আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পনের পুরস্কার

খুৎবায় আলোচিত আয়াতটির বঙ্গানুবাদ – “মানুষের মধ্যে কেউ কেউ দ্বিধা-দ্বন্দ্বে জড়িত হয়ে আল্লাহর এবাদত করে। যদি সে কল্যাণ প্রাপ্ত হয়, তবে এবাদতের উপর কায়েম থাকে এবং যদি কোন পরীক্ষায় পড়ে, তবে পূর্বাবস্থায় ফিরে যায়। সে ইহকালে ও পরকালে ক্ষতিগ্রস্ত। এটাই প্রকাশ্য ক্ষতি।” সূরা হাজ্ব, আয়াত –...

ভালো কাজের সংজ্ঞা

ভালো কাজের সংজ্ঞা কে নির্ধারণ করবে? এই পৃথিবীতে দুই ধরনের ভাল কাজ আছে। এটা একটু মনে রাখবেন। দুই ধরনের ভাল কাজ আছে। নৈতিক ভাল কাজ। আমি প্রতিবেশীর প্রতি ভাল। আমি কর্মক্ষেত্রে সৎ। আমি মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার করি। আমি চুরি করি না। আমি মানুষকে ঠকাই না। এগুলো হচ্ছে নৈতিক ভাল কাজ। ঠিক আছে? এরপর আছে হলো ধর্মীয় ভাল কাজ। আমি হজ্জে যাই। আমি যাকাত দেই। আমি দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি। আমি রামাদানে রোজা রাখি। এগুলো নৈতিক অর্থে ভালো কাজ না, এগুলো ধর্মীয় অর্থে ভালো কাজ। অনেক সময় মুসলিমরা এবং নন-মুসলিমরা, বিশেষ করে মুসলিমরা, আমরা এই দুটো জিনিসের মধ্যে পার্থক্য করে ফেলি। মুসলিম বিশ্বে আপনি এমন মানুষ খুঁজে পাবেন যারা নৈতিকভাবে ভালো। তারা তাদের পরিবারের সাথে ভালো। তাদের সন্তানদের যত্ন নেয়। তারা তাদের বাড়িতে দায়িত্বশীল। প্রতিবেশীদের সঙ্গে ভালো। কর্মক্ষেত্রে তারা সৎ। ভাল মানুষ। কিন্তু তাদের মধ্যে ধর্ম বলতে কিছু নেই। “ভাল হওয়ার জন্য আমার ধর্ম লাগে না”, তারা বলে। অপর মেরুতে আছে এমন মানুষ যারা নামাজ পড়ে, হজ্জে যায়। যাকাত দেয়। লম্বা দাড়ি আছে। খুব ধার্মিক পোশাক পরে। কিন্তু তারপরও তারা তাদের পরিবারের সাথে খারাপ ব্যবহার করে। ব্যবসায় মানুষকে ধোঁকা দেয়। অত্যন্ত অনৈতিক মানুষ। তো আমরা ভাল হওয়ার দুইটি মাত্রাকে আলাদা করে ফেলেছি। যা হলো নৈতিকতা এবং ধার্মিকতা। আল্লাহ কুরআনে এই দুটিকে একসঙ্গে করে ফেলেন একটি আয়াতে, যেটাকে বলা হয় আয়াতুল বির। সদগুণের আয়াত। ভাল হওয়ার অর্থ কি ? আপনি যদি এই আয়াতটি নিয়ে পড়েন। তাহলে দেখবেন এটা দুটি জিনিসের সমাহার। এটা হল একটি সমন্বয় নৈতিক নীতির, যেমন কথা রাখা, ধৈর্যশীল হওয়া ইত্যাদি এবং ধর্মীয় নীতির, যেমন নামাজ কায়েম করা, যাকাত দেওয়া। এটা এক জায়গায় এই দুটো জিনিসের সমন্বয়। তো আপনি যদি মনে করেন ভাল হওয়ার সংজ্ঞা আপনি নিজে...

