আল্লাহর সিংহাসন

সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য। যিনি অস্তিত্বশীল সকল কিছুর অস্তিত্বদানকারী এবং তাঁর সৃষ্টির প্রতি সবচেয়ে দয়াবান। আবার তিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারীও বটে। তিনিই একমাত্র সত্ত্বা যিনি আমাদের উপাসনা পাওয়ার যোগ্য। যার কোন শরিক নেই, অংশীদার নেই, কোন পুত্র নেই, কোন কন্যা নেই। কারো সাথে তিনি পরামর্শ করেন না, কোন ব্যক্তি বা কোন কিছুর সাথে তাঁর কোন তুলনা নেই।

সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য। তিনি সকল সার্বভৌম ক্ষমতার দাবীদারদের বাদশা। তাঁর সৃষ্টির জন্য আইন প্রণয়নের ক্ষমতা একমাত্র তাঁরই। তিনি জীবন দানকারী, আবার তিনিই মৃত্যু ঘটান। কিন্তু তাঁর কোন মৃত্যু নেই। কারণ তিনি চিরঞ্জীব, নিজেই অস্তিত্ববান, চিরস্থায়ী এবং অদ্বিতীয়।

সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য। সব কিছুর উপর যার ক্ষমতা রয়েছে। আর বাস্তবে কারো কোন ক্ষমতা, কোন শক্তি, কোন প্রভাবই কারো কোন উপকার বা ক্ষতি করতে সমর্থ নয় একমাত্র তাঁর হুকুম ছাড়া। তিনিই এই জটিল বিশ্ব ব্যবস্থাপনা তৈরি করেছেন। দৃশ্যমান এবং অদৃশ্যমান, স্পষ্ট এবং অস্পষ্ট, এই পৃথিবী – এই পৃথিবীর উপরে যা কিছু আছে এবং এই পৃথিবীর ভেতরে যা কিছু আছে সব কিছুই তাঁর সৃষ্টি। তিনিই সেই সত্ত্বা যিনি তাঁর সকল নবী-রাসুলদের (আঃ) পাঠিয়েছেন একই নির্ভেজাল একত্ববাদের পয়গাম নিয়ে। যার অর্থ হল কেউই আমাদের উপাসনা পাওয়ার যোগ্য নয়, কেউই আমাদের আনুগত্য পাওয়ার যোগ্য নয় একমাত্র সর্বশক্তিমান আল্লাহ ছাড়া। যিনি এক, অদ্বিতীয় এবং যার কোন অংশীদার নেই। (খালিদ ইয়াসিন)

সুদূর অতীতে যে সব ঐশীবাণী পৃথিবীকে পরিবর্তন করেছিল… সে সব অঞ্চলে নবীদের পাঠানো হয়েছিল – আমরা জানি সে ঐশী বাণীগুলো আর অক্ষত নেই, পরিবর্তিত হয়ে গেছে। এমনকি যে নবীগণ আলাইহিমুস সালাম এ বাণীগুলো নিয়ে এসেছিলেন অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাঁদের নামও হারিয়ে গেছে। আমরা শুধু সাধারণভাবে বিষয়টা জানি। কারণ আল্লাহ কুরআনে আমাদের বলেছেন – “আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর এবাদত কর এবং তাগুত থেকে নিরাপদ থাক।”

কিন্তু এই গুরুত্বপূর্ণ বাণীগুলো ইসলামের মাধ্যমে সংরক্ষিত করা হয়েছে। আর এটাকে এমনভাবে সংরক্ষিত করা হয়েছে যেভাবে পূর্বে কখনো সংরক্ষিত করা হয়নি। এই কারণে না যে, পূর্বের মূল বার্তাটি ভিন্ন ছিল। বরং আমরা জানি সকল ক্ষেত্রেই মূল বার্তাটি ছিল অভিন্ন। তাহলে এভাবে সংরক্ষণের আসল কারণ কি? কারণটি হল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম এর পর আর কোন নবীর আগমন ঘটবে না। আর তাই এই বার্তাটির সংরক্ষণ করা অত্যাবশ্যক। এটাকে অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে, বাঁচিয়ে রাখতে হবে এমনভাবে যেভাবে পূর্বের কোন বার্তাকে সংরক্ষিত করা হয়নি। (ডঃ বিলাল ফিলিপ্স)

