কুর’আন সান্ত্বনা দান করে, কুরআন প্রশান্তি দান করে

তৃতীয়টিঃ জীবনের পরীক্ষার মোকাবেলায় মানসিক শক্তির অন্বেষণ করা। এটা অনেক বড় একটা ব্যাপার। প্রতিদিনই আমাদের পরীক্ষা করা হয়। কখনো এই পরীক্ষা হয় ছোট, কখনো বড়। চলুন, বড় পরীক্ষা নিয়ে কথা বলি। জীবনে কোন কোন ধরণের বড় পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়? জোরে বলুন। মৃত্যু বড় পরীক্ষা। পরিবারে কারো মৃত্যু, প্রিয় কারো মৃত্যু, কোন বন্ধুর মৃত্যু। অন্য কোন পরীক্ষা? টাকা-পয়সা সংক্রান্ত, অর্থনৈতিক সমস্যা। হুম… অসুস্থতা, ব্যর্থতা, হতাশা। বায়্যিনাহ এক্সাম? না, বায়্যিনাহ এক্সাম নয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, শুক্রবারের বায়্যিনাহ পরীক্ষাও একটা প্রাকৃতিক দুর্যোগ । পরিবার এবং সন্তান-সন্ততিও পরীক্ষা হতে পারে। আমাদের সম্পর্কগুলোও পরীক্ষা হতে পারে। কখনো কখনো আমরা পিতা-মাতার সাথে সমস্যায় জড়িয়ে পড়ি। কোন কোন সময় স্বামী/স্ত্রীর সাথে, ভাইবোনের সাথে, বন্ধু- বান্ধবের সাথে সমস্যায় জড়িয়ে পড়তে পারি। বিচ্ছিন্নতাও পরীক্ষা হতে পারে; আপনি একাকীত্ব অনুভব করেন, আপনি মনে করেন কেউ আপনাকে বুঝতে পারে না, আপনি মনে করেন সবাই আপনাকে ঘৃণা করে। আসক্তিও পরীক্ষা হতে পারে।

এখন ব্যাপারটা হলো, মানুষ যখন কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যায়, তাদের কোন জিনিসটি বেশি প্রয়োজন? আবার জোরে বলুন। সান্ত্বনা, সমর্থন, কারো সাথে মন খুলে আলোচনা করা। জানেন? কত মানুষ আমার কাছে আসে আর বলে – আমি জাস্ট দুই মিনিট আপনার সাথে কথা বলবো। কিন্তু পরে আসলে তা দুই ঘণ্টায় পরিণত হয়। আমি একটা সমস্যায় ভুগছি, আর এ ব্যাপারে শুধু আপনার সাথেই কথা বলা যাবে। এই গ্রহে আর কেউ আমার সমস্যা বুঝতে পারবে না। একমাত্র আপনি ছাড়া কারণ আপনি ইউটিউবে…হা হা। মানুষের সমস্যাগুলোকে বাতিল করে নয়… বাস্তবিক অর্থেই মানুষ কারো কাছে নিজের সমস্যার কথা বলতে চায়। মানুষ সবচেয়ে বেশি চায় কেউ যেন তাদেরকে আশার বাণী শোনায়, হতাশার অন্ধকার সুড়ঙ্গের শেষে আশার আলো দেখায়, তাদের মাঝে যেন এই বিশ্বাস তৈরি করে যে তারা এই সমস্যা মোকাবেলা করতে পারবে, তাদের পরীক্ষার চেয়েও তারা শক্তিশালী। যে বিপদই তারা অতিক্রম করছে এতে অবশ্যই উপকারী কিছু আছে। তাদের এটা প্রয়োজন। তারা চায় কেউ যেন ভালোবাসাপূর্ণ, দয়াদ্র আর আন্তরিক উপায়ে তাদেরকে এই কথাগুলো বলুক।

