আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা

আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করুন। আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলে কত শত পথ আপনার জন্য খুলে যাবে! আসমানের দরজা আপনার জন্য এমনভাবে খুলে যাবে যে আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। হেদায়েতের পথ খুলে যাবে, আপনি সবকিছু আরো ভালোভাবে বুঝতে পারবেন। আপনার ব্যক্তিগত সমস্যাগুলো দূর হতে শুরু করবে।

উদাহরণস্বরূপ, রাগের কথা ধরা যাক। রাগ হওয়া থেকে মুক্তি পাওয়া আসলেই অনেক কঠিন। বহু মানুষ খুবই সমস্যাপূর্ণ জীবন যাপন করে, কারণ তারা অল্পতেই রেগে যান। এর থেকে বের হতে পারে না। কিছু একটা তাদের সামান্যতেই ক্রোধান্বিত করে তোলে, আর তারা এর সাথে লড়াই করতে পারে না। তারা তাদের এই সমস্যাটা বুঝতে পারেন, কিন্তু নিজের কাছে অসহায় হয়ে পড়েন এবং মনে মনে ভাবেন যে, “না, আমার পক্ষে এই রাগ হওয়া থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। আর মনে হয় আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করবেন না, কারণ আমি এরকম রাগান্বিত একজন মানুষ। আমি ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য নয়। “

হুদায়বিয়ার সন্ধির সময় সাহাবীরা খুবই রাগান্বিত হয়ে পড়েছিলেন। তাঁদের রাগ দূর করা সম্পর্কে আল্লাহ কী বলেছেন? তিনি বলেছেন – أَنزَلَ السَّكِينَةَ فِي قُلُوبِ الْمُؤْمِنِينَ – “তিনি আকাশ থেকে বিশ্বাসীদের অন্তরে প্রশান্তি নাযিল করেন।” প্রশান্তি আমাদের নিজেদের কাছ থেকে আসে না। আমরা নিজেদের প্রশান্ত করতে পারি না। মূসা (আ) এর মা ভয়ে এবং টেনশনে প্রায় মারা যাচ্ছিলেন, যখন তিনি তার ছোট্ট শিশুকে একটি বাক্সে বন্দি করে পানিতে ভাসিয়ে দেন। আর আল্লাহ বলেন – لَوْلَا أَن رَّبَطْنَا عَلَىٰ قَلْبِهَا – “যদি আমি তাঁর হৃদয়কে দৃঢ় করে না দিতাম,” আল্লাহ তার অন্তরকে দৃঢ় করেছিলেন। মূসা (আ) এর মায়ের পক্ষে স্বীয় অন্তরকে দৃঢ় করা সম্ভব হতো না। তিনি এতো বেশি ভেঙে পড়েছিলেন, এবং আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন যে তাঁর নিজের পক্ষে নিজেকে শান্ত করা সম্ভব হতো না।

ঐশ্বরিক হস্তক্ষেপ বলে একটা ব্যাপার আছে, যা আমাদেরকে আমাদের ব্যক্তিগত দুর্বলতা এবং প্রবণতা থেকে সুস্থ হতে সাহায্য করবে।

কিছু কিছু মানুষ অশ্লীলতার প্রতি খুবই আকৃষ্ট হয়ে পড়ে, কেউ কেউ ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, আবার কেউ কেউ মারাত্মক লোভী, সব সময় শুধু টাকা-পয়সা নিয়ে চিন্তা মগ্ন থাকে। তারা এসব থেকে বের হয়ে আসতে চায় কিন্তু নিজেদের সাথে যুদ্ধ করে পারে না।

এই সব সমস্যার সমাধান আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে। এভাবেই আকাশের দরজা খুলে যায়। আপনার একান্ত ব্যক্তিগত গভীর সমস্যার সমাধান আসে আসমান থেকে। বৃষ্টি যেমন পৃথিবীকে পরিষ্কার করে দেয়, ঠিক তেমনি আসমান থেকে আল্লাহর রহমত এসে আপনার সমস্যাগুলোকেও ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে দেয়।

আল্লাহ তায়ালা বলেন – “তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি আকাশকে তোমাদের উপর অঝোর ধারায় বর্ষণ করাবেন।” (সূরা নূহ আয়াত ১০-১১)

আল্লাহর নিকট সত্যিকার অর্থে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। আপনার ত্রূটিগুলো স্বীকার করে নিন। কোনো অজুহাত না দেখিয়ে নিঃশর্তে তাঁর নিকট মাফ চাইতে থাকুন। لَّا إِلَٰهَ إِلَّا أَنتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنتُ مِنَ الظَّالِمِينَ – ” আপনি ছাড়া সত্যিকারের কোন ইলাহ নেই, আপনারই পবিত্রতা, মহিমা ঘোষণা করছি; বাড়াবাড়ি আমিই করেছি, আমিই তো সীমালংঘনকারী, আমিই তো গুনাহগার।”
ইয়া আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করে দিন।

— উস্তাদ নোমান আলী খান এর What to ask Allah? লেকচার অবলম্বনে ।