পোশাকের ভাষা – উস্তাদ মাহফুজুর রহমান

এ ঘটনাটি অনেক দিন আগে বাংলাদেশের একটি ম্যাগাজিনে পড়ে ছিলাম। জাপানী একজন তুরুণী (বর্তমান নাম হাওলা বিনতে লাকাতা) তিনি ফ্রান্সের পেরিসের একটি বিশ্বব্যিাদালয়ে পড়তেন।তখন তরুণীর বয়স বিশ বা বাইশ বছর। তিনি পোশাক হিসেবে তখন প্রায় সময় হাফ স্কার্ট পরতেন।তিনি রাস্তা-ঘাটে টিজিং এর শিকার হতেন। দেখতেন যুকবরা তার দিকে যৌন কামনার দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। কেউ কেউ অশ্লীল বাক্যও কখনো কখনো ছুডে মারে। একদিন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় আপাদমস্তক কালো কাপড়ে ঢাকা এক সাউদি তুরুণীকে দেখতে পেলেন । এই প্রথম তিনি তার জীবনে কাউকে বোরকা পরিহিত অবস্থায় দেখলেন।তিনি সাউদি তরুণীকে জিজ্ঞাসা করলেন। আপনি এভাবে নিজেকে ঢেকে রেখেছেন কেন? সাউদি তরুণী বললেন, আমি আমার শরীরকে এভাবে ঢেকে রেখেছি যাতে কোন পুরুষ মানুষ আমার শারীরিক সৌন্দর্য দেখতে না পায়। কারণ আমার শরীলের সৌন্দর্য দেখার অধিকার একমাত্র আমার স্বামীর; অন্য কারো নয়।এটা আমার ধর্মের শিক্ষা, আল্লাহর আদেশ। তখন তিনি সাউদি তরুণীকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার ধর্ম কি? তিনি উত্তরে বললেন, ইসলাম। আমার ধর্ম ইসলাম মেয়েদেরকে তাদের শরীর পর পুরুষের নজর থেকে ঢেকে রাখতে বলে, আর পুরুষদেরকে মেয়েদের দিকে দৃষ্টি দিতে নিষেধ করে। এ ঘটনার পর জাপানী তরুণী তার বাসায় গিয়ে ভাবতে থাকলেন।তিনি ভাবনা চিন্তার পর এ সিদ্ধান্তে উপণিত হলেন যে, এই সাউদি মহিলার পোশাক যুবকদের বলে দিচ্ছে তোমাদের কারো আমার দিকে তাকাবার ও দৃষ্টি দেবার অধিকার নেই। আর আমার এই হাফ স্কাট পুরুষদেরকে বলে দিচ্ছে আমার শরীরিক সৌন্দর্য দেখার অধিকার তাদের প্রত্যেকেরই আছে। আমার পোশাকের কারণেই ছেলেরা আমার দিকে লুলোপ দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। সুতরাং পুরুষ যখন আমার দিকে কামনার দৃষ্টিতে তাকায়, তারা যখন আমাকে দেখে টিজিং করে, অশালীন অশ্লীল বাক্য উচ্ছারণ করে, তখন আমি বিব্রত বোধ করি কেন? তাদের এ রূপ আচরণের জন্য তো আমার পোশাকই দায়ী। এ ঘটনার পর ঐ তরুণী ইসলাম নিয়ে লেখাপড়া করেন; অবশেষে...

