। মনে হয় আমার আরো বেশি সময় স্কুলে থাকা উচিত। অথবা আমি এই সময়টা ভালো কিছু করে ব্যয় করতে পারি। *****দিনশেষে পাপ কাজগুলো আপনার সময়ের...

নিরাশ

আল্লাহ আজ্জা ওয়া জ্বাল বলেছেন – وَلَا تَهِنُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَنتُمُ الْأَعْلَوْنَ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ – “আর তোমরা নিরাশ হয়ো না এবং দুঃখ করো না। যদি তোমরা মুমিন হও তবে তোমরাই জয়ী হবে।” (৩:১৩৯) নিজেদের দুর্বল মনে করো না, শক্তিহীন মনে করো না। আরবি ‘ওহান’ দ্বারা বুঝায় – অবস্থার পরিবর্তন হবে না এমন মনে করা। অন্য কথায় – আপনি যাই করেন না কেন পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না, অবস্থার কোনো উন্নতি হচ্ছে না। অথবা আপনার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হলো। এখন আপনার মনে হচ্ছে যে পরিস্থিতি পরিবর্তন করার সামর্থ্য আপনার নেই। যখন মনের অবস্থা এমন হয় যে আমি এতো সব চেষ্টা করা সত্ত্বেও ব্যর্থ হলাম, সফল হতে পারলাম না, তখন দুঃখ এসে আপনাকে ঘিরে ধরে; এই ব্যর্থতা আপনাকে ‘হুজন’ এর দিকে ধাবিত করে। আর তাই এর পরের অংশে আল্লাহ বলেন -وَلَا تَحْزَنُوا ” এবং দুঃখ করো না”। তিনি আসলে মূল কারণটা নির্ণয় করলেন। কোনো এক ব্যর্থতা, কোনো এক হতাশা আপনাকে একেবারে অক্ষম করে দিলো, মন ভেঙে দিলো, আপনি যে আরো ভালো করতে পারেন এই আত্মবিশ্বাস পুরোপুরি কেড়ে নিয়ে গেলো। সুবহানাল্লাহ! আর তিনি এটা করলেন ওহুদ যদ্ধের সময়। ওহুদ যুদ্ধের সময় মুসলমানরা বড় ধরণের ক্ষতির সম্মুখীন হয়, (আর এই ক্ষতির ফলে দুঃখ এসে তাদের ঘিরে ধরে) কিন্তু আল্লাহ আজ্জা ওয়া জ্বাল সেই ক্ষতিকে একটি ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে তুলে ধরেন। ঠিক এর পরের আয়াতে তিনি বলেন – إِن يَمْسَسْكُمْ قَرْحٌ فَقَدْ مَسَّ الْقَوْمَ قَرْحٌ مِّثْلُهُ – “তোমরা যদি আহত হয়ে থাক, তবে তারাও তো তেমনি আহত হয়েছে।” وَتِلْكَ الْأَيَّامُ نُدَاوِلُهَا بَيْنَ النَّاسِ – “আর এ দিনগুলোকে আমি মানুষের মধ্যে পালাক্রমে আবর্তন ঘটিয়ে থাকি।” কখনো তোমাদের সহজ সময় আসবে আবার কখনো কঠিন সময় আসবে। এই ক্ষতি দ্বারা নিজের মন-মানসকে আচ্ছন্ন করে ফেলো না...

কেমন করে তোমরা আল্লাহর ব্যাপারে কুফরী অবলম্বন করছ? অথচ তোমরা ছিলে মৃত। (বাকারা – ২৮)

