আমার প্রিয় ভাই এবং বোনেরা, সহিহ হাদিসে এসেছে, একদা আয়েশা (রা) রাসূল (স) এর নিকটে এসে বললেন- হে আল্লাহর রাসুল (স)! আল্লাহর নিকট আমার জন্য দোয়া করুন। ফলে রাসূল (স) কিবলার দিকে ফিরে তাঁর হাত উত্তোলন করলেন এবং বললেন – ইয়া আল্লাহ! আয়েশাকে ক্ষমা করে দিন, তাঁর সকল পাপ ক্ষমা করে দিন। তাঁর অতীত এবং ভবিষ্যতের সকল গুনাহ, যা সে প্রকাশ্যে করেছে এবং যা সে গোপনে করেছে। এরপর আয়েশা (রা) মুচকি হাসি দিলেন। আর তিনি তাঁর মাথা নামিয়ে রাসূলের (স) কোলে রাখলেন; অত্যান্ত খুশি হলেন রাসূলের (স) দোয়া শুনে। ঠিক সেই মুহূর্তে আমাদের প্রিয় নবী (স) আয়েশার (রা) দিকে ফিরে বললেন, তুমি কি আমার দোয়ার কারণে খুশি ? তিনি বললেন, হ্যাঁ ও রাসূলুল্লাহ, কেন আমি আপনার দোয়ায় খুশি হবো না ? তখন তিনি বললেন, আমি আল্লাহর নামে শপথ করছি যাঁর হাতে আমার রূহের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, প্র্রত্যেক নামাজে এটাই আমার দোয়া আমার উম্মার জন্য। আল্লাহুম্মা সল্লি আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলা আ..লি মুহাম্মাদ …… ভাই এবং বোনেরা, আমাদের রাসূলের (স) জন্য দুয়া করতে কখনোই কৃপণতা করবেন না। তিনি আমাদের জন্য তাঁর নিজের সন্তানদের চেয়েও বেশি দুয়া করেছেন। যিনি আমাদেরকে ভালোবেসেছেন, আমাদেরকে স্মরণ করেছেন সম্ভবত তাঁর নিজের সন্তান এবং পরিবারের চেয়েও বেশি। আলহামদু লিল্লাহ, আলহামদু লিল্লাহ… ।
আমার মুসলিম ভাই ও বোনেরা, আমরা মুসলিম ভূমিতে এমন নৃসংসতা প্রত্যক্ষ করেছি যার মতো উদাহরণ বহুদিন ধরে আমরা দেখিনি। আমরা দেখেছি একজন ব্যক্তির ক্ষমতা এবং আধিপত্যের লালসার কারণে যেরকম নৃসংসতা সে ঘটিয়েছে আলেপ্পোতে, যুগ-যুগ ধরে যার দৃষ্টান্ত আমরা দেখিনি সুবহানাল্লাহ। যেভাবে সে তার জনগণকে হত্যা করেছে, যেভাবে সে রাজপথে রক্ত ঝরিয়েছে, যেভাবে সে ইসলামের শত্রুদের আসার সুযোগ করে দিয়েছে, আল্লাহর শপথ, এটা আমাকে মনে করিয়ে দেয় ইবনে তাইমিয়া যা বলেছেন। তিনি বলেছেন,…..। তিনি বলেছেন, নুসাইরিয়ারা কুফরীর দিক দিয়ে ইহুদি এবং নাসারাদের চেয়েও বেশী খারাপ। প্রকৃতই, আমি ইহুদীদেরকে দেখেছি ফিলিস্তিনে মুসলিমদের উপর অত্যাচার করতে, আমি পড়েছি কিভাবে ক্রুসেডাররা ফিলিস্তিনে মুসলিমদেরকে হত্যা করেছে। কিন্তু আমি এমন নৃসংসতা আর দেখিনি যেভাবে বাসার তার জনগণকে হত্যা করেছে। আমি দেখিনে এরকম দৃষ্টান্ত যেভাবে সে অত্যাচার করেছে, সুবহানা খলিকুল আজীম। আল্লাহর শপথ, সে তাদের চেয়েও কুফরীতে বেশী এগিয়ে।
তো, প্রশ্ন হলো, আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তাআলা) কেন অপেক্ষা করছেন ? অথবা আরেকটি প্রশ্ন মনে আসতে পারে, আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তাআলা) কেন কিছু করছেন না ? আর এমনও হতে পারে যে আমাদের মনের ভিতরে রব্বুল আলামিন সম্পর্কে খারাপ ধারণা চলে আসে। হয়তো আপনার পরিবার সেই নৃশংসতার কারণে মারা গিয়েছে, অথবা আপনি হতে পারেন শরণার্থী যাকে নিজ দেশ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে, কিংবা আপনার পরিবার থেকে দূরে আছেন। এটা সম্ভব এবং আপতদৃষ্টিতে যুক্তিসঙ্গত যে, আল্লহ সম্পর্কে আপনার মনে খারাপ ধারণা তৈরী হতে পারে। কিন্তু আমি আপনাদেরকে বলতে চাই, প্রিয় ভাইয়েরা, কখনোই আল্লাহ সম্পর্কে খারাপ ধারণা করবেন না। আল্লাহর প্রত্যেকটি কাজের পেছনে একটি কারণ এবং হিকমাহ নিহিত রয়েছে। তাঁর প্রত্যেকটি কাজের পেছেনই বিচক্ষণতা রয়েছে, সর্বনিম্ন বিচক্ষণতা হলো আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা চান বেশী বেশী মানুষকে শহীদ হিসেবে গ্রহণ করতে।
