আমি এখন আপনাদের এমন একটা বিষয়ের কথা বলবো যা আমাদেরকে আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাওয়া থেকে বিরত রাখে। বিষয়টা একজনের কাছে কতটুকু প্রত্যাশা করা হয় তার সাথে সম্পর্কযুক্ত। কিছু কিছু মানুষ মনে মনে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়ে যায় – “আমি সারা জীবন ধরে অসংখ্য পাপে নিমজ্জিত ছিলাম। আল্লাহ মনে হয় আমাকে খুব একটা পছন্দ করেন না।” কোনো কোনো মানুষ এমনকি এতদূর পর্যন্ত চলে যায় যে – বলে উঠে, “আল্লাহ আমাকে ঘৃণা করে।” আমি নিজে তাদের বলতে শুনেছি। “আল্লাহ আমাকে পছন্দ করেন না। আল্লাহ আমার উপর খুবই রাগান্বিত। কারণ আমি বহু অপকর্ম সাধন করেছি। আমি জানতাম – আল্লাহ এই এই কাজগুলো করতে নিষেধ করেছেন, কিন্তু তারপরেও আমি করেছি। শুধু একবার নয়, বহুবার এই খারাপ কাজগুলো করেছি। সুতরাং আল্লাহর ভালো মানুষের তালিকায় আমি নেই। আমার নামাজের কোনো দাম নেই।”
মানুষ যখন নিজের সম্পর্কে এই রকম ধারণা পোষণ করে, তখন সে কী করে জানেন? “আমি তো খুবই খারাপ মানুষ। আপনি কি আমার জন্য একটু দোআ করতে পারবেন? কারণ আমি ইতিমধ্যে দোআ করার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছি, এখন আপনাকে আমার জন্য দোআ করতে হবে। কারণ আমি আশা করছি, আল্লাহ অন্তত আপনার দোআ কবুল করবেন। এতে হয়তো আমার একটা সুযোগ তৈরী হতে পারে। কারণ আমি? আমার কথা তিনি শুনবেন না। আপনার তো আল্লাহর সাথে ভালো সম্পর্ক আছে বলে মনে হয়। তাই দোআ টা আপনিই করুন।”
আপনাদেরকে আবার একটু পেছনে নিয়ে যাই। নূহ (আ) কাদের কাছে আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাওয়ার এই প্রস্তাব তুলে ধরেছিলেন? নূহ (আ) কি এমন মানুষদের নিকট এই প্রস্তাব তুলে ধরেন যারা সারা রাত মসজিদে কাটাতো? প্রতিবছর হজ্জ্ব পালন করতে যেত? রোজা রাখতো এবং অন্য আরো সৎ কাজ করতো?
নূহ (আ) ক্ষমা পাওয়ার এই প্রস্তাব তুলে ধরেন ইতিহাসের অন্যতম একটি বিদ্রোহী সম্প্রদায়ের প্রতি। যারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বিদ্রোহী ছিল। তিনি তাদের বলেন, তোমরা যদি শুধু ক্ষমা চাও, আল্লাহ শুধু তোমাদের ক্ষমা করবেন তাই নয়, তিনি তোমাদের জন্য আকাশের ধনভাণ্ডার খুলে দিবেন।
অন্য কথায়, নিজেকে ধ্বংসের কাতারে ফেলবেন না। নিজের সম্পর্কে এভাবে বলবেন না যে, “আমি অনেক দূরে হারিয়ে গেছি। ক্ষমা চাওয়া আমার জন্য নয়, অন্য কারো জন্য সেটা হতে পারে। কিন্তু আমার জন্য নয়। আমার ক্ষমা চাওয়া অর্থহীন। আমি চরম খারাপ পর্যায়ে আছি। আমার ব্যাপারে আর কোনো আশা নেই। আমার সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। যদি কিছু হয় তা হবে আমার মায়ের দোয়াতে অথবা অন্য কারো দোয়াতে।”
আপনার মনের এমন অবস্থার সুযোগ গ্রহণ করে শয়তান। মানুষের মনের হতাশাজনক পরিস্থিতির সুযোগ গ্রহণ করে শয়তান আর এর মাধ্যমে তাকে শির্কে নিমজ্জিত করে। এই হতাশা শির্কের একটি দরজা। কেন জানেন? তখন মিথ্যা ধর্ম আসে এবং আপনাকে বলে – ” আপনি তো অনেক বড় পাপী! আপনার পক্ষে ক্ষমা পাওয়া সম্ভব নয়। যীশুকে বলুন আপনাকে ক্ষমা করে দিতে। আপনি যীশুর সাথে সম্পর্ক ভালো করুন, তিনি আল্লাহর সাথে আপনার সম্পর্ক ভালো করে দিবেন। আল্লাহ এবং আপনার মাঝখানে যীশু এসে দাঁড়াবে।” অথবা তারা অন্য কাউকে মাঝখানে দাঁড় করাবে। বলবে –
“অমুক পীর, তার কাছে যাও, তার কবরে যাও, তার কবরের কাছে কিছু চকোলেট রাখো, তাহলে তিনি আল্লাহকে বলবেন আপনার সমস্যার সমাধান করে দিতে। কারণ আপনি তো ভয়ঙ্কর রকমের পাপী। আপনি এখন আল্লাহর সাথে কথা বলতে পারেন না, তিনি এখন আপনার উপর খুবই রাগান্বিত। কিন্তু ঐ পীর, তিনি আল্লাহর প্রিয় বান্দাহ। তাই আপনি তার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে আপনার দরখাস্ত পেশ করুন।” এভাবে শির্কের দরজা খুলে যায়।
অন্য কথায়, আল্লাহর সাথে আমাদের সরাসরি যোগাযোগের মূল বিষয়টি… আর ঈমানের মানেই হলো এই সরাসরি যোগাযোগ, তাওহীদের মানেই হলো এই সরাসরি যোগাযোগ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ও এই একই কথা বলে… আর এই সব কিছুর মূল কথা হলো – আপনার যা প্রয়োজন তা সরাসরি আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করুন। আমি আমার নিজেকেসহ আপনাদের সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, যে বিষয়টি আমাদের সকল প্রয়োজন পূরণ করবে তা হলো – আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা।