প্রশ্ন হলো যখন আপনি মৃত্যুর ফেরেশতার সাক্ষাৎ লাভ করবেন….আপনি যদি এই মুহূর্তে মৃত্যুর ফেরেশতার সাক্ষাৎ লাভ করেন, আপনি কী করতে পারেন নি বলে সবচেয়ে বেশি আফসুস করবেন? এবং ঐটার কি আসলে ততটুকু মূল্য আছে? আপনি এখন যা করছেন, যেভাবে আপনার জীবন অতিবাহিত করছেন, যা কিছু অতীতে করেছেন আর যা করতে ব্যর্থ হয়েছেন সেগুলোর কি আসলে ততোটুকু মূল্য আছে? যত বেশি মূল্য আপনি তাতে দিয়েছেন? আল্লাহর সামনে আপনি কেমন রেজিউমি নিয়ে দাঁড়াবেন?
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের বলেছেন – মানুষ যখন কোন মৃত ব্যক্তির কবরের পাশে দাঁড়িয়ে সে লোক সম্পর্কে ভালো ভালো কথা বলে, তখন ফেরেশতারা তাকে ধাক্কা দিয়ে জিজ্ঞেস করে – “আহাকাজা কুন্তা” তুমি কি সেরকম ছিলে? তারা যেমন তোমাকে বর্ণনা করছে? “আহাকাজা কুন্তা” তুমি কি সেরকম ছিলে? তারা যেমন তোমাকে বর্ণনা করছে?
সুবহানাল্লাহ! একটু চিন্তা করে দেখুন। আপনি তো নিজেকে ভালো করেই চেনেন। আপনি কী নিয়ে আল্লাহর সামনে উপস্থিত হচ্ছেন, আপনার মনের সত্যিকারের অবস্থা কী তাতো আপনি ভালো করেই জানেন। আপনার কাজগুলোর সত্যিকারের ব্যাখ্যা আর কেউ না জানলেও আপনি তো ভালো করেই জানেন। তা কি যথেষ্ট মূল্যবান ছিল? যে কাজে সময় ব্যয় করেছেন তা কি আপনার সময় পাওয়ার যোগ্য ছিল?
যখন আপনি ঘুমাতে যান তখন কি প্রশান্ত মন নিয়ে ঘুমাতে যান? জানেন তো? প্রতি রাতে আপনার আত্মা আল্লাহর কাছে প্রত্যাবর্তন করে। এটা হয়তো ফেরত নাও আসতে পারে। সারা দুনিয়াতে কত মানুষ ঘুমের মাঝে মৃত্যু বরণ করে। প্রতিটি রাত এক একটি ছোট মৃত্যু। এটা আসলেই এক ধরণের মৃত্যু। আজ রাতে আপনি মারা যাবেন, আমি মারা যাবো। আমরা কি সকালে জেগে উঠবো? আল্লাহ ভালো জানেন।
আজ যা করছেন এবং যা করেন নি সেজন্য কি মানসিক তৃপ্তি নিয়ে ঘুমাতে যান? কারণ জীবনের এই সম্পূর্ণ অভিজ্ঞতাটি আপনার এবং আল্লাহ সুব হানাহু ওয়া তায়ালার মাঝে একটি পরীক্ষা ছাড়া আর কিছুই নয়। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়াই একমাত্র মূল্যবান বিষয়। এটাই একমাত্র গুরুত্বের দাবিদার।
আসুন, কয়েকজন মানুষের শেষ সময় তুলনা করে দেখি। একদিকে ফেরাউনের স্ত্রী হজরত আসিয়ার মৃত্যু অন্যদিকে ফেরাউনের মৃত্যু। ফেরাউন সারাটা জীবন কাটিয়েছে অন্যায় অত্যাচার করে। সে পানিতে ডুবে মারা যাচ্ছিলো আর জিব্রিল (আ) তার মুখে কাদা ছুঁড়ে মারছিলেন। তুমি যে এতো গর্ব আর অহংকার করে জীবন কাটিয়েছো তার কী মূল্য ছিল? হে ফেরাউন। এতো সব দাম্ভিকতা, ঔদ্ধত্য, পাপাচার, আল্লাহর অবাধ্যতা, আর মানুষের উপর অত্যাচার-নির্যাতনের কী মূল্য ছিল? কী দাম পেয়েছো?
সে মুহূর্তে জিব্রিল (আ) তার মুখে কাদা ছুঁড়ে মারছিলেন। যখন পাপী কোন বান্দাহ মৃত্যুবরণ করে তখন ফেরেশতারা তার মুখে আঘাত করতে থাকে। এর কি যথেষ্ট মূল্য ছিল? আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ না করে বিনিময়ে ফেরাউন কী পেয়েছে? আর তার শেষ মুহূর্তে সে এতো নগণ্য হয়ে পড়ে যে সে বলে উঠে – ‘আমি বনি ইসরাইলের প্রভুর প্রতি ঈমান আনলাম’। এখন? যখন পানিতে তার পাকস্থলী পূর্ণ হয়ে যায়, জিব্রিল (আ) যখন তার মুখে আঘাত করতে থাকে তখন সে স্পর্ধা দেখিয়ে বলে উঠে – ‘আমি বনি ইসরাইলের প্রভুর প্রতি ঈমান আনলাম’। ক্ষমা প্রার্থনা নয়, তাউবা নয়, নিজের অতীত কর্মের জন্য লজ্জা অনুভব করা নয়। যখন আক্ষরিক অর্থেই মৃত্যু তার চোখের সামনে তখন বলে, ঠিকাছে, আমি ঈমান আনলাম।
আর অন্যদিকে হজরত আসিয়া আলাইহাস সালাম কে যখন নির্দয় ভাবে প্রহার করা হয়, ফেরাউনের সৈন্যরা যখন তাঁকে চাবুকপেটা করে, তারা পাথর মেরে তার শরীরকে টুকরা টুকরা করে ফেলছিল, তিনি উপরের দিকে তাকালেন আর তখন আল্লাহ সুব হানাহু ওয়া তায়ালা তাঁকে তাঁর জান্নাতের প্রাসাদ দেখালেন। তিনি মুচকি হাসি দিলেন। সে মুহূর্তে তিনি আর চাবুক পেটার আঘাত অনুভব করছিলেন না। তিনি হাসতে থাকলেন। তখন ফেরাউন তিরস্কার করে বলে উঠে – ‘এই মহিলার অবস্থা দেখো। তাঁর মাথা খারাপ হয়ে গেছে।’ পাথরের আঘাতে তাঁর শরীর সম্পূর্ণ রূপে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পূর্বে আল্লাহ তাঁর রূহ বের করে নিলেন।
এখন প্রশ্ন হলো, হজরত আসিয়া যে এতো নির্যাতন সহ্য করলেন এর কি যথেষ্ট মূল্য ছিল? তিনি কি তাঁর যথাযথ প্রতিদান পেয়েছেন? অবশ্যই ছিল, অবশ্যই পেয়েছেন। ফেরাউন এবং হজরত আসিয়ার তুলনা করে দেখুন।
— ইমাম ওমার সুলেইমান