পবিত্র কোরআন শরীফের এবং নবীজি (সঃ) এর সুন্নতের অধিকাংশ দুআতে, আপনি খুব সাধারন একটি ব্যাপার খেয়াল করবেন যে, কোন না কোনভাবে আপনি আল্লাহর কাছে নিজের জন্য আরও বেশি শক্তি, সামর্থ্য প্রার্থনা করছেন। আপনি আল্লাহর কাছে পথ প্রদর্শন, ক্ষমাশীলতা এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার দোয়া করছেন। أَوْزِعْنِي أَنْ أَشْكُرَ نِعْمَتَكَ الَّتِي أَنْعَمْتَ عَلَيَّ – সূরা আন নামল, আয়াত ১৯। আমাকে ক্ষমতা প্রদান করুন যাতে আমি আপনার নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি। আমি আপনাদের একটি উদাহরণ দিব যা দ্বারা আপনাদের বুঝতে সহায়ক হবে যে আমি কি বুঝাতে চাই। যেমন ধরুন, একজন মানুষ সমুদ্রে ছিল এবং তাদের জাহাজের সাথে পাথরের সংঘর্ষ হয়ে জাহাজটি ডুবে গেলো। তিনি একটি কাঠের টুকরায় সমুদ্রে ভেসে আছেন। এবং আল্লাহর কাছে দুআ করছেন। এমতাবস্থায় আল্লাহর কাছে তিনি দুই ভাবে দুআ় করতে পারেন। ‘হে আল্লাহ আমাকে এখনই একটি দ্বীপে স্থানান্তর করুন এবং এই ঝড় বৃষ্টি বন্ধ করে দিন।’ অথবা আপনি চাইতে পারেন ‘হে আল্লাহ আমাকে এই কঠিন সময় মোকাবেলা করার শক্তি দিন। এখন তিনি দুআ করলেন, আমাকে এখনই একটি হেলিকপ্টার পাঠান, এবং আমাকে একটি দ্বীপে নিয়ে যান। এবং তিনি হেলিকপ্টারের জন্য দুআ করতে থাকলেন। কিন্তু কোন হেলিকপ্টার আসলো না। তিনি বললেন, ”আল্লাহ আমাকে হেলিকপ্টারও পাঠালেন না। আমি তো অনেক দুআ করলাম। এইটা ঠিক না। বাদ দাও আমি আর দুআ করব না।”
অথবা মনে করুন, উনি দুআ করছেন সমুদ্র শুকিয়ে সমতলভূমি হয়ে যাক। বলছেন হে আল্লাহ, আপনার তো সেই ক্ষমতা আছে যেকোনো অবস্থা পরিবর্তনের। আপনি সকল কিছুর সৃষ্টিকর্তা, সুতরাং আপনি এই সমুদ্রকে সমতলভূমিতে পরিণত করতেই পারেন। আপনি যেহেতু ইব্রাহিম (আঃ) কে নিক্ষেপ করা আগুন ঠান্ডা করে দিয়েছিলেন, সুতরাং আপনি আমার জন্যও এটা করতে পারেন। কিন্তু তারপরও সেটা ভূমিতে পরিণত হয় না, সমুদ্রই থেকে যায় এবং লোকটি ধীরে ধীরে ডুবে যাচ্ছেন।
আমি যে বিষয়টা বলতে চাচ্ছি, আমরা মনে করি দুয়ার উদ্দেশ্য হল আমাদের পারিপার্শ্বিক বাস্তবতা পরিবর্তন করা। কিন্তু যদি আপনি কুরআন এবং সুন্নাহর দুআগুলো অধ্যয়ন করে থাকেন তবে আপনি খেয়াল করে দেখবেন যে, পরিবর্তন আপনি যা চাইবেন তা একান্তই নিজের জন্য। হে আল্লাহ আমি একটা কঠিন সময়ের মধ্যে যাচ্ছি, আপনি আমাকে এটা কাটিয়ে উঠার সক্ষমতা দান করুন। আমি আপনাদের একটি সহজতর উদাহরণ দিব। কিছু পরীক্ষার্থী একটি সাধারণ পরীক্ষা দিবে। তখন তারা দুই ধরনের দুআ করতে পারেন। একটি হল, ‘ হে আল্লাহ! আমাকে এই বিষয়টি বুঝে নেয়ার ক্ষমতা দিন, মনোযোগী করুন। আমাকে এমন ক্ষমতা দিন যেন পরীক্ষা দেয়ার সময় আমি ঘাবড়িয়ে না যাই এবং অলসতা যেন আমাকে গ্রাস না করে।’ এভাবে নিজের জন্য দোয়া করা। অথবা তারা এভাবে বলতে পারেন, ‘ ইয়া আল্লাহ! আমি জানি, এটা একটা মেডিকেল পরীক্ষা কিন্তু আপনি এটাকে ক্লাস টু এর অংক পরীক্ষার মত সহজ করে দিন যেন আমার এই সমস্যাই না থাকে।’ হয় আপনি বাস্তবতা বদলানোর জন্য দোয়া করতে পারেন অথবা নিজের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য দোয়া করতে পারেন।
বেশিরভাগ মানুষ যারা ধর্ম বিশ্বাসে দুর্বল তারা নিজেদের জন্য ক্ষমতা বৃদ্ধি বা নিজেদের পরিবর্তন চায় না, তারা শুধু চায় তাদের আশেপাশের বাস্তবতা বদলাতে এবং আল্লাহর কাছেও তাই চায়। কিন্তু আসলেই কি সেই পরিবর্তন হয়? না। এবং যখন পরিবর্তন হয় না তখন তারা আল্লাহকে দোষারোপ করে। তারা আল্লাহর কাছে জানতে চায়, কেন আপনি আমার পৃথিবীকে পরিবর্তন করেননি? কেন আপনি সব কিছুকে আমার জন্য সহজ করে দিলেন না?
আপনি যদি চান বাস্তবতা আপনার পক্ষে থাকবে তাহলে আপনাকে সত্যিকার ভাবে শিখতে হবে কিভাবে আল্লাহর কাছে সমর্পিত হতে হয়। এমন নয় যে, যখন কিছু প্রয়োজন, কোন সমস্যা, তখনই আল্লাহর কাছে সাহায্য চান। না। বরং আপনি আল্লাহর কাছে সবসময় আসবেন। আপনাকে সব সময় তাঁর কাছে সমর্পিত হতে হবে, এভাবে এই মনোভাবের উন্নতি হবে। এমন একটি সময় আসবে যখন বাস্তবতা আমাদের কাছে আত্মসমর্পণ করবে। আর সেই সময় হলো যখন আমরা আল্লাহর সাথে মিলিত হব। আমরা যা চাই তা সবই আমরা পাব। সমস্যা হলো আমরা সবই এই মুহূর্তে চাই। আল্লাহ বলছেন আমি তোমাদের সবই দিব কিন্তু এখন তোমরা কিছু ভালো অভিজ্ঞতা অর্জন করবে এবং কিছুটা পরীক্ষায় পড়বে।
আর একমাত্র যে কারণে তিনি আমাদের পরীক্ষায় উপনীত করেন তাহলো – তিনি চান আমরা যেন উত্তীর্ণ হই এবং জান্নাতের জন্য যোগ্যতা অর্জন করি। তিনি চান যে আমরা যেন এই কষ্টের মধ্য দিয়ে যাই। কারণ এই কষ্টকর যাত্রা আমাদেরকে তাঁর সান্নিধ্যে নিয়ে আসবে।