সর্বশেষ যে বিষয়টি আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাই তা হলো – আল্লাহর উপর ভরসা ধরে রাখা। অনেকের জন্য এই বিষয়টা মেনে নেয়া বেশ কঠিন যে, আল্লাহ তার কথা শুনবেন। তারা হয়তো লম্বা সময় ধরে কোনো খারাপ অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। তারপর তারা মনে মনে ধরে নেন যে, আল্লাহ আমার কথায় কোনো মনোযোগ দিবেন না, আমার দোয়া তাঁর নিকট গুরুত্বহীন, আমি দোআ করার কোনো অর্থ দেখি না।
আপনাদের একটা কথা বলে রাখি, আল্লাহর নিকট থেকে আপনি সর্বশ্রেষ্ঠ যে উপহারটি পাবেন, তা কী জানেন? ক্ষমা। এটাই সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার। আপনি এটার মূল্য উপলব্ধি করুন আর নাই করুন। আর যা কিছু আল্লাহ আপনাকে দিবেন বলেছেন, এর সবই অতিরিক্ত।
আপনাদেরকে একটা উদাহরণ দেই। আমার অনেকগুলো সন্তান আছে। ধরুন, আমার এক সন্তানের উপর আমি খুবই অসন্তুষ্ট। সে কোনো একটা অন্যায় করেছে, তাই আমি খুবই রাগান্বিত হয়ে আছি। “তোমার এটা বলা উচিত হয়নি। তোমার এটা করা উচিত হয়নি। আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় যে, তুমি এটা করেছো।” এভাবে আমি তাকে কিছুটা বকা-ঝকা করলাম। তারপর দিনের অন্য এক সময় আমার জন্য তার কিছু একটা করার কথা। যেমন, আমার জন্য একটা কার্ড আঁকার কথা যাতে লেখা থাকবে “বাবা, আমি আপনাকে ভালোবাসি”। সে জিনিসটা আঁকলো। কিন্তু পরে কি মনে করে কাগজটা টুকরা টুকরা করে ময়লার বাক্সে ফেলে দিলো। এটা দেখে তার অন্য ভাই বললো – “কী! তুমি এটা ফেলে দিলে কেন? তোমার না এটা বাবাকে দেখানোর কথা।” জবাবে সে বললো – ” বাবা আমার উপর খুবই রাগান্বিত। তিনি এটার প্রতি কোনো গুরুত্ব দিবেন বলে মনে হয় না। তিনি আমাকে আর ভালোবাসেন না।”
আমি যদি জানতাম যে, সে বিষয়টাকে এভাবে দেখছে তাহলে আমি কী করতাম? আমি কি এভাবে বলতাম যে, “হ্যাঁ, ফেলে দাও। আমার এসবের কোনো দরকার নেই?” না, বরং আমি আবেগে কেঁদে ফেলতাম।
“কিভাবে তুমি ভাবতে পারলে যে, আমি তোমাকে আর ভালোবাসি না। হ্যাঁ, তুমি অন্যায় করেছো, ভুল করেছো….কিন্তু তুমি এখনো আমার সন্তান। তুমি হাজার বার ভুল করলেও আমি তোমাকে ভালোবাসবো। যদিও আমি তোমার উপর রাগান্বিত কিন্তু এখনো আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমাকে ঐ কার্ডটি দাও। আমি সেটা ফ্রেমে বেঁধে রাখবো। ময়লার বাক্স থেকে নিয়ে গ্লাসে আটকিয়ে রাখবো। সারা জীবন ধরে যত্ন করে রাখবো।”
কেন? কারণ আমি আমার সন্তানদের ভালোবাসি, তারা যতই ভুল করুক না কেন। এমনকি যদি তাদের আচরণ আমাকে রাগান্বিত করে। এটা শুধু আমি এবং আমার সন্তানের সম্পর্ক।
কিন্তু আমি আমার সন্তান নিয়ে কথা বলছি না। এই উদাহরণের মাধ্যমে আমি কথা বলছি আমার এবং আল্লাহর সম্পর্ক নিয়ে। আমি আল্লাহর অবাধ্যতা করি। আমি ভুল করি। আল্লাহ এমনকি আমাকে বকা-ঝকাও করেন না। আমি ভুল করার কারণে তিনি আমার উপর বজ্রপাত করেন নি। তিনি আমাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করেন নি। তিনি আমার হৃদয়ের স্পন্দন বন্ধ করে দেন নি। যখনি আমি মিথ্যা বলি, আমি বোবা হয়ে যাই না।
প্রতি বার হারাম কিছু খেয়ে ফেলার কারণে আমার হাত অবস হয়ে যায় নি। হারাম কিছুর দিকে তাকানোর কারণে আমি অন্ধ হয়ে যাই নি। তিনি এখনো দিয়েই যাচ্ছেন। আর আমি কিনা চিন্তা করতে শুরু করলাম যে আল্লাহ আমাকে আর ভালোবাসেন না??? আল্লাহর সাথে আমার সম্পর্ক এক সময় ভালো ছিল। কিন্তু এখন যেহেতু আমি খারাপ হয়ে গিয়েছি তাই ভালোবাসাও এখন হারিয়ে গেছে। তাহলে দোয়া করার কি বা অর্থ আছে।
মনে রাখুন, আল্লাহর মত কেউ আপনাকে ভালোবাসে না। আমি আমার সন্তান বা পিতা-মাতার প্রতি যে ভালোবাসা প্রদর্শন করি, তা আল্লাহ তায়ালাই আমার ভেতরে দিয়েছেন। আমরা এমনি এমনি কাউকে ভালোবাসতে সক্ষম নই। ভালোবাসা আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি উপহার। যদি আল্লাহর দুইটি সৃষ্টি মাঝে ভালোবাসা এতো দৃঢ় হয়, আমাদের পক্ষে কল্পনাও করা সম্ভব নয় যে, আমাদের জন্য আল্লাহর ভালোবাসা কত প্রগাঢ়।
— উস্তাদ নোমান আলী খান