আমি নাস্তিকদের বলি, এ ব্যাপারে তোমরা কি বলবে – যেটা তোমরা মাত্র ৪০ বছর আগে জেনেছ যাকে তোমরা বিগ ব্যাংগ বল। আর এই বিগ ব্যাংগ এর কথা এই বইতে উল্লেখ করা আছে – যেটা আমি পড়ি – মহিমান্বিত কুরআন। এটা ১৪শ বছর আগেই কুরআনের ২১ তম সূরা, সূরা আম্বিয়ার ৩০ নাম্বার আয়াতে বলে দেয়া হয়েছে যে, “যারা কুফরী করে তারা কি ভেবে দেখে না যে, আসমানসমূহ ও যমীন ওতপ্রোতভাবে মিশে ছিল, অতঃপর আমি উভয়কে পৃথক করে দিলাম।” একেই তোমরা বিগ ব্যাংগ বলে থাক।
(ডাঃ জাকির নায়েক।)

আমি এটাকে এভাবে বোঝার চেষ্টা করি – যেমন আমি একটি স্প্রিং কে ক্রমাগত চাপ দিয়ে একদম ছোট করে ফেলি, আর এটা করার মাধ্যমে আমি এই স্প্রিং এর মধ্যে প্রচণ্ড শক্তি সঞ্চয় করি, এর পর যখন আমি এটা ছেড়ে দেই এটা প্রচণ্ড শক্তিতে ফেটে পড়ে। (লরেন্স ক্রাউস)

মহাবিশ্ব সৃষ্টি সম্পর্কে আপনারা যেটা মাত্র ৪০ বছর আগে জেনেছেন, তা ইতিমধ্যে ১৪০০ বছর পূর্বে মহিমান্বিত কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। কে এভাবে এটা কুরআনে বলতে পারে? নাস্তিকরা বলবেন- হতে পারে কেউ একজন এটা লিখেছে, হতে পারে এটা কুরআনের একটি অপ্রত্যাশিত সাফল্য। হতে পারে এটা একটা অনুমান। (ডাঃ জাকির নায়েক।)

একজন মানুষ সে যেই হউক না কেন, যেখানেই থাকুক না কেন বা সে যাই করুক না কেন তার মনে এই কৌতূহল থাকবেই যে – কেন আমি এই পৃথিবীতে? কিভাবে আমি এখানে আসলাম? আমার কি কোন লক্ষ্য আছে? যদি থাকে কি সেটা?

একমাত্র যিনি আপনার এই প্রশ্নের জবাব দিতে পারবেন তিনি হলেন সৃষ্টিকর্তা নিজে। যদি একজন সৃষ্টিকর্তা থেকে থাকেন, এটা একমাত্র তাঁর পক্ষেই বলা সম্ভব যে কেন আমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে? তিনি আমাদের কাছে কি প্রত্যাশা করেন? আমাদের এই জীবনের আসল মানে কি? হযরত আদম আলাইহিস সালাম থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত আল্লাহ সমগ্র মানব জাতিকে দেখিয়েছেন যে তিনি মানুষের কাছ থেকে কি চান। আর এটা খুবই সহজ একটা বিষয়। আর তা হল – “তাঁর কোন সমকক্ষ বা অংশীদার সাব্যস্ত করা ব্যতীত একমাত্র তাঁর উপাসনা করা।”

প্রকৃত পক্ষে আমরা জানি যে, এই জীবন হল আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের জন্য একটি পরীক্ষা। এই জন্যই আমরা জন্ম গ্রহণ করি, আর এই জন্য আমরা মৃত্যুবরণ করি। কারণ আমাদের পরীক্ষা শুরু করার জন্য যেমন একটা সময় থাকা দরকার, ঠিক তেমনি পরীক্ষা শেষ হওয়ার জন্যও একটা সময় থাকা দরকার। পরবর্তী জীবনে … এই জীবনের পর কেউ আর কখনো মৃত্যুবরণ করবে না। একজন খারাপ মানুষ বা একজন ভাল মানুষ উভয়কেই পুনর্জীবিত করা হবে। এবং তারপর তারা ক্রমাগত বেঁচে থাকবে, এই বেঁচে থাকাটা হয় সুখের হবে অথবা কষ্টের হবে। এই পরীক্ষার ফলাফলের উপর ভিত্তি করে – নবী ইব্রাহীমের প্রভুর উপাসনা। এটাই ছিল সকল নবীর শিক্ষা। (ইউসুফ এস্টেস)