কেমন করে তোমরা আল্লাহর ব্যাপারে কুফরী অবলম্বন করছ? অথচ তোমরা ছিলে মৃত। (বাকারা – ২৮) এই আয়াতটি খুবই গভীর দার্শনিক অর্থ বহন করে। এই আয়াত সম্পর্কে অনেক কিছু বলা হয়েছে। যে মতামতগুলো আমার কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে সেগুলো এখন আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। আমি মরহুম ইসরার আহমেদের কাছে কৃতজ্ঞ। এই আয়াত থেকে সবচেয়ে গভীর অন্তর্দৃষ্টি আমি তার কাছ থেকেই পেয়েছি। তিনি ১৯৮৫ সালে এই আয়াত নিয়ে একটি প্রবন্ধ রচনা করেন। ভারত পাকিস্তানের বহু আলেম তার এই প্রবন্ধের প্রশংসা করেন। আমি এখন আপনাদের নিকট তার একটি সারমর্ম তুলে ধরবো। কারণ আমি মনে করি এটি অনেক মূল্যবান। আল্লাহ আজ্জা বলেন, كَيْفَ تَكْفُرُونَ بِاللَّهِ وَكُنتُمْ أَمْوَاتًا – কেমন করে তোমরা আল্লাহর ব্যাপারে কুফরী অবলম্বন করছ? অথচ তোমরা ছিলে মৃত। প্রথম পর্যায় – وَكُنتُمْ أَمْوَاتًا তোমরা মৃত ছিলে। দ্বিতীয় পর্যায় – فَأَحْيَاكُمْ অতঃপর তিনি তোমাদের জীবন দান করেছেন। ৩য় পর্যায় – ثُمَّ يُمِيتُكُمْ তারপর তিনি তোমাদের মৃত্যু দান করবেন; ৪র্থ পর্যায় – ثُمَّ يُحْيِيكُمْ তারপর তিনি তোমাদের আবার জীবিত করবেন। প্রথম পর্যায়টা কী ছিল? তোমরা মৃত ছিলে। আমাদেরকে প্রথম যে বিষয়টি বুঝতে হবে তা হলো – মৃত আর অস্তিত্ব না থাকা একই বিষয় নয়। যেমন, মৃত কাউকে কফিনে রাখা হয়েছে এবং তার জানাজা হচ্ছে – এর মানে এই নয় যে তার কোনো অস্তিত্ব নেই। প্রকৃতপক্ষে, পৃথিবীর যে কোনো ভাষায় মৃত বলতে এমন কাউকে বোঝায় যার পূর্বে জীবন ছিল। সুতরাং এই আয়াতে মনে হয় যেন একটি ইঙ্গিত রয়েছে…(আমরা একটু পর আবার এ বিষয়ে আলোচনা করবো, তার পূর্বে কিছু বিষয় বুঝে নেয়া জরুরি) কুরআন এবং রাসূল (স) এর সুন্নায় – মৃত্যুকে ঘুমের কাছাকাছি হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। মৃত্যু এবং ঘুম একে অন্যের সাথে গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। ঘুমাতে যাওয়ার সময় আমরা কী পড়ি? ‘আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমূতু...

মৃত্যুর পর যে আরেকটি জীবন আছে তার প্রমান কী?

কুরআনের অন্যতম একটি প্রধান থিম, আক্ষরিকভাবে কুরআনের প্রতিটি পৃষ্ঠায় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা মৃত্যুর পরের জীবনের কথা উল্লেখ করেছেন। এটি আমাদের ধর্মের অন্যতম একটি মৌলিক স্তম্ভ। এটি অন্যতম একটি প্রধান বিষয় যা রাসূল (স) কুরাইশদের শিক্ষা দিয়েছিলেন। কারণ কুরাইশরা বিশ্বাস করতো না যে, মৃত্যুর পর আরেকটি জীবন রয়েছে। আর আল্লাহ এই বিষয়টি বিভিন্নভাবে মানুষকে বুঝিয়েছেন। যৌক্তিক প্রমানের মাধ্যমে – আল্লাহ বলেন – মৃত জমিনের দিকে তাকাও যাকে আমি পুনরায় জীবন দান করি। মৃত গাছের দিকে তাকাও, মরার পর সেগুলো আবার জীবন ফিরে পায়। শক্তিশালী সব সৃষ্টির দিকে তাকাও, তোমার নিজের জীবনের দিকে তাকাও। নিশ্চয়ই যিনি তোমাকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন; তিনি তোমাকে পুনরায়ও সৃষ্টি করতে পারবেন। আল্লাহ যে প্রমাণগুলো ব্যবহার করেছেন সেগুলো নৈতিক প্রমান। আল্লাহ বলেন – তোমরা কি মনে করো আমি ধর্মভীরু এবং ধর্মহীনকে অথবা সৎ এবং অসৎ ব্যক্তিকে একই রকম প্রতিদান দিবো? এই পৃথিবীতে কখনো কখনো হাজার হাজার মানুষকে খুন করা ব্যক্তিও পার পেয়ে যায়। এই পৃথিবীতে চরম কোনো পাপিষ্ঠ ব্যক্তিকেও মাঝে মাঝে দেখা যায় উন্নত জীবন যাপন করতে। তারা নিরপরাধ মানুষকে নির্যাতন করে, হত্যা করে। এখন যদি মৃত্যুর পর কোনো জীবন না থাকে, জান্নাত-জাহান্নাম না থাকে, তাহলে জীবনটা তো খুবই অন্যায্য হয়ে পড়ে। ন্যায়ের আশ্রয় গ্রহণ করার তো আর কোনো সুযোগ থাকে না। কিন্তু আল্লাহ বলেছেন – তিনি ন্যায় বিচারক। তিনি সীমাহীন ন্যায়বিচারক। আর তাই বিচার দিবস অবশ্যই সত্য। সেই বিচার দিবসে মানুষকে তার ভালো কাজের জন্য পুরস্কৃত করা হবে; আর হ্যাঁ, তাদের অন্যায় কাজের শাস্তি দেয়া হবে। আবারো বলছি কুরআনে পরকাল বিষয়ে অসংখ্য আয়াত রয়েছে। কিন্তু দিনশেষে আপনাকে এটা বিশ্বাস করতে হবে। আমি আপনাদের কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমান দিতে পারবো না। এমন কোনো ইকুয়েশন দিতে পারবো না যা প্রমান করবে যে মৃত্যুর পর আরেকটি জীবন রয়েছে। কিন্তু...

