আলহামদুলিল্লাহ এখন আমেরিকাতে অনেক ভাল, তরুণ ইসলামিক স্কলার আসছেন যারা বেশ ভাল বক্তাও। এবং আমার মনে হয় তাদেরও এই ইস্যুগুলোতে আরো বেশি জোর দেওয়া দরকার। যাই হোক আমি হিজাবের একদম প্রাথমিক জরুরী বিষয়গুলো নিয়ে বলবো। এই বিষয়ে সবরকম মতামতকে যদি পাশেও সরিয়ে রাখি, তাহলেও নুন্যতম যেটুকু লাগবেই সেটা হচ্ছে, এটুকু অংশ ঢাকতে হবে (কপাল কান হয়ে চিবুক পর্যন্ত বুঝাচ্ছে) এবং মহিলাদের সামনের বুকের অংশ ঢিলাঢালা ভাবে ঢাকা থাকতে হবে। এটা হচ্ছে প্রথম অংশ। ‘জিলবাব’ হচ্ছে পোশাকের দ্বিতীয় অংশ। ও আরেকটি কথা যেটাকে আমরা হিজাব বলি, মানে মাথা বুক ঢাকার যে অংশ, কুরআনে এটিকে বলা হয়েছে খিমার। খিমার শব্দটি এসেছে খামার থেকে, যার আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে কোন কিছু ঢাকা। খামার দিয়ে কুরআনে অ্যালকোহলকেও নির্দেশ করা করা হয়েছে, কেন? কারন এটি মানুষের বোধ শক্তি ঢেকে দেয়। মানুষ তখন আর ঠিকভাবে চিন্তা করতে পারে না। শব্দটা বেশ মজার এই অর্থে যে অনেকে বলে আমি তো ওয়াইন খাচ্ছি না, বীয়ার খাচ্ছি। কারন সাধারণত খামার দিয়ে ওয়াইন বুঝানো হয়। কিন্তু আসলে যেই জিনিসই মানুষের বুদ্ধি লোপ করে তাই খামার। যাইহোক, খিমার মানে যা ঢেকে রাখে। এটা হচ্ছে উপরের অংশের পোশাক। এবার আসা যাক বাকী অংশের ব্যাপারে।
এটা আসলে হবার কথা একটা বাহ্যিক পরিচ্ছদ যা পুরোটা ঢেকে রাখে মানে নিচে কিছুর উপরে পড়তে হবে। এটা কি রকম হবে তার কিছু প্রাথমিক নিয়ম আছে, এটা এমন কিছু হবে যা আটোসাটো নয়, হবে ঢিলাঢালা। নিচের দিকে এটার দৈর্ঘ্য কেমন হবে সেটা নিয়ে ভিন্নমত আছে, কারো মতে হাটুর নিচ পর্যন্ত যেতে হবে কারো মতে একেবারে গোড়ালি পর্যন্ত যাবে। কিন্তু সর্বসম্মতি ক্রমে বলা যায় এটা বেশ লম্বা হতে হবে, একটি লম্বা ওভারগার্মেন্ট যা শরীরের সাথে লেগে থাকে না। আবার মতভেদ আছে যে এটা এক পিস হবে না দুই পীস হবে, অর্থাৎ একটা উপরের অংশ আরেকটি নিচের অংশ। নাকি একটাই হবে? এগুলাও হচ্ছে একাডেমিক আলোচনা। কিন্তু মূল বিষয়টি হচ্ছে এটা ঢিলাঢালা হতে হবে এবং কোনভাবেই আঁটসাঁট হতে পারবে না এমন একটি আউটার গার্মেন্ট হবে। আবার বলুন, লুজ? আঁটসাঁট আউটার গার্মেন্ট নয়। হ্যাঁ, জামাটা লুজ হতে হবে এবং শরীরের সাথে লেগে এমন নয়। হোস্টঃ সুতরাং তার সৌন্দর্য শুধু তার স্বামীর জন্য, অন্য কারো দেখার জন্য নয়। নু’মান আলী খান- হ্যাঁ, আর এটা সম্পূর্ণ যৌক্তিক।