আরশ এবং কুরসির রব। আমরা মহাবিশ্বের প্রভুর কথা বলি। যখন আমরা বলি- আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন – আমরা এই সমগ্র মহাবিশ্ব বা তা ছাড়িয়ে আরও যা কিছু আছে তার প্রভুর কথা বলছি। এই সমগ্র মহাবিশ্ব এবং তা ছাড়িয়ে আরও যা কিছু আছে। আমরা এই দুনিয়ায় বাস করি। এই দুনিয়ার সৌন্দর্য দেখে আমরা মুগ্ধ হই। আর আসলেই আল্লাহ এই দুনিয়াকে অত্যন্ত সুন্দর করে সৃষ্টি করেছেন। এই দুনিয়ার সৌন্দর্য দেখে আমরা মুগ্ধ হই। বিলিয়ন বিলিয়ন মানুষ এই দুনিয়ায় বাস করছে। বর্তমানে ৬ বিলিয়নের বেশি মানুষ এখানে বসবাস করছে। আল্লাহর এই পৃথিবী এত বিশাল যে – এখনও এই দুনিয়াতে আরও বিলিয়ন বিলিয়ন মানুষ বসবাস করতে পারবে। কিন্তু মহাবিশ্বে আল্লাহর অসংখ্য সৃষ্টির তুলনায় এই দুনিয়ার অবস্থান কোথায়?

এই দুনিয়া খুবই তুচ্ছ। আল্লাহর কাছে এটা অর্থহীন। এর কোন দাম নেই, এটা মূল্যহীন। এটা এতই গুরুত্বহীন যে … সূর্যের সাথে তুলনা করুন। সূর্য মাত্র একটা নক্ষত্র। আপনারা আমার চেয়ে বেশি বিজ্ঞান জানেন। আপনারা আমার চেয়ে ভাল বলতে পারবেন। আপনারা যদি এই পৃথিবীকে সূর্যের উপর প্রতিস্থাপন করতে যান … তাহলে আপনারা ১৩ লক্ষ্য পৃথিবীকে সূর্যের উপর বসাতে পারবেন। ১৩ লক্ষ্য পৃথিবী সূর্যের ভেতর!! আল্লাহু আকবার। আল্লাহ মহান। সূর্য হল মাত্র একটা নক্ষত্র। একটা নক্ষত্র। এমন অনেক নক্ষত্র রয়েছে যেগুলো সূর্যের চেয়ে মিলিয়ন গুন বড়। আপনারাই আমাকে বলেন যে, মিলিয়ন মিলিয়ন নক্ষত্র মিলে একটা গ্যালাক্সি হয়। আপনারা আরও বলেন- মহাবিশ্বে এইরকম অসংখ্য, অগণিত গ্যালাক্সি রয়েছে।

আপনাদেরকে আমি বলি, মনোযোগ দিয়ে শুনুন- আমাদের উপরে এই মহাকাশে আপনারা যা কিছুই দেখেন, যা কিছু – যখন আপনি মাথা উত্তোলন করেন আর আকাশের দিকে তাকান, তারপর আপনি যা কিছু দেখেন – এই অসংখ্য, অগণিত গ্যালাক্সি – আমি আপনাদের বলছি – এর সব কিছুই হল প্রথম আসমান। এর সব কিছুই প্রথম আকাশে। আর মহান আল্লাহ হলেন সাত আকাশের সৃষ্টিকর্তা।

