স্বামীদেরকে বলছি, “সবাইকে খুশি রাখা অসম্ভব

আপনার মা-বাবা আপনার জন্য যা যা করেছেন তার মূল্য আপনি কখনোই পরিশোধ করতে পারবেন না। আপনার মা তার দেহের মধ্যে আপনাকে নিয়ে বেড়িয়েছেন। তাঁর রক্ত বিসর্জনের কারণেই আপনি পৃথিবীর মুখ দেখতে পেরেছেন। আপনাকে জন্ম দিতে গিয়ে তাঁরই মৃত্যু হতে পারতো। আপনি যখন নিজের যত্ন নিতে পারতেন না তখন বাবাই আপনার সব প্রয়োজন মেটানোর ব্যবস্থা করেছেন। আপনার থাকার জায়গা ছিলোনা, তিনিই সেই ব্যবস্থা করেছিলেন। আপনার পড়াশোনার ব্যবস্থা করেছেন। আবার আপনার মায়ের দেখভাল করার মাধ্যমেও আপনার বাবা আসলে আপনার প্রতিই ইহসান করেছেন।

কেন এমনটা বলছি? কারণ আল্লাহ যখন মুসা (আঃ) এর প্রতি বর্ণনা করছিলেন وَلَقَدْ مَنَنَّا عَلَيْكَ مَرَّةً أُخْرَىٰ সূরা ত্বহাতে… “আমি তোমার প্রতি আরও একবার অনুগ্রহ করেছিলাম।” আর তাঁর প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহের একটা অংশ ছিলো… “আমরা তোমাকে তোমার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম।” ..… “যাতে সে চোখের পানি না ফেলে।” যাতে তাঁর চোখ শীতল হয়ে যায়। যাতে সে আর কষ্ট না পায়। যখন আল্লাহ তাঁর মায়ের যত্ন নিচ্ছিলেন, আল্লাহ বলছেন, “আমি আসলে তোমাকেই অনুগ্রহ করছিলাম।”

তাই যখন আপনার মায়ের প্রতি ভালো কিছু করা হচ্ছে, তখন আসলে আপনার প্রতিও অনুগ্রহ করা হচ্ছে। আপনি হয়তো বলবেন “আমি জানি আম্মু আমার যত্ন নিয়েছে, কিন্তু আব্বু তো কিছুই করেনি।” তিনি যে স্বামী হিসেবে আপনার মায়ের দেখাশোনা করে যাচ্ছেন, আপনাদের দুজনেরই, এটাই একটা অনুগ্রহ যা আপনি শোধ করতে পারবেন না। তিনি যদি আর কিছু না-ও করে থাকেন। তাই বাকি সব সম্পর্কের ক্ষেত্রে আপনি হয়তো অন্যদের ভালো করছেন। কিন্তু মা-বাবার বেলায় আপনি আসলে এমন ঋণ পরিশোধ করছেন যা আসলে শোধ হওয়ার ঊর্ধ্বে। এটা অসম্ভব। আর আমরা সারা জীবনই এর জন্য ঋণী থেকে যাবো। তাই আপনার সর্বোচ্চটা দিলেও তা যথেষ্ট হবেনা। তবুও আপনি আপনার সেরা চেষ্টাই দিয়ে যাবেন। সেজন্যই এটা “ওয়াবিল ওয়ালিদাইনি ইহসানা।” এটা হলো আপনার দায়িত্বের প্রথম অংশ।

এর সাথে অন্যদিকেও আমাদের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। আপনাকে আপনার স্ত্রী এবং সন্তানাদির অধিকারও পূরণ করতে হবে। আপনার ভাইবোন, এমনকি নিজের প্রতি অধিকারের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। এসব কিছুতেই আপনাকে ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। আর তা না করতে পারলে আপনি কারো না কারো ওপর জুলুম (অবিচার) করে ফেলবেন। হয় আপনার নিজের প্রতি, বা আপনার সন্তানের প্রতি, ইত্যাদি। অনেকে আছেন যারা মা-বাবাকে দিয়ে যাওয়ার প্রতি খেয়াল রাখতে গিয়ে নিজের সন্তানের অধিকার লঙ্ঘন করে ফেলেন। আবার কোন কোন পিতা-মাতা আছেন যারা শুধু চাইতেই থাকেন। তারা তাঁদের অধিকারের চেয়েও বেশি পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা করেন। তারা কুরআনের আয়াত দিয়ে হয়তো বলবেন “তুমি আমার জন্য যতই করোনা কেন তা যথেষ্ট না। তাই তোমার সবকিছুই আমাকে দিয়ে দাও।” আর তারা ঐ আয়াতই আপনার ওপর খাটাবে। তাঁদের প্রতি আল্লাহ ইহসান করতে বলেছেন, কিন্তু এই ইহসানের সংজ্ঞা তারা নির্ধারণ করতে পারেন না।

