পরবর্তী প্রসঙ্গে আসতে পারি, যাতে করে এই আয়াত শেষ করতে পারি। প্রতিবন্ধকতার উদ্দেশ্য। আমরা আমাদের জীবনে কিছু জিনিস চাই। একজন যুবক হয়তো বিয়ে করতে ইচ্ছুক বা একজন যুবতী বিয়ে করতে ইচ্ছুক। আপনি একটা ভালো চাকরি বা বাড়ি চান। আপনি চান আপনার পরিবার ভালো থাকুক। আপনি সন্তানদের ভালোভাবে লালন-পালন করতে চান, তাদের জন্য ভালো শিক্ষা, তাদের ভাল বিয়ে দিতে চান। আমাদের জীবনে বিভিন্ন জিনিসের অগ্রাধিকার রয়েছে। এমন জিনিস যা আপনি চাচ্ছেন গত মাস থেকে, গত বছর বা দুই বছর ধরে। আপনি বিভিন্ন জিনিস এই জীবনে অর্জন করতে চান। আল্লাহ তাঁর কিতাবে আমাদের শিক্ষা দেন যে, এমন একটা জিনিস আছে তা যদি তোমরা অর্জন করতে পারো সেটা হবে তোমার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন। সব ঠিক হয়ে যাবে যদি তোমরা এই জিনিস পাও। এবং সেই একটি জিনিস হলো- আল্লাহ নিকটবর্তী হওয়া। আল্লাহর সাথে ভালো সম্পর্ক তৈরি করা, তাঁর সাথে সত্যিকারের সম্পর্ক এবং বন্ধন তৈরি করা।
কিন্তু সমস্যা হল জীবন যখন সত্যিই ভালো থাকে তখন তারা পথভ্রষ্ট হয়ে পড়ে। আপনি তখন ভিডিও গেম থেকে চলচ্চিত্র, তা থেকে সোশ্যাল মিডিয়ার হালচাল, তা থেকে রেস্টুরেন্টে বন্ধুদের সাথে ঘোরাঘুরি, দিনশেষে ঘুমিয়ে পড়েন। আল্লাহকে ভুলে যান। আল্লাহকে মনে রাখেন না। নিজেকে নিয়ে থাকেন আর আনন্দে মেতে আছেন। এরপর যখন কঠিন সময় আসে তখন বন্ধুরা আর সাথে থাকে না, খেলাধুলা ভাল লাগে না, গাড়িটাও ভাল লাগে না; কারণ স্বাস্থ্য নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আর যখন শরীর অসুস্থ হয়ে পড়ে, এই কোন কিছুই আর ভালো লাগে না। খালি তখন মনে হয় যে, আমি কখন হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাব। ‘ইস! আমি যদি আবার হাঁটতে পারতাম!’ মানুষজন আপনার পছন্দের খাবার আনবে আপনি খেতে চাচ্ছেন না, আপনার পছন্দের মুভি দেখাবে, আপনি দেখতে চান না। আপনি সারাক্ষণ যেসব বিষয় নিয়ে মেতে থাকতেন, একটার পর একটার পিছে ছুটে বেড়াতেন; আজ আর কিছুই ভাল্লাগে না। কোন কিছুর প্রতিই আজ আর আপনার কোন আগ্রহ নেই। কারণ আল্লাহর একটি রহমত আপনার জন্য কিছুটা কমে গিয়েছে।
এমতাবস্থায় আপনার জন্য দুইটা উপায় রয়েছে, আপনি যদি এমন মানুষ হন যাদের অবস্থান বিশ্বাসের একেবারে প্রান্তসীমায়, আপনি আল্লাহকে দোষ দেয়া শুরু করতে পারেন। ‘আপনি কেন আমাকে এই বিপদে ফেললেন?’ ‘আপনি কি আমার খুশি পছন্দ করলেন না?’ অথবা এই বিপদের সময়ে আমি আপনি আমাদের জীবনের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ সম্পদটি অর্জন করতে পারি। আর সেটা হলো – বিনম্রতা এবং আল্লাহর অধিক নিকটবর্তী হওয়া। এভাবে আত্মউপলব্ধি করা যে– যখন আমি সুস্থ এবং সম্পদশালী ছিলাম, সবকিছু ঠিক ছিল, তখন আমি বুঝতে পারিনি যে তখনো একজন আমাকে সবকিছু প্রদান করে যাচ্ছিলেন। আল্লাহ আমাকে প্রতি মুহূর্তে যোগান দিয়েছিলেন। আমি নিজ যোগ্যতায় কিছু পাইনি। আমি এর কোন কিছুরই যোগ্য ছিলাম না। এজন্যই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন – أُولَٰئِكَ لَهُمْ نَصِيبٌ مِّمَّا كَسَبُوا ۚ – ‘তারা যা অর্জন করেছে, তাদের জন্য তারই অংশ রয়েছে’ ২ঃ ২০২ আল্লাহ ফাদল এর কথাও বর্ণনা করেছেন। وَابْتَغُوا مِن فَضْلِ اللَّهِ ”আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ কর” আল্লাহ এখানে ‘কাসাবা মিনাল্লাহ’ বলেননি। আপনি কিছু উপার্জন করতে পারেন না। আপনি যা কিছুই পান তা আপনার প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ মাত্র। কিন্তু সময় থাকতে বুঝতে পারেননি। কারণ আপনি এটা সহজেই পেয়েছিলেন।
কিন্তু পরে, আপনি আল্লাহর কাছে অনুনয় বিনয় করে চাইতে থাকেন, কান্নাকাটি করেন এবং এমনভাবে প্রার্থনা করতে থাকেন যেভাবে পূর্বে কখনো করেননি। নিজেকে তাঁর কাছাকাছি অনুভব করেন যেভাবে আগে কখনো অনুভব করেননি। এবং অতঃপর আল্লাহ আপনাকে সুস্থ করেন। তারপর আপনি অনুধাবন করেন, হাসপাতালের সেই একান্ত মুহূর্তগুলো…যখন কেউ আশে পাশে ছিল না আর আপনি আল্লাহর নিকট একান্তে কান্নাকাটি করে তাঁকে ডেকেছিলেন, সেগুলোই ছিল আপনার গোটা জীবনের শ্রেষ্ঠতম সুমিষ্ট সময়। জীবনের সেই সামান্য সময়গুলোতেই আপনার এবং আল্লাহর মাঝে আর কিছু ছিল না। আর সেই মিষ্টি মুহূর্তগুলোই আপনাকে আখিরাতে রক্ষা করে দিতে পারে। এই মুহূর্তগুলোই হতে পারে সবচেয়ে বড় পুরস্কার যা আল্লাহ আপনাকে দিয়েছেন।