সাত আকাশ! প্রথম আসমান আর দ্বিতীয় আসমানের মাঝে দূরত্ব হল – ৫০০ বছরের দূরত্ব। প্রথম আকাশ আর দ্বিতীয় আকাশের দূরত্ব ৫০০ বছরের। আর সেই দূরত্বটা কিসের গতিতে অতিক্রম করা যাবে? সেটা একমাত্র আল্লাহ জানেন। একমাত্র আল্লাহ জানেন। কিন্তু প্রথম আকাশ থেকে দ্বিতীয় আকাশে যেতে ৫০০ বছর সময় লাগবে। এভাবে দ্বিতীয় আকাশ থেকে তৃতীয় আকাশ, তৃতীয় আকাশ থেকে চতুর্থ আকাশ, চতুর্থ আকাশ থেকে পঞ্চম আকাশ, পঞ্চম আকাশ থেকে ষষ্ঠ আকাশ, ষষ্ঠ আকাশ থেকে সপ্তম আকাশ – প্রত্যেক বার ৫০০ বছর সময় লাগবে। সপ্তম আকাশের পর কি আছে? আপনারা সবাই আয়াতুল কুরসি পড়েন, জানেন। সপ্তম আকাশের পর পাবেন আল্লাহর কুরসি, আল্লাহর সিংহাসন। এই যে সাত আসমানের কথা এতক্ষণ আমরা বললাম- আল্লাহর কুরসির তুলনায় এগুলো অস্তিত্বহীন, অর্থহীন।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি হাদিসে এর উদাহরণ দিয়েছেন – তিনি সাত আকাশের তুলনায় আল্লাহর কুরসির বড়ত্ব কেমন তা আমাদের বোঝাতে একটা উদাহরণ দিয়েছেন। আপনার হাতের আঙ্গুলে পরিহিত ছোট্ট এই আংটি টি নিয়ে – ধরুন – পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মরুভূমি সাহারা মরুভূমিতে রাখুন। আপনার আঙ্গুল থেকে খুলে নিয়ে এই আংটি টি সাহারা মরুভূমিতে রাখার পর – সাহারা মরুভূমির সাথে এই আংটির তুলনা করে দেখুন। কি দেখেন? আংটি টি সাহারা মরুভূমির তুলনায় কিছুই না। কিছুই না। এখন এই উদাহরণে সাত আসমান হল আপনার হাতের আংটি আর আল্লাহর কুরসি হল সাহারা মরুভূমি!!

আল্লাহর কুরসির পর আপনি পাবেন আল্লাহর আরশ। আপনি পাবেন আল্লাহর আরশ। আমাদের বোঝার জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবার উদাহরণ দিয়েছেন। সেই আংটি টি নিয়ে আবার মরুভূমিতে রাখুন। এখনকার উদাহরণে আংটি টি হল আল্লাহর কুরসি আর আল্লাহর আরশ হল মরুভূমি। তাহলে আল্লাহর আরশের তুলনায় কুরসির আয়তন কেমন? কিছুই না। তারপর আছেন মহান ফেরেশতারা যারা আল্লাহর আরশ বহন করে চলছেন। তাঁদের মাথা হল সপ্তম আকাশে আর তাঁদের পা হল নিম্নতম পৃথিবীতে।

আমার প্রিয় বন্ধুরা, তারপর আপনি পাবেন আরশ কুরসির প্রভুকে। “চক্ষুসমূহ তাকে আয়ত্ব করতে পারে না। আর তিনি চক্ষুসমূহকে আয়ত্ব করেন। আর তিনি সূক্ষ্মদর্শী, সম্যক অবহিত।” (সূরা আনআম – ১০৩ ) তিনি আমাদের সাধ্যের বাইরে। আল্লাহর আকৃতি, আল্লাহ কে, আল্লাহ কেমন, আল্লাহর মহত্ত্ব – এর সবই আমার এই ক্ষুদ্র মস্তিষ্কের উপলব্ধির বাইরে।

এই সেই মহান সত্ত্বা যার আদেশ নিষেধ আমি আপনি প্রতিনিয়ত অমান্য করে চলছি!! (শায়েখ আহমাদ আলী)

আয়াতুল কুরসির বঙ্গানুবাদ।

‘’আল্লাহ! তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তিনি চিরঞ্জীব, সব কিছুর ধারক। তন্দ্রা ও নিদ্রা তাঁকে স্পর্শ করে না। নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে যা কিছু রয়েছে সবই তাঁর। কে আছে এমন, যে তাঁর অনুমতি ব্যতীত তাঁর নিকট সুপারিশ করতে পারে? সম্মুখের অথবা পশ্চাতের সবই তিনি অবগত আছেন। একমাত্র তিনি যতটুকু ইচ্ছা করেন তা ব্যতীত, তাঁর জ্ঞানের কিছুই তারা আয়ত্ত করতে পারে না। তাঁর কুরসী আসমানসমূহ ও যমীন পরিব্যাপ্ত করে আছে এবং এ দু’য়ের রক্ষণাবেক্ষণ তাঁকে ক্লান্ত করে না। তিনিই সর্বোচ্চ, মহীয়ান।’’

সুবহানাল্লাহি ওয়াবি হামদিহি সুব হানাল্লাহিল আজিম। আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউউন কারিম, তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আ’ন্না।