চেনা বন্ধুরা যখন জান্নাতি বা জাহান্নামী

জানেন, মানুষ যখন খুশিতে থাকে তখন তারা কি চিন্তা করে? তারা বসে বসে ভাবে ইসস.. জীবনটা যদি সব সময় এরকম হত। তারা জানে যে এরকম হবার নয়, জীবনের বাঁকে বাঁকে সমস্যা আছে। কিছু না কিছু সমস্যা হবেই, শারীরিক বা মানসিক, কিছু একটা হবেই। জীবনে আর কোন সমস্যাই আসবে না এটা যদি জানা যেত!! আমার অত্যন্ত অত্যন্ত প্রিয় একটা বর্ণনা জান্নাত সম্পর্কে, এটা সুরা সাফফাত থেকে (আয়াত ৫০-৫৯) এক ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করলো এবং সে দেখলো সেখানে তার বন্ধুরাও আছে। তারা একজন একজনকে দেখে উচ্ছসিত হয়ে বলল ”আরে তুমিও সফল হয়েছ!!” তারপর তারা একে অপরকে অভিনন্দিত করবে। তারা একজন আরেকজনকে বলতে থাকবে, ও আল্লাহ! তুমি, ও তুমিও!! তারা আবার একজন আরেকজনের সাথে পরিচিত হতে থাকবে। আমি তোমাকে ওখানে চিনতাম।

এরপর সে চিন্তা করবে আচ্ছা আমার সবচেয়ে ভাল বন্ধু যে তার কি হল? তাকে তো দেখছি না। অর্থাৎ সে তার পুরোনো জীবনের কথা স্মরণ করবে আর ভাববে যে তার এক বন্ধু এখানে নেই। তখন সে বাকীদেরকে জিজ্ঞাসা করবে তোমরা কি জান ওর কি হয়েছে? কিন্তু কেউই এই ব্যাপারে জবাব দিতে চাইবে না। কিন্তু সে আসলেই জানতে চায় যে তার পুরাতন বন্ধুর কি হল। ব্যাপারটা এমন হবে যে আল্লাহ জান্নাতে একটা জানালা খুলে দিবেন যাতে সে জাহান্নামে তার বন্ধুকে দেখতে পায়। এই ধরনের একটা চিত্রই ৩৭ নম্বর সুরাটিতে বর্ণিত হয়েছে। সে দেখবে যে তার সবচেয়ে ভাল বন্ধু জাহান্নামে জ্বলছে। হ্যাঁ, আপনি জান্নাত থেকে এটি দেখতে পারবেন, কারণ জান্নাতে আপনি যা চাইবেন তাই পাবেন। আর সে তার বন্ধুকে দেখতে চাইলো আর তার ইচ্ছাও পূরণ হল। তাই সে জাহান্নামের একটি ঝলক দেখতে পেল এবং সেখানে তার বন্ধুকে দেখলো। তখন সে বলবে إِن كِدتَّ لَتُرْدِينِ তুমিও আমাকে প্রায় ওখানেই নিয়ে যাচ্ছিলে। সে তার বন্ধুকে দেখলো কিন্তু সে এটা বলেনি যে তুমি ঠিক আছ? আমি কি তোমাকে টেনে তুলবো? না, সে এটা বলেনি। বরং সে বলবে- ওরে তুমিও তো আমাকে তোমার সাথের পার্টিতে নিয়ে যাচ্ছিলে। (এই সেই ব্যক্তি যে হয়তো দুনিয়াতে তাকে নাইট ক্লাবে নিয়ে যেতে চেয়েছিল)। তুমি তো প্রায় আমাকে রাজী করিয়েই ফেলেছিলে।

তুমিই তো সেই ব্যক্তি যে আমার ধর্ম নিয়ে মজা করতে। তুমিই বলতে যে ‘আমি খুব গোঁড়া, কি বল এসব? যে আমরা আবার জান্নাতে ফেরত যাব, অথবা জাহান্নাম বলে একটা ব্যাপার আছে’। তুমিই সে যে আমার ধর্ম নিয়ে মস্করা করতে। তুমিই তো সেই ব্যক্তি। ভেবে দেখুন, যে বলছে সে কিন্তু জান্নাতে আছে, আর সে ভাবছে যে আল্লাহ বাঁচিয়েছেন আমি তোমার কথা শুনিনি। কারণ এক সেকেন্ডের জন্য হলেও হয়তো আমি তোমার কথা শুনেই ফেলছিলাম প্রায়। এখন জানালা বন্ধ হয়ে গেল। কিন্তু এই ব্যক্তি মাত্রই জাহান্নামের একটা ঝলক দেখলো। কি মনে হয়? সে কি শকড হয়নি বা ভয় পায়নি? পেয়েছে, যদিও সে জান্নাতে আছে, সে মাত্রই জাহান্নাম দেখলো। এরপর সে জান্নাতে ফেরত আসলো আর তার মনে হলো যেন এই প্রথম সে এখানে আসলো। কুরআনের ভাষা, অসাধারন। ‘أَفَمَا نَحْنُ بِمَيِّتِينَ’ “এখন আমাদের আর মৃত্যু হবে না’ সত্যি!!! সে কিন্তু ইতিমধ্যেই এটা জানে। কারণ সে জান্নাতে আছে। কিন্তু যেহেতু মাত্রই সে জাহান্নামের এক ঝলক দেখলো- জান্নাতের প্রথম যে জিনিসটা সে আবার নতুন করে অনুধাবন করলো সেটা হল যে আমরা আর কক্ষনো মৃত্যুবরণ করব না। সেই প্রথম বারের মৃত্যু ছাড়া যেটার স্বাদ আমরা আস্বাদন করেছি।

