আমাদের ধর্ম কি অন্ধ অনুসরণ করতে বলে?

একটা বিষয় এখানে গুরুত্বপূর্ণ। আপনারা হয়তো শুনেছেন – কুরআন বলেছে – মানুষের মাঝে এমন অনেকে রয়েছে যারা নবীদের প্রতি বিশ্বাস আনেনি কারণ তারা বলেছে – আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের অনুসরণ করবো। আপনাদের মনে আছে সেটা? আমরা নবীদের মেনে নিব না কারণ আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের অনুসরণ করি। তাই আমাদের কোন চিন্তা ভাবনা করার দরকার নেই। আমাদের পূর্বপুরুষরাই সব চিন্তা ভাবনা করে ফেলেছে। তারা যা-ই করেছে, তারা ছিলেন আমাদের চেয়ে বয়স্ক, আমাদের চেয়ে বিজ্ঞ তাই তারা যা করেছে তা অবশ্যই সঠিক ছিল। তাই আমরা কেন তাদের কাজ কর্মকে প্রশ্নবিদ্ধ করবো? এটাই কি তাদের চিন্তা পদ্ধতি ছিল না? এখন আপনি যদি এমন ভাবেন যে, আমার পিতা মাতা কী করতো, আমার দাদা-দাদী কী করতো বা আমার প্রপিতামহ কী করতো তাহলে এটা তো খুবি অসম্মানজনক। এটা অসম্মানজনক। তাদের কার্যকলাপকে প্রশ্নবিদ্ধ করা উচিত নয়। আমার দায়িত্ব হলো শুধু অনুস্মরণ করা। কিন্তু আপনি যদি ইব্রাহিম (আ) এর প্রতি বিশ্বাস করেন তাহলে আপনি কখনো এমন হতে পারেন না। কারণ তাঁর গোটা জিন্দেগী ধরে তিনি শুধু প্রশ্ন করার কারণেই ঝামেলায় পড়েছেন। তিনি কখনোই প্রশ্ন করা বন্ধ করেন নি। তিনি কি তাঁর পিতাকে প্রশ্ন করেছিলেন? হ্যাঁ। তিনি কি রাজাকে প্রশ্ন করেছিলেন? “ইব্রাহীম যখন বললেন, আমার পালনকর্তা হলেন তিনি, যিনি জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান। সে বলল, আমি জীবন দান করি এবং মৃত্যু ঘটিয়ে থাকি। ইব্রাহীম বললেন, নিশ্চয়ই তিনি সুর্যকে উদিত করেন পূর্ব দিক থেকে এবার তুমি তাকে পশ্চিম দিক থেকে উদিত কর।” তিনি রাজাকে প্রশ্ন করেছিলেন, তিনি তাঁর পিতাকে প্রশ্ন করেছিলেন, তিনি তাঁর সমাজকে প্রশ্ন করেছিলেন। তিনি এমনসব প্রশ্ন করাতে বিপদে জড়িয়ে পড়েন। ইব্রাহিম (আ) কোন জবাব গ্রহণ করেননি যতক্ষণ পর্যন্ত না জবাবের স্বপক্ষে প্রমাণ পেশ করা হয়েছে, যতক্ষণ না কারণ জানানো হয়েছে, যতক্ষণ না এটা যুক্তিযুক্ত মনে হয়েছে।...

