রামাদানের ত্রিশ দিন আমরা অনেক কিছু থেকে নিজেদের বিরত রেখেছি। আমার শরীর, আমার গলা, আমার পাকস্থলী…এদের কিছু চাহিদা আছে। আর ত্রিশ দিন ধরে আমি আমার শরীরের বিভিন্ন চাহিদা পূরণ করা থেকে বিরত থেকেছি। আপনাদের কেউ কেউ অফিসে চাকরি করেন …. ”ভাই, আমার তো কফি পান করতে হবে, আমি জানিনা কফি পান না করলে আমি কাজ করতে পারবো কিনা। আমার একটা ব্রেক দরকার।” কেউ কেউ ধুম পানে আসক্ত। আপনার সিগারেট ব্রেক দরকার হয়। কেউ হয়তো অতিরিক্ত চুইং গাম খান, বা চকোলেট সমস্যা আছে। যে সমস্যাই হউক না কেন। এটার সমাধান না করা পর্যন্ত আপনি কাজে মনোযোগ দিতে পারেন না।
কিন্তু গত ত্রিশ দিন ধরে আপনি কোনো ধরণের আসক্তিতে সাড়া না দিয়েই ঠিক ঠাক আপনার কাজগুলো সম্পন্ন করতে পেরেছেন। আপনি পেরেছেন। অন্য কথায়, আপনি যে মনে করতেন শরীরের নির্দিষ্ট চাহিদাটি পূরণ করা ছাড়া আপনি কিছুই করতে পারেন না, আপনার ব্রেইন কাজ করে না…কিন্তু এই কয়েক দিনে আপনি প্রমান করলেন এসব না করেই আপনি দিব্যি ভালোভাবে কাজ করতে পারেন।
আর এটা পেরেছেন কারণ আপনি আল্লাহর আনুগত্য করছেন। আপনি ভেবেছিলেন এটা অসম্ভব, কিন্তু আল্লাহ সহজ করে দিয়েছেন। এখন এই অনুশীলন করার পর আপনি আরেকটু অগ্রসর হয়ে ভাবতে লাগলেন, আমি বা আপনি এমন কিছুতে জড়িত হয়ে আছি, যা সরাসরি আল্লাহর অবাধ্যতার মধ্যে পড়ে যায়। আর সব সময় আপনি নিজেকে এভাবে বুঝিয়েছেন, ‘’না, আমার পক্ষে এটা বাদ দেয়া সম্ভব নয়। আমাকে এটা করতেই হবে। আমি যদি এটা করতে না পারি, তাহলে মারা যাবো। কিভাবে আমি এটা ছাড়া বাঁচবো?’’
আর আল্লাহ ত্রিশ দিন ধরে আপনাকে প্রশিক্ষণ দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন, হ্যাঁ, তুমি পারবে। হ্যাঁ, তুমি আসলেই এটা ছাড়া বাঁচতে পারবে। আর আমি রামাদানের মতো এটা তোমার জন্য সহজ করে দিবো। এটাই রামাদানের প্রথম শিক্ষা যে কিভাবে রামাদানের বাহিরে জীবন যাপন করবেন। এখন শয়তান জেল থেকে ছাড়া পেয়ে গেছে। আর সে আপনাকে দারুণ আঘাত করবে। কারণ সে জানে গত এক মাসে আপনি অনেক দূর অগ্রসর হয়েছেন। আর একজন বিশ্বাসী ইসলামের দিকে যত বেশি অগ্রসর হয়, শয়তান তত বেশি রাগান্বিত হয়। রামাদান শেষ হওয়া মাত্রই সে আপনার প্রতি চরম আঘাত হানবে। তারপর যখন আপনি তার ওয়াসসায় সাড়া দিয়ে আবার আগের মতো হয়ে যাবেন, তার দেখানো পথে চলতে শুরু করবেন, তখন সে কিছুটা ক্ষান্ত হবে। কারণ তার অন্য আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ টার্গেট আছে।
রমজান মাসে ইসলামের পথে আপনি যতটুকু অগ্রসর হয়েছেন তা ধ্বংস করার জন্য সে অপেক্ষা করছে। এটাই তার লক্ষ্য। আল্লাহ বলেন – ”আল্লাহ তোমাদের জন্য কাঠিন্য চান না।” এই আয়াতের একটা ইঙ্গিত হলো, শয়তান এবং আমাদের মাঝে যে যুদ্ধ শুরু হবে তার প্রতি।
কারণ শয়তান আপনার কাছে এসে বলবে, ”আরে ভাই, সহজ পথ অবলম্বন করুন। তোমার জীবনকে সহজভাবে নাও।’’ আল্লাহর প্রতিটি অবাধ্যতা আসলে – ”জীবনকে সহজভাবে নাও” শয়তানের এই আহবানে সাড়া দেয়ার ফল। আর সে আমাদেরকে বুঝাতে চায় যে, আল্লাহর আনুগত্য করলে জীবন কঠিন হয়ে পড়ে। আর আল্লাহ বলছেন … يُرِيدُ اللَّهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمُ الْعُسْرَ – আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান; তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না…..
— উস্তাদ নোমান আলী খান