মুসলিমরা কি এলিয়েনে বিশ্বাস করে?

মহাকাশের কাল্পনিক জীব অর্থাৎ এলিয়েন সম্বন্ধে আমাদের বিশ্বাস কি? মুসলিমরা কি এলিয়েন বিশ্বাস করে? আল্লাহ কি এই ধরনের কিছু সৃষ্টি করেছেন? নাকি আমরাই আল্লাহর একমাত্র সৃষ্টি? ইবনে তাইমিয়া(র) সহ অন্যান্য কয়েক জন আলেম মনে করেন আল্লাহ তাআলা এই ধরনের কিছু সৃষ্টি করেছেন। এবং এটি সৃষ্টিকর্তা হিসেবে আল্লাহ তাআলার নৈপুণ্য বর্ণনা করে। ‘খালাক্ব’ অর্থাৎ তিনি যিনি সৃষ্টি করতে থাকেন। এই ধারণাটি অর্থাৎ আমরা আল্লাহ তাআলার একমাত্র সৃষ্টি এবং আমরা ছাড়া আল্লাহতালার আর কোন সৃষ্টিই থাকবে না, এর দ্বারা আল্লাহর সৃষ্টি কর্তা হিসেবে চিরস্থায়ীত্ব এবং নিরবচ্ছিন্নতার ওপর সন্দেহ পোষণ করা হয়। এবং ইবনে তাইমিয়া বলে ছিলেন এটি আল্লাহর মহত্বের বিপরীত। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন আল্লাহ সুবাহানাতালা সৃষ্টি করে যাচ্ছেন এবং ক্রমাগত সৃষ্টি করে যাবেন, যার কোন শেষ নেই। এবং আমরা যা জানি অর্থাৎ আমাদের এই জগত আল্লাহ এভাবেই (সৃষ্টি) শুরু করলেন এবং একদিন আমাদের বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। এটি হচ্ছে শুধু আমাদের অংশটুকু, এরকম আরও আছে। আমাদের আগেও ছিল এবং আমাদের পরেও থাকবে। তারা আমাদের সমসাময়িক কিনা এ নিয়ে ইবনে তাইমিয়া কোন মত দেননি। বরং ইবনে তাইমিয়া আল্লাহ তায়ালার ক্রমাগত সৃষ্টি করা নিয়ে কথা বলেছেন।

কিন্তু আমাদের সমসাময়িক অন্য জগত থাকার সম্ভাবনার ব্যাপারে কোন অস্বীকৃতি নেই। অথবা আমাদের সমসাময়িক অন্য কোন সৃষ্টি। এবং বহু প্রমাণ আছে যা খুব সম্ভবত এই দিকেই ইঙ্গিত করে। সুতরাং দয়া করে আমাকে কোন ধরনের কটুক্তি করবেন না, এটা টুইট করে বসবেন না যে ইয়াসির কাদরী বলছেন এলিয়েন আছে। বরং আমি বলছি কিছু প্রমান আছে যা আল্লাহ তাআলার এ ধরনের সৃষ্টি সম্পর্কে ইঙ্গিত করে। এই প্রমাণগুলো কি? প্রথমত, ”يخلق مالا تعلمون” তিনি এমন জিনিস সৃষ্টি করেছেন যা সম্পর্কে তুমি কখনো জানবেনা। তুমি কখনো জানবেনা অর্থাৎ এমন কোন জিনিস যা তোমার দেখা সম্ভব নয়।وَيَخْلُقُ مَا لَا تَعْلَمُونَ আর তিনি এমন জিনিস সৃষ্টি করেন যা তোমরা জান না। দ্বিতীয়ত আল্লাহ কুরআনে বলেন, خَلْقُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا بَثَّ فِيهِمَا مِن دَابَّةٍ ۚ তাঁর এক নিদর্শন নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের সৃষ্টি এবং এতদুভয়ের মধ্যে তিনি যেসব জীব-জন্তু ছড়িয়ে দিয়েছেন। শুধু এই পৃথিবী নয় , ‘সামাওয়াত’ শুধুমাত্র আমাদের আসমানকেই বোঝায় না, এর অর্থ আরো ঊর্ধ্বে। এবং আল্লাহ বলেন তিনি তাঁর সৃষ্টিকে সবগুলোতে ছড়িয়ে দিয়েছেন। এবং তিনি যদি চান মুহূর্তেই সবগুলোকে একত্রিত করতে পারেন। অথবা তিনি চাইলেই দুটি জিনিসকে এক করে দিতে পারেন।

এখন আপনি এই আয়াত দ্বারা হাশরের দিন বুঝতে পারেন , যা বেশিরভাগ তাফসীরে বর্ণিত আছে। অথবা আপনি এটাকে এভাবে ভাবতে পারেন যে আল্লাহ বিভিন্ন রকমের সৃষ্টির স্রষ্টা এবং তিনি চাইলেই এদেরকে একত্রিত করতে পারেন। উভয়ই ভাষাগতভাবে গ্রহণযোগ্য। এর আরও কিছু প্রমাণ রয়েছে, আমি সরাসরি এদের একটিতে চলে যাচ্ছি ,আল্লাহই ভাল জানেন, আল্লাহ তাআলার এই ভিন্ন ধরনের সৃষ্টির ক্ষেত্রে আমি মনে করি এটাই সবচেয়ে শক্তিশালী প্রমাণ। আল্লাহই সঠিকটা জানেন। সূরা ইসরা যেখানে আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা’য়ালা বলেন وَلَقَدْ كَرَّمْنَا بَنِي آدَمَ وَحَمَلْنَاهُمْ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَرَزَقْنَاهُم مِّنَ الطَّيِّبَاتِ وَفَضَّلْنَاهُمْ عَلَىٰ كَثِيرٍ مِّمَّنْ خَلَقْنَا تَفْضِيلًا ‘নিশ্চয় আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি, আমি তাদেরকে স্থলে ও জলে চলাচলের বাহন দান করেছি; তাদেরকে উত্তম জীবনোপকরণ প্রদান করেছি এবং তাদেরকে অনেক সৃষ্ট বস্তুর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি।’ অর্থাৎ আমি তাদেরকে অনেক বস্তুর উপর প্রাধান্য দিয়েছি। এর মানে বুঝলেন? এই আয়াত অনুযায়ী আমরা অনেক উচ্চ মর্যাদার ধারণ করি। কিন্তু সেটা সবোর্চ্চ নয়। এখন আমাদের জগতের সকল সৃষ্টির পিরামিডের সর্বোচ্চ চূড়ায় কে আছে? অর্থাৎ সমস্ত সৃষ্টির মধ্যে….’ আমরা’। কে আমাদের প্রতি নত হয়েছিল? ফেরেশতা এবং জিন। অর্থাৎ আমরা এই সৃষ্টি জগতের সর্বোচ্চ স্তরে আছি। তবুও আল্লাহ সূরা ইসরায় বলেন ‘আমি বনি আদমকে অনেক সৃষ্ট বস্তুর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি।’ কিন্তু সব নয়।