জান্নাতের সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার

আপনি কি জানেন, জান্নাতের সবচেয়ে চমকপ্রদ বিষয়টি কী হবে? আল্লাহ আমাদের সবাইকে জান্নাতে একত্রিত করবেন ইনশাআল্লাহ! এবং আল্লাহ আমাদের সাথে কথা বলবেন। কল্পনা করুন… সহীহ হাদিস ভাইয়েরা, আমি চাই আপনারা সত্যিকার অর্থেই ব্যাপারটা কল্পনা করুন কোনো হাসি ঠাট্টা নয়। জান্নাতে আল্লাহ্‌ আমাদের সকলকে একত্রিত করবেন এবং আল্লাহ আমাদের সাথে কথা বলবেন আমার ভাই ও বোনেরা, আল্লাহ আপনাদের জিজ্ঞাসা করবেন “তোমরা কি আর কিছু চাও? তোমাদের জন্য আর কী করতে পারি?” কল্পনা করুন, এই ভঙ্গিমায় আল্লাহ আপনার সাথে কথা বলছেন… কল্পনা করুন আল্লাহ আপনাকে ডেকে বলছেন, আমি কি তোমার জন্য আর কিছু করতে পারি? তখন আমরা বলব, “হে আল্লাহ! আপনি আমাদের জাহান্নাম থেকে রক্ষা করেছেন, আমাদের জান্নাতে দাখিল করেছেন, আপনি আমাদের চিরদিনের জন্য জান্নাতে থাকার সুযোগ দিয়েছেন, আপনি আমাদের এতসব ভোগবিলাসের সামগ্রী প্রদান করেছেন হে আল্লাহ! আমাদের আর কিইবা চাওয়ার থাকতে পারে?” তখন আল্লাহ বলবেন, “তোমরা কি সন্তুষ্ট?” আমরা বলব, “হে আল্লাহ! আমরা এতটাই সন্তুষ্ট যে আমাদের আর কিছুই চাওয়ার নেই!” আল্লাহ বলবেন- “যদি তা-ই হয়ে থাকে আজকের দিন থেকে আমি কথা দিচ্ছি যে আজকের দিন থেকে, আমি আর কোনোদিন তোমাদের উপর অসন্তুষ্ট হবো না! (অর্থাৎ আমি চিরদিনের জন্য তোমাদের উপর সন্তুষ্ট হয়ে গেলাম!)”। এটা কল্পনা করুন ভাইয়েরা আমার…কল্পনা করুন, আল্লাহ আপনার উপর আর কক্ষনো রুষ্ট হবেন না! আপনি কি ভাবছেন এখানেই শেষ? ওয়াল্লাহি, এখানেই শেষ নয়! রাসূলুল্লাহ (সা.) সহীহ হাদিসে আমাদের জানিয়েছেন…আল্লাহ আমাদের একত্রিত করবেন আরেকবার এবং বলবেন, “হে আমার বান্দারা! তোমরা কি সুখী? তোমরা কি খুশি? তোমরা কি সন্তুষ্ট?” এবং আমরা উত্তর দিবো…”হে আল্লাহ! আমাদের আর কি চাওয়ার থাকতে পারে?” “হে আল্লাহ! আমরা যা চেয়েছি, আপনি তো আমাদের সবই দিয়েছেন! হে আল্লাহ! আপনি আমাদের জান্নাত দিয়েছেন, আপনি আমাদের সকল ইচ্ছা পূরণ করেছেন। এবং আপনি আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে,...