এবং রাসুলুল্লাহ মুহাম্মদ (সাঃ) এর প্রখ্যাত হাদিস থেকে জানা যায় যে, উনি এক শ্রেণীর মহিলাদেরকে অভিশাপ দিয়েছেন, ‘পোশাক আছে, কিন্তু তারপরও পোশাকহীন’, এর অর্থ কি? আঁটসাঁট, স্বচ্ছ পোশাক। হোস্ট- সুতরাং কোন স্বচ্ছ পোশাক নয়? উস্তাদ- না, স্বচ্ছ পোশাক নয়। হোস্ট- টাইট জিন্স? টাইট জিন্স যদি পরেও তাহলেও তার উপর একটি ওভারকোট পরতে হবে। তার উপরে লম্বা কিছু পরতে হবে। যেন আকৃতি বোঝা না যায়। একজন মুসলিমাহর জন্য মূল বিষয়টি হচ্ছেঃ এর জন্য তার কোন রিসার্চ করারও দরকার নেই, সে শুধু নিজেকে প্রশ্ন করবে, যদি আমি আমার বাবা বা ভাইয়ের সামনে দাঁড়াই, তাহলে কি আমি এতটূকু অস্বস্তি বোধ করব? হ্যাঁ, কারো কারো জন্য এমন হবে যে তারা এমন পরিবেশে থাকে যে তাদের লজ্জাবোধ মরে যায়। তারা হয়ত বলবে, না আমার এভাবে বাবার সামনে দাঁড়াতে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু কোন ব্যক্তির যদি নুন্যতম নম্রতা অবশিষ্ট থাকে তাহলে তারা জানে, যেই পোশাকে কোন পার্টিতে যাচ্ছে সেটা পরে যদি তাদের বাবা, মা, ভাই বা চাচার সামনে পড়ে তাহলে তার অস্বস্তি বোধ করবে। ব্যাপারটি কি জানেন? যদি আপনার ভিতর থেকে এই ধরনের বোধ অনুভব করেন বুঝতে হবে যে আপনি ভুল রাস্তায় যাচ্ছেন। আপনার বিবেক কিন্তু আপনাকে অলরেডি ফতোয়া দিয়েই দিয়েছে। তাই যদি তাত্বিক আলোচনা সরিয়েও রাখি তাহলেও যেটা মূল বিষয় তা হল সম্মানজনক ভাবে পোশাক পরা। এবং এমনভাবে নিজেকে উন্মুক্ত না করা, যা কোন মার্জিত মহিলার পরিচয় হতে পারে।
হোস্টঃ প্রশ্ন হচ্ছে হিজাব পরার পর আচরণ নিয়ে, কেউ বলে তার হিজাব ভাল কিন্তু আচরণ আপত্তিকর আমি এমন হিজাব পরা মেয়ে দেখেছি, যে হিজাব পরে না এমন কারো থেকেও খারাপ আচরন করছে। উস্তাদঃ হ্যাঁ, আপনি খুব গুরুত্বপূর্ন একটি বিষয় সামনে এনেছেন। এর অন্য প্রান্তে আছে সেই ধরনের লোক যারা এগুলো পালন করে না, মনে করুন ধর্মের কোন দিক, এক্ষেত্রে ধরুন, হিজাবের কথাই। তারা হয়তো উদাহরণ টানবে তাদের যারা হিজাব করে কিন্তু ব্যবহার হয়তো ভাল না বা অন্য ধরনের খারাপ কিছু করে, হয়তবা গিবত করে বা প্রেম করে বা যাই হোক না কেন। যদিও তারা হিজাব করে আবার বোরখাও হয়ত পরে। যারা হিজাব করে না সেটা যেমন আমার জন্য উদাহরণ হতে পারে না, তেমনি আবার যারা হিজাব করেও খারাপ কিছু করছে, তাদের অজুহাত দেখিয়ে আপনি হিজাব পরা বাদ দিতে পারেন না। আপনার সামনের ভাল বা খারাপ উদাহরণ দেখিয়ে পার পাওয়া যাবে না, উদাহরণ ইতিমধ্যেই আমাদের সামনে রয়েছে। যারা আমাদের রোল মডেল তারা ইতিমধ্যেই এসেছেন এবং চলেও গিয়েছেন।