এই সূক্ষ্ম পয়েন্টটা বুঝুন। মা-বাবার প্রতি আপনার অনেক দায়িত্ব আছে, কিন্তু সেগুলো তারা ঠিক করতে পারেন না। এটা আল্লাহই নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তারা যদি আপনার যত্নে থাকা কারো অধিকার হরণ করতে বলেন… যেমন কোন কোন অভিভাবক তাঁদের ছেলেকে বলে তাঁর স্ত্রীকে নির্যাতন করতে। তাঁর সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিতে। তারা বলতে পারেন স্ত্রীকে খুব সাধারণ অধিকারগুলো থেকেও বঞ্চিত করতে। আপনি এমনটা করতে পারেন না। যখন আপনি কোন নারীকে বিয়ে করলেন, আপনি তখন তাঁর ওয়ালী হিসেবে তাকে নিজের যত্নে রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আপনি তাকে সুরক্ষিত রাখার অঙ্গীকার করেছেন। যেই দায়িত্বটা এর আগে তাঁর বাবার ছিল। যেকোনো মুল্যে তিনি মেয়েকে রক্ষা করতেন। বিয়েতে স্বাক্ষর করার মাধ্যমে..وَأَخَذْنَ مِنكُم مِّيثَاقًا غَلِيظًا ”নারীরা তোমাদের কাছে থেকে সুদৃঢ় অঙ্গীকার গ্রহণ করেছে।” এখন স্ত্রীর দেখাশোনা করা আপনার দায়িত্ব। তাই আপনার পিতামাতা যাই বলুক না কেন, আপনি আপনার স্ত্রীর প্রতি অবিচার করতে পারেন না। এর উল্টোটাও সত্য। স্ত্রীর কথা শুনে আপনি আপনার মা-বাবার সাথে অন্যায় করতে পারেন না।

তাহলে এর অর্থ কী দাঁড়ায় শুনুন। আমি নিজেকেও মনে করিয়ে দিচ্ছি। এই জীবনে কেউ না কেউ আপনার প্রতি অখুশি থাকবেই; সবসময়। পুরুষ হিসেবে জীবন যাপনের জন্য অভিনন্দন। আমাদের দলে স্বাগতম। কেউ না কেউ নারাজ থাকবেই। বাবা বলবে, “তুমি ভালো সন্তান হওনি।” মা বলবে, “তুমি আমার চেয়ে বউকে বেশি ভালোবাসো।” স্ত্রী বলবে, “তুমি খালি মা-বাবারই খেয়াল রাখো, আমি তো কেউ না।” বাচ্চারা বলবে, “তুমি শুধু দাদা-দাদিরই যত্ন নাও। আমাদেরকে পাত্তাই দাও না।”আবার বাবা-মা বলবে, “তুমি শুধু বাচ্চাদের নিয়েই পড়ে থাকো,আমরা তো এখন আবর্জনা।” সবাই ভাববে যে আপনি কিছুই করেন না। আপনি পুরোই অকর্মা। হয়তো কেবল জানাজাতেই আপনার ব্যাপারে ভালো কিছু বলা হবে। “ও অনেক ভালো মানুষ ছিলো।” কোন কোন অভিভাবকদের দেখবেন সন্তান বেঁচে থাকা অবস্থায় ভালো কিছু বলবে না, কিন্তু মারা গেলে বলবে, “ছেলে আমার খুব ভালো ছিলো। অনেক যত্ন নিতো আমাদের।” পুরুষ হিসেবে এটা মনে রাখবেন, এমন জীবন আশা করবেন না যেখানে কেবলই আপনার প্রশংসা করা হবে। সবকিছু সহ্য করতে শিখুন।