আপনারা কি লক্ষ্য করেননি, যখন রাসূল (সঃ) তাঁর সাহাবাদের কাছে আসলেন, আর তিনি জিজ্ঞেস করলেন শহীদ কারা ? সাহাবারা জবাব দিলেন, ও রাসূলুল্লাহ, শহীদ সে যে আল্লাহর রাস্তায় আল্লাহর উদ্দেশ্যে যুদ্ধরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। তো তিনি বললেন, শুধুমাত্র তারা ? শুধুমাত্র তারাই শহীদ ? বরং যে পানিতে ডুবে মারা যায়, সে শহীদ; যে কোন কিছুর চাপে পিষ্ট হয়ে মারা যায়, সে শহীদ; যে আগুনে পুড়ে মারা যায়, সে শহীদ; যে নারী সন্তান জন্মদানের সময় মারা যায় সে শহীদ; কেউ যদি কারো ঘরে আক্রমণ করে, সেই আক্রমণ থেকে নিজের সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে যে মারা যায়, সে শহীদ; যে পাকস্থলীর ক্যান্সারে মারা যায়, সে শহীদ। এ হাদীসে রাসূল (সা) কি বলছেন ? তিনি আমাদেরকে বলছেন যে, আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা চান যাতে শহীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। তিনি চান শহীদের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে । সুতরাং, তিনি এটাকে অল্প সংখ্যক মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চান নি, তিনি এই উম্মাহর মধ্যে শহীদদের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে চেয়েছেন। আর এটা হলো হিকমাহর ভিতর একটি যার কারণে আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা তার শত্রুদেরকে এবং আমাদের শত্রদেরকে আমাদেরই ভূমিতে ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে দিয়েছেন। আমাদেরকে শহীদ হিসেবে গ্রহণ করার জন্য যাতে আল্লাহ আমাদের সকল পাপ দূর করে দিতে পারেন এবং আমাদেরকে জন্নাতে প্রবেশ করাতে পারেন । সবুজ পাখির ভেতর আমাদের রুহ প্রবেশ করিয়ে যাতে এই জীবনের পরে আমরা আবার জীবন পেতে পারি — সেই জীবন যার কথা রাসূল (স) বলেছেন ঃ আল্লাহর শপথ আমি আল্লাহর কাছে আশা করি, যাতে আমি মৃত্যু বরণ করি শহীদ হিসেবে এবং আবার জীবিত হই; তারপর আবার মৃত্যু বরণ করি শহীদ হিসেবে এবং আবার জীবিত হই; তারপর আবার মৃত্যু বরণ করি শহীদ হিসেবে এবং আবার জীবিত হই, শুধুমাত্র এটা যেন পুণরাবৃত্তি হতেই থাকে । তিনি এরকম বলেছেন কারণ যে সম্মান এবং মর্যাদার সাথে আল্লাহ শহীদদেরকে বরণ করে নেন।
আমার ভাই ও বোনেরা, কখনোই আল্লাহ সম্পর্কে খারাপ ধারণা করবেন না। অন্য যেকোন জিনিসের তুলণায় একটা জিনিস যা আমাদেরকে কেয়ামতের দিন বেশি রক্ষা করবে, তা হলো হুসনুয যন বিল্লাহ ( আল্লাহর প্রতি সুধারণা) । বর্ণিত আছে যে, যখন মালিক বিন দীনার (রা) মারা যান, তাঁর ছাত্ররা তাঁকে স্বপ্নে দেখলেন । স্বপ্নে তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, ও আবু ইয়াহইয়, বলুন আল্লাহর কাছ থেকে আপনি কেমন ব্যবহার পেয়েছেন ? তো আবু ইয়াহইয়া, যিনি মালিক বিন দীনার, তিনি বললেন, আমি আল্লাহ কাছে উপস্থিত হয়েছি আমার সকল পাপ নিয়ে, আর মালিক বিন দীনার বড় স্কলার হওয়ার আগে ছিলেন একজন চোর । তিনি চুরি করতেন। তিনি বললেন, আমি আল্লাহ সুবহানাহু তাআলার কাছে এসেছি এত পাপরাশি নিয়ে, কিন্তু আল্লাহর প্রতি সুধারণার কারণে সবগুলো পাপ দূর হয়ে যায়। আর এ কারণেই সহীহ হাদীসে রাসূল (সা) বলেছেন, আল্লাহর প্রতি সুধারণা পোষণ করা ছাড়া তোমরা মৃত্যুবরণ কোরো না। আল্লাহর প্রতি সুধারণা ছাড়া তাঁর সাথে সাক্ষাত করো না । অন্য একটি সহীহ হাদীসে, (তিনি একজন তরুণ সাহাবীর মৃত্যুর সময়ে তিনি জিজ্ঞেস করেন, তুমি এখন কেমন অনুভব করছো ? তিনি বললেন, আল্লাহর শপথ ও রাসূলুল্লাহ, আমি আল্লাহর করুণার প্রত্যাশা এবং আমার পাপগুলোর কারণে ভয় এদুটির মাঝামাঝি অবস্থান করছি। রাসূল (সা) কি বললেন ? তিনি বললেন,… এ দুটি জিনিস কোন বান্দার অন্তরে একত্রিত হলে আল্লাহ তাকে তার ভয়ের জিনিস থেকে বাঁচিয়ে দেন আর প্রত্যাশার জিনিসটি দান করেন। আমার ভাই ও বোনেরা, আল্লাহর প্রতি পরিপূর্ণ আস্থা রাখুন।