“আল্লাহ” নামের পরিচিতি – ১ম পর্ব

আমরা আল্লাহর কয়েকটি নাম এবং গুণাবলী নিয়ে আমাদের আলোচনা আবার শুরু করছি। অবশ্যই আমরা আমাদের সৃষ্টিকর্তার প্রধান এবং সর্বাধিক পরিচিত নাম দিয়ে শুরু করবো আর সে নামটি হলো ‘আল্লাহ।’ আমাদের মালিক এবং সৃষ্টিকর্তার সবচেয়ে পরিচিত এবং কমন নাম হলো আল্লাহ। কুরআন মাজীদে এই নামটি অন্যান্য নামের তুলনায় অনেক বেশি সংখ্যক বার ব্যবহৃত হয়েছে। কুরআন মাজীদে এই নামটি প্রায় ৩ হাজার পাঁচ শত বার উল্লেখ করা হয়েছে। কুরআন শুরু করা হয়েছে এই নামটি দিয়ে। …. বিসমিল্লাহির রাহ মানির রাহিম। আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। কুরআনের সমাপ্তিও হয়েছে এই নামটি দিয়ে। … কুল আঊযু বিরাব্বিন নাসি মালিকিন নাসি ইলাহীন নাস। এই নামটি পৃথিবীর প্রাচীনতম সভ্যতাগুলোতেও পাওয়া যায়। ব্যাবিলনীয় সভ্যতার প্রাচীনতম যে পাণ্ডুলিপি পাওয়া যায় তাতে এমন এক ঈশ্বরের কথা উল্লেখ আছে যার উচ্চারণ “আল্লাহ” শব্দের উচ্চারণের কাছাকাছি। এই নামটি আমরা ওল্ড এবং নিউ টেষ্টামেন্টেও পাই ‘ইলো এবং ইলোহিম’ হিসেবে। তাই এই নামটি প্রাচীন সভ্যতার মানুষদের কাছেও পরিচিত ছিল। কুরাইশদের নিকটও এই নামটি পরিচিত ছিল। বিস্ময়কর একটা ব্যাপার হলো, প্রাচীন ব্যাবিলন এবং কুরাইশদের নিকট “আল্লাহ” ছিলেন সকল ঈশ্বরের ঈশ্বর। তিনি ছিলেন প্রধান ঈশ্বর। তারা কখনো আল্লাহর জন্য কোনো মূর্তি তৈরী করেনি। কুরাইশরা আল্লাহকে চিনতো; তারা আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছিল। وَلَئِن سَأَلْتَهُم مَّنْ خَلَقَهُمْ لَيَقُولُنَّ اللَّهُ – (৪৩: ৮৭) আপনি যদি কুরাইশদের জিজ্ঞেস করেন কে তোমাদের সৃষ্টি করেছে, তারা বলবে আল্লাহ। সুতরাং তারা আল্লাহ নামটি সম্পর্কে জানতো। কখনো কখনো তারা আল্লাহর উপাসনাও করতো। কিন্তু তারা আল্লাহকে অনেক বেশি পবিত্র মনে করতো। মোটকথা আল্লাহ নামটি তাদের নিকট জানা ছিল। এখন “আল্লাহ” শব্দটির অর্থ কী? এ সম্পর্কে অনেক অনেক মতামত রয়েছে, কিন্তু সময় স্বল্পতার দরুন সবগুলো মতামত আলোচনা করা সম্ভব নয়। একটি দলের মতে, আল্লাহ নামটি কোথাও থেকে উদ্গত (non-derived) হয়নি, এটি একটি প্রপার নাউন...

আমাদের জীবনের কয়েকটি পর্যায় (৩য় পর্ব)

আল্লাহ বলেন – كَمَثَلِ غَيْثٍ أَعْجَبَ الْكُفَّارَ نَبَاتُهُ -দুনিয়ার উপমা হল বৃষ্টির মত…. আরবিতে বৃষ্টির জন্য যে শব্দটি ব্যবহৃত হয় তা হলো – ‘মাতার।’ কিন্তু ‘গাইস’ শব্দের অর্থ হলো – পরিমানমত বৃষ্টি, এতো বেশি নয় যার ফলে জমিনে বন্যা তৈরি হয় আবার এতো কমও নয় যার কারণে জমিনে গাছ জন্মাবে না। একেবারে পরিমানমত বৃষ্টি। আর এই ধরণের বৃষ্টিকে বলা হয় ‘গাইস।’ এই জন্য যখন আমরা আল্লাহর কাছে বৃষ্টির জন্য দোয়া করি আমরা ‘সালাতুল ইস্তিগাসা’ আদায় করি। কারণ আমরা যেমন তেমন বৃষ্টির জন্য দোআ করছি না, আমরা দোয়া করছি ‘গাইস’ এর জন্য। আমরা পরিমানমত বৃষ্টির জন্য দোয়া করছি। কারণ খারাপ বৃষ্টির কারণে মানুষ মারা যেতে পারে, বন্যা হয়ে যেতে পারে, এই বন্যা আপনাকে মেরে ফেলতে পারে। আল্লাহ আকাশ থেকে পাথরের বৃষ্টিও বর্ষণ করতে পারেন। তাই আপনি ‘গাইস’ চাইবেন, যে বৃষ্টি প্রাণের সঞ্চার করে। তো, আল্লাহ বলছেন, দুনিয়ায় যেসব কিছুর পেছনে তোমরা ছুটে চলো তার উপমা হলো – পরিমানমত বৃষ্টির মত, أَعْجَبَ الْكُفَّارَ نَبَاتُهُ – যে কৃষক জমিনে বীজ বপন করেছে, সে এই বৃষ্টি দেখে দারুণ খুশি, কারণে এই বৃষ্টির ফলে তার জমিনে ফসল ফলবে। এই উপমায় একটি সুন্দর চিত্র অঙ্কন করা হয়েছে। কৃষক এর জন্য আরবিতে যে শব্দটি ব্যবহার করা হয় তা হলো – ‘কুফ্ফার।’ এখন আমরা সাধারণভাবে ‘কাফের’ শব্দের একটা অর্থ জানি। ‘কাফের’ শব্দের অর্থ কী? অবিশ্বাসী। কিন্তু এই আয়াতে কাফের শব্দের অর্থ এটা নয়, সূরা হাদীদের এই আয়াতে ‘কুফ্ফার’ শব্দের অর্থ হলো- যে জমিনে বীজ লুকিয়ে রাখে। এটাই কুফ্ফার শব্দের শাব্দিক অর্থ। একজন অবিশ্বাসীকে এই জন্য কাফের বলা হয় কারণ সে সত্য লুকিয়ে রাখে। এই জন্যই তাকে কাফের বলা হয়। যাইহোক, একজন কৃষককে সারা বছর ধরে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। সর্ব প্রথম কোন কাজটা তাদের করতে হয়? বীজ...

আল্লাহর প্রতি পরিপূর্ণ আস্থা রাখুন।

আমার মুসলিম ভাই ও বোনেরা, আমরা মুসলিম ভূমিতে এমন নৃসংসতা প্রত্যক্ষ করেছি যার মতো উদাহরণ বহুদিন ধরে আমরা দেখিনি। আমরা দেখেছি একজন ব্যক্তির ক্ষমতা এবং আধিপত্যের লালসার কারণে যেরকম নৃসংসতা সে ঘটিয়েছে আলেপ্পোতে, যুগ-যুগ ধরে যার দৃষ্টান্ত আমরা দেখিনি সুবহানাল্লাহ। যেভাবে সে তার জনগণকে হত্যা করেছে, যেভাবে সে রাজপথে রক্ত ঝরিয়েছে, যেভাবে সে ইসলামের শত্রুদের আসার সুযোগ করে দিয়েছে, আল্লাহর শপথ, এটা আমাকে মনে করিয়ে দেয় ইবনে তাইমিয়া যা বলেছেন। তিনি বলেছেন,…..। তিনি বলেছেন, নুসাইরিয়ারা কুফরীর দিক দিয়ে ইহুদি এবং নাসারাদের চেয়েও বেশী খারাপ। প্রকৃতই, আমি ইহুদীদেরকে দেখেছি ফিলিস্তিনে মুসলিমদের উপর অত্যাচার করতে, আমি পড়েছি কিভাবে ক্রুসেডাররা ফিলিস্তিনে মুসলিমদেরকে হত্যা করেছে। কিন্তু আমি এমন নৃসংসতা আর দেখিনি যেভাবে বাসার তার জনগণকে হত্যা করেছে। আমি দেখিনে এরকম দৃষ্টান্ত যেভাবে সে অত্যাচার করেছে, সুবহানা খলিকুল আজীম। আল্লাহর শপথ, সে তাদের চেয়েও কুফরীতে বেশী এগিয়ে। তো, প্রশ্ন হলো, আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তাআলা) কেন অপেক্ষা করছেন ? অথবা আরেকটি প্রশ্ন মনে আসতে পারে, আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তাআলা) কেন কিছু করছেন না ? আর এমনও হতে পারে যে আমাদের মনের ভিতরে রব্বুল আলামিন সম্পর্কে খারাপ ধারণা চলে আসে। হয়তো আপনার পরিবার সেই নৃশংসতার কারণে মারা গিয়েছে, অথবা আপনি হতে পারেন শরণার্থী যাকে নিজ দেশ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে, কিংবা আপনার পরিবার থেকে দূরে আছেন। এটা সম্ভব এবং আপতদৃষ্টিতে যুক্তিসঙ্গত যে, আল্লহ সম্পর্কে আপনার মনে খারাপ ধারণা তৈরী হতে পারে। কিন্তু আমি আপনাদেরকে বলতে চাই, প্রিয় ভাইয়েরা, কখনোই আল্লাহ সম্পর্কে খারাপ ধারণা করবেন না। আল্লাহর প্রত্যেকটি কাজের পেছনে একটি কারণ এবং হিকমাহ নিহিত রয়েছে। তাঁর প্রত্যেকটি কাজের পেছেনই বিচক্ষণতা রয়েছে, সর্বনিম্ন বিচক্ষণতা হলো আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা চান বেশী বেশী মানুষকে শহীদ হিসেবে গ্রহণ করতে। আপনারা কি লক্ষ্য করেননি, যখন রাসূল (সঃ) তাঁর সাহাবাদের কাছে...