আপনি কোন ফেরেশতা নন, আপনি মানুষ। যখন সবাই আপনাকে নিয়ে টানাটানি করছে, কেউই আপনার প্রতি সন্তুষ্ট না, তখন কোন না কোন সময় আপনি ভেতরে কিছুটা ভেঙে পড়বেন। আস্তে আস্তে একসময় আপনি সবকিছু মিলিয়ে চলতে পারবেন না। দুটো ব্যাপারে আপনাকে ব্যালেন্স করে চলা শিখতে হবে। এক, আপনি রেগেমেগে বলে ফেললেন “আমি তো এম্নিতেও সবাইকে খুশি করতে পারবো না, তাই আমি চেষ্টা করাই ছেড়ে দিয়েছি। সবাই গোল্লায় যাক!” আবার অন্যদিকে হতে পারে আপনি সবাইকে খুশি রাখতে গিয়ে নিজের অবস্থাই খারাপ করে ফেললেন। আপনার নিজের অবস্থাই যদি খারাপ হয়ে যায় তাহলে আপনি অন্য কারো ভালো করতে পারবেন না। আপনি ভালো পিতা হয়ে চলতে পারবেন না, না পারবেন স্বামী বা সন্তান হিসেবে আপনার দায়িত্বগুলো পালন করতে। নিজেকে হারিয়ে ফেললে অন্যকিছুই আর করতে পারবেন না।

অনেকসময় সম্পর্কগুলো ধরে রাখার সময় আমরা পুরুষেরা অবমাননা করে ফেলি। হয়তো আমরা অন্যদের অধিকারগুলো দিচ্ছি না। আবার মাঝে মাঝে যারা আমাদের ওপর নির্ভরশীল তারাই আমাদের সম্পর্কের অবমাননা করে বসে। তারা আমাদের সাথে অন্যায় করে ফেলে। নিজ অধিকারের ক্ষেত্রে আপনাকেই সেই দাগটা টানতে হবে। নিজে থেকেই সেই অধিকারগুলো চাইতে হবে। একইসাথে খেয়াল রাখতে হবে আপনি যেন অন্যের ওপর জুলম (অন্যায়-অত্যাচার) না করেন। আমরা এমন সমাজে বাস করছি যেখানে ধরে নেয়া হয় কোন খারাপ কিছু ঘটলে তাঁর জন্য পুরুষেরাই দোষী। সবসময় পুরুষেরাই দায়ী না। কুরআনের বর্ণনায় অনেক বিশৃঙ্খলার কারণ পুরুষ আবার অনেক ক্ষেত্রে নারী। মানুষেরাই বিশৃঙ্খলাকারী। মানুষের মাঝেই লোভ আছে। সে বেশি পেতে চায়, সে কখনো সন্তুষ্ট হয় না। আর আপনি যেসব সম্পর্কের মাঝে যুক্ত তাতে সকলেই সবসময় আপনার কাছ থেকে বেশি পেতে চায়। আপনাকেই সেই সীমারেখা টানতে হবে আর ঘুমোতে যাওয়ার সময় আপনি যেন বলতে পারেন, “আমি সবার সাথে ইনসাফ করে চলেছি।” “আমি আমার স্ত্রী-সন্তানদেরকে কম দেইনি, আমি আমার কর্মক্ষেত্রে ঠিক থেকেছি, আমি আমার মা-বাবার অধিকারও লঙ্ঘন করিনি।” আর আপনার মা-বাবাকে বাস্তবিকভাবেই বুঝিয়ে বলতে হবে যে আপনি আপনার সর্বোচ্চটা চেষ্টা করেছেন। “আমি আদর্শিকভাবে বলছিনা, বাস্তবিক অর্থেই বলছি।”

কুরআন মা-বাবার অধিকারকে খুবই গুরুত্ব দিয়েছে। ইব্রাহিম (আঃ) কি তাঁর বাড়ি ছেড়ে চলে যাননি? হ্যাঁ। তিনি সেখানে থেকে যেতে পারতেন আর তাকে মারধোর করা চালিয়ে যাওয়া হতো। তিনি বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। অনেক সাহাবিদেরই খুব কঠিন অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। যেমন, সা’দ ইবন আবি ওয়াক্কাস (রাঃ)। তাঁর মা বলেছিলেন “আমি না খেয়ে মরে যাবো, কারণ তুমি মুসলিম হয়েছো। আমি ইসলামকে ঘৃণা করি। আমি তোমার মুসলিম হওয়াকে মেনে নিতে পারবো না।” তাঁর মা একাকিই তাকে লালনপালন করেছিলেন। মাকে কিছু না খেতে দেখে তাঁর নিজের খুবই খারাপ লাগছিলো, কিন্তু তিনি ইসলাম ত্যাগ করতে পারেননি। অনেকসময় মানসিক অত্যাচার শারীরিক নির্যাতনের চেয়ে অনেক বেশি কাঁদায়। আর সেই মানুষগুলোই আমাদের বেশি কষ্ট দেয় যারা আমাদের বেশি আপন। শারীরিক নির্যাতনের ক্ষেত্রে চিহ্নগুলো আমরা দেখতে পারি। কিন্তু মানসিক অত্যাচার চিহ্নিত করা কঠিন।

আমার আজকের আলোচনার বিষয় দুটি।

এক, নিজের দিকে ভালমতো তাকিয়ে দেখুন আপনি নিজে দোষী কিনা? আপনি অবিচার করছেন কিনা?