প্রাইভেট সেক্টর এবং একাডেমিয়ার গুরুত্ব

[বক্তব্যটি আমেরিকার প্রেক্ষাপটে দেয়া হয়েছে] আপনার দৈনন্দিন জীবনে সরকারের প্রভাব কতটুকু? আমি জানি, আপনি সরকারকে প্রতি বছর ট্যাক্স দিয়ে যাচ্ছেন। এ ব্যাপারটি আপাতত একপাশে রেখে যদি আপনার প্রাত্যাহিক জীবনের কথা ভাবেন, তাহলে আপনার উপর সরকারের প্রভাব কতটুকু? উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, এই দেশে মানুষের মূল ভাবনা হলো ফ্যাশন সচেতনতা, জীবনের সাফল্য-ব্যর্থতা, মন-মানসিকতা ইত্যাদি। আপনারা জানেন, এসবের পেছনে সরকারের কোনো ভূমিকা নেই। প্রাইভেট সেক্টরের প্রভাবেই এসব বিষয়ে মানুষ প্রভাবিত হচ্ছে। এগুলোর পেছনে আছে বিনোদন জগত, একাডেমিয়া এবং বড় বড় করপোরেশনগুলো, যারা আমাদের কাছে তাদের পণ্য বিক্রি করছে, বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। এমনকি মেডিক্যাল রিসার্চসহ বেসরকারী বিভিন্ন সংস্থা কর্তৃক অর্থায়নকৃত সকল ধরনের গবেষণা প্রকল্প ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আমাদের জীবনকে প্রভাবিত করছে। তাহলে বুঝা যাচ্ছে, আপনার দৈনন্দিন জীবনকে যেসব বিষয় প্রভাবিত করে তার বেশিরভাগই সরকারী নয়, বেসরকারী খাতের উদ্যোগ। এই ব্যাপারটি বুঝতে পারলে আমাদের এখন কী নিয়ে চিন্তা করার কথা? আমরা যদি সত্যিই এই সমাজকে আমাদের আদর্শে পরিচালনা করতে চাই, তাহলে আমাদেরকে কীসের নিয়ন্ত্রণ নিতে হবে? বেসরকারী খাতের। এটি একটি অবাধ ক্ষেত্র। অথচ মুসলমানরা এখনো এই সেক্টরে কাজ শুরুই করতে পারেনি। মিডিয়াতে কয়জন মুসলমান আছে? বর্তমানে মিডিয়া সরকারের চেয়েও বেশি শক্তিশালী। নির্বাচনের গতিপ্রকৃতি পাল্টে দিতে পারে মিডিয়া। মিডিয়া প্রেসিডেন্টকে অভিশংসনের মুখে পর্যন্ত ঠেলে দিতে পারে। মিডিয়া জনমানসে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। ‘ওমাবা একজন মুসলিম’ – এ ধরনের চটকদার ও বিপজ্জনক গুজব মিডিয়াই ছড়াতে পারে পারে। এসব করেও তারা পার পেয়ে যায়। কারণ, মিডিয়া অত্যন্ত শক্তিশালী। তারপর একাডেমিয়ার কথা ধরুন। এই সমাজের যারা নেতা, তাদের চিন্তাভাবনা ও দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে দেয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। একাডেমিয়া জগতে কয়জন মুসলমান আছে? কয়জন মুসলিম নৃবিজ্ঞানী, রাজনীতি বিজ্ঞানী কিংবা ইতিহাসবিদ রয়েছে? এসব ক্ষেত্রে আমাদের পদচারণা নেই বললেই চলে। আমরা এ দেশে আসছি এবং ভাবছি, ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হওয়াই বুঝি জীবনের সফলতা। তা...

একজন বিশ্বাসীর রাত্রিযাপন (১ম পর্ব)

মুসলিম অমুসলিম নির্বিশেষে সবার জন্য রাতের সময়টা স্পেশাল। একটা বিষয় মনোবিজ্ঞানীরা প্রায় বলে থাকেন – রাতের সময়টা হলো আধ্যাত্মিক সময়। এই সময়টাতে মানুষ তার নিজের মনের অনেক কিছু শেয়ার করতে চায়। তারা অনেক বেশি আবেগপ্রবণ থাকে। ইসলাম কী করে, ইসলাম এই সময়টার সুযোগ গ্রহণ করতে বলে। অন্যরা যখন বিভিন্ন পাপ কর্ম করে এই সময়টা কাটায়, বিশ্বাসীরা তখন এই আধ্যাত্মিক, এই আবেগময় সময়টা তাদের রবের উদ্দেশ্যে নিবেদিত করে। স্কলাররা প্রায় বলে থাকেন, রাতের কাজ একজন ব্যক্তির ভালোবাসার সাক্ষ্য দেয়। সুতরাং, মানুষ যে বিষয়টা বেশি ভালোবাসে, সাধারণত সে বিষয়টা রাতের জন্য উৎসর্গ করে। যাদের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হলো, মৌজ মাস্তি করা, যতবেশি সম্ভব আনন্দ লাভ করা, তারা তাদের রাতের সময়টা এই লক্ষ্য অর্জনে ব্যয় করে। অন্যদিকে, যদি একজন ব্যক্তির একমাত্র লক্ষ্য হয় আখেরাত এবং আল্লাহর জন্য ভালোবাসা, তাহলে তিনি তার রাতের সময়টা এই আখেরাত পাওয়ার উদ্দেশ্যেই ব্যয় করবেন। এবং তার রাতের সময়টা আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করবেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, وَالَّذِينَ آمَنُوا أَشَدُّ حُبًّا لِّلَّهِ ۗ – “কিন্তু যারা মু’মিন আল্লাহর সঙ্গে তাদের ভালবাসা প্রগাঢ়।” ইমাম হাসান আল বসরী (র)…. আমি প্রায়শ ইমাম হাসান আল বসরী (র) এর উদৃতি দিয়ে থাকি। কারণ তিনি ইসলামের দ্বিতীয় প্রজন্মের মানুষ, একজন তাবেয়ী। তিনি আমাদের আধ্যাত্মিক দিকের উপর বেশ গুরুত্বারোপ করেছেন। আমি মনে করি, তাঁর কথাগুলো যদি আমাদের সময়ে আমরা পালন করি, তাহলে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারবো। তো, এই মহান ইমাম হাসান আল বসরী (র) কে কিছু মানুষ জিজ্ঞেস করেন – ” কেন আমরা ক্বিয়ামুল লাইল তথা তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতে পারি না? তারা আরো বলেন – ” আমরা রাতে নামাজ পড়তে উঠার জন্য অনেক চেষ্টা করি, কিন্তু আমাদের জন্য এটা অনেক কঠিন মনে হয়।” তখন তিনি জবাবে বলেন – ” তোমাদের পাপের কারণে এবং...

