অন্ধকার পরিবেশের দোহাই

যখন আল্লাহ বলেন – “وَاعْتَصِمُوا بِاللَّهِ – আর আল্লাহকে আঁকড়ে ধর।” (২২:৭৮) আরবিতে ‘ই’তেসাম’ মানে হলো – এমন কিছু একটা ধরে রাখা যা ছেড়ে দিলে আপনি মারা যাবেন। ইস্মার জন্য শক্ত করে ধরে রাখা। আর ইস্মা মানে প্রটেকশন, রক্ষা পাওয়া। ‘ই’তেসাম’ অর্থ রক্ষা পাওয়ার জন্য ধরে রাখা।

মনে করুন, আপনি নৌকা বা জাহাজে করে কোথাও যাচ্ছেন। আর পথিমধ্যে জাহাজটি ডুবে গেলো। আপনি ভাঙা কোনো কাঠের টুকরো বা মোটা কোনো দড়ি ধরে কোনো মতে ভেসে আছেন। এখন আপনি যদি এটা ছেড়ে দেন তাহলে ডুবে যাবেন।

আল্লাহ বলছেন বেঁচে থাকার জন্য আল্লাহকে শক্ত করে ধরে রাখো। বুঝতে পারছেন তো এর মানে কী?

এর মানে হলো, আপনি একটি ধর্মীয় পরিবেশের মাঝে ছিলেন। অন্যদের দেখাদেখি আপনিও দ্বীনের অনুসরণ করতেন। সেটা একটা ভালো পরিবেশ ছিল। কিন্তু এখন আপনি কলেজে ভর্তি হয়েছেন। ক্লাসে একমাত্র আপনিই দ্বীন পালন করেন। তাই এখন ভাবছেন, আমার দ্বীন পালনকারী বন্ধুরা তো আর আমার পাশে নেই। এখন দ্বীনের প্রতি আমি আর সেরকম টান অনুভব করি না। নামাজ পড়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছি, ধর্মের প্রতি সেই কানেকশনটা আর নেই।

না, না, না …. দ্বীন পালনের ক্ষেত্রে মানুষের সাহায্য থাকুক আর নাই থাকুক, সেই সাপোর্ট সিস্টেম টা চালু থাকুক আর নাই থাকুক, আপনাকে দ্বীন আঁকড়ে ধরে থাকতে হবে।

এক্ষেত্রে ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের কথা মনে রাখুন। তরুণ বয়সে ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম তাঁর দ্বীনকে আঁকড়ে ধরে রেখেছিলেন। আর সে সমাজে তিনিই ছিলেন একমাত্র ব্যক্তি, যে দ্বীনকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে রেখেছিলো। তার আশে পাশে কোনো সমর্থন ছিল না। তাঁর পরিবার তাঁকে সমর্থন দেন নি, তাঁর সমাজ তাঁকে সমর্থন দেন নি। তিনি ছিলেন একাই এক জাতি। তাই আল্লাহ একা ইব্রাহিম আলাইহিস সালামকে এক জাতি বলে অভিহিত করেছেন।

আমরা তাঁর অনুসারী। তাই আমরা এই অজুহাত দেখাই না যে, পরিবেশ খারাপ তাই আমরা আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করি না। আমাদের বন্ধুরা খারাপ আর তাই আমরাও খারাপ। কেউ কেউ বলে – ভাই আপনি জানেন না, আমার বন্ধুরা কেমন খারাপ!!

এটা কোনো অজুহাত হতে পারে না, আপনার তো ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের ঐতিহ্য ধারণ করার কথা। তমসাচ্ছন্ন এই সমাজে আপনারই তো আলো ছড়ানোর কথা। আপনার তো অজুহাত দেখানোর কথা নয়। আপনি এখানে এসেছেন অন্ধকার দূর করার জন্য অজুহাত দেখানোর জন্য নয়।