দুই, নাকি আপনার ওপরই অবিচার হচ্ছে?

আপনার ওপর অনেক বিষয় নির্ভর করে। যদি আপনার প্রতি অন্যায় চলতে থাকে তাহলে আপনি ভেঙে পড়বেন। নিজের দায়িত্বগুলো ঠিকমত পালন করতে পারবেন না। অন্যকে খুশি করা নিয়ে দুশিন্তা করবেন না। … “মানুষকে সন্তুষ্ট করা এমন গর্ত খোঁড়ার মতো যার কোন শেষ নেই।” আপনার কাজ আল্লাহকে খুশি করা। আপনি যদি এখনি মারা যান, তাহলে যেন আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে পূর্ণ চেতনা নিয়ে বলতে পারেন “হে আল্লাহ আমি কারো অধিকারে কম দেইনি। আমি কারো প্রতি অবিচার করিনি। আমি জানি তারা সবাই হয়তো এমনটা মনে করেনা, কিন্তু তুমি আর আমি জানি আমি কতটুকু করেছি বা করিনি।” এটাই ইহসান। ইহসান হলো আত্ম-সচেতনতা। আপনি যদি অন্য মানুষের স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী চলতে যান তাহলে আপনি যা-ই করেন না কেন আপনার বারোটা বাজবে। আমাদের মা-বাবারা হয়তো এমন পরিবেশে বড় হয়েছেন যে, আপনি হয়তো কোন হাসপাতালে কার্ডিয়াক সার্জারির হেড, বা আপনি হয়তো আপানার ভাইবোনদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো, কিন্তু তাও তারা বলবে, “তোমার কাছ থেকে আমি আরও বেশি আশা করেছিলাম।” বাকি সবাই আপনার তারিফ করে, কিন্তু তারা বলবে, “তুমি এমন কেন? তুমি আমাকে হতাশ করলে।” কোনকিছুই যথেষ্ট হবে না। এটাও ঠিক আছে। তারা হয়তো ভাবে আপনি যথাযথ ভালো হতে পারেন নি। আপনার স্ত্রীও এমনটা ভাবতে পারেন। তিনি হয়তো আপনাকে ছোট করে কথা বলেন, এমনভাবে কথা বলে যেন আপনি কোন আবর্জনা। সন্তানেরা হয়তো আপনাকে কষ্ট দেয়। আমি জানিনা। কিন্তু একটা কথা মনে রাখবেন, আল্লাহর সাথে আপনাকে সৎ থাকতে হবে। আপনি যাতে বলতে পারেন, “আমি আমার দায়িত্ব ঠিকমতো পূরণ করেছি। আমি কারো সাথে অন্যায় করিনি।” এটা হলো… এটুকু ঠিক করে চলাই একটা বড় কাজ। এরপর তারা যা-ই বলুক সেই ভার আল্লাহ আপনার ওপর চাপিয়ে দেননি।…

এরপর আসে নিকটাত্মীয়ের অধিকার, তাঁদের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রতিবেশীর অধিকার, অনেক আলেম বলেন আপনার বন্ধুরাও এই আওতায় পড়ে। বিশেষ করে যেসব বন্ধু আপনার বাসার কাছে থাকে। তাঁদের কিছু প্রয়োজন কিনা সেদিকে খেয়াল রাখা। আপনি যত বেশি অন্য মানুষের দিকে খেয়াল রাখবেন আল্লাহও তত বেশি আপনার যত্ন নেবে। এদিক থেকে ভাবলে এটা আসলে নিজের দিকেই খেয়াল রাখা। আপনি যদি নিক থেকে এগিয়ে অন্যের খবর নেন, তাঁদের সাহায্য করেন, আল্লাহও তাহলে আপনার অনেক সমস্যা মিটিয়ে দেবে। এমনকি যাতায়াতের ক্ষেত্রেও। আপনি হয়তো ট্রেন, প্লেন বা বাসে কোথাও যাচ্ছেন আর আপনার পাশে একজন বসে আছেন। হয়তো কোন ডাক্তারের অফিস বা এয়ারপোর্টে লবিতে কারো সাথে বসে আছেন। তাঁদের প্রতি ইহসান দেখান, সুন্দর ব্যবহার করুন। ইহসানের আয়াতটা আসলেই এত চমৎকার। আপনি যদি হাইওয়েতে যাতায়াত করেন তাহলে আপনার পাশে চলা গাড়ির চালক আপনার প্রতিবেশীর মতো। তাই যদি তাকে কোন ইঙ্গিত না দিয়ে হুট করে মোড় ঘুরিয়ে নেন তাহলে সেটাও আয়াতটির অবমাননা হবে। আপনি তাঁর প্রতি ইহসান করেন নি। তাকে বিচ্ছিন্ন করে দিলেন। যেমন কেউ গাড়ি পার্ক করতে যাচ্ছে আর আপনি মাঝখান দিয়ে… কারণ আপনার হয়তো জুমার নামায ধরতে হবে। এতে করে আপনি প্রতিবেশীর প্রতি ইহসান নষ্ট করলেন। ইহসান হলো তাঁর প্রতি দয়া দেখানো, ভালো ব্যবহার করা। তো এই ভালো ব্যবহার দেখানোটা পরিবারের মধ্য থেকে শুরু হয়ে বাইরের দিকে বিস্তার করবে।