দুঃখ শোকে হতাশ হয়ে পড়বেন না ; আল্লাহ আপনার কষ্টের কথা জানেন

ই পৃথিবীতে আপনি কখনই পরিপূর্ণ সুখী হতে পারবেন না। আল্লাহ সুব হানাহু ওয়া তায়ালা আপনাকে যত কিছুই দান করুক না কেন? আপনি কখনই সত্যিকার অর্থে পরিতৃপ্ত হবেন না। এই দুনিয়াকে এমনভাবে সাজানো হয়েছে যে এটা আপনার হৃদয়কে ভেঙ্গে চুরমার করে দিবে। এটাকে নকশা করা হয়েছে এভাবেই। আপনি যদি দুনিয়ায় সুখী হওয়ার প্রত্যাশায় থাকেন, আপনি আসলে ভুল জায়গায় আছেন। আমার প্রিয় ভাইয়েরা, কিভাবে নিজেকে মূল্যহীন ভাবতে পারেন? আমার প্রিয় বোনেরা, কিভাবে নিজেকে মূল্যহীন ভাবতে পারেন? আপনি তো লাত, ওজ্জার দাস নন। অথবা ঈসা (আঃ), কৃষ্ণ বা গণেশ এর দাস নন। আপনি তো ফ্যাশন বা অর্থের দাস নন। অথবা খ্যাতি, সৌন্দর্য, ক্ষমতা বা পদবির দাস নন। আপনি আল্লাহর দাস, আল্লাহর গোলাম। বিলিয়ন বিলিয়ন মানুষের মাঝে আল্লাহ আপনাকে পছন্দ করেছেন। আল্লাহ আপনাকে পছন্দ করেছেন আর ইসলামের মাধ্যমে মহিমান্বিত করেছেন। দুঃখ-বেদনা একমাত্র তখনি নেতিবাচক হয়, যদি এটা আপনার এবং আল্লাহ সুব হা নাহু ওয়া তায়ালার মাঝে বাধার দেয়াল তৈরি করে। আর দুঃখ-বেদনা তখন ইতিবাচক হয়ে উঠে, একটি অনুপ্রেরণা হয়ে উঠে যখন এটি আপনাকে আল্লাহ সুব হানাহু ওয়া তায়ালার নিকটবর্তী করে তোলে। ”ও আমার প্রিয় বান্দাহ! তোমার প্রভুর নিকট ফিরে আস।” ও আমার প্রিয় দাস! এটি তোমার জন্য একটি স্মরণিকা এজন্য যে আমি তোমাকে আমার নিকট ফিরিয়ে আনতে চাই। ‘’তাদের উপর কোন ভয় নেই আর তারা দুঃখ ভারাক্রান্তও হবে না।” এখনো ঘটেনি এমন কিছুতে মানসিকভাবে আতঙ্ক গ্রস্ত হয়ে পড়বেন না, এটা হল ভয়। আবার ঘটে যাওয়া কোন দুর্ঘটনায় মানসিকভাবে ভেঙ্গেও পড়বেন না। সবকিছুই আল্লাহর পূর্বনির্ধারিত। মুসলমানদের জন্য দ্বীনের যে বিষয়টি মেনে নেয়া সবচেয়ে কঠিন – আমাদের দ্বীনের ৬ষ্ঠ অনুচ্ছেদ – তা হল ”আল্লাহর কদর”। আমরা এটা স্বীকার করতে চাই না। আমরা আল্লাহর ক্ষমতার কথা ভুলে যাই। আমরা আল্লাহর উপস্থিতির কথা ভুলে যাই। আমরা ভুলে...