আপনি যখন কুরআন পড়বেন

“আপনি যখন কুরআন পড়বেন দেখবেন যে এটা শুধু নিয়ম নীতির বই নয়, এটা শুধু এমন নয় যে এটা কর, যদি এটা না কর তাহলে এটা হবে, অথবা ওটা হবে। আসলে কুরআনে অল্প কিছু নিয়ম-কানুন আছে, অধিকাংশ অংশ জুড়েই আছে এমন একটি সম্পর্কের কথা যাতে আছে বিশ্বস্ততা, কৃতজ্ঞতা, ভালবাসা, বন্ধুত্ব, স্মরণ করানো, চাওয়া, আসলেই এটি একটি অসাধারণ সম্পর্ক। এই রব আমাকে এমন একজন আবদ হিসাবে চান, যে তাকে ভালবাসবে, যে তাকে বন্ধু ভাববে, সব সময় তাঁর সাথে কথা বলবে, তাঁর কথা স্মরণ করবে। উনি বলছেন ‘فَاذْكُرُونِي أَذْكُرْكُمْ’ ‘ আমাকে স্মরণ কর আমিও তোমাকে স্মরণ করবো’। এভাবে কে কথা বলতে পারে? মনে হচ্ছে না যে একজন রব কথা বলছেন? তাই না? অর্থাৎ রব হিসাবে আল্লাহ নিজেকে কুরআনে যেভাবে চেনাচ্ছেন সেটা আপনার ধারনাটাকেই ভেঙ্গে দিচ্ছে। উনি চান আপনার বন্ধু হতে এবং চান আপনিও উনার বন্ধু হবেন। কিন্তু প্রথমেই বুঝতে হবে উনি আপনার ‘রব’, তারপরে ভাবতে হবে যে উনি আপনার বন্ধু। তিনি আপনাকে উপহার দিতে চান, কিন্তু উনি উপহার দেবার পূর্বে চান যে আপনি এটা বুঝুন উনি আপনার রব, এবং আপনি তাঁর বান্দা। তিনি চান আপনাকে দিতে, তিনি আপানকে তাঁর ভালবাসা দেখাতে চান, তিনি আপনাকে তাঁর দয়া দেখাতে চান, তাঁর ক্ষমা দেখাতে চান, আপনাকে এসব কিছু দিতে চান, তিনি আপনাকে সঠিক পথ দেখাতে চান, তিনি আপনাকে প্রজ্ঞা দিতে চান, তিনি আপনাকে জ্ঞান দিতে চান, তিনি আপনাকে শেখাতে চান, চান আপনার শিক্ষক হতে। এই যে আপনার সাথে এত সম্পর্ক এটা শুধু একটা সম্পর্ক নয়, অনেকগুলো। আর এই সব কিছুর উপরে তিনি ‘রব’, আপনি তার বান্দা। এর অর্থ হল এই সম্পর্কে যাই ঘটুক না আপনার বিনম্রতা, আনুগত্য কখনই কমতে পারবে না। কারণ দাসের ধারনাটাই তো এরকম; অন্য যেকোন কাজের চেয়ে সবচেয়ে বেশি আনুগত্য দাস ব্যাপারটির...

একজন বিশ্বাসীর রাত্রিযাপন (২য় পর্ব)

আয়েশা (রা) আমাদের কে রাসূল (স) এর এক রাতের নামাজ সম্পর্কে বলেছেন। তিনি বলেন – রাসূল (স) তাঁর পাশে শুয়ে ছিলেন, তারপর মাঝ রাতে তিনি উঠে গেলেন। হজরত আয়েশা জিজ্ঞেস করেন, আপনি কোথায় যাচ্ছেন? রাসূল (স) বলেন – আমি আমার মালিকের ইবাদাত করতে যাচ্ছি। আয়েশা (রা) বলেন, আল্লাহর শপথ! হে আল্লাহর রাসূল (স), আপনি আমার পাশে শুয়ে থাকেন এটা আমি খুবই পছন্দ করি, কিন্তু আপনার রবের ইবাদাত করতে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমি আপনাকে আটকে রাখবো না। তারপর আয়েশা (রা) বলেন, রাসূল (স) উঠলেন, অতঃপর ওযু করলেন। তারপর তিনি নামাজে দাঁড়ালেন। যখন সেজদায় যেতেন তিনি আয়েশা (রা) এর পায়ে মৃদু আঘাত করতেন, আর আয়েশা তার পা গুটিয়ে নিতেন। জানেন, কেন তিনি আয়েশা (রা) এর পায়ে মৃদু আঘাত করতেন? আর কেনই বা আয়েশাকে তার পা গুটিয়ে নিতে হতো? কারণ আয়েশা (রা) এর ঘরটা এমনি ছোট ছিল। কোনো কোনো স্কলার বলেন এটা ছিল ৪ ফিট বাই ৫ ফিট। এটাই ছিল আয়েশা (রা) এর ঘর। এমনি ছিল রাসূল (স) এর আধ্যাত্মিক প্রকৃতি। রাসূল (স) এতো বেশি সময় ধরে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তেন যে তাঁর পা ফুলে যেত। যখন রাসূল (স) কে জিজ্ঞেস করা হলো যে কেন আপনি এতো কঠোর পরিশ্রম করেন? কারণ আপনার সব পাপ তো ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। আল্লাহ আজ্জা ওয়া জ্বাল রাসূল (স) এর সকল পাপ ক্ষমা করে দিয়েছেন। জবাবে রাসূল (স) বলেন, “আমি কি আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হবো না? ” এই শিক্ষাটাই রাসূল (স) তার সাহাবীদেরকেও দিয়েছিলেন। রাসূল (স) মদিনার রাস্তায় রাত্রি বেলা ভ্রমণ করতেন এবং বর্ণিত আছে যে, তিনি আবু বকর (রা) এর ঘরে যেতেন আর শুনতে পেতেন যে আবু বকর (রা) তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ছেন। কিন্তু আবু বকর (রা) খুব নিচু আওয়াজে কুরআন তিলাওয়াত করতেন। তারপর রাসূলুল্লাহ (স) উমর (রা)...