এই আয়াতের ব্যাপারে এটা বলে আমি শেষ করতে চাই। প্রথমত আল্লাহর সাথে নুন্যতম একটা সম্পর্ক ধরে রাখা। এরপর আসে আপনার মা-বাবা। তারপর নিকটাত্মীয় আর প্রতিবেশীর অধিকার। এটা আসলে কী বুঝায়? আপনার হৃদয়ের সাথে যেই সম্পর্কটা সবচেয়ে বেশি জড়িত সেটার গুরুত্ব সবার আগে। এরপর আসবে মানবসম্পর্কগুলো যার মধ্যে প্রথমেই আসে আপনার মা-বাবা। তারপর নিকটাত্মীয়, স্ত্রী-সন্তানেরা এর অন্তর্ভুক্ত। এরপর এটা বাইরের দিকে আরও বিস্তৃত হয়। এটা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ দুর্ভাগ্যজনকভাবে এর উল্টোটাও দেখা যায়।

সমাজে কাউকে আপনি দেখতে পান যিনি অনেক ভালো। অন্যদের সাথে ভালো আচরণ করেন, সালাম দেন। খুবই ভালো লোক। কিন্তু যখন তিনি বাসায় ফিরে দরজা লাগান, তারপর তিনি ফেরাউনের মতো হয়ে যান। আপনি তাকে চিনতেই পারবেন না। ইনার কী হোলো? তাঁর কন্ঠ বদলে যায়, মেজাজ নষ্ট হয়ে যায়, মনে হয় তিনি যেন অন্য কেউ। আল্লাহ আমাদের এই সম্পর্কের সিরিয়ালটা দিলেন, কারণ বাইরে সবার সাথে ভালো ব্যবহার করে কোন লাভ নেই যদি আপনি মা-বাবার সাথে ভালো ব্যবহার না করেন। কিংবা আপনার স্ত্রী বা সন্তানদের সাথে। প্রথমে যদি এটাই না করতে পারেন তাহলে বাইরে যা দেখান তাঁর পুরোটাই মিথ্যে। এর কোন মূল্য থাকবে না।

এজন্য এই আয়াতটা নিয়ে বাস্তবতার প্রেক্ষিতে কথা বলতে চেয়েছিলাম। আমি বুঝি যে পুরুষেরা অনেক চাপের মধ্যে থাকেন। যদি আপনার দায়িত্বগুলো ভালোমতো পালন করে যেতে চান তাহলে অবশ্যই আপনার নিজের প্রাথমিক অধিকারগুলোও নিশ্চিত করতে হবে। কারণ এটা একজন মানুষের চাহিদাও বটে। যেমন, যদি আপনার সন্তান আপনাকে সম্মান না করে, নুন্যতম সম্মানটাও দেখায় না, আপনাকে সালামও দেয় না। এটা আপনার ভেতরে চাবিয়ে খাবে। আপনি কষ্ট পাবেন। আপনি বুঝতে পারবেন না এটা আপনার অন্যান্য কাজে, অন্যদের সাথে কিভাবে কথা বলছেন, তাতেও প্রভাব ফেলছে। মানসিক ও আধ্যাত্মিকভাবেও প্রভাবিত করবে। তাই এই সম্পর্কগুলোর যত্ন নিন। অন্যের প্রতি দায়িত্ব পালনের দিকে খেয়াল রাখুন, তাঁর পাশাপাশি নিজ অধিকারগুলোও চাইতে শিখুন। কিন্তু সতর্ক থাকবেন যেন কোনোক্ষেত্রেই সীমালঙ্গন না হয়ে যায়। আল্লাহ যেন আমাদের ভারসাম্যপূর্ণ মানুষ বানিয়ে দেন।