আর দ্বিতীয় যে জিনিসটার মর্ম সে অনুধাবন করতে পারল তা হল, -আমি চাই যে আপনি জিনিসটা কল্পনা করুন- সে জান্নাতের কোন জিনিসটা সবচেয়ে ভালবাসে? ভাবুন ওখানে বাগান আছে, প্রাসাদ আছে, বন্ধুরা আছে, নহর আছে, যা মন চায় সেরকম খাবার আছে, কিন্তু এত কিছু সত্ত্বেও দ্বিতীয় যেই জিনিসটার উল্লেখ সে করবে তা হল, প্রথমটা কি ছিল, যে আমরা আর মরবো না, আর দ্বিতীয়টা হল আমাদের উপর কোন শাস্তি নেই। আর কোন যন্ত্রনা নেই। এটাই দ্বিতীয় জিনিস যেটা ভেবে সে উদ্বেলিত। কেন? কারণ সে মাত্রই দেখেছে জাহান্নামে কি ভয়ংকর যন্ত্রণা হচ্ছে। সুবহানাল্লাহ!!

সূরা আস সাফ্ফাতের ৩৮ – ৬৮ আয়াতের বঙ্গানুবাদঃ

“তোমরা অবশ্যই বেদনাদায়ক শাস্তি আস্বাদন করবে। তোমরা যা করতে, তারই প্রতিফল পাবে। তবে তারা নয়, যারা আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দা। তাদের জন্যে রয়েছে নির্ধারিত রুযি। ফল-মূল এবং তারা সম্মানিত। নেয়ামতের উদ্যানসমূহ। মুখোমুখি হয়ে আসনে আসীন। তাদেরকে ঘুরে ফিরে পরিবেশন করা হবে স্বচ্ছ পানপাত্র। সুশুভ্র, যা পানকারীদের জন্যে সুস্বাদু। তাতে থাকবে না ক্ষতিকর কিছু* এবং তারা এগুলো দ্বারা মাতালও হবে না। তাদের কাছে থাকবে নত, ডাগর ডাগর সুন্দর চক্ষু বিশিষ্টা সুন্দরীরা (হুরগণ)। যেন তারা সুরক্ষিত ডিম।

অতঃপর তারা একে অপরের দিকে মুখ করে জিজ্ঞাসাবাদ করবে। তাদের একজন বলবে, আমার এক সঙ্গী ছিল। সে বলত, ‘তুমি কি সে লোকদের অন্তর্ভুক্ত যারা বিশ্বাস করে’। ‘আমরা যখন মরে যাব এবং মাটি ও হাড়ে পরিণত হব তখনও কি আমাদেরকে প্রতিফল দেয়া হবে’? আল্লাহ বলবেন, ‘তোমরা কি উঁকি দিয়ে দেখবে?’ অতঃপর সে উকি দিয়ে দেখবে এবং তাকে জাহান্নামের মাঝখানে দেখতে পাবে। সে বলবে, আল্লাহর কসম, তুমি তো আমাকে প্রায় ধ্বংসই করে দিয়েছিলে। আমার পালনকর্তার অনুগ্রহ না হলে আমিও যে গ্রেফতারকৃতদের সাথেই উপস্থিত হতাম। এখন আমাদের আর মৃত্যু হবে না। আমাদের প্রথম মৃত্যু ছাড়া এবং আমরা শাস্তি প্রাপ্তও হব না। নিশ্চয় এই মহা সাফল্য। এমন সাফল্যের জন্যে পরিশ্রমীদের পরিশ্রম করা উচিত।

এই কি উত্তম আপ্যায়ন, না যাক্কুম বৃক্ষ? আমি যালেমদের জন্যে একে বিপদ করেছি। এটি একটি বৃক্ষ, যা উদগত হয় জাহান্নামের মূলে। এর গুচ্ছ শয়তানের মস্তকের মত। কাফেররা একে ভক্ষণ করবে এবং এর দ্বারা উদর পূর্ণ করবে। তদুপরি তাদেরকে দেয়া হবে ফুটন্ত পানির মিশ্রণ, তারপর তাদের প্রত্যাবর্তন হবে জাহান্নামের আগুনে।”