শেষ যে পয়েন্টটা আমি বলতে চাই, আমরা রোল মডেল আমাদের চারপাশে খুঁজবো না, কুরআনের প্রথম সুরাতেই বলা হয়েছে যে তাদেরকে রোল মডেল বানাতে যারা ইতি মধ্যেই চলে গিয়েছেন, ‘ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ ’ তাদের পথ যাদের উপর ইতিমধ্যেই অনুগ্রহ বর্ষণ করেছি, অতীত কাল। তাদের নয় যাদের উপর এখন অনুগ্রহ করছি, কারন আমরা জানিনা যে তারা কালকেই সঠিক পথে থাকবে কিনা। আমরা সৎ কর্মশীলদের উদাহরণ খুঁজি পূর্ববর্তীদের মাঝে। পুরো কুরআন জুড়েই তাদের গল্প যারা ইতিমধ্যেই চলে গিয়েছেন। আমরা তাদেরকে আদর্শ হিসাবে নিব। এমন কারো উপর নয়, যারা হয়তো আমাদেরকে প্রতিনিয়ত হতাশ করবে এবং শেষ পর্যন্ত আমরা আমাদের বিশ্বাসই নষ্ট করে ফেলব। সময় প্রায় শেষ, আমাদের বলুন, আপনি বলেছেন অনেক বোন জানেন যে হিজাব পালন করা অবশ্য কর্তব্য। তারপর তারা হিজাব ছেড়ে দেয়। তখন হিজাব পালন করা অন্য বোনরা এটা দেখে দোটানায় পড়ে যায়, তখন সে ভাববে এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা। সবাই খুলে ফেললেও আমি পরা অব্যাহত রাখবো। কি বলেন, আল্লাহ কি ঐ লোকগুলোর মাধ্যমে তাকে পরীক্ষা করছেন? সে অন্যদের দেখে হিজাব পরা ছেড়ে দেয়।
উস্তাদঃ অনেক সময় কি হয়, কেউ হয়ত হিজাব ছেড়ে দিয়েছে, কিন্তু তার চার পাশের হিজাবী বোনরা তার দিকে বিদ্রুপের দৃষ্টিতে তাকায়। তখন সে ভাবে ‘ও এরা তো আমাকে বিদ্রুপ করছে, আমি আর এদের সাথে ঘুরবো না’। সে অন্য কোন গ্রুপে মিশে যায়, এখন তার আসে পাশে এমন কেউও আর নেই যারা তাকে হিজাবের ব্যাপার মনে করিয়ে দিবে। এটা সেই মেয়েগুলোরই দোষ যারা তার হিজাব ছাড়ার পর তার সাথে বিরুপ আচরণ করা শুরু করে, বরং তাদের এর প্রতি সহানুভুতিশীল হওয়া দরকার ছিল। এটাই হচ্ছে কম্যুনিটির কাজ। কাল্ট(cult) বেরিয়ে যাওয়া কাউকে নিন্দা করে, কিন্তু কম্যুনিটির কাজই হল অন্যকে ভুল পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করা। আমাদেরকে এক কম্যুনিটিতে পরিণত হতে হবে, cult নয়। আমাদের এমন হওয়া যাবে না যে, মানুষ আমাদের কথার ভয়ে দূরে সরে যাবে। আর এরূপ করার মানেই হলো আমরা কাল্টে পরিণত হয়েছি। তাই আপনার যদি এরকম কোন বান্ধবী থাকে তাহলে তাকে দূরে না সরিয়ে তার বন্ধু হন, তার সাথে হিজাব নিয়ে আলোচনার দরকার নেই, বন্ধু হন। এখন তার শুধু একজন বন্ধু দরকার। তার হিজাব পরা দরকার কি না সেটা নিয়ে তাকে লেকচার দেবার দরকার নেই, কারন সে তা জানে। যেটা তার দরকার তা হচ্ছে কিছুটা স্বস্তি, এমন একজন যে তার সমস্যাটা বুঝবে, সময়ের সাথে যখন তার অন্তর নরম হবে, যেটা একমাত্র আল্লাহর হাতে, আল্লাহ তাকে দ্বীনের সব ব্যাপারে পথ দেখাবেন, শুধু হিজাবের ব্যপারেই নয়। আমাদের সময় দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। বারাকাল্লাহু ফিকুম।