সময়

আল্লাহ সময়কে বাস্তবতার এক সাক্ষী হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। আর বাস্তবতাটি হলো মানুষ ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত। এর মানে হলো ইতিহাস জুড়ে মানুষ যে ক্ষতির মাঝে নিমজ্জিত ছিল তার সবচেয়ে বড় সাক্ষী হলো সময় নিজেই।

যেসব মানুষ মনে করে যে তারা বিশ্ব সেরা কারণ তাদের অনেক টাকা আছে, বা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী, বা তারা দেখতে অনেক সুন্দর, অথবা তাদের সামাজিক মর্যাদা অনেক উপরে বা তারা অনেক জনপ্রিয়। যা কিছুই তাদের থাকুক না কেন যার কারণে তারা নিজেদের অন্যদের চেয়ে উপরে মনে করে….।

আপনি আপনার এসব জিনিস যতদিন পারেন ধরে রাখতে পারেন কিন্তু যে জিনিসটি আপনি ধরে রাখতে পারবেন না তা হলো সময়। তাই যদি আপনি দেখতে অনেক সুন্দর হয়ে থাকেন, আজ থেকে চল্লিশ বছর পর আপনার চেহারায় ভাঁজ পড়তে শুরু করবে, মাথায় টাক গজাবে, মোটা গ্লাসের চশমা পরতে হবে। আর সত্তর বছর পর হয়তো ঠিক মত সোজা হয়ে হাঁটতেও পারবেন না, চেহারার মাঝে জায়গায় জায়গায় চামড়া জমাট বেঁধে যাবে। এটা ঘটতে যাচ্ছে।

সারা দুনিয়ার সকল সম্পদ আপনার থাকতে পারে, কিন্ত সময় আপনার নিকট থেকে এতো কিছু নিয়ে যাবে যে …. আমি নিজ চোখে এমন মানুষদের দেখেছি যারা অস্বাভাবিক রকমের ধনী, অগণিত টাকা পয়সা যাদের রয়েছে…কিন্তু তারা এতো বৃদ্ধ এবং এতো দুর্বল যে এমনকি সিঁড়ি বেয়ে উপরের তলায়ও যেতে পারে না। তাদের বেলকনি থেকে বাইরের দৃশ্য অসম্ভব সুন্দর, কিন্তু তারা সে বেলকনিতেও যেতে পারে না কারণ বাতাসের ফলে হয়তো অসুস্থ হয়ে পড়বে। বাসার পেছনে রয়েছে ঝাঁকজমকপূর্ন সুইমিং পুল, তারা শুধু তাকিয়ে থাকতে পারে কিন্তু নামতে পারে না। বিশাল স্ক্রিনের টিভি রয়েছে কিন্তু চোখের জ্যোতি হারিয়ে গেছে, দেখতে পায় না। সময় সব কেড়ে নিয়ে গেছে।

আমি আপনি যদি তাদের ম্যানসনে যাই, বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যাবো। ‘মারাত্মক সুন্দর জায়গা, এটা দেখো, ঐটা দেখো।’ তারা এক সময় সবকিছু এভাবেই দেখেছে। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় সব কিছু আজ মূল্যহীন। তাদের কাছে এসব কিছু আজ আর কোন অর্থ বহন করে না। তারা যখন আপনার এক্সাইটমেন্ট দেখবে বলবে, আমিও তোমার মত এসব দেখে চমৎকৃত হয়ে যেতাম। তোমার মত আমিও একসময় এরকম বোকা ছিলাম। তারপর আমি উপলব্ধি করলাম, এসব কিছুর আসলে কোনো মূল্য নেই। আমি ভুল জিনিসে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলাম।

আপনার আমার জন্যেও এমন সময় আসবে যখন আমাদের কাছেও এর আর কোনো দাম থাকবে না। সময় সবচেয়ে বড় সাক্ষী। সময় জ্বলন্ত সাক্ষী যে সকল মানুষ প্রতিনিয়ত ক্ষতির মাঝে নিমজ্জিত।
—–
“ সময়ের কসম, মানুষ অবশ্যই ক্ষতির মধ্যে (ডুবে) আছে, তবে তারা ছাড়া যারা ঈমান এনেছে, সৎকাজ করেছে, পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দিয়েছে এবং পরস্পরকে ধৈর্যের উপদেশ দিয়েছে।“ (সূরা আসর। )

‘’ তোমরা জেনে রাখ যে, দুনিয়ার জীবন ক্রীড়া কৌতুক, শোভা-সৌন্দর্য, তোমাদের পারস্পরিক গর্ব-অহঙ্কার এবং ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে আধিক্যের প্রতিযোগিতা মাত্র। এর উপমা হল বৃষ্টির মত, যার উৎপন্ন ফসল কৃষকদেরকে আনন্দ দেয়, তারপর তা শুকিয়ে যায়, তখন তুমি তা হলুদ বর্ণের দেখতে পাও, তারপর তা খড়-কুটায় পরিণত হয়। আর আখিরাতে আছে কঠিন আযাব এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। আর দুনিয়ার জীবনটা তো ধোকার সামগ্রী ছাড়া আর কিছুই নয়।’’ সূরা হাদিদ: ২০