আল্লাহর শাস্তিকে ভয় না করার অন্যতম একটি কারণ হলো, অনেক সময় আমরা জানি না যে কেন ভয় করবো। এই জন্য আল্লাহর শাস্তির বিস্তারিত বর্ণনা জানাটা জরুরি। আল্লাহ কুরআনে তাঁর শাস্তির বিশদ বর্ণনা দিয়েছেন। আর রাসূল (স) জাহান্নামের শাস্তির কথা আরো সবিস্তারে উল্লেখ করেছেন। রাসূল (স) জাহান্নামের কঠোর আজাবের এমন বর্ণনা দিয়েছেন যে, আপনি যদি আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলকে বিশ্বাস করেন – তাহলে এসব বর্ণনা শুনার পর ঘুমাতে পারবেন না। আল্লাহ সুব হানাহু ওয়া তায়ালার শাস্তির ভয়ে আপনি সবসময় ভীত থাকবেন। প্রিয় ভাই এবং বোনেরা, আমরা যতই ভয়ঙ্কররূপে দোজখের শাস্তির কথা বর্ণনা করি না কেন, এটা কখনোই যথেষ্ট হবে না। কারণ শব্দ কখনই বাস্তবতার মত হবে না। আর কখনো দেখেননি এমন কিছুর বর্ণনা শুনে তার প্রকৃত অবস্থা উপলব্ধি করা আসলেই কঠিন। আল্লাহ কুরআনে জাহান্নামের আগুনের আজাবের কথা উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ এবং তার রাসূল আমাদের সতর্ক করেছেন। আমি যত ভয়ংকরভাবেই জাহান্নামের শাস্তির কথা বর্ণনা করি না কেন, বিশ্বাস করুন, এটা তার চেয়েও ভয়ংকর। আমার আপনার ধারণা কল্পনার চেয়েও ভয়ংকর। আপনার ব্রেইনকে যতটুকু বোঝার যোগ্যতা দিয়ে তৈরী করা হয়েছে, এটা তার থেকেও ভয়ংকর। শুধুই শাস্তি আর শাস্তি।
আল্লাহ সুব হানাহু ওয়া তায়ালা নিখুঁত। যখন তিনি পুরস্কার দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন, জান্নাতে তাঁর পুরস্কার হবে নিখুঁত। আবার যখন তিনি শাস্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তাঁর শাস্তিও নিখুঁত। নিখুঁত শাস্তি। এর চেয়ে বেদনাদায়ক কোনো শাস্তি হতে পারে না, এর চেয়ে কষ্টকর কোনো শাস্তি হতে পারে না। কারণ তিনিই আমাদের এই শরীর তৈরী করেছেন। তিনিই আপনার রূহ তৈরী করেছেন। আর তিনিই সুব হানাহু ওয়া তায়ালা আপনার শরীর এবং আত্মার জন্য শাস্তি তৈরী করেছেন, যদি আপনি ভুল পথ গ্রহণ করে থাকেন।
রাসূল (স) আমাদের বুঝার জন্য বলেন – “জাহান্নামের সবচেয়ে কম শাস্তি যাকে দেয়া হবে তাকে জ্বলন্ত কয়লার দুটি জুতা পরিয়ে দেয়া হবে, এর ফলে তার মস্তিস্ক ফুটতে থাকবে।” জ্বলন্ত কয়লার উত্তাপ তার পা থেকে মাথায় গিয়ে পৌঁছবে, এবং মস্তিস্ক এতে ফুটতে থাকবে। এখনো আপনাদের খারাপ খবর দেই নি। খারাপ খবর হলো, সেই লোক সন্দেহাতীতভাবে মনে করবে এবং বলে উঠবে, কোনো শাস্তি এর চেয়ে কষ্টকর হতে পারে না। কিন্তু আল্লাহর কসম! সে আসলে সবচেয়ে কম শাস্তি ভোগ করছে। আল্লাহর পক্ষ থেকে জাহান্নামে যে শাস্তি রয়েছে সে তুলনায় ঐ লোক আনন্দে আছে।
আমার প্রিয় ভাই এবং বোনেরা জাহান্নামের শাস্তি খুবই ভয়ংকর। দুনিয়াতে আমাদেরকে যে শরীর দেয়া হয়েছে সে শরীর নিয়ে কেউ জাহান্নামে প্রবেশ করতে পারবে না। সে বাষ্প হয়ে উড়ে যাবে। তাই আল্লাহ সুব হানাহু ওয়া তায়ালা মানুষের শরীরকে নতুন ডিজাইনে তৈরী করবেন। এক নম্বর, মানুষ অনেক বড় আকৃতির হবে। হাদিসে এসেছে, জাহান্নামীদের দাঁত হবে ওহুদ পাহাড়ের সমান। মদিনায় গিয়েছেন কখনো? ওহুদ পর্বত দেখেছেন? সে ওহুদ পাহাড়ের সমান হবে আপনার দাঁত; শরীর নয়, আপনি নিজে নন। চামড়ার পুরুত্ব হবে তিন দিন ভ্রমণের দূরত্বের সমান। যেন আগুনের আজাব সামলাতে পারে। কিন্তু তারপরেও আপনার শরীর এবং অঙ্গ প্রত্যঙ্গ টিকবে না। সেগুলো গলে যাবে। كُلَّمَا نَضِجَتْ جُلُودُهُمْ بَدَّلْنَاهُمْ جُلُودًا غَيْرَهَا لِيَذُوقُوا الْعَذَابَ – “যখনই তাদের চামড়াগুলো পুড়ে যাবে তখনই আমি তাদেরকে পালটে দেব অন্য চামড়া দিয়ে যাতে তারা আস্বাদন করে আযাব।” সূরা নিসা আয়াত ৫৬।
আমি জানি না আপনারা কেউ এই দুনিয়ায় আগুনের উত্তাপ কখনো অনুভব করেছেন কিনা। সিডনিতে আমার এক বন্ধু আছে, একবার এক একসিডেন্টে আগুনে তার চামড়া পুড়ে যায়। তার মুখ পুড়ে গেছে, সারা শরীর পুড়ে গেছে। সে তারপরেও বেঁচে ছিল। কিন্তু এখনো তার মুখে সে সময়ের যন্ত্রণার ছবি ফুটে উঠে। এটা হলো দুনিয়ার আজাবের শাস্তি! আর দোজখের আগুন দুনিয়ার আগুনের চেয়েও ৭০ গুণ বেশি উত্তপ্ত। এক হাজার বছর জ্বালানোর পর আগুন উজ্জ্বল লাল বর্ণ ধারণ করে। তারপর আরো এক হাজার বছর জ্বালানোর পর এটা সাদা বর্ণ ধারণ করে। তারপর আরো এক হাজার বছর জ্বালানোর পর এটা কুঁচকুঁচে কালো রং ধারণ করে। জাহান্নামের আগুন লাল, সাদা বা হলুদ নয়। এর রং হলো কালো।
এ জন্যই কিয়ামতের দিন মানুষ জাহান্নামের শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য এমন বেপরোয়া হয়ে পড়বে যে, পরিবার পরিজন থেকে শুরু করে সবকিছু উৎসর্গ করতে রাজি হয়ে যাবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন – “সেদিন গোনাহগার ব্যক্তি পণস্বরূপ দিতে চাইবে তার সন্তান-সন্ততিকে, তার স্ত্রীকে, তার ভ্রাতাকে, তার গোষ্ঠীকে, যারা তাকে আশ্রয় দিত, এবং পৃথিবীর সবকিছুকে, অতঃপর নিজেকে রক্ষা করতে চাইবে।” সূরা মা’আরিজ।