রামাদানের সময় ঘনিয়ে আসছে। আর এভাবে সময় ঘনিয়ে আসলে চারপাশ থেকে আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়া হয় যে কিভাবে এই মাসে বেশি বেশি ইবাদাত করতে হবে, কিভাবে আল্লাহর নিকটবর্তী হতে হবে, কিভাবে কুরআনের সাথে নতুন করে সম্পর্ক গড়তে হবে…ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি এখান থেকে কিছুটা পেছনে সরে এসে মৌলিক কিছু বিষয়ে আলোকপাত করতে চাই। আমি মনে করি এটা আমার নিজের জন্যেও একটি স্মরণিকা হবে, এবং ইনশা আল্লাহ আমরা সবাই এখান থেকে উপকার পাবো।
আল্লাহর সাথে আমাদের সম্পর্কগুলোর অন্যতম একটি মৌলিক সম্পর্ক হলো – তাঁর নিকট দোয়া করা, তাঁর সাহায্যের কাঙ্গাল আমরা। আমাদের ধর্মীয় ক্ষেত্রে তাঁর সাহায্য দরকার। হেদায়েত পাওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর সাহায্য দরকার, সত্য পথের উপর টিকে থাকার জন্য, অসৎ পথ থেকে দূরে থাকার জন্য, তাঁর ক্ষমা পাওয়ার জন্য তাঁর সাহায্যের দরকার। তাঁর সহায়তা দরকার আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে, আমাদের ঈমানের জন্য। এছাড়াও জীবন পরিচালনার সকল ক্ষেত্রে আমরা তাঁর সাহায্যের মুখাপেক্ষী।
আমাদের পারিবারিক বিষয়ে তাঁর সাহায্য দরকার। সুস্বাস্থ্যের জন্য তাঁর সাহায্য দরকার। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তাঁর সাহায্য প্রয়োজন আমাদের। আপনাদের মাঝে অনেকেই এমন আছেন যারা ভয়ঙ্কর অর্থনৈতিক সমস্যায় নিমজ্জিত। কেউ আপনার সমস্যার কথা বুঝে না। একমাত্র আল্লাহ এবং আপনি ছাড়া আর কেউ বুঝে না। আপনি আপনার সমস্যার কথা কাউকে বুঝাতে চেয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। তারা বুঝে না। একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না আপনি কী মুসিবতে জীবন অতিবাহিত করছেন।
আমাদের সকলেরই কোনো না কোনো সমস্যা রয়েছে। আল্লাহ নিজেই দুনিয়ার জীবনের এই বাস্তবতার কথা কুরআনে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন – لَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنسَانَ فِي كَبَدٍ – “নিশ্চয় আমি মানুষকে শ্রমনির্ভররূপে সৃষ্টি করেছি।” হয় আপনি মানসিকভাবে পরিশ্রান্ত, না হয় ইমোশনাল্লি পরিশ্রান্ত, বস্তুগত দিক থেকে পরিশ্রান্ত, অতিরিক্ত কাজের চাপে পরিশ্রান্ত, শারীরিকভাবে পরিশ্রান্ত, স্বাস্থ্যগত দিক থেকে পরিশ্রান্ত, বয়সের ভারে ক্লান্ত। আপনার সমস্যা থেকে বের হয়ে আসার জন্য অনেক সমাধান খুঁজেছেন কিন্তু কিছুই কাজ করছে না। এভাবে আপনার সৃজনশীলতাও একসময় ক্লান্ত হয়ে পড়ে।
আমরা সব সময় পরিশ্রান্ত জীবন যাপন করছি। আমরা প্রতিনিয়ত কোনো না কোনো সমস্যায় জর্জরিত। এই সমস্যাগুলো আমাদের চিন্তাশক্তির বেশিরভাগ অংশ দখল করে রাখে। অনেক সময় ইতিবাচক চিন্তা করার জন্য নিজের উপর জোর খাটাতে হয়। কারণ আপনি যদি জোর করে ইতিবাচক চিন্তা না করেন তাহলে নেতিবাচক চিন্তাগুলো সব এসে আপনার মাথায় জড়ো হয়। সব সমস্যা যেগুলোর সমাধান দরকার, সব না করা কাজগুলো যেগুলো সম্পাদন করা দরকার…. এগুলো নিয়েই আমরা সব সময় চিন্তা মগ্ন থাকি।
আল্লাহর সাথে আমাদের সম্পর্কগুলোর একটি হলো – আমরা যেন আমাদের সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য তাঁর নিকট দোআ করতে পারি। আমাদের যা যা দরকার আমার যেন সেটা তাঁর নিকট চাইতে পারি।
আজ আমি যে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাই তা হলো – এমন একটি সিক্রেট উপাদান যার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর নিকট যা ইচ্ছা তাই চাওয়ার সামর্থ্য অর্জন করতে পারি। আমরা সবাই বিভিন্ন জিনিস আল্লাহর কাছে চাই। আর সেটা হতে পারে আল্লাহ এবং বান্দার মাঝে একান্ত গোপন কোনো ব্যাপার।
আপনি যদি আসলেই আল্লাহর নিকট থেকে আপনার দোয়ার উত্তর আশা করেন তাহলে, কিছু শর্ত আগে পূরণ করতে হবে। আর তার মাঝে অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার যা কুরআনের সর্বত্র বিশেষ জোর দেয়া হয়েছে তা হলো – আমাকে এবং আপনাকে সবার আগে আল্লাহর নিকট নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। তাঁর নিকট কোনো কিছু চাওয়ার পূর্বে আপনাকে ক্ষমা চাইতে হবে। আমার আপনার যে প্রয়োজনগুলো আছে সেগুলো চাওয়ার পূর্বে আমাদেরকে আল্লাহর নিকট পরিপূর্ণ আন্তরিকতার সাথে ক্ষমা চাইতে হবে।