কিন্তু সবচেয়ে শক্তিশালী মত যা আরবি ভাষার অধিকাংশ ভাষাবিদ ব্যক্ত করেছেন তা হলো – “আল্লাহ” শব্দটি দ্বারা এমন এক সত্তার কথা বোঝায় যিনি উপাসনা পাওয়ার যোগ্য। এই ব্যাখ্যার ফলে আমরা বুঝতে পারি কেন “আল্লাহ” নামটি আমাদের সৃষ্টিকর্তার প্রধানতম নাম।
আল্লাহ কুরআন মাজীদে বলেছেন – وَلِلَّهِ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَىٰ – “আর আল্লাহর জন্য রয়েছে সব উত্তম নাম।” আর তাই আমরা সবসময় এভাবে বলি – আল্লাহর একটি নাম হলো ‘আর-রাহিম’, আল্লাহর একটি নাম হলো ‘আর-রাহমান’, আল্লাহর একটি নাম হলো ‘আল-গাফুর।’ কিন্তু আমরা কখনো উল্টো করে বলি না যে আল-গাফুরের একটি নাম হলো আল্লাহ। আর-রাহিমের একটি নাম হলো আল্লাহ, আমরা কখনই এভাবে বলি না। বরং আমরা বলি, আল্লাহর একটি নাম হলো আর-রাহিম।
সুতরাং আমরা অন্য নামকে আল্লাহর প্রতি আরোপ করি, কিন্তু আমরা কখনো আল্লাহ নামকে অন্য নামের প্রতি আরোপ করি না। আর এই অনুশীলন কুরআনের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। যেহেতু কুরআনে বলা হয়েছে – “আর আল্লাহর জন্য রয়েছে সব উত্তম নাম।” তো, বিষয়টা একটু ভেবে দেখুন। অন্য সকল নাম আল্লাহর জন্য। وَلِلَّهِ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَىٰ এর ফলে এ বিষয়টাও আমাদের নিকট সুস্পষ্ট হয়ে উঠে যে, কেন এই নামটি এতটা শক্তিশালী। এই নামটি আল্লাহর প্রধানতম নাম কারণ এই নামটি অন্য সব নাম সমূহকে একীভূত করে। এই নামটি অন্য সকল নাম সমূহকে অবশ্যম্ভাবী করে তোলে। কিন্তু কীভাবে?
আমরা আগেই বলেছি – এই নামের অর্থ হলো, এমন সত্তা যার উপাসনা করা হয়। এটাই এই পরিভাষাটির অর্থ, এমন সত্তা যার উপাসনা করা হয়। ঠিকাছে? তো, যার উপাসনা করা হয় তাকে অবশ্যই আর-রাহমান হতে হবে; আর-রাহিম(পরম দয়ালু), আল কুদ্দুস(নিষ্কলুষ, অতি পবিত্র), সামি'(সর্বশ্রোতা), বাসীর(সর্বদ্রষ্টা) এবং গাফুর হতে হবে। সুতরাং যার উপাসনা করা হয় তিনি যদি আস-সামি’ না হয়ে থাকেন তাহলে তিনি উপাসনা পাওয়ার যোগ্য নয়। যার উপাসনা করা হয় তিনি যদি আর-রাহিম না হয়ে থাকেন তাহলে তিনি উপাসনা পাওয়ার যোগ্য নয়।
যেহেতু আল্লাহ হলেন রাহমান, রহিম, মালিক, কুদ্দুস, আজিজ, জব্বার, মুতাকাব্বির সেহেতু আল্লাহর উপাসনা করা হয়। এ জন্যই বলা হয়ে থাকে আল্লাহ নামটি সবচেয়ে বেশি ব্যাপকতা প্রকাশ করে। এই নামটি অন্য সব নাম সমূহকে একীভূত করে। যার উপাসনা করা হয় তাঁর অবশ্যই সবচেয়ে নিখুঁত নামসমূহ এবং গুণাবলী থাকতে হবে। অন্যথায় তাঁর উপাসনা করা হবে না। আল্লাহ হলেন বাসীর, সামি, গফুর, রাহমান, রহিম। তাই তাঁর উপাসনা করা হয়।
আমাদের বহু আলেম বলেছেন, ‘ইসমুল্লাহিল আ’জাম’ হলো আল্লাহ। এখন এখানে একটু থামি। ‘ইসমুল্লাহিল আ’জাম’ কী? আমরা হাদিসে আশ্চৰ্য জনক একটি বিষয়ের সন্ধান পাই। ‘ইসমুল্লাহিল আ’জাম’ অর্থ আল্লাহর সর্বপ্রধান এবং সবচেয়ে মহীয়ান নাম। আমাদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন – “আল্লাহর একটি মহীয়ান নাম রয়েছে, যখন এই নাম ধরে আল্লাহর নিকট কোনো কিছু প্রার্থনা করা হয় আল্লাহ সেই দোয়ার জবাব দান করেন।” কিন্তু তিনি আমাদের বলেন নি সেই নামটি কী।
এই বিষয়ে আলেমদের নিকট থেকে দশটির অধিক অভিমত পাওয়া যায়। সবচেয়ে পরিচিত দুইটি অভিমত হলো – ‘ইসমুল্লাহিল আ’জাম’ হলো আল্লাহর দুইটি নামের সমন্বয় “আল-হাইয়ু, আল-কাইয়ুম।” আরেকটি জনপ্রিয় অভিমত হলো – “আল্লাহ” নামটি নিজেই ‘ইসমুল্লাহিল আ’জাম’। উভয় মতের পক্ষেই জোরালো যুক্তি এবং প্রমান রয়েছে।
যাইহোক, আপনি যদি লক্ষ্য করেন দেখবেন, কুরআনে বর্ণিত সকল দোয়ায় আল্লাহ নামটি ব্যবহার করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, চারটি প্রধানতম জিকিরে …..সবার জানা উচিত – চারটি প্রধানতম জিকির রয়েছে যাদেরকে কেন্দ্র করে অন্য জিকিরগুলো করা হয়ে থাকে। আর সে চারটি জিকির হলো – সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার। এই চারটি জিকির হলো মৌলিক জিকির। আমার সাথে আবার বলুন – সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার। এখন খেয়াল করে দেখুন, সবগুলো জিকিরে কী নাম রয়েছে? আল্লাহ। সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার।
ইনশাআল্লাহ চলবে…