হযরত হুসাইন ইবনে আলী (রা) এর তোতলামি

মহানবী (সঃ) …খুবই স্পর্শকাতর ঘটনা। তাঁর নাতি, আলী এবং ফাতিমা (রা) এর সন্তান ছিলেন হুসাইন (রা)। দুই ভাইয়ের মাঝে তিনি ছিলেন ছোটজন, হাসান এবং হুসাইন, আল্লাহ তাঁদের উভয়ের উপর সন্তুষ্ট হোন। ছোট ভাই তোতলাতেন। তাঁর এত বেশি তোতলামি ছিল যে তিনি একটি বাক্যও শেষ করতে পারতেন না। একটি বাক্য শেষ করতে তাঁর অনেক সময় লাগতো। তাঁর উপর একজন ছোট শিশু হিসেবে … একে তো একটা শিশুর বেড়ে উঠার ক্ষেত্রে এটা খুবই কষ্টদায়ক এবং বেদনাদায়ক ছিল, তার উপর তাঁর বড় ভাই হাসান (রা) ছিলেন অসাধারণ বাগ্মী, সুভাষী এবং আল্লাহ প্রদত্ত বিশেষ গুণের অধিকারী বক্তা।

তো, চিন্তা করুন ছোট ভাই কেমন চাপ অনুভব করতেন যিনি এতো বেশি তোতলাতেন! যাইহোক তিনি অনেক বেশি তোতলাতেন। আমরা জানি, বাচ্চারা যখন একটু বড় হতে শুরু করে, ৪ বা ৫ বছর বয়সের সময় তারা যখন কিছুটা সাহস অর্জন করে এবং সে সময় তারা অনেক কথা বলতে পছন্দ করে।

একদিন মহানবী (স) কিছু সাহাবীর সাথে বসে ছিলেন, আর তাঁর দুই নাতিও তাঁর সাথে বসে আছেন। তখন ছোটজন যে তোতলাতো সে কিছু একটা বলার চেষ্টা করছিল। কারণ তারা তাঁদের নানাকে ভালোবাসতো। তারা তাঁর সাথে অনেক কথা বলতো। তো, সে কিছু বলার চেষ্টা করছিল… আর রাসূলুল্লাহ (স) সবাইকে এতো বেশি সম্মান করতেন যে কেউ যদি কিছু বলা শুরু করতো তিনি চুপ করে থাকতেন, তিনি সেই ব্যক্তির দিকে শুধু তাঁর চেহারাই ফেরাতেন না, তিনি তাঁর বক্ষ সমেত তার দিকে ফিরতেন, এবং বক্তার কথা বলার সময় বক্তার দিকে তাকিয়ে থাকতেন।

আচ্ছা তারপর, হুসাইন (রা) কথা বলা শুরু করলেন, আর রাসূলুল্লাহ (স) থেমে গেলেন এবং তার দিকে ফিরলেন। ফলে সেখানকার অন্য সবাইও তার কথা শুনতে লাগলেন। কিন্তু শিশুটি এতো বেশি তোতলানো শুরু করলেন যে পরিস্থিতি কিছুটা বেমানান হয়ে উঠলো। তাই কিছু মানুষ প্রকৃতিগতভাবে – বদমেজাজী হয়ে নয়, বিদ্বেষপরায়ণ হয়ে নয় – কিছু মানুষ প্রকৃতিগতভাবে একে অপরের দিকে তাকাতে লাগলেন প্রায় বাচ্চাটার জন্য খারাপ লাগছে ভেবে। কারণ সে একটা বাক্যও শেষ করতে পারছে না। পরিস্থিতি আসলেই কিছুটা বেমানান হয়ে উঠলো।

অন্যদিকে রাসূল (স) তাঁকে একটিবারের জন্যও থামালেন না বা তিনি তার জন্য তার বাক্যের শেষ অংশও বলে দিলেন না। এদিকে সাহাবায়েকেরাম (রা) মহানবী (স) এর দিকে লক্ষ্য করতে লাগলেন যে তিনি কেমন আচরণ করেন তা দেখার জন্য। তাঁরা বর্ণনা করেন, তিনি মুচকি হাসি দিয়ে হুসাইন (রা) এর দিকে তাকিয়ে থাকলেন আর চুপ করে তার কথা শুনতে লাগলেন। এটা শেষ করতে যদি তার পাঁচ মিনিট সময়ও লেগে যেত তবু তিনি তার তোয়াক্কা করতেন না। তিনি হুসাইন (রা) কে তাঁর বক্তব্য শেষ করতে দিলেন। হুসাইন (রা) যখন তাঁর কথা শেষ করলেন, রাসূল (স) অন্য সবার দিকে ফিরলেন… কারণ সবাই তখন কিছুটা অপ্রস্তুত এবং বেমানান হয়ে আছেন।

তিনি সবার দিকে ফিরলেন এবং বললেন- “সে তাঁর চাচা মূসা (আ) থেকে এই গুণ পেয়েছে।” মূসা (আ) এর দিকে নির্দেশ করলেন কারণ মূসা (আ)ও তোতলাতেন। এই শিশুর জন্য খারাপ অনুভব করো না, বরং তাঁকে ঈর্ষা করো কারণ সে আল্লাহর একজন মহান নবী মূসা (আ) এর একটি বৈশিষ্ট্য ধারণ করে আছে। তিনি (স) নেতিবাচক একটি জিনিসকে ইতিবাচক জিনিসে রূপান্তরিত করে দিলেন। নিজেকে ঐ বাচ্চার জায়গায় কল্পনা করে বুঝতে পারলেন যে ঐ বাচ্চার জন্য কোন বিষয়টা সে সময় দরকার ছিল। তাঁর দরকার ছিল ভালবাসা, সমর্থন এবং গ্রহণযোগ্যতা… সে যেমন ছিল বা যেভাবে কথা বলতো তার জন্য।