আমাকে বলুন সর্বনিম্ন কতটুকু করতে হবে

রাসূলুল্লাহ (স) এর নবুয়তী জিন্দেগীর তেইশ বছরে যখনই কেউ ইসলামে প্রবেশ করেছে তার জন্য শুধু সাধারণ মুসলিম হিসেবে বসে থাকার সুযোগ ছিল না। তাকে ইসলামের মিশনকে তার নিজের জীবনের মিশন হিসেবে গ্রহণ করে নিতে হয়েছিল। তুমি এই মিশনে যোগ দিয়েছ। এই মিশন সফল হউক বা ব্যর্থ হউক তাতে কিছু যায় আসে না। কিন্তু তোমাকে এই মিশনের জন্য ত্যাগ স্বীকার করে যেতে হবে। তোমাকে এই মিশনের জন্য জীবনও দেয়া লাগতে পারে। তুমি এই উদ্দেশ্যে অবদান রেখেছ, মারা যাচ্ছ। যতদিন তুমি অবদান রেখে যাবে ততদিন তোমার জীবনের মূল্য আছে। এই উদ্দেশ্যে কুরবানী করার ক্ষেত্রে তুমি কখনো পিছপা হওনা। কারণ তুমি এটাকে কুরবানী হিসেবে দেখো না, তুমি এটাকে দেখো – إِنْ أَحْسَنتُمْ أَحْسَنتُمْ لِأَنفُسِكُمْ – “তোমরা ভাল কাজ করলে নিজেদের কল্যাণের জন্যই তা করবে।” (১৭:৭) এখন মাইন্ডসেটটি বোঝার চেষ্টা করুন। একজন সাধারণ মুসলিম এবং আল্লাহর পথে প্রচেষ্টারত সংগ্রামী ব্যক্তির মনোভঙ্গীর মাঝে বিশাল পার্থক্য রয়েছে। আমি এখন এই ধরণের লোকদের ‘সংগ্রামী’ বলছি কিন্তু আসলে এদের মু’মিন বলা উচিত। একজন মুসলিম উদ্বিগ্ন থাকে ‘আমাকে সর্বনিম্ন কতটুকু করতে হবে, তা নিয়ে। ”আমি কি এটা খেতে পারবো? এটা কি হালাল? কত ওয়াক্ত নামাজ আমাকে আদায় করতে হবে? ৫ ওয়াক্ত, ঠিক? তাহাজ্জুদ পড়া কি বাধ্যতামূলক? ঠিকাছে, আমি তাহলে পাঁচ ওয়াক্তই পড়বো। আমাকে কি সব নফল পালন করতে হবে? আচ্ছা ঠিকাছে আমাকে শুধু মিনিমামটুকু দিন। আমি কি অমুক অমুক কাজগুলো করতে পারবো? আমাকে জাস্ট বলুন, কোনটা হালাল কোনটা হারাম। আমার তাহলে আর কোনো সমস্যা নেই। আমাকে কয়টি হজ্জ্ব করতে হবে? একটা? ঠিকাছে। যখন আমার হজ্জে যাওয়ার সামর্থ্য থাকবে, ঠিক না? হ্যাঁ। ঠিকাছে , আমি এগুলো করবো। ” এটাই মুসলিমের সংজ্ঞা। যে ইসলামের মিশনে যোগদান করে সে কখনো জিজ্ঞেস করে না ‘আমাকে সর্বনিম্ন কতটুকু করতে হবে।’ প্রকৃতপক্ষে তারা সবসময়...

সুস্থ হৃদয়

—নোমান আলী খান হৃদয়ের জন্য দুটো প্রতিশব্দ আছে, বলুন তো সেগুলো কি কি? ক্বালব আর ফুআদ। ক্বালব হলো হৃদয়ের সাধারণ প্রতিশব্দ। ফুয়াদ ব্যবহৃত হয় যখন…? যখন কোনো ধরণের উত্তেজিত কিংবা আবেগপ্রবণ পরিস্থিতি তৈরি হয়। আপনারা কি জানেন কুরআনে খুবই সুন্দরভাবে আল্লাহ এই ব্যাপারগুলোর হিসেব রাখেন। তাই আপনারা সুরাতুল ক্বাসাসে দেখবেন এই একই জিনিসের জন্য দুটো শব্দ একইসাথে ব্যবহৃত হয়েছে। আল্লাহ বলেন- وَ اَصۡبَحَ فُؤَادُ اُمِّ مُوۡسٰی فٰرِغًا ؕ اِنۡ کَادَتۡ لَتُبۡدِیۡ بِهٖ لَوۡ لَاۤ اَنۡ رَّبَطۡنَا عَلٰی قَلۡبِهَا لِتَکُوۡنَ مِنَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ (২৮:১০) মূসা (আ) এর মায়ের হৃদয় উড়েই যাচ্ছিল, ধড়ফড় করছিল, খালি হয়ে গেলো। কারণ তিনি তার বাচ্চাকে একটি বক্সে বন্দী করে মাত্রই পানিতে ভাসিয়ে দিলেন। এখন বাচ্চাটি এতো দূরে চলে গেছে যে তিনি আর দেখতে পাচ্ছেন না। তাই তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়লেন। একই সময়ে তার ভয়, তার দুঃখ, তার কষ্ট, ধকল, প্রচণ্ড আবেগ-অনুভূতির ব্যাপ্তি এতোই প্রকট ছিল যে তার হৃদয়কে শুধু ক্বালব বলা হয়নি, বরং কী বলা হয়েছে? ফুয়াদ। কারণ তা সম্পূর্ণরূপে অভিভূত হয়ে গিয়েছিল, পুড়ে যাচ্ছিল! তারপর আল্লাহ বলছেন, তিনি গোপন বিষয়টি ফাঁস করেই দিচ্ছিলেন। إِن كَادَتْ لَتُبْدِى بِهِ মানে তিনি প্রায় ঘর থেকে ছুটেই চলে যাচ্ছিলেন বাক্সটির প্রতিঃ আমার বাচ্চা!! তিনি নিজেকে থামাতে পারছিলেন না। কিন্তু তাকে আল্লাহ্‌র টেনে ধরতে হলো। এটা বোঝা জরুরি, কারণ কোনো মায়ের নিজেকে থামানো সম্ভবত মানসিকভাবে অসম্ভব। সম্ভবত একেবারেই অসম্ভব। আমি এমনটা হবার কোনো কারণ দেখি না। অন্য কথায়, কোনো বাচ্চা… ধরুন বাচ্চাকে দোকানে নিয়ে গেছেন। আর সে আপনার আঙ্গুল ধরে আছে, আপনি হাঁটছেন। হঠাৎ করে দুই সেকেন্ডের জন্য আপনি তার হাত আর অনুভব করছেন না। তৎক্ষণাৎ কি করেন আপনি? করিম! করিম! আআআআ! হাহাহা কতক্ষনের মধ্যে কোনো মা পাগল হয়ে যায়? আমি তো মনে করি দশ সেকেন্ড। আর বাবা! বাচ্চাকে...