আর যখন এই রকম দয়া আর ভালোবাসাপূর্ণ কথাগুলো প্রভাবশালী কারো কাছ থেকে আসে…যেমন আপনার ছোট ভাই যখন আপনাকে এ রকম সান্ত্বনা দেয় আপনি হয়তো তাতে কোন গুরুত্বই দিবেন না। কিন্তু আপনার দাদা যখন তা বলবে তখন আপনার কাছে এটা অধিক গুরুত্ববহ মনে হবে। যখন আপনার বাবা তা বলবে, আপনার শিক্ষক তা বলবে, কোন মহান স্কলার তা বলবে …এটা তখন বেশি সান্ত্বনা দিবে। তখন স্বামী হয়তো তার স্ত্রীকে বলবে, আমি তো তোমাকে এ কথাই বলছি বার বার কিন্তু এর কোন দাম ছিল না। আর এখন সে বলাতে হঠাৎ করে তুমি এখন এতে সান্ত্বনা খুঁজে পেয়েছো। কেন? কারণ যখন কর্তৃত্বের জায়গা থেকে কেউ আপনাকে সান্ত্বনা প্রদান করে, তখন সান্ত্বনা নিজেই হয়ে উঠে আস্থাভাজন, নির্ভরযোগ্য। একজন বিশ্বাসীর জীবনে কুরআনের অন্যতম একটি ভূমিকা হলো … আমি সমস্যায় আছি, আমার কারো কাছ থেকে সান্ত্বনা পাওয়া দরকার; এখন ধারণা করুন, কে আপনাকে সান্ত্বনা প্রদান করবে? আল্লাহর বাণী আপনাকে সান্ত্বনা প্রদান করবে। আপনাকে কুরআন খুলতে হবে এবং কিছু পড়তে হবে আর তখন ঠিক এটাই আপনাকে আপনার সমস্যার আলোকে সান্ত্বনা প্রদান করবে।

নিউইয়র্কে থাকাকালীন আমার অন্যতম সেরা এক বন্ধু, আমি আপনাদের তার নাম বলবো না, কারণ সে এই রেকর্ডিং কোথাও থেকে শুনে ফেলতে পারে… আর তখন বলবে, “হে তুমি আমার নাম উল্লেখ করেছো।” তাই আমি তার নাম বলবো না। তবে, সে নিউইয়র্কের লং আইল্যান্ডের বে সোর এলাকার। যাইহউক, প্রায় ১২ বছর আগের একটা ঘটনা। একদিন সে আমাকে জিজ্ঞেস করে, “আচ্ছা নোমান, আমরা কুরআন থেকে কীভাবে হেদায়েত/পথনির্দেশনা পাবো? আমি কুরআন থেকে গাইডেন্স পেতে চাই। কীভাবে শুরু করবো? এখানে কি কোন ইনডেক্সের মত কিছু আছে? যেমন – যদি তোমার ধৈর্য ধরা নিয়ে সমস্যা থাকে তাহলে এই আয়াতগুলো পড়, স্বাস্থ্য নিয়ে সমস্যা থাকলে এই আয়াতগুলো পড়। কী করো তুমি?”

আমি তাকে বললাম – আচ্ছা এভাবে চেষ্টা করে দেখ। এখন থেকে তুমি কোন সমস্যায় পড়লে, সাথে একটি মুসহাফ রাখবে এবং যে কোন একটা পেইজ খুলে পড়তে শুরু করবে… এই নিয়তে যে তুমি আল্লাহর কাছ থেকে প্রশান্তি চাইছো, পথনির্দেশা চাইছো। এই পথ নির্দেশনা হলো অন্তরের জন্য। পড়, দেখ কী হয়? টানা দুই সপ্তাহ ধরে প্রতি রাতে মসজিদে ইশার নামাযের সময় সে আমাকে বলতো, ভাই এটা আবার কাজ করেছে! এটা আবার কাজ করেছে! আশ্চর্য! মানুষ এ সম্পর্কে জানে না, ভাই। আশ্চর্য ব্যাপার! আমি সমস্যায় পড়ি, আর কুরআন পড়তে শুরু করি, দুই তিন আয়াত পড়তে না পড়তেই আমি পেয়ে যাই।

কুরআনের তো এমনি হওয়ার কথা! কিন্তু কুরআন আপনাকে এটা দিবে না যদি আপনি একজন সমালোচক হিসেবে কুরআনের কাছে আসেন। মনে আছে? আমি বলেছিলাম। কুরআন আপনাকে এটা দিবে যদি আপনি একজন সন্ধানকারী/অন্বেষণকারী হিসেবে আসেন। এটা আপনাকে প্রশান্তি দিবে, এটা আপনার সাথী হয়ে যাবে। আর তখন সালাত হবে থেরাপি। আপনি আগে কোন কাউন্সিলরের কাছে যেতেন, এখন আপনি আল্লাহর সাথে কথা বলেন, আর আল্লাহও আপনার সাথে কথা বলবে। এটা হয়ে উঠবে এক সৌন্দর্য মণ্ডিত ব্যাপার।

আপনি অনেক কুরআন শিখতে পারেন, বুঝতে পারেন, কিত্নু সত্যিকারের স্বাদ পাবেন যখন এই থেরাপি ঘটে। অনেক সময় এই থেরাপিটা ঘটে সালাতের মাঝখানে। এই সময়গুলোই একজন বিশ্বাসীর জীবনের সুন্দরতম সময়। যখন কোন আয়াত আপনাকে বজ্রপাতের মত আঘাত করে, ঠিক আপনারই সমস্যার আলোকে… ওহ হো, হো, এটা এক উচ্চতম পর্যায়!