ঈমানের পুনর্জাগরণ (পর্ব ৩)

যদি হৃদয়কে পরিচ্ছন্ন রাখতে চান, তবে আপনার জিহ্বাকে পরিচ্ছন্ন রাখুন।

আসসালামুয়ালাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু ঈমানের পুনর্জাগরণ সিরিজে আবারো আবারও স্বাগতম। আমরা কথা বলছিলাম কী করে ঈমান অর্জন করতে হবে এবং কিভাবে তা তৈরী করতে হবে। এ সম্পর্কে আমরা বেশ চমকপ্রদ ধারণা পাই কুর’আন এবং রাসূল (স) এর সুন্নাহতে। আল্লাহ বলেন- هُوَ الَّذِي أَنزَلَ السَّكِينَةَ فِي قُلُوبِ الْمُؤْمِنِينَ لِيَزْدَادُوا إِيمَانًا مَّعَ إِيمَانِهِمْ আল্লাহ বলছেন, তিনি মুমিনদের অন্তরে প্রশান্তি নাযিল করেন, যাতে তাদের ঈমানের সাথে আরও ঈমান বেড়ে যায়। (সুরা ফাতহ ৪) অর্থাৎ যে ঈমান রয়েছে তা যেন বেড়েই চলে। এখন যদি আপনি আয়াতটার দিকে লক্ষ্য করেন, আলেমরা বলছেন, তা হচ্ছে ঈমান, যা অন্তরকে প্রশান্ত করে। বিশ্বাস অন্তরকে প্রশান্ত করে। তাই, যখন অন্তর এদিক সেদিক চলে যায়, তা অস্থির থাকে, বিভিন্ন জায়গায় ছুটে বেড়ায়, আল্লাহ ঈমান/বিশ্বাসকে পাঠিয়েছিলেন তাকে শান্ত করার জন্যে। কোন কিছুই অন্তরকে স্থির করতে কিংবা প্রশান্তি দিতে পারে না বিশ্বাস ছাড়া। সত্যিকার অর্থে প্রশান্তি দিতে। তাই বিশ্বাস আপনাকে লক্ষ্যচ্যুত করবে না, বিশ্বাস আপনাকে অস্থির করবে না। বিশ্বাস আপনাকে শান্ত করবে ভেতর থেকে।

রসুল সঃ এর একটা হাদিস আছে যাতে তিনি জানিয়েছেন ঈমান গ্রহণ করতে হলে হৃদয়ের স্থিতির গুরুত্ব কতটা। তিনি সঃ একটা হাদিসে বলেছেন যা মুসনাদে ইমাম আহমাদে এসেছে। বলেছেন, কারো বিশ্বাস স্থির হবে না যতক্ষণ না তার হৃদয় স্থির হয়। অর্থাৎ, বিশ্বাস অন্তরে স্থির হতে হলে অন্তরকেও স্থির হতে হবে। তারপর তিনি বললেন, তার অন্তর ততক্ষণ পর্যন্ত শান্ত হবে না, যতক্ষণ না তার জিহ্বা শান্ত হয়। অর্থাৎ রসুল সঃ বলছেন আপনি যদি আপনার অন্তরকে স্থির করতে চান, এবং চান ঈমানকে গ্রহণ করতে, আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে আপনার জিহ্বাও যেন স্থির থাকে। ব্যাপারটা অদ্ভুত, কারণ আমরা সাধারণত জিহ্বার ব্যবহারের সাথে অন্তরে বিশ্বাসের মিল খুঁজি না।

কিন্তু ইমাম ইবনুল কাইউম রাহিঃ বলেছেন, হৃদয়ের জন্য জিহ্বা হচ্ছে এক চামুচ খাবারের মত। যদি এর একটুর স্বাদ খারাপ হয় আপনি ধরে নেবেন পুরো খাবারটাই বরবাদ হয়ে গেছে। জিহ্বা হচ্ছে হৃদয়ের একটি দরজা। আপনার জিহ্বা যেভাবে কথা বলে, তার দ্বারা বুঝা যায় আপনার অন্তরের অবস্থা। এজন্যেই রসুল সঃ কে যখন বলা হল সেই মহিলার কথা যিনি তার প্রতিবেশীর উপর যুলুম করেন যিনি মুখের ভাষায় তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করতেন। যদিও সে মহিলা বেশি বেশি নামায রোজা করতেন এবং অন্যান্য ইবাদাতও বেশি বেশি করতেন তিনি সঃ বললেন, তার (মহিলার) ভেতর ভালো কিছু নেই। তার জিহ্বা যেহেতু নির্যাতন করে, তার অর্থ এর হৃদয়ও নির্যাতিত। তার হৃদয় ঈমান শূন্য, তাই তার জিহ্বাও ঈমানী সুরে কথা বলতে পারে না। তাই রসুল সঃ বলছেন আপনাকে যদি কাজ করতে হয় তবে পেছনের দিক থেকে শুরু করতে হবে। তাই, যারা বিশ্বাস করে আল্লাহ এবং শেষ দিবসে (অর্থাৎ) যাদের ঈমান আছে হয় ভালো কথা বল অথবা চুপ থাক। কিছুই বলার দরকার নেই যদি ভালো কথা না বলার থাকে। ঈমাম হাসান আল বাসরী রাঃ বলেছেন, যারা জিহ্বার দ্বারা পাপে লিপ্ত, তাদের ভাষা হয় লাগামহীন। তারা যখন কথা বলে তখন আল্লাহর কথা ভাবে না, কথা বলার সময় চিন্তা করে বলে না। কারো পরিষ্কার হৃদয় থাকতেই পারে না যদি তারা প্রতিনিয়ত হৃদয়কে জিহ্বার পাপের দ্বারা কলুষিত করে। জিহ্বা হচ্ছে সেই মাধ্যম যার মাধ্যমে আমরা অধিকাংশরাই পাপে লিপ্ত হই। যদি আপনি আপনার হৃদয়কে হিফাজত করতে চান, আপনাকে জিহ্বার হিফাজত করতে হবে। আপনি ঈমানকে অন্তরে স্থির করতে পারবেন না, যদি আপনি জিহ্বাকে ঈমানের দ্বারা স্থির করতে না পারেন।

খুব মজার কথা মনে পড়ে গেল, আমি একটি আর্টিকেল পড়ছিলাম দাঁতের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার উপর, কিভাবে একজন মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হতে পারে অপরিষ্কার দাঁতের কারণে। কিংবা, মুখের দূষণ কি করে হৃদয়ের দূষণ করতে পারে। আপনি এটা আত্মিক দিক থেকে ভাবতে পারেন এবং যা রসুল সঃ আমাদেরকে বলছেন। আমরা হৃদয়ের চারপাশ দূষিত করে ফেলতে পারি এবং এর দ্বারা হৃদয়কে পীড়া দিতে পারি আর, আল্লাহ এমন অন্তরে ঈমান দেবেন না। যদি আপনি ঈমান তৈরীর ব্যবহারিক উপায় জানতে চান, জিহ্বা দিয়ে শুরু করুন। যখন আপনি কথা বলবেন, যা কিছুই বলবেন, নিজেকে প্রশ্ন করুন কী করে এটা আমার ঈমানকে প্রভাবিত করতে পারে? কিভাবে এটা আমার বিশ্বাসকে প্রভাবিত করবে? কিভাবে এটা আমার অন্তরকে প্রভাবিত করবে? আর, আল্লাহ বলেন, জেনে রাখ, আল্লাহর যিকির দ্বারাই অন্তর সমূহ শান্তি পায়; অন্তর তখন সেই উপযুক্ত পাত্রে পরিণত হয় যা ঈমানকে ধারণ করতে পারে।

জিহ্বার ব্যাপারে সাবধান হন, হিসাব করে ব্যবহার করুন। এর মাধ্যমেই আপনি খুঁজে পাবেন এমন হৃদয় যেখানে ঈমান স্থায়ী হতে পারে। আল্লাহ আমাদের জিহ্বাগুলো পরিশুদ্ধ করুক, তারপর আমাদের অন্তরগুলো পরিশুদ্ধ করুক। এবং ঈমানকে অন্তরে স্থির করে দিক। আল্লাহুম্মা আমিন। সবার সাথে আবারও দেখা হবে ইনশা আলাহ, আসসালামুয়ালাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু।