আল্লাহর ভালোবাসার নিদর্শন


মনোযোগ দিয়ে শুনুন প্রিয় ভাই এবং বোনেরা, আপনি আল্লাহর নিকটবর্তী হতে চান? আপনি সুখী হতে চান? তাহলে শুনুন, “আমার বান্দার কৃত কর্মসমূহের মধ্যে আমার নিকট ফরজ কাজসমূহ আদায় করার চেয়ে বেশী ভালোবাসাপূর্ণ কিছু নেই।” ফরজ কাজসমূহ যেমন হিজাব, দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা, রোজা রাখা…। এগুলো ফরজ। এগুলো আমাদের অবশ্যই করতে হবে। এগুলো না করলে আমাদের শাস্তি পেতে হবে। আল্লাহ বলছেন, এই কাজগুলোই আমার নিকট সবচেয়ে প্রিয় বিশ্ব জগতের সব কিছুর চেয়ে। এজন্যই আমি এগুলো তোমাদের উপর ফরজ করেছি। কারণ আমি এই কাজগুলো ভালোবাসি।

এই কাজগুলো সম্পন্ন করার মাধ্যমে তোমরা আমার কাছাকাছি থাকবে। এজন্যই আমি শাস্তি প্রদান করি, কারণ আমি এটা মেনে নেবো না যে আমার বান্দারা আমার কাছ থেকে দূরে সরে পড়ুক। আমি শয়তানের নিকট তোমাদের হারিয়ে যাওয়া মেনে নেবো না। তাই আমি এগুলো বাধ্যতামূলক করেছি।

দ্বিতীয়ত, তিনি বলেন, “আমার বান্দারা স্বত:স্ফূর্ত (নফল/সুন্নাহ) কাজসমূহ করার মাধ্যমে আমার আরও নিকটবর্তী হতে থাকে।” এমন কাজ যেগুলো আল্লাহ আমাদের উপর বাধ্যতামূলক করেননি। আমরা স্বত:স্ফূর্তভাবেই সেগুলো করে থাকি। যেমন – সুন্নাত নামাজ, জিকর, মুসলমানদের সাহায্য করা, দোয়া করা, ভালো কথা বলা, স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে হাসা, স্ত্রীকে সাহায্য করা, নিজের বাচ্চাকে খাওয়ানো – আপনি পুরুষ হলেও সকালে উঠে বাচ্চাদের খাওয়ানো – এটাও ইবাদাত।

“আমার বান্দারা এসব স্বেচ্ছাকৃত কাজসমূহের মাধ্যেম আমার আরও নিকটবর্তী হতে থাকে। অবশেষে আমি তাদের ভালোবাসতে শুরু করি। আর যখন আমি তাকে ভালবাসতে শুরু করি, তখন আমি তার কান হয়ে যাই যা দিয়ে সে শ্রবণ করে, তার দৃষ্টিশক্তি হয়ে যাই যা দিয়ে সে দেখে, তার হাত হয়ে যাই যা দিয়ে সে স্পর্শ করে, তার পা হয়ে যাই যা দিয়ে সে হাঁটাচলা করে বা দাঁড়ায়। যদি সে কিছু চায়, আমি তাঁকে প্রদান করি। আর যদি সে আমার কাছে নিরাপত্তা চায়, আমি তাকে নিরাপত্তা দান করি।”

আপনারা জানেন তো কান বা চোখ হওয়ার মানে কী? হাত এবং পা হওয়ার মানে কী? এর মানে হলো – হঠাৎ করে আপনি অনুভব করেন যে আপনার কান শুধু ভালো কিছু শুনতে চায়। আপনারা পপ মিউজিক সম্পর্কে তো জানেন? ইসলাম এটা শুনতে নিষেধ করে, আর আমরা জানি কেন। একসময় আপনার কান এই মিউজিক শোনা খুবি পছন্দ করতো। যখন আপনি আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত বাধ্যতামূলক বা ফরজ কাজ সমূহ করতে শুরু করেন এরপর বিভিন্ন ভালো কাজ যেমন দান খয়রাত এবং এরকম আরও অন্যান্য কাজ করতে শুরু করেন, তারপর হঠাৎ করে আপনার অন্তর এ ধরণের মিউজিক শোনা অপছন্দ করতে শুরু করে কেউ কিছু বলা ছাড়াই। আপনি জানেন না কেন? আপনার কান এটা শুনতে অস্বীকৃতি জানায়। কিন্তু আপনি কুরআন শুনে প্রশান্তি লাভ করেন। তারপর আপনি এমন কথা শুনে প্রশান্তি লাভ করেন, যা আল্লাহকে সন্তুষ্ট করে।

কোন আড্ডায় কেউ যদি কারো গীবত করতে শুরু করে আপনি প্রবল অস্বস্তি অনুভব করেন। আপনি শুনতে চান না। কেউ বাজে কথা বললেও আপনি শুনতে চান না। কেউ গালি-গালাজ করতে শুরু করে, আপনি শুনতে চান না। কেউ যদি বলে রাসূল (স) বলেন…আপনি সাথে সাথে কান খাড়া করে শুনতে চান। আর আপনার চোখের ক্ষেত্রে… আপনি খারাপ কিছু দেখলে চোখ সরিয়ে নেন। আপনি অস্বস্তিে পড়ে যান। কিন্তু যে আল্লাহকে স্মরণ করে না, সে এতে আনন্দ খুঁজে পায়, লালসা খুঁজে পায়। কিন্তু আল্লাহ যার চোখ হয়ে যান, তার অন্তর ঈমানে পরিপূর্ণ হয়ে পড়ে। আপনার হাত এমন কিছু স্পর্শ করতে চায় না যা হারাম। আঘাত করতে চায় না যা হারাম, চুরি করতে চায় না। শুধু ভালো কিছু স্পর্শ করতে চায়। আপনার পা আল্লাহ ভালোবাসেন শুধু এমন স্থানে যেতে পছন্দ করে। আমি হয়ে যাই তার দৃষ্টি, তার শ্রবণশক্তি এবং তার পা। আল্লাহ সুব হানাহু ওয়া তায়ালা আমাদের তাদের অন্তর্ভুক